বাশার শব্দের ব্যাখ্যা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

★১. কিছু লোক দেখা যায় যে, যখনই আমরা বলি রাসূল (ﷺ) আমাদের মত নন বা তখন তারা সূরা কাহাফের ১১০ নং আয়াতের বাংলা অর্থ তুলে ধরেন।আজকে সেই বিষয়ে ইনশাআল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো:
🎷সূরা আল কাহাফ🎷
🌹 ১১০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা 🌹

قل انما انا بشر مشلكم يوحي الي

অর্থ : হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আঁপনি বলুন আঁমি তোমাদের মেছাল একজন বাশার বা মানুষ,তবে আঁমার প্রতি ওহী নাযিল হয় !”
[সূরা কাহাফ,আয়াত নং ১১০]

😍😍 ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন😍😍

*(ক.) এখানে আরবী শব্দ بَشَرٌ (বাশার) দ্বারা তারা শুধুমাত্র মানুষ বুঝাতে চায়। অথচ সূরা মরিয়মের ১৭ নং আয়াতে بَشَرً (বাশার) দ্বারা ফেরেস্তাকে বুঝানো হয়েছে।আপনারাই দেখুন সূরা মরিয়মে কি বলা হয়েছে
فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا

অর্থঃ আঁমি আঁমার রুহ (হযরত জিব্রাইল আঃ) কে তাঁর (হযরত মরিয়ম) প্রতি প্রেরণ করেছি, অতঃপর সে (জিব্রাঈল আঃ) তাঁর সামনে একজন পূনাঙ্গ সুঠোম \”বাশার\” বা মানুষ এর আকৃতিতে আত্ম প্রকাশ করেছেন।

✌তাহলে এখন কি বলা যাবে ফেরেস্তারা (হযরত জীব্রাইল আলাইহিস সালাম) আমাদের মত মানুষ? কখনও নয়।সুতরাং, এর দ্বারা বুঝা গেল بَشَرٌ (বাশার) শব্দ দ্বারা মানুষ বুঝায় না বরং মনুষ্য আকৃতি বুঝায়।

✌তার সপক্ষে আরেকখানা আয়াত লক্ষ্য করুন:
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكًا لَجَعَلْنَاهُ رَجُلًا وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِمْ مَا يَلْبِسُونَ
অর্থঃ যদি আঁমি কোন ফেরেশতাকে রসূল করে পাঠাতাম,তবে সে মানুষের আকারেই হত।এতেও ঐ সন্দেহই করত, যা এখন করছে।
[সূরা আল আনআম,আয়াত নং ৯]

*(খ.) بشر مثلكم শব্দটা উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ” মেছাল” শব্দটা দৃষ্টান্তের জন্য ব্যাবহার হয়। এ প্রসঙ্গে আক্বায়িদের কিতাবে উল্লেখ আছে:

الرسول انسان بعثه الله تعالي الي الخلق لتبليغ الاحكام
অর্থ: শরীয়তের পরিভাষায় রাসূল এমন একজন বাশার কে বলা হয়, যাকে আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির জন্য পাঠিয়েছেন !”
[শরহে আক্বাইদে নসফী ]

*(খ) প্রকৃতপক্ষে হাক্বীক্বী অর্থ করলে হয় “হে আঁমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আঁপনি ওই মুশরিকদের বলে দিন যে,আঁমি তোমাদের মেছাল (ছূরতান) একজন মানুষ,(হাক্বীক্বতান আঁমি শ্রেষ্ঠতম রাসূল) আঁমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে।

*(গ)কুল- বলুন, ইন্না-নিশ্চয়ই,মা -(কি,না), আনা বাশারুম- আঁমি বাশার(মানুষ),মিস্ লুকুম-তোমাদের মতো, ইউহা – ওহি করা হয়, ইলাইয়া-আঁমার দিকে, আন্নামা-যে, ইলাইকুম-তোমাদের ইলাহা, ইলাহুন-ইলাহা, ওয়াহিদুন -এক।

সম্পৃর্ণ অর্থ দাঁড়ায়- বলুন,নিশ্চয়ই আঁমি কি বাশার(মানুষ) তোমাদের মতো ? আঁমার দিকে ওহি করা হয় যে তোমাদের ইলাহাই একই ইলাহা।আদম সন্তান যে উপাদানে সৃষ্টি , তিঁনি ও সে উপাদানে সৃষ্টি এরকম কথা এখানে বলা হয়নি।

