ইমাম হযরত হাসান বসরী (رحمة الله) [২১-১১০ হিঃ]
ইমাম হযরত হাসান বসরী (رحمة الله) [২১-১১০ হিঃ]
[বিশিষ্ট তাবিয়ী, যিনি শতাধিক সাহাবায়ে কিরাম (রা) গণের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন] তিনি বলেন-
قال الحسن البصرى رحمة الله عليه وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهْبًا فَاَنْفَقْتُهٗ عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: ‘আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে ব্যয় করতাম।’সুবহানাল্লাহ!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]
❏ ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) [১৫০-২০৪ হিঃ]
বিশ্ব বিখ্যাত ফকীহ ইমাম তাহাবী (رحمة الله) ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর কওল নকল করে লিখেন-
إن أفضل الليالي ليلة مولده صلى الله عليه وسلم ثم ليلة القدر-
-‘‘নিশ্চয়ই ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম রাত হলো ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্রি বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভাগমনের রাত্র (১২ই রবিউল আউয়াল) তারপর হলো শবে-ই-কদরের রাত্রি।’’
● আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৪২৬ পৃ : মারকাযে আহলে সুন্নাহ বি বারকাতে রেযা, গুজরাট হতে প্রকাশিত।
❏ ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) [১৫০-২০৪ হিঃ] আরও বলেন-
قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে :
– লোকজন একত্রিত করলো,
– খানাপিনার ব্যবস্থা করলো,
– জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং
– এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো
– তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]
❏ হযরত জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) [২২০-২৯৭ হিঃ]
হযরত জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) [২২০-২৯৭ হিঃ] বলেন-
قال جنيد البغدادى رحمة الله عليه مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدَرَهٗ فَقَدْ فَازَ بِالاِيْمَانِ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর আয়োজনে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে বেহেশ্তী হবে।” সুবহানাল্লাহ!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]
❏ ইমাম আবু জাফর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ তাহাবী (رحمة الله) [২২৯- ৩২১ হিজরী]
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম তাহাবী (رحمة الله) (২২৯- ৩২১ হিজরী) তিনি বলেছেন,
ونقل الطحاوي عليه الرحمة في حواشي المختار عن بعض الشافعية أن أفضل الليالي ليلة مولده عليه الصلاة والسلام ثم ليلة القدر ثم ليلة الإسراء والمعراج ثم ليلة عرفة ثم ليلة الجمعة ثم ليلة النصف من شعبان ثم ليلة العيد
অর্থ: রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছেঃ
– পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত,
– অতঃপর লাইলাতুল কদরের রাত,
– অতঃপর মিরাজ শরীফের রাত,
– অতঃপর আরাফার রাত,
– অতঃপর জুমুয়ার রাত,
– অতঃপর ১৫ শাবানের রাত,
– অতঃপর ঈদের রাত।”
● তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৯/ ১৯৪, সূরা ক্বদরের তাফসীরে।
❏ ইমাম হযরত ইমাম মারূফ কারখী (رحمة الله) [৭৫০-৮১৫ ইং]
বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম মারূফ কারখী (رحمة الله) [৭৫০-৮১৫ ইং] বলেন-
قال المعروف الكرخى رحمة الله عليه مَنْ هَيَّأَ طَعَامًا لاَجْلِ قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَمَعَ اِخْوَانًا وَاَوْقَدَ سِرَاجًا وَلبِسَ جَدِيْدًا وَتَبَخَّرَ وَتَعَطَّرَ تَعْظِيْمًا لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَشَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الْفِرْقَةِ الاُوْلٰى مِنَ النَّبِيّنَ وَكَانَ فِىْ اَعْلٰى عِلِّيِّيْن.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিসে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন পোশাক পরিধান করে, সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে, আল্লাহ পাক তাকে নবী আলাইহিমুস সালামগণের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতের সুউচ্চ মাক্বামে অধিষ্ঠিত হবেন।” সুবহানাল্লাহ্!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]
❏ হযরত ইমাম সাররী সাকতী (رحمة الله) [ওফাতঃ ৮৬৭ ইং]
হযরত ইমাম সাররী সাকতী (رحمة الله) [ওফাতঃ ৮৬৭ ইং] বলেন-
قال السر سقتى رحمة الله عليه مَنْ قَصَدَ مَوْضعًا يُقْرَأُ فِيْهِ مَوْلِِدُ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ قَصَدَ رَوْضَةً مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ لاَنَّهٗ مَا قَصَدَ ذٰلِكَ الْمَوْضعَ اِلا لِمُحَبَّةِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করলো সে যেন নিজের জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্দিষ্ট করলো। কেননা সে তা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) উনার মুহব্বতের জন্যই করেছে। আর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ্!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]
❏ ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (رحمة الله) [১১৫০-১২১০ ইং]
ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (رحمة الله) [১১৫০-১২১০ ইং] বলেন-
مَا مِنْ شَخْصٍ قَرَاَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مِلْحٍ اَوْ بُرٍّ اَوْشَىء اٰخَرَ مِنَ الْمَأكُوْلاتِ اِلا ظَهَرَتْ فِيْهِ الْبَركَةُ فِىْ كُلِّ شَىء. وَصَلَ اِِلَيْهِ مِنْ ذٰلِكَ الْمَأكُوْلِ فَاِنَّهٗ يَضْطَرِبُ وَلا يَسْتَقِرُّ حَتى يَغْفِرَ اللهُ لاٰكِلِهٖ.
অর্থ: যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করে লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্য দ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্য দ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন, তাতে বরকত হবেই। উক্ত খাদ্য-দ্রব্য মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয় না।” সুবহানাল্লাহ!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৯ পৃষ্ঠা]
❏ ইমাম নাসিরুদ্দীন মোবারক ইবনে বাতাহ (رحمة الله):
৪র্থ যুগের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমামুল আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন মোবারক ইবনে বাতাহ (رحمة الله) পবিত্র মিলাদ সম্পর্কে নিজ ফতোয়ায় লিখেন,
মহানবী (ﷺ) ওনা জন্ম রাতে কোন ব্যক্তি কিছু অর্থকরি ব্যয় করলে এবং জনগনকে সমবেত করে তাদেরকে পানাহার করালে বা রাসূল (ﷺ) ওনার জন্ম সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস সমূহ এবং অলোকিক ঘটনা শুনালে তা যদি সব রাসূল (ﷺ) ওনার জন্মের প্রতি আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করার জন্য হয়ে থাকে তাহলে শরীয়ত মতে তা জায়েজ আর এসব কাজের জন্য সংশ্লীষ্ঠ কর্তাকে ছওয়াব প্রদান করা হয়,যদি তার উদ্দেশ্য ভাল হয়।
● আদ-দুররুল মুনাজ্জম ফী আমলে ওয়া হুকমে মাওলিদুন নাবীয়্যিল আযম-পৃষ্ঠা-নং-১৯৭-১৯৮।
❏ মুহাদ্দিস ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) [ওফাত. ৫৯৭ হি.] বলেন-
لا زال أهل الحرمين الشريفين والمصر واليمن والشام وسائر بلاد العرب من المشرق والمغرب يحتفلون بمجلس مولد النبى صلى الله عليه وسلم ويفرحون بقدومه هلال شهر ربيع الأول و يهتمون اهتماما بليغا على السماع والقراءة لمولد النبى صلى الله عليه وسلم وينالون بذلك أجرا جزيلا وفوزا عظيما-
“মক্কা, মদীনা, ইয়ামন, শাম ও তামাম ইসলামী বিশ্বের পূর্ব ও পশ্চিমবাসীরা সবসময় হুজুর (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের ঘটনায় মীলাদ মাহফিল আয়োজন করত। তারা রবিউল আউয়াল মাসের নতুন চাঁদ উদিত হলে খুশি হয়ে যেত এবং হুজুরের মিলাদ শুনা ব্যাপারে ও পড়ার সীমাহীন গুরুত্বারোপ করত। আর মুসলমানগণ এসব মাহফিল কায়েম করে পরিপূর্ণ প্রতিদান ও আধ্যত্মিক কামিয়াবী হাছিল করত।”
[ইমাম যওজীঃ তার লিখিত বয়ানুল মিলাদুন্নবী- ৫৮ পৃ.]
❏ ইমাম ইবনুজ জাওযী (رحمة الله) বলেন-
“যে কাফের আবু লাহাবের বিরোদ্ধে আল-কুরআন নাজিল হয়েছে এবং যার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত, সে আবু লাহাবও যদি হুজুর (ﷺ) এর মিলাদুন্নবী উপলক্ষে খুশি হওয়াতে সুফল পায়, তাহলে তাঁর উম্মতের মধ্যে যে একত্ববাদী মুসলমান এবং তাঁর মিলাদুন্নবীতে (ﷺ) আনন্দিত হয় তাঁর মহব্বতে যথাসাধ্য দান করে,
তার অবস্থা কী হবে? আমি কসম করে বলছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে তার বিনিময় এ হবে যে, তিনি সর্বব্যাপী অনুগ্রহ দ্বারা তাকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।’
● ইবনে জাওজীঃ বয়ানুল মিলাদুন্নবী
● ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহিবে লাদুনিয়া ১ম জিল্দ ২৭ পৃঃ,
● ইমাম জুরকানীঃ জুরকানী ১ম জিল্দ ১৩৭ পৃঃ
❏ ইবনে তাইমিয়া (৬৬১-৭২৮ হিঃ)
ওহাবী-সালাফীদের মান্যবর ইমাম ইবনে তাইমিয়া (৬৬১-৭২৮ হিঃ) বলেন-
فتعظيم المولد، واتخاذه موسمًا، قد يفعله بعض الناس، ويكون له فيه أجر عظيم لحسن قصده، وتعظيمه لرسول الله صلى الله عليه وسلم، كما قدمته لك أنه يحسن من بعض الناس، ما يستقبح من المؤمن المسدد.
-“আমি ইতোপূর্বে আলোচনা করছি যে মিলাদকে মানুষেরা মৌসুমীভাবে পালন করে তা’জিম করে থাকে, এতে তাদের অনেক সাওয়াব হবে। আর এটাও সুস্পষ্ট যে, কিছু লোক এটাকে হাসান মনে করে, কারণ সঠিক মু’মিন ব্যক্তি মন্দ কাজ করে না।”
[ইবনে তাইমিয়া, একতেদ্বাউল সিরাতাল মুস্তাকিম ২/১২৬ পৃ. দারুল আ‘লামুল কিতাব, বয়রুত, লেবানন]
❏ ইমাম ইবন কাসির (رحمة الله) [৭০১-৭৭৪ হিঃ]
ইমাম ইবন কাসির (رحمة الله) [৭০১-৭৭৪ হিঃ] তার বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থে লিখেন :
ইবলিশ শয়তান জীবনে ঠিক এই সময়টাতেই খুব বেশি কেঁদেছে বা আফসোস করেছে।
أن إبليس رن أربع رنات حين لعن وحين أهبط وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وحين أنزلت الفاتحة
১. আল্লাহ যখন তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেন,
২. যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করা হল,
৩. নূর নবীজীর (ﷺ) দুনিয়াতে আগমনের সময় এবং
৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হবার সময়
[সূত্রঃ ইবন কাসির, আল আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ১৬৬]
❏ ইমাম ইবন কাসির (رحمة الله) [৭০১-৭৭৪ হিঃ] হাদিসে সুয়াইবাহ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,
“এমন জঘন্য কাফের যার দোষ বর্ণনায় (আল-কুরআনে) এসেছে যে, তার হাত ধ্বংস হয়েছে, তার স্থায়ী নিবাস চির জাহান্নাম। আহমদ (ﷺ) এর আবির্ভাবে খুশী হয়ে সর্বদা সোমবার আসলে তার (মত কাফির) থেকে (যদি) আজাব হালকা করা হয়, তবে কিরূপ ধারণা হতে পারে সে ব্যক্তির ব্যাপারে, যার জীবন আহমদ (ﷺ) বিষয়ে আনন্দিত ছিল এবং তাওহীদবাদী হয়ে ইন্তেকাল করেছেন?