প্রথম অংশ- নিশ্চয়ই আঁমি কি বাশার (মানুষ) তোমাদের মতো ? যেহেতু বাক্যংশটুকু “হ্যাঁবোধক” তাই এর অর্থ হবে “নাবোধক”অর্থাৎ এ অংশই বলে দিচ্ছে তিঁনি আমাদের মতো নন ।

এর পরের অংশে বলা হচ্ছে- আঁমার দিকে ওহি করা হয় বা আঁমার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়। এ অংশই বলে দিচ্ছে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এঁর কাছে ওহি আসত।

*(ঘ)এখানে কুল -আমরে হাজর ওয়াহেদ, ইন্নামা হা যা কালিমায়ে হসর । এখানে কালিমায়ে হসর এসেছে একমাত্র অর্থ দেওয়ার জন্য।”কুল ইন্নামা” এর অর্থ হে নবী দরূদ ও সালাম একমাত্র আঁপনার জবানে আঁপনি বলুন,আনা -আমি , বাশারুম-মানে জিন্দুন।

জিন্দুন মানে চামড়া/নমুনা/সুরুত অর্থাৎ আমি নকশায় নমুনায় দেখতে, উপরের কভারের দিক দিয়ে, মিছলুকুম -তোমাদের মতই মানুষ ।

এখানে কথাটি শুধু রাসুলের ক্ষেত্রে খাছ।দুনিয়ার অন্য কারোও জবানে একথা বলা নিষিদ্ধ।কোন কারনে, কাদের উদ্দেশ্য নাযিল করা হল।আবার এখানে একদিকে “বাশার” শব্দ,আরেক দিকে “ওহী “শব্দ কেন লাগানো হল? তা বুঝতে হবে।

*(ঙ)হে নবী আঁপনি বলুন! আঁমি তোমাদের মত।উক্ত আয়াতে আল্লাহ রাসূল(দঃ) কে জনসম্মুখে বাশার বলার উদ্দেশ্য হল বিনম্রতা প্রকাশ করার জন্য।যেমনঃ কোন রাজা তার প্রজাদের উদ্দেশ্য যদি বলেন “আমি তো আপনাদের গোলাম,আপনাদের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছি।” তাহলে এখন প্রজারা যদি রাজাকে গোলাম বলে ডাকে, তাহলে অবস্থা কি দাঁড়াব? একবার ভাবুন।
[তাফসীরে কবির,৫ম খণ্ড,৫১৬পৃঃ]

👏বিশ্ববিখ্যাত তাফসির রুহুল বয়ান ও জালালাইন শরীফ এ আর ও বলা হয়েছে, ”আল্লাহ নিঁজে এই কথা বলে রাসুল কে উদারতা শিক্ষা দিয়েছেন।

*(চ)এটি আয়াতে মুতাশাবিহাত!?!আল্লামা আব্দুল হক মোহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) বলেন
قل انماانابشرمثلكم
“কুল ইন্নামা আনা…….. ” এরকম যত আয়াত আছে এগুলো হল মুতাশাবিহাত।
[মাদারেজুন নবুয়্যত,১ম খণ্ড,অধ্যায়, ওয়াচলে ইজলাতুস শুবাহাত]

*(ছ).আল্লামা জালালউদ্দীন সূয়তী (রহঃ) বলেন “আল কোরআনে যে সমস্ত আয়াতে مثلكم শব্দটি এসেছে, এইগুলি আয়াতে মুতাসাবিহাতের আওতাভুক্ত।মুতাসাবিহাত এর অর্থ আল্লাহ এবং রাসুল ছাড়া কেও জানেনা,তাই সর্বসম্মতিক্রমে এই আয়াত দ্বারা কোনো দলিল হতে পারেনা।

[আল ইতকান ফি উলুমিল কুরআন,২য় খণ্ড,৩ পৃঃ]

*(জ)আয়াতে মুতাশাবিহাতের ব্যপারে কোরআনের সতর্কবানী দেখুনঃ তিঁনি আঁপনার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন যাহার কিছু আয়াত “মুহকাম” এই গুলো কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো “মুতাশাবিহ্” যাহাদের অন্তরে সত্য লংঘন করার প্রবনতা রয়েছে,শুধু তাহারাই ফিতনা ও ভুল ব্যখ্যার উদ্দেশ্য মুতাশাবিহাতের অনুসরন করে।