❏ ইবনে কাইয়্যুম (ওফাতঃ ৭৫১ হিঃ)
ওহাবী-সালাফীদের মান্যবর ইমাম ইবনে কাইয়্যুম তার কিতাবে বলেন যে,
নবী করীম (ﷺ) ওনার মিলাদ মাহফিলে সুললিত কন্ঠস্বর শ্রবণ করা কিংবা ধর্মীয় বিষয় শ্রবণ করার মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়। কারণ নবী করীম (ﷺ) ওনার থেকে শ্রুতাকে নূর দেওয়া হয়ে থাকে।
● মাদারেকুছ ছালিকিন-৪৯৮ পৃ:
❏ ইমাম ইবনে হজর আসকালানী (رحمة الله) (৭৭৩-৮৫২ হিঃ)
ফতহুল বারী শরহে বুখারী শরীফের মধ্যে এ মাসআলা নিয়ে বিশদ আলোচনা করে তিনি বলেনঃ
ﻓﻴﺤﺘﻤﻞ ﺍﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﺎﻳﺘﻌﻠﻖ ﺑﺎﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺨﺼﻮﺻﺎ ﻣﻦ ﺫﺍﻟﻚ ﺑﺪﻟﻴﻞ ﻗﺼﺔ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻛﻤﺎﺗﻘﺪﻡ ﺍﻧﻪ ﺧﻔﻒ ﻋﻨﻪ ০
“যদিও কোন স্বপ্ন শরিয়তের দলিলরূপে গণ্য হয় না, কিন্তু এখানে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর স্বপ্ন আবু লাহাবের আজাব লাঘব হওয়ার ব্যাপারে কেবলমাত্র নবী করিম (ﷺ) সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার দরুণ দলিলরূপে গণ্য হতে পারে। অন্য কারো স্বপ্ন শরিয়তের দলিলরূপে গণ্য হবে না। তারপর আবু তালেবের আজাব কম হওয়ার প্রসঙ্গ দলিলরূপে উল্লেখ করেছেন।”
[ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ৯ম খন্ড, ১৫৪ পৃ:]
❏ ইমাম সুহাইলী (رحمة الله) লিখেন :
হযরত ইমাম সুহাইলী (رحمة الله) উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে আমি স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত দুরবস্থায় রয়েছে ! সে বললো, [হে ভাই হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)] আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোন শান্তির মুখ দেখি নাই।
তবে হ্যাঁ, প্রতি সোমবার যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) তিনি বলেন,আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারন হচ্ছে, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক (ﷺ) এর বিলাদত শরীফ এর দিন ছিলো সোমবার ! সেই সোমবারে হাবীবুল্লাহ (ﷺ) এর বিলাদতের সুসংবাদ নিয়ে আবু লাহাবের বাঁদী সুয়াইবা (رضي الله عنه) তিনি আবু লাহাবকে খবরটি জানালেন তখন আবু লাহাব মিলাদুন্নবীর সংবাদ শুনে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা (رضي الله عنه)-কে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয় !”
● ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা
● ইমাম বদরুদ্দিন আঈনীঃ ওমদাতুল কারী শরহে বুখারীঃ ২য় খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠা।
● ইমাম কাস্তালানী : মাওয়াহেবুল লাদুননিয়াহ ১ম খন্ড !
● ইমাম জুরকারীঃ জুরকানী শরহে মাওয়াহেব : ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা
❏ ইমামুল হাফেজ সাখাভী (رحمة الله) [৮৩১-৯০২ হিঃ] বলেন-
لا زال أهل الإسلام في سائر الأقطار والمدن الكبار يحتفلون في شهر مولده صلى الله عليه وسلم بعمل الولائم البديعة المشتملة
-“বিশ্বের চতুর্দিকে ও শহরগুলোতে হুজুর (ﷺ) এর জন্ম গ্রহণের মাসে মুসলমানরা বড় বড় আনন্দনুষ্ঠান করে থাকে।”
[মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাবী, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ১/ ৩৬২ পৃ. ]
❏ ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী (رحمة الله) [৮৪৯-৯১১ হিঃ] বলেন-
عِنْدِي أَنَّ أَصْلَ عَمَلِ الْمَوْلِدِ الَّذِي هُوَ اجْتِمَاعُ النَّاسِ وَقِرَاءَةُ مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ وَرِوَايَةُ الْأَخْبَارِ الْوَارِدَةِ فِي مَبْدَأِ أَمْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا وَقَعَ فِي مَوْلِدِهِ مِنَ الْآيَاتِ، ثُمَّ يُمَدُّ لَهُمْ سِمَاطٌ يَأْكُلُونَهُ وَيَنْصَرِفُونَ مِنْ غَيْرِ زِيَادَةٍ عَلَى ذَلِكَ – هُوَ مِنَ الْبِدَعِ الْحَسَنَةِ الَّتِي يُثَابُ عَلَيْهَا صَاحِبُهَا لِمَا فِيهِ مِنْ تَعْظِيمِ قَدْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِظْهَارِ الْفَرَحِ وَالِاسْتِبْشَارِ بِمَوْلِدِهِ
-“আমার মতে মিলাদের জন্য সমাবেশ করা, তেলাওয়াতে কোরআন, হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলী এবং জন্ম গ্রহণকালীন গঠিত নানান আলামত সমূহের আলোচনা করা এমন বেদআতে হাছানার অন্তর্ভুক্ত; যে সব কাজের ছওয়াব দেয়া হয়। কেননা এতে হুজুর (ﷺ) এর তা’জিম, মোহাব্বত এবং তাঁর আগমনের খুশী জাহির করা হয়।”
[ইমাম সুয়ূতি, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ১/২২১পৃ.]
❏ ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী (رحمة الله) [৮৪৯-৯১১ হিঃ] বলেন-
قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ” مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ مُنْكِرٍ وَنَكِيْرٍ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ.
অর্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাকের ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে [উক্ত লোকসকলকে] স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান ৪ ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরায়ীল, মীকায়ীল, ইসরাফীল ও আযরায়ীল আলাইহিমুস সালামগণ মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। যখন তারা [উদযাপনকারীগণ] ইনতিকাল করেন তখন আল্লাহ পাক তাদের জন্য মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাদের অবস্থান হয় আল্লাহ পাকের সন্নিধ্যে সিদ্দিকীনদের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ্!
[ওয়াসিল ফি শরহে শামায়িল, আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]
❏ ইমাম শিহাবুদ্দিন আল কাস্তালানী (رحمة الله) [৮৫১-৯২৩ হিঃ] বলেন: ”যাদের অন্তর রোগ-ব্যাধি দ্বারা পূর্ণ, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মীলাদের মাস (রবিউল আউয়ালের) প্রতিটি রাতকে যাঁরা উদযাপন করেন তাঁদের প্রতি আল্লাহতা’লা দয়াপরবশ হোন!” [আল-মাওয়া আল-লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড]
❏ ইমাম শিহাবুদ্দিন আল কাস্তালানী (رحمة الله) [৮৫১-৯২৩ হিঃ] বর্ননা করেন,
আবু লাহাবের আযাদকৃত দাসী সুয়াইবাহ তাকে (হুযুর ﷺ)-কে দুধ পান করিয়েছেন। যাকে আবু লাহাব তখনই আযাদ করেছিলো তখন তিনি তাকে হুযুর (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের শুভ সংবাদ শুনিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, একদা আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখা গিয়েছিলো। [হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এক বছর পর স্বপ্ন দেখেছিলেন] তখন তাকে বলা হলো “তোমার কি অবস্থা?” সে বলল, দোজখেই আছি। তবে প্রতি সোমবার রাতে আমার শাস্তি কিছুটা শিথিল করা হয়; আর আমি আমার এ আঙ্গুল দুটির মধ্যে চুষে পানি পানের সুযোগ পাই। আর তখন সে তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে ইশারা করলো। আর বলল, আমার শাস্তির শিথিলতা এ জন্য যে, সুয়াইবা (رضي الله عنه) যখন আমাকে নবী (ﷺ) এর বেলাদতের সুসংবাদ দিয়েছিলো, তখন তাকে আমি আযাদ করে দিয়েছিলাম এবং তিনি হুযুর (ﷺ) কে দুগ্ধপান করিয়েছেন।
❏ ইমাম শিহাবুদ্দিন আল কাস্তালানী (رحمة الله) [৮৫১-৯২৩ হিঃ] আরো বলেন-
এতদভিত্তিতে, আল্লামা মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে জাযরী (رحمة الله) বলেন, যখন ঐ আবু লাহাব কাফির, যার তিরস্কারে কোরআনের সূরা নাযিল হয়েছে। মিলাদুন্নবী (ﷺ) এ আনন্দ প্রকাশের কারণে জাহান্নামে পুরস্কৃত হয়েছে। এখন উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐ একত্ববাদী মুসলমানের কি অবস্থা? যে নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদতে খুশি হয় এবং হুযুর (ﷺ) এর ভালবাসায় তার সাধ্যনুযায়ী খরচ করে। তিনি জবাবে বলেন- আমার জীবনের শপথ! নিশ্চয়ই পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে আপন ব্যাপক করুণায় নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
● ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়াঃ হুযুর (ﷺ) এর “দুগ্ধপান শীর্ষক অধ্যায়”।
● জুরকানী শরীফ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৫৮-২৬২
❏ ইমাম শিহাবুদ্দিন কাস্তালানী (رحمة الله) [৮৫১-৯২৩ হিঃ] লিখেন-
ولا زال أهل الاسلام يحتفلون بشهر مولوده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصد قون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقرأة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم –
-‘‘প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের মাসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে, উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়।’’
[আল্লামা ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১ম খন্ড : ২৬২ পৃষ্ঠা]
❏ ইমাম শিহাবুদ্দিন আল কাস্তালানী (رحمة الله) [৮৫১-৯২৩ হিঃ] বলেন :
احدها ان ليلة المولود ليلة ظهو ره صلى الله عليه وسلم وليلة القدر معطاة له وما شرف بظهور ذات المشرف من اجله اشرف مما شرف بسبب ما اعطيه ولا نزاع فى ذلك فكانت ليلة المولودبهذا الاعتبار افضل০
الثانى ان ليلة القدر شرفت بنزول الملائكة فيها وليلة المولود شرفت بظهوره صلى الله عليه وسلم فيها ومن شرفت به ليلة المولود افضل ممن شرفت بهم ليلة القدر على الاصح المرتضى فتكون ليلة المولود افضل০
الثالث ان ليلة القدر وقع التفضل فيها على امة محمد صلى الله عليه وسلم وليلة المولود الشريف وقع التفضل فيها على سائر الموجودات فهو الذى بعثه الله عز وجل رحمة للعالمين فعمت به النعمة على جميع الخلائق০
”রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেলাদত তথা এ ধরণীতে শুভাগমন রাতে হয়েছে বলা হলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে দুটো রাতের মধ্যে কোনটি বেশি মর্যাদাসম্পন্ন – কদরের রাত (যা’তে কুরআন অবতীর্ণ হয়), নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ধরাধামে শুভাগমনের রাত?
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেলাদতের রাত এ ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতর ৩টি কারণে তা হলঃ
১) নবী করীম (ﷺ) এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন মওলিদের রাতে, অথচ কদরের রাত (পরবর্তীকালে) তাঁকে মন্ঞ্জুর করা হয়। অতএব, মহানবী (ﷺ)-এর আবির্ভাব, তাঁকে যা মন্ঞ্জুর করা হয়েছে তার চেয়েও শ্রেয়তর। তাই মওলিদের রাত অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন।
২) কদরের রাত যদি ফেরেশতাদের অবতীর্ণ হবার কারণে মর্যাদাসম্পন্ন হয়, তাহলে মওলিদের রাত মহানবী (ﷺ) এ ধরণীতে প্রেরিত হবার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, আর তাই মওলিদের রাতও শ্রেষ্ঠতর।
৩) কদরের রাতের বদৌলতে উম্মতে মোহাম্মদীকে বিশিষ্টতা দেয়া হয়েছে; অথচ মওলিদের রাতের মাধ্যমে সকল সৃষ্টিকে ফযিলাহ দেয়া হয়েছে। কেননা, মহানবী (ﷺ)-কে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে রহমত করে পাঠানো হয়েছে (আল-কুরআন ২১:১০৭)। অতএব, এই রহমত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্যে সার্বিক।”
● ইমাম কুস্তালানী : ‘আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা,
● ইমাম যুরকানী মালেকী : শরহে মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা।
❏ ইমাম শিহাবুদ্দিন আল কাস্তালানী (رحمة الله) [৮৫১-৯২৩ হিঃ] আরও বর্ণনা করেন,
সুদূর অতীতকালে কিভাবে মুসলমানগণ ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করতেন- বিস্তারিত বর্ণনা ইমাম শাহাবুদ্দীন কাস্তুলানী (رحمة الله عليه) মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবে বিধৃত করেছেন। অনুবাদসহ নিম্নে পেশ করা হলোঃ
ولا زال أهل الإسلام يحتفلون بشهر مولده عليه السّلام، ويعملون الولائم، ويتصدقون في لياليه بأنواع الصدقات، ويظهرون السرور، ويزيدون في المبرات، ويعتنون بقراءة مولده الكريم، ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم ومما جرب من جواصه أنه امان فى ذلك العام وبشرى عاجلة بنيل البغية والمرام فرحم الله امرأ اتخذ ليالى شهر مولده المباركة اعيادا (المواهب اللدنية والأنوار المحمدية صفحة ١٩).