*আল্লাহ ব্যতীত ইহার ব্যখ্যা অন্য কেহ জানে না।আর যাহারা জ্ঞানে সুগভীর তাহারা বলে” আমরা ইহা বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে আগত; এবং বোধশক্তি সম্পূর্নরা ব্যতীত অপর কেহ ইহার শিক্ষা গ্রহন করে না।”

[সূরা আল ইমরান,আয়াত নং ৭, তাফসীরে ইবনে কাসীর]
সুতরাং কুল ইন্নামা আনা……..কোন দলিল গ্রহন করা যাবে না।

*(ঝ.) মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী মসনবী শরীফে বলেন- কাফিররাই হজরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বশর বলেছিল, কিন্তু তারা দেখে না যে,তিঁনি চন্দ্র কে দিখন্ডিত করেছিলেন,তারা বলেছিল “আমরা যেমন বশর নবীও আমাদের মত বশর” যেমন-ঘুমাই,পানাহার করে,তারা অজ্ঞাত ছিল যে,আমাদের এবং নবীদের মধ্য বেশুরম পার্তক্য রয়েছে।

✌মূল কথা হল: ঈসা(আ:) এঁর কিছু মোজেযা ছিল কিন্তু তাই দেখে উঁনাকে ইশ্বরের পুত্র বলা শুরু করল সবাই।রাসূল (ﷺ) কে যেন এমনকিছু না মনে করেন সেজন্য কিছু হাদিসে নবী এবং মানুষ এর বেশি না ভাবার জন্য সতর্কও করেছেন।এর মানে এটাই সীমার বাইরে গিয়ে কেউ যেন কুফরি না করেন।রাসূল (ﷺ) এঁর সারাটা জিন্দেগি ছিল অসীম মোজেযার সাগর তাই দেখে কাফিররা ফতোয়া দিল জাদুকর,রহমতের নবীকে সাধারন মানুষ ভয় পেয়ে দূরে সরতে থাকে তখন সেই পরিস্থিতিতে আল্লাহ কি ওঁনাকে শিখিয়ে দিয়ে এই আয়াত নাযিল করলেন যে: বলুন ”হে রাসূল ! আঁমিও তোমাদের মত মানুষ “।কেননা এই কথার দ্বারা রাসূলের বিনম্রতা তথা উদারতা প্রকাশ পেয়েছে।তার মানে এই নয় যে,তিঁনি আমাদের মত।(নাউযুবিল্লাহ)। কারন তিঁনি বেমেসাল মাখলুক।

*(ঞ.) এবার কোরআন শরীফের দুটি ভিন্ন আয়াতে কি বলা হয়েছে দেখুন:
ينساء النبى لستن كاحد من النساء

অর্থ: হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম! অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আঁপনারা অন্য কোন মহিলাদের মতো নন।
[সূরা আহযাব,আয়াত নং ৩২]

✌এখানে রাসূল (ﷺ) এঁর স্ত্রীগনকে সরাসরি বলা হয়েছে” আঁপনারা জগতের অন্য কোন মহিলার মত নন।”সেখানে উম্মতের কাণ্ডারী, রাহমাতুল্লীল আলামীন নবীজি কি করে আমাদের মত হন?? কেনই বা উঁনার সাথে তুলুনা হবে??

👏আবার ও লক্ষ্য করুনঃ

من اتخذ الهه هواه واضله الله على علم وختم على سمعه وقلبه وجعل على بصره غشاوة

অর্থ: “যে ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিকে স্বীয় উপাস্য স্থির করে নেয়, মহান আল্লাহ পাক তিঁনি জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দেন এবং তার চোখের উপর আবরণ বা পর্দা রেখে দেন।”
[সূরা আল-জাসিয়াহ,আয়াত নং ২৩]

কেননা
يوحى الى
অর্থাৎ “আঁমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে” এ বাক্যটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনাকে অন্য মানুষ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কেননা অন্য মানুষের নিকট ওহী মুবারক আসে না।

👌এখন জেনে শুনে, ইচ্ছা করে যদি কেউ রাসূলকে আমাদের মত মানুষকে রাসূলের সাথে তুলনা করে,তাহলে তার পরিনতি কি হবে? যা আল্লাহ তায়ালা তা সূরা জাসিয়াহর ২৩ নং আয়াতে বলে দিয়েছেন।