অর্থঃ “সমগ্র মুসলিম উম্মাহ সুদূর অতীতকাল থেকে নবী করিম (ﷺ)-এঁর পবিত্র বেলাদত উপলক্ষে মাসব্যাপী সর্বদা মিলাদ-মাহফিল উদযাপন করতেন। যিয়াফত প্রস্তুত করে তারা লোকদের খাওয়াতেন। মাসব্যাপী দিনগুলোতে বিভিন্ন রকমের সদকা-খয়রাত করতেন এবং শরীয়তসম্মত আনন্দ উৎসব করতেন। উত্তম কাজ প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি করতেন। তাঁরা পূর্ণমাস শান শওকতের সাথে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত করতেন- যার বরকতে বরাবরই তাদের উপর আল্লাহর অপার অনুগ্রহ প্রকাশ পেতো। মিলাদ মাহফিলের বৈশিষ্ট সমূহের মধ্যে এটা পরীক্ষিত বিষয় যে, মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানের বরকতে ঐ বৎসর আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা কায়েম থাকে এবং তড়িৎগতিতে তা মনোবাঞ্ছা পূরনের শুভ সংবাদ বহন করে নিয়ে আসে। অতএব- যিনি বা যারা মিলাদুন্নবী মাসের প্রতিটি রাত্রকে ঈদের রাত্রে পরিণত করে রাখবে- তাঁদের উপর আল্লাহর খাস রহমত বর্ষিত হবে।”
১.ইমাম শাহাবুদ্দীন কাস্তুলানীঃ মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া।
২.ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মা ছাবাতা বিছছুন্নাহ।
❏ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ বিন উমর বাহরুক (رحمة الله) ও খাজরামী শাফী (رحمة الله)-(ওফাতঃ ৮৬৯-৯৩০ হিঃ)
ওনারা পবিত্র মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে লিখেন-
এদিনের প্রকৃত অবস্থান হলো,যেহেতু এদিনে রাসূল (ﷺ) এর জন্ম হয়েছে সেহেতু এদিনে ঈদ উদযাপন করাই হচ্ছে প্রকৃত দাবী।
● হাদাইকুল আনোয়ার ওয়া মাতালিউল আসরার ফি সিরাতিন নাবিইয়িল মুখতার গ্রন্থের ৫৩-৫৮ পৃ:
❏ ইমাম হাফেজ ইবনে হাজর মক্কী শাফেয়ী (رحمة الله) [৯০৯-৯৭৪ হিঃ] বলেন-
الموالد والأذكار الَّتِي تفعل عندنَا أَكْثَرهَا مُشْتَمل على خير، كصدقة، وَذكر، وَصَلَاة وَسَلام على رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم
-“আমাদের এখানে মিলাদ মাহফিল জিকর-আজকার যা কিছু অনুষ্ঠিত হয়, তার অধিকাংশই ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, সাদকা করা, জিকির করা, দরুদ পড়া, ও রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর ছালাম পেশ করা।”
[ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়া হাদিসিয়্যাহ, ১/১০৯ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।]
❏ ইমাম সুলতান মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত ১০১৪ হিঃ] বলেন-
لازال اهل الاسلام يختلفون فى كل سنة جديدة ويعتنون بقراءة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عظيم.
-‘‘মুসলমানগণ প্রতি নববর্ষে মাহফিল করে আসছেন এবং তাঁরা মীলাদ পাঠের আয়োজন করেন। এর ফলে তাদের প্রতি অসীম রহমতের প্রকাশ ঘটে।’’
[মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাভী, ৫ পৃ. ]
❏ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) (৯৫৮-১০৫২ হিঃ) বলেন-
لا يزال اهل الاسلام يحتفلون بشهر مولده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصدقون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقراء مولده الكريم-
-“হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র বেলাদতের মাসে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সর্বদাই পালিত হয়ে আসছে। ঐ মাসের রাত্রিতে দান ছদকা করে, আনন্দ প্রকাশ করে এবং ঐ স্থানে বিশেষভাবে নবীর আগমনের উপর প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর বর্ণনা করা মুসলমানদের বিশেষ আমল সমূহের অন্তর্ভুক্ত।”
[শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মা সাবাতা বিসুন্নাহ, ৬০পৃ.]
❏ উস্তাদুল মুহাদ্দিসিন ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) (৯৫৮-১০৫২ হিঃ) বলেন,
اذا قلنا انه ولد ليلا فتلك الليلة افضل من ليلة القدر بلاشبهة لان ليلة المولودة ليلة ظهوره صلى الله عليه وسلم وليلة القدر معطاةله০
অর্থাৎ মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্রি শবে কদর হতে যে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ মাত্র নেই। কেননা মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত হল আল্লাহর হাবিব (ﷺ) এর দুনিয়াতে আবির্ভূত হওয়ার রাত্রি আর শবে ক্বদর হুজুর (ﷺ) কে আল্লাহ তা’য়ালা দান করেছেন।
● ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মাসাবাতা বিস সুন্নাহঃ ৭৭/৭৮ পৃষ্ঠা।
❏ ইমাম ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) [১৬৫৩-১৭২৫ ইং] বলেন-
ومن تعظيمه عمل المولد إذا لم يكن فيه منكر قال الامام السيوطي قدس سره يستحب لنا اظهار الشكر لمولده عليه السلام
-‘‘মীলাদ শরীফ করাটা হুযুর (ﷺ)-এর প্রতি সম্মান, যদি এটা মন্দ কথা বার্তা থেকে মুক্ত হয়। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, হুযুর (ﷺ)-এর বেলাদাতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের জন্য মুস্তাহাব।’’
[ইসমাঈল হাক্কী, রুহুল বায়ান, ৯/৫৬পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।]
❏ ইমাম শাহ্ আব্দুর রহীম দেহলভী (رحمة الله) [১৬৪৪-১৭১৯ ইং]
ইমাম শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মোহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) তাঁর স্বীয় পিতা হযরত শাহ্ আব্দুর রহীম দেহলভী (رحمة الله) এর সূত্রে উল্লেখ করে বলেন-
كنت اصنع في أيام المولد طعاما صلة بالنبي صلى الله عليه وسلم فلم يفتح لي سنة من السنين شئ اصنع به طعاما فلم اجد الا حمصا مقليا فقسمته بين الناس فرأيته صلى الله عليه وسلم بين يديه هذا الحمص مبتهجا وبشاشا-
-“আমি প্রতি বছর হুজুর (ﷺ) এর মিলাদে মাহফিলে খানার ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু এক বছর আমি খাবার যোগাড় করতে পারিনি। তবে কিছু ভুনা করা চনাবুট পেয়েছিলাম। অতঃপর আমি তা মিলাদে আগত মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলাম। পরে আমি স্বপ্নে হুজুর (ﷺ)কে বড়ই খোশ হাসেল তাশরিফ আনতে দেখলাম এবং তার সামনে মওজুদ রয়েছে উক্ত চনাবুট (যা আমি বন্টন করেছিলাম)।”
[শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, আদ-দুরুরুস সামীন, ৪০পৃ. ]
❏ ইমাম শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মোহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) (১৭০৩-১৭৬২ ইং) বলেন-
وكنت قبل ذالك بمكة المعظمة فى مولد النبى صلى الله عليه وسلم فى يوم ولادته والناس يصلون على النبى صلى الله عليه وسلم –
-“মক্কা মোয়াজ্জামায় হুজুর (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের দিন আমি এমন একটি মিলাদ মাহফিলে শরীক হয়েছিলাম, যাতে লোকেরা হুজুরের দরগাহে দুরূদ-ছালাতের হাদিয়া পেশ করছিল।”
[শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী, ফয়জুল হারামাঈন, ৮০-৮১পৃ.]
❏ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله)
(১১৯৮–১২৫২ হিঃ/ ১৭৮৩-১৮৩৬ ইং)
আল্লামা ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) মাওলিদ উন নবী উদযাপনকে তিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহান কর্ম বলে অভিহিত করে আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) এর মাওলিদ গ্রন্থের ব্যখ্যায় বলেন,
জেনে রেখো,রাসূল (ﷺ) যে মাসে শুভ আগমণ করেছেন, সে মাসে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে অনুষ্টান করা একটি উত্তম বিদাত (বিদআতে হাসানা)। তিনি আরো বলেন- রাসূল (ﷺ) ওনার জন্ম কাহিনী ও জীবনী শোনার এবং দুরুদ- সালামের মাহফিল অনুষ্ঠান করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
● আল কাওলুল মুতামাদ ফিল মাযহাবিল হানাফী, আল আদিল্লাতু ফি জাওয়াজিল ইহিফায়ি ওয়াল ইহতেফালু বি মাওলিদি সাইয্যিদাল বাসির (ﷺ).
❏ হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) [১১৯৮-১২৫২ হিঃ] বর্ননা করেন,
أَنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِي لَيْلَةُ مَوْلِدِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيدِ
অর্থ: রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছেঃ
– পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত,
– অতঃপর লাইলাতুল কদরের রাত,
– অতঃপর মিরাজ শরীফের রাত,
– অতঃপর আরাফার রাত,
– অতঃপর জুমুয়ার রাত,
– অতঃপর ১৫ শাবানের রাত,
– অতঃপর ঈদের রাত।”
● ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) : রদ্দুল মুহতার আলা আল দুররুল মুখতার (হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব) : ৮/২৮৫ (শামেলা) , পুরাতন ছাপা ৫০৫ পৃষ্ঠা।
❏ ইমাম জামাল উদ্দিন আল কাতানী (رحمة الله) :
শায়খ ইমাম জামাল উদ্দিন আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল মালিক আল কাতানী (رحمة الله) পবিত্র মিলাদ সম্পর্কে লিখেন,
রাসূল (ﷺ) এর জন্ম দিনে বা অন্য কোন সময়ে ওনার জন্ম কাহিনী ও ঘটনাবলী আলোচনা করা
সম্মান, বুযুর্গী ও মাহত্ব লাভের জন্য নাযাত লাভের কারণ এবং তার জন্ম দিনে যারা আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করে তাদের পরকালে শাস্তি হালকা ও কম হওয়ার কারণে পরিণত হয়।
● সুবুলুল হুদা ওয়ার রাসাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ-১ম খন্ড-পৃস্ঠা নং-৩৬৪.
❏ ইমাম জহীর উদ্দিন ইবনে জাফর (رحمة الله):
ইমামুল আল্লামা জহীর উদ্দিন ইবনে জাফর (رحمة الله) পবিত্র মিলাদ শরীফ সম্পর্কে লিখেন,
শরীয়াতে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান করা হচ্ছে বিদাতে হাসানা। অনুষ্ঠানকারী লোকদের সমবেত করে অনুষ্টান করতে চাইলে সকলে হুযুর পাক (ﷺ) ওনার প্রতি দুরুদ পাঠ করতে এবং গরীব মিছকিনদের পানাহার করাতে ইচ্ছা করলে, এ নিয়মে ও এ শর্তে মিলদুন্নবী অনুষ্টান করলে এ জন্য তখন তাকে (আল্লাহ) ছ্ওয়াবও প্রদান করেন।
● সুবুলুল হুদা ওয়ার রাসাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ-১ম খন্ড-পৃস্ঠা নং-৩৬৪.