🌹কোরআন শরীফে এমন অনেক আয়াত রয়েছে যেখানে আল্লাহ নবী রাসূলগনকে প্রেরন করেছেন পাঠিয়েছেন, হিদায়াতকারী, পথ-প্রদর্শক রূপে ইত্যাদি। রাসূলের বেলায় আল্লাহ কত সুন্দর উপমা ব্যবহার করে আয়াতে কারীমা নাযিল করলেন।যেমনঃ ইয়াসীন(ﷺ)। আর আমাদের বেলায় কি তা হয়েছে? না হয় নি।আবার রাসূলকে স্বয়ং আল্লাহ কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।এ কথা কেন আল্লাহ প্রকাশ করলেন? এটাতো গোপন থাকলে ও হতো। এটার হাকিকত হল “ওহে জগতবাসী! আঁমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আঁমি আল্লাহ স্বয়ং কোরআন শিক্ষা দিয়েছি অর্থাৎ এলেম শিক্ষা দিয়েছি মানে হল আমার হাবিবের শিক্ষক স্বয়ং আঁমি আল্লাহ”।
[সূরা আর-রাহমান,আয়াত নং ২]

👏এখন আমাদের ক্ষেত্রে কি তা সম্ভব? কখনো তা সম্ভব নয়।আর আমাদের বেলায় এরকম একটি উদাহরন দেখান।আল্লাহর নামে শপথ করে বলতেছি; যদি দেখাতে পারেন তাহলে সরাসরি ঘোষনা দিয়ে মেনে নিব।
😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍
মূলত:নবী রাসূল আলাহিমুস সালাম উঁনাদেরকে নিজেদের মত মানুষ বলাটা কাফের-মুশরিকদের রীতি।
♠♠♠♠লক্ষ্য করুন♠♠♠♠

**১. হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উঁনার ক্বওম এবং আদ ও ছামূদ গোত্রের লোকেরা হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে বেয়াদবী করে বলেছিলো-
ان انتم الا بشر مثلنا
অর্থাৎ আঁপনারা তো আমাদের মতোই বাশার (মানুষ)।
[সূরা ইব্রাহীম,আয়াত নং ১০]

**২. হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উঁনার জাতির সর্দারেরা উঁনার রিসালাতকে অস্বীকার করে নিজেদের অনুসারীদের বলতো,
فقال الملؤا الذين كفروا من قومه ماهذا الابشر مثلكم
অর্থ : তাঁর জাতির সর্দারেরা তাদের অনুসারীদের বলল,”এ লোকটি তোমাদের মতই একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নয় !”
[ সূরা মু’মিনুন,আয়াত নং ২৪]

**৩. হযরত হূদ আলাইহিস সালাম উঁনার সম্পর্কে কাফিরেরা বলেছিলো-
ما هذا الا بشر مثلكم ياكل مما تاكلون منه ويشرب مما تشربون

অর্থাৎ এই লোকটি তিঁনি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। তোমরা যা আহার করো, তিঁনিও তা আহার করেন এবং তোমরা যা পান করো তিঁনিও তা পান করেন।
[সূরা মু’মিনূন,আয়াত নং ৩৩]

✌পরের আয়াতেই সাধারণ মানুষের আনুগত্য করলে ধবংস হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে!
ﻭَﻟَﺌِﻦْ ﺃَﻃَﻌْﺘُﻢ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻣِﺜْﻠَﻜُﻢْ ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﺇِﺫًﺍ ﻟَّﺨَﺎﺳِﺮُﻭﻥَ

অর্থঃ যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের আনুগত্য কর,তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
[সূরা আল মুমিনূন,আয়াত নং ৩৪]

**৪. ফিরআউনের লোকেরা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উঁনাদের ব্যাপারে বলেছিলো
انؤمن لبشرين مثلنا
অর্থাৎ আমরা কি আমাদের মতোই দু’জন বাশার তথা মানুষ উঁনাদের উপর ঈমান আনবো।
[সূরা মু’মিনূন,আয়াত নং ৪৭]

**৫. কাফির সর্দাররা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উঁনাকে বলেছিলো
ما نراك الا بشرا مثلنا
অর্থাৎ আমরা তো আঁপনাকে আমাদের মতোই (বাশার) মানুষ দেখতে পাচ্ছি।
[সূরা হুদ,আয়াত নং ২৭]

**৬. সামুদ জাতির লোকেরা হযরত সালেহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেছিলো —
قالوا انما انت من المسحرين ما انت الا بشر مثلنا
অর্থ : তোমাকে যাদু করা হয়েছে। তুঁমি আমাদের মত মানুষ ছাড়া আর কি ?
[সূরা আস শুয়ারা,আয়াত নং ১৫৩- ১৫৪ ]

**৭. হযরত শু’আইব আলাইহিস সালাম দাওয়াত দিতে গেলে বলা হয়েছিল কাফির-মুশরিকরা বলত

ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻧﺖَ ﺇِﻟَّﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻨَﺎ ﻭَﺇِﻥ ﻧَّﻈُﻨُّﻚَ ﻟَﻤِﻦَ ﺍﻟْﻜَﺎﺫِﺑِﻴﻦَ
অর্থঃ তুঁমি আমাদের মত মানুষ বৈ তো নও। আমাদের ধারণা-তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
[সূরা আস-শুয়ারা,আয়াত নং ১৮৬]

**৮. ইনতাকিয়া শহরের অধিবাসীরা ও ঈসা আলাইহিস সালাম উনার প্রতিনিধিদের বলেছিলো
قالوا ما انتم الا بشر مثلنا
অর্থ – তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ !”
[সূরা ইয়াসিন,আয়াত নং ১৫]

**৯. নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার সম্পর্কে ও কাফিরেরা বলেছিলো-
هل هذا الا بشر مثلكم افتاتون السحر وانتم تبصرون.
অর্থ: “ইনি তো তোমাদের মতো ‘বাশার’ ব্যতীত কেউ নন। তা সত্ত্বেও কি তোমরা দেখে শুনে জাদুর শিকার হবে।”
[সূরা আম্বিয়া,আয়াত নং ৩]

**১০. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার সম্পর্কে তারা আরো বলতো-
مال هذا الرسول ياكل الطعام ويمشى فى الاسواق
অর্থ: “ইঁনি কেমন রাসূল যিঁনি খাদ্য খান এবং বাজারে যান।”
[সূরা ফুরকান,আয়াত নং ৭]

**১১. মক্কার কাফির ওলীদ বিন মুগীরা সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার সম্পর্কে বলেছিলো-
ان هذا الا قول البشر
অর্থাৎ, ইহা তো মানুষের কথা ছাড়া আর কিছু নয়।
[সূরা মুদ্দাছ্ছির,আয়াত নং ২৫]

**১২. অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে

وَلَا تَأْكُلُوا۟ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ ٱسْمُ ٱللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُۥ لَفِسْقٌ وَإِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَٰدِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ
“আর নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে ওহী করে,যেন তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করে।যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরা ও মুশরেক হয়ে যাবে।”
[সুরা-আন আম,আয়াত নং ১২১]

👏সুতরাং উল্লেখিত পবিত্র আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামগনকে নিজেদের মতো মানুষ বলা কাফিরদের অন্যতম একটি স্বভাব।
[এখন মানা,না মানা যার যার ব্যক্তগত ব্যপার।]

★২. রাসূল (ﷺ) আমাদের মত নন হাদিস শরীফের আলোকে প্রমান:

*(ক.) হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم ليكم مثلي

অর্থ- হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্নিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,তোমাদের মধ্যে আঁমার অনুরূপ কে রয়েছো ?
[ বুখারী শরীফ ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৭ ]অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে কেউই আঁমার মত নয়।বা আঁমি তোমাদের কারো মত নই। তাই জনৈক কবি বলেছেন, “হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাশার,তবে তিঁনি অন্যান্য বাশারের মত নন। যেরূপ ইয়াকুত পাথর অন্যান্য পাথরের মত নয়।”

👏হযরত মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল আলী লখনবী “মীর যাহিদ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,“আল্লাহ সুবহানু তা’আলা তাঁর হাবীব হুযূর কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সমস্ত বিষয়েরই ইল্‌ম দান করেছেন,যা মহান আল্লাহ পাক এঁর মহান কুদরতী কলম বা কলমে আ’লার আওতায়ও আসেনি। যা লাওহে; মাহ্‌ফুজও আয়ত্ব করতে পারেনি। কস্মিনকালেও সৃষ্টির শুরু থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত তাঁর মত কেউ পয়দা হয়নি,কেউ তাঁর সমকক্ষ হবে না

*(খ.) হাদীস শরীফে আরো বর্নিত আছে-

عن ابي سعيد رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم اني لست كهيتكم