❏ ইমাম ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৮৪৯-১৯৩২ হিঃ)
ইমাম ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৮৪৯-১৯৩২ হিঃ) উল্লেখ করেন, বিশ্ব বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা তাহাবী (رحمة الله) ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) এর কওল নকল করে বলেন,
“নিশ্চয়ই ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম রাত হলােঃ
১) রাসূল (ﷺ) এর জন্মদিনের রাত্র অর্থাৎ মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্র (১২ই রবিউল আউয়াল)
২) তারপর হলাে শবে-ই-কদরের রাত্র।
৩) তারপর হলাে মিরাজের রাত্র (২৭ শে রযব)
৪) তারপর উত্তম রাত্র হলাে লাইলাতুল আরাফা (৯ই জিলহজ্জ)
৫) তারপর হলাে জুমার রাত্র
৬) তারপর হলাে ১৫ই শাবানের রাত্র (শবে বরাত) এবং
৭) তারপর দুই ঈদের রাত্র।
● শায়খ ইউসুফ নাবহানীঃ জাওয়াহিরুল বিহারঃ ৩/৪২৬ পৃ
❏ ইমাম শায়খ ইউসুফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) লিখেন-
وليلة مولده صلى الله عليه وسلم أفضل من ليلة القدر
-‘‘শবে ক্বদর হতে মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর রাত উত্তম।’’
● আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : আনওয়ারে মুহাম্মাদিয়াহ, ২৮পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় নেতা আশরাফ আলী থানভী [১৮৬৩-১৯৪৩ ইং]
কিতাবঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
লেখকঃ আশরাফ আলী থানভী [১৮৬৩-১৯৪৩ ইং]
[বিষয়ের প্রতি সঙ্গতি ও সম্মতিপূর্ণ মিল রেখে পৃষ্ঠা নং ৩৬,৩৭,৩৮, ৪০, ৮০ এর ভাষ্য হুবুহু বই থেকে তুলে ধরা হল, আধিক্যতা পরিহার করতে অন্যান্য পৃষ্ঠা বাদ দেয়া হল➡মাসুম বিল্লাহ সানি]
❏ পৃষ্ঠা নং ৩৬ :
ইলাহী— যার মাধ্যমে পরকালীন মুক্তি পাওয়া যাবে, জান্নাত লাভ হবে, দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জিত হবে এবং যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মাধ্যমে আমরা অর্জন করতে পেরেছি, তা আজ আলােচনার বিষয়বস্তুই থাকে না। মানুষ তা সম্পূর্ণই ছেড়ে দেয়। অথচ এ বিষয়গুলাে
আলােচনা করা বেশি প্রয়ােজন। কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আবির্ভাবের বরকত ও কল্যাণ তাে সুস্পষ্ট। তাঁর “নূরের” ওসীলাতেই সমগ্র বিশ্বজগত অস্তিত্ব লাভ করেছে। পক্ষান্তরে ঈমান ও আমলে সালেহ্-এর কল্যাণ কিয়ামত দিবসে এবং জান্নাতে প্রকাশিত হবে। আর দুনিয়ায় এতদুভয়ের প্রতি মানুষ চরম উদাসীন। তাই এ বিষয়গুলাে আলােচনা করাই অধিক যুক্তিযুক্ত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আবির্ভাবের নিদর্শন তাে এই যে, তাঁর ওসীয়লায় আমরা দুনিয়ায় অস্তিত্ব লাভ করেছি।
❏ শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর আগমন অনেক বিরাট নিয়ামতঃ
সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা’আলার প্রতিটি নি’আমত শােকর ও কৃতজ্ঞতার দাবি রাখে।
বিশেষতঃ যদি তা বড় কোন নি’আমত হয়। উপরন্তু যদি তা দ্বীনী নি’আমত হয়, আবার দ্বীনী নি’আমতসমূহের মধ্যেও সর্বশ্রেষ্ঠ নি’আমত। তন্মধ্যেও যদি এমন বিশেষ নি’আমত হয়, যা সমস্ত দ্বীনী ও দুনিয়াবী নি’আমতের উৎস। এ নিআমত হলাে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভ আগমন। কারণ, জাগতিক সকল নিআমতের উৎসও তিনিই। শুধু মুসলমানদেরই জন্য নয়; বরং সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
“হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়া ১০৭)
এর থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেলাে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন প্রতিটি বস্তুর জন্য রহমতস্বরূপ; চাই তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগের পূর্বের হােক বা পরের হােক। কারণ, আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একটি অস্তিত্ব সবকিছুর পূর্বে সৃষ্টি করেছেন। তা হলাে তার নূরের অস্তিত্ব।
❏ পৃষ্ঠা নং ৩৭ঃ
তিনি তাঁর নূরের অস্তিত্বের দিক থেকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন।
এ উম্মতের জন্য সৌভাগ্য যে, উক্ত নূর দৈহিক তিতে রূপান্তরিত হয়ে গােটা বিশ্বজাহানকে আলােকিত করে দিয়েছে।
সুতরাং, রাসলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত এবং তার আগমন সর্বশ্রেষ্ঠ নি’আমত হওয়া প্রমাণ ও যুক্তির নিরিখে সুপ্রমাণিত। যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অস্তিত্ব সকল নি’য়ামতের উৎস। আর যে কোন নি’আমতের ওপর কৃতজ্ঞতা আদায় ও আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন,
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ
অর্থাৎ, (হে রাসূল ﷺ !) আপনি বলে দিন, তারা যেন শুধু আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার ওপর আনন্দিত হয়। কারণ, তা দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।
এ আয়াতে আদেশসূচক ক্রিয়াপদ বিদ্যমান। তাতে আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং এ আনন্দ প্রকাশের ওপর কে নিষেধাজ্ঞা আরােপ করতে পারে? এমন কোন মুসলমান আছে, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমণের ওপর আনন্দিত হবে না কিংবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?”