অর্থ : হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্নিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আঁমি ছুরতান বা আকৃতিগত ভাবেও তোমাদের মত নই।”
[বুখারী ১/২৬৩,ফতহুল বারী ৪/১৬৫]

*(গ.) রাসূল (ﷺ) বলেন , “তোমাদের কে আছো আঁমার মত?” “আঁমি তোমাদের কারো মত না!” “তোমাদের কেহ আঁমার অনুরূপ (সাদৃশ, শামিল, এক রকম) না, আঁমি যখন রাতে ঘুমাই তখন আল্লাহ্ আঁমাকে আহার করান এবং পান করান”।
[ বুখারী শরীফ:৩/১৮২-৮৫,১৮৭, ১৮৮; ৯/৯০/৩৪৭,৩৪৮]

*(ঘ.) খলীফাতুল মুসলিমীন,বাবুল ইলম ওয়াল হিকাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
لم ارقبله و لا بعده مثله
অর্থ : আমি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার পূর্বে এবং পরে উঁনার মত আর কাউকে দেখিনি !”
[তিরমীযি শরীফ,২য় খন্ড ২০৫ পৃষ্ঠা- হাদীস নং ৩৬৩৭]

*(ঙ.) হাদিস শরীফে বর্নিত হয়েছে

عن عبدالله بن عمرو رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم لست كاحد منكم
অর্থ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,আঁমি তোমাদের কারো মত নই !”
[বুখারী শরীফ- কিতাবুস সিয়াম- ১ম খন্ড ২৬৩ পৃষ্ঠা – হাদীস নং ১৮৪০
মুসলিম শরীফ ১৫৮৭, আবু দাউদ শরীফ/১৩৭ ]

✌আবার এরকম বর্ননা ও রয়েছে:

عن عبد الله بن عمر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم اني لست مثلكم
অর্থ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আঁমি তোমাদের অনুরুপ নই।”
[বুখারী শরীফ – কিতাবুস সিয়াম – ১ খন্ড ২৬৩ পৃষ্ঠ, ফতহুল বারী ৪/১৬৪]

*(চ.) হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
والله ياسين مثلك لم يكن
في العالمين وحق من انباك

অর্থ – আল্লাহ পাক উঁনার কসম ! হে ইয়াসিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,সারা জাহানে আঁপনার কোন মেছাল নাই !”

[কাসীদায়ে নু’মান লি ইমাম আবু হানীফা -৩৭ নং পংক্তি ]

*(ছ.) হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার সাথে তুলনাতো দূরের কথা পূর্ববর্তী ইমামগন উঁনাদের বয়োজৈষ্ঠ ইমামদের প্রসংশা করে কি বলেন দেখেন !
ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উঁনাকে লক্ষ্য করে বলেন:
اشهد انه ليس في الدني مثلك

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, পৃথিবীতে আঁপনার মেছাল বা আঁপনার মত আরেকজন নাই !
[মীযানুল আখবার ৪৮ পৃষ্ঠা ]

*(জ.) সৃষ্টকুলে নবীজি (ﷺ) এঁর মত কেউ নেই

٣١-عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : ” نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الوِصَالِ ، قَالُوا : فِإِنَّكَ تُوَاصِلُ ، قَالَ : أيُّكُمْ مِثْلِي ؟ ، إِنِّي أَبِيتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسْقِينِ . (متفق عليه)
অনুবাদঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন,নবী করীম (ﷺ) সওমে বেসাল (এমন রোজা যার কোন সেহরিও নেই ইফতারও নেই) রাখতে নিষেধ করেছেন।তখন কিছু সাহাবী নবী করীম (ﷺ) এঁর নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! আঁপনি নিঁজেও তো সওমে বিসাল পালন করেন।নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এরশাদ করলেন,তোমাদের মধ্যে কে আছ আঁমার মত? আঁমিতো এমন ভাবে রাত্রিযাপন করি যেন আঁমার রব আঁমাকে খাওয়ান এবং পান করান।
******দলিল*****
*১. সহিহ বোখারী,রোজা অধ্যায় ২/৬৯৩ হাঃ ১৮৬১
*২. সহিহ মুসলিম ২/৭৭৪ হাঃ ১১০২ *৩. সুনানে আবু দাউদ ২/৩০২ হাঃ ২৩৬০
*৪. সুনানে কুবরা নাসাঈ ২/২৪১ হাঃ ২৩৬৩
*৫. মুয়াত্তা ইমাম মালেক ১/৩০০ হাঃ ৬৬৭
*৬. মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২/১০২ হাঃ ৫৭৯৫
*৭. সহিহ ইবনে হিব্বান, ৮/৩৪১ হাঃ ৩৫৭৫

*(ঝ.) নবীজীর সূরাত বা আকৃতির ব্যাপারে শায়খ ইসমাইল হাক্কী ‘সূরা মারিয়াম’-এর كهيعص এর ব্যাখ্যায় ইমাম কাশেফীর একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন,শায়খ রুকুনুদ্দীন আলাউদ্দৌলা সিমনানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ফরমান:

حضرت رسالت را صلی الله عليه وسلم سہ صورتست يكی بشری كقوله تعالی قل انما انا بشر مثلكم (الكهف: ١١٠)دوم ملكی چناكہ فرمودست (لست كأحد ابيت عندی ربی)سيوم حقی كما قال :(لی مع الله وقت لا يسعنی فيه ملك مقرب ولا نبي مرسل)وازين وروشنتر (من رأنی فقد رأي الحق))
‘রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর তিনটি সূরাত রয়েছে।

*(১)বাশারী বা মানবীয় সূরাত। যেমন, আল্লাহর বাণী- قل انما انا بشر مثلكم
[আঁপনি বলুন, (নিশ্চয় আঁমি তোমাদের ন্যায় বাহ্যিক আকৃতিতে একজন মানুষ]
👏এ ব্যপারে ব্যাপক আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে*******************

*(২) ফেরেশতার সূরাত। যেমন: আল্লাহর হাবীব নিজেই ফরমান- لست كأحد ابيت عندی ربی

[আঁমি তোমাদের কারো মতো নই, আঁমি আঁমার রবের নিকট রাত্রি যাপন করি]

*(৩) সূরাতে হাক্কী বা প্রকৃত সূরাত। যেমন, হাদীস শরীফে রয়েছে, নবীজী ইরশাদ করেন:
لی مع الله وقت لا يسعنی فيه ملك مقرب ولا نبي مرسل

[আল্লাহর সাথে আঁমার এমন একটি বিশেষ সময় রয়েছে যাতে নৈকট্যপ্রাপ্ত কোন ফেরেশতা এবং কোন নবী-রাসূল পৌঁছতে পারেনি]।

✌এর চেয়েও স্পষ্ট বর্ণনা হাদীসে রয়েছে যে, নবীজী বলেন- من رأنی فقد رأي الحق

“যে আঁমাকে দেখল,সে যেন হককেই দেখল অর্থাৎ তিঁনি আল্লাহ দেখার আয়না স্বরূপ।”
[আল্লামা হাক্কী,রুহুল বায়ান: ৫/৩১৪

*(ঞ.) কাশেম নানুতভী বলেন”ওহে প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঁপনার প্রকৃত রূপটি তো মানব দেহের আবরনে ঢাকা পড়ে আছে।আপনাকে আঁপনার গোপনকারী প্রভু ছাড়া অন্য কেউ চিনতে পারে নি।
[হাফেজ এম এ জলিল(রহঃ),নূর নবী (দরুদ) -৪ পৃঃ]

👏ইমাম ওয়াসেতী বলেন-

أن البشرية في نبيه عارية واضافة لاحقيقة يعني فظاهره مخلوق وباطنه حق

‘নিশ্চয় আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর বাশারিয়াত বা মানবত্ব ক্ষণস্থায়ী এবং তা (পোষাক স্বরূপ) সম্পৃক্ত করা হয়েছে।এটা (বাশারিয়াত) তাঁর মূল নয়।অর্থাৎ বাহ্যত তিঁনি মাখলুক, আর বাতেনে তিঁনি হক তথা আল্লাহর তাজাল্লিয়াতের আয়না স্বরূপ।
[আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান: ৯/২১]

🌹আ‘লা হযরত রেজা খাঁন (রহঃ) বলেন:
وه بشر ہين مگر عالم علوى سے لاكھ درجہ اشرف واحسن وه انسان ہين مگر ارواح وملائكہ سے ہزار درجہ الطف وه خود فرماتے ہين لست مثلكم مين تم جيسا نہين رواه الشيخان ويروي لست لهيئتكم مين تمہارے ہيئت پر نہين ويروي ايكم مثلي تم مين كون مجھ جيساہے
‘তিঁনি বাশার কিন্তু আলমে উলভী থেকে লক্ষ্যগুণ শ্রেষ্ঠ এবং সৌন্দর্যমন্ডিত।তিঁনি মানবীয় দেহ রাখেন কিন্তু রূহসমূহ এবং ফেরেশতাগণ হতে হাজারগুণ সুক্ষ্ম।