আয়াতের পূর্বাপর অবস্থার আলােকে যদিও প্রতীয়মান হয় যে, তাতে বিদ্যমান “রহমত” ও “ফজল” শব্দদ্বয়ের অর্থ হলাে কুরআনুল কারীম’। কিন্তু যদি এমন ব্যাপক অর্থ উদ্দেশ্য করা হয় যে ব্যাপক অর্থের একটি অংশ কুরআনুল কারীম, তাহলে তা অধিক সমীচীন হবে। উক্ত ব্যাপক অর্থ হলাে, “ফজল” ও “রহমত” দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন উদ্দেশ্য।
এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী দ্বীনী ও দুনিয়াবী সমস্ত নি’আমত এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বত্ত্বা সর্বপ্রকার নি’আমত, অনুগ্রহ ও রহমতের মূল উৎস । আয়াতের এ ব্যাখ্যাটি অন্য সব ব্যাখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। এ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে আয়াতের সারকথা এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সত্তার ওপর, চাই তা তার নূরের সত্তা হােক কিংবা বাহ্যিক অবয়বগত হােক, আনন্দিত হওয়া আবশ্যক। কারণ, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের জন্য সমস্ত নি‘আমতের মাধ্যম। আমরা যে দু’বেলা আহার লাভ করছি, সুস্থ-সবল থাকছি এবং আমাদের যাবতীয় ইলম ও জ্ঞান সবই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উসীলায়। সকল অনুগ্রহ ও রহমতের আঁধার হলেন হুযূর পাক (ﷺ) এর সত্তা। সুতরাং এমন বরকতপূর্ণ সত্তার আগমনে যতই আনন্দ প্রকাশ করা হোক না কেন, তা যথেষ্ট নয়। মোটকথা, উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, এ মহান নি’য়ামতের উপর আনন্দিত হওয়া অতি আবশ্যক।
[পৃষ্ঠা নং ৩৬,৩৭,৩৮ এর ভাষ্য সমাপ্ত]
❏ পৃষ্ঠা নং ৪০ :
“আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন সম্পর্কে এমন ধারণা করা যে, তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জন্মবৃত্তান্ত আলােচনা কিংবা তার আগমনে আনন্দ প্রকাশ করতে বাধা দেন, এটা সম্পূর্ণ অপবাদ ও মিথ্যা আরােপ ব্যতীত কিছুই নয়। আল্লাহ মাফ করুন। আমরা কিছুতেই বাধা প্রদান করি না। বরং বলি যে, প্রতিটি কাজের একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যদি তা উক্ত নিয়ম অনুযায়ী করা হয়, তবেই গ্রহণযােগ্য হবে। অন্যথা তা অগ্রহণযােগ্য ও নিষিদ্ধ গণ্য হবে।
–
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র জন্মবৃত্তান্ত আলােচনা অবশ্যই ইবাদত। কিন্তু দেখতে হবে যে, ইসলামী আইনজ্ঞগণ- অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম, যাদের অনুসরণ করা আমাদের ওপর আবশ্যক, তারা এ ইবাদত কিভাবে করেছেন। যদি তারা প্রচলিত পদ্ধতিতে করে থাকেন, তাহলে তা থেকে নিষেধ করার সাধ্য কার আছে? আর যদি এ পদ্ধতিতে না করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তা নিষিদ্ধ হওয়ার যােগ্য।
এবার বলুন, আমরা কিভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবন ও জন্মবৃত্তান্ত আলােচনায় বাধা দানকারী হলাম?
❏ শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শুভাগমনে আমরা অধিক আনন্দ প্রকাশ করিঃ
সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াতের ওপর আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ আমরা অধিক পালন করি। কারণ, প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী পালনকারীগণ গােটা বছরে একবারই শুধু আনন্দ প্রকাশ করে। অন্য সময় তাদের আনন্দ শেষ হয়ে যায়। আর আমরা সদা আনন্দিত থাকি।”
[আশরাফ আলী থানভী রচিত “শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) ” পৃষ্টা নং ৪০ সমাপ্ত হল]
❏ পৃষ্ঠা নং ৮০ : শিরোনামঃ বারই রবিউল আউয়াল সােমবার রােযা রাখাঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পক্ষ থেকে যে সব কাজের অনুমতি রয়েছে, তা অবশ্যই করা উচিত। যেমন, তিনি তাঁর জন্মগ্রহণের দিন রােযা রেখেছেন এবং বলেছেন—
“এটি এমন দিন, যে দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি।”
সুতরাং আমাদের জন্যও উক্ত দিন (সােমবার) রােযা রাখা সুন্নাত। তা ছাড়া সােমবার দিবসে আল্লাহ তা’আলার সামনে বান্দার আমলনামা পেশ করা হয়। ফলে এ উভয়ের সমষ্টি রােযা রাখার কারণ হতে পারে। আর যদি শুধু এককভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মগ্রহণকেই কারণ বলা হয়, তাহলেও দোষের কিছু নেই। তবে শুধু ততটুকু করারই অনুমতি থাকবে, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে প্রমাণিত রয়েছে।
❏ আবু লাহাব-এর ঘটনা দ্বারা যুক্তি পেশ ও তার জবাব:
বিদ্আতপন্থীরা আরেকটি যুক্তি পেশ করতে পারে যে, আবু লাহাব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মগ্রহণের সংবাদ শুনে আনন্দের অতিশয্যে একটি কৃতদাসী মুক্ত করে দিয়েছিলাে । এ কারণে তার ওপর শাস্তি লাঘব করে দেয়া হয়েছিল। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মগ্রহণের ওপর আনন্দ প্রকাশ জায়েয ও বরকত লাভের উপায়। তার কথাগুলাে পড়ে এ যুক্তির জবাবও সুস্পষ্ট। আমরা নিছক আনন্দিত হতে নিষেধ করি না। আনন্দ তাে আমরা প্রতি মুহূর্তেই বােধ করি। আমাদের বক্তব্য তাে সেই বিশেষ পদ্ধতি সম্পর্কে, যা নিজেরা আবিষ্কার করে রেখেছে। [পৃষ্ঠা নং ৮০ এর ভাষ্য সমাপ্ত]
❏ মাওলানা মুহাম্মদ শফী (তাবলিগের শীর্ষস্থানীয় নেতা)
তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা বাকারাহ-এর তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ৬৪ এর বাম কলামে “রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জন্মের বৈশিষ্ট্য” শিরোনামের আলোচনায় রয়েছেঃ
রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর মিলাদ/জন্ম বৈশিষ্ট্যঃ মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে উদ্ধৃত এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (ﷺ) বলেনঃ ‘আমি আল্লাহর কাছে তখনও পয়গম্বর ছিলাম, যখন আদম (عليه السلام)-ও পয়দা হয়নি; বরং তাঁর সৃষ্টির জন্য উপাদান তৈরি হচ্ছিল মাত্র। আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছিঃ আমি পিতা হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)-এর দোয়া, ঈসা (عليه السلام)-এর সুসংবাদ এবং স্বীয় জননীর স্বপ্নের প্রতীক। ঈসা (عليه السلام)-এর সুসংবাদের অর্থ তাঁর এ উক্তি وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ (আমি এমন এক পয়গম্বরের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন। তাঁর নাম আহমদ। ৬১/৬।) তাঁর জননী গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে, তাঁর পেট থেকে একটি নুর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকোজ্জল করে তুলেছে। কোরআনে হুযুর (ﷺ)-এর আবির্ভাবের আলোচনা প্রসঙ্গে দু’জায়গায় সুরা আলে-ইমরানের ১৬৪ তম আয়াতে এবং সুরা জুমু’আয় ইবরাহীমের দোয়ায় উল্লেখিত ভাষারই পূনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) যে পয়গম্বরের জন্যে দোয়া করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)।”
[সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সুরা বাকারাহ-এর তাফসীর প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা ৬৪-এর বাম কলামে “রসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জন্মের বৈশিষ্ট্য” শিরোনামের আলোচনা।]