😍আ‘লা হযরত রেজা খাঁন (রহঃ) আরও বলেন:
جو مطلقا حضور سے بشریت کی نفی کرے وہ کافر ہے قال اللہ تعالي قل سبحان ربي هل كنت الا بشرا رسولا

‘যে ব্যক্তি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাধারণভাবে বাশারীয়াতকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করবে (যে তিঁনি মানব আকৃতির ছিলেন না বা মানব নন),সে কাফের।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
قل سبحان ربي هل كنت الا بشرا رسولا
অর্থাৎ আঁপনি বলুন, আঁমার রবের পবিত্রতা! আঁমি নই কিন্তু বাশার, রাসূল।
[সূরা বনি ইসরাইল: ৯৩।’ আ‘লা হযরত, ফতোওয়ায়ে রেজভীয়া: ৬/৬৭]

✌তবে আমাদের মত সাধারন মানব নন,কারন তিঁনি হলেন,বেমেচাল মানব।শুধুমাত্র আল্লাহ তাঁকে মানব সূরতে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।

👏শায়খ আবুল মাওয়াহেব শাযেলী তাঁর কবিতায় সুন্দর বলেছেন-
محمد بشر لا كالبشر.. بل هو ياقوت بين الحجر

‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আকৃতিতে) মানুষ হলেও অন্যান্য মানুষের মতো নন (অর্থাৎ তাঁর মানবীয় সূরত ও অন্যান্যদের থেকে স্বতন্ত্র), ইয়াকুত একটি মূল্যবান পাথর যা অন্যসব পাথরের মত নয়।’

*(ট.) আল্লামা ইসমাইল হাক্কী হানাফী বারুসাভী সূরা ফাতহের ১০ নং আয়াত-
ان الذين يبايعونك انما يبايعون الله
(হে হাবীব! নিশ্চয় যারা আঁপনার নিকট বায়‘আত হয়েছে, নিঃসন্দেহে তাঁরা আল্লাহরই নিকট বায়‘আত হয়েছে)
এর তাফসীর করতে গিয়ে ইমাম ওয়াসেতী থেকে বর্ণনা করেন:

قال الواسطي: أخبر الله بهذه الاية أن البشرية في نبيه عارية واضافة لاحقيقة

‘ইমাম ওয়াসেতী বলেন, আল্লাহ পাক এ আয়াতে কারীমা দ্বারা জানিয়ে দিচ্ছেন যে,”নিশ্চয় তাঁর নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর বাশারিয়াত বা মানবত্ব ক্ষণস্থায়ী এবং তা (পোষাক স্বরূপ) সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এটা (বাশারিয়াত) তাঁর মূল নয়।”
[আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান: ৯/২১]

🌹আল্লামা ইসমাইল হাক্কী হানাফী বারুসাভী সূরা ‘আনকাবুতের ৪৮ নং আয়াত এর তাফসীর করতে গিয়ে আরো বর্ণনা করেন-

انه نور محض وليس للنور ظل وفيه اشارة الى انه افنى الوجود الكونى الظلى وهو نور متجسد فى صورة البشر

‘নিশ্চয় নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুই নূর,আর নূরের ছায়া হয় না।

এতে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নিশ্চয় তিনি কুনী ও যিল্লীর অস্তিত্ব ফানা করে দিয়েছেন। আর তিনি মানুষের আকৃতিতে নূরের শরীর বিশিষ্ট।’
[আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান:৬/৪৮০]

*(ঠ.) আ‘লা হযরত শাহ ইমাম আহমাদ রেযা খান (রহঃ) বলেন:

اور جو يہ كہے كہ رسول الله صلى الله عليه وسلم كى صورت ظاهرى بشرى ہے حقيقت باطنى بشريت سے ارفع واعلى ہے يا كہ حضور اورون كى مثل بشر نہين وه سچے كہتاہے
‘আর যে এটা বলবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর বাহ্যিক সুরত বাশারী বা মানবীয় এবং বাতেনী হাকীকত হলো মানুষের চেয়ে অনেক উচ্চে-অতি উর্ধ্বে অথবা হুযুর অন্যান্যদের মত মানুষ নন,সে সত্য বলেছে।’
[আ‘লা হযরত,ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়া: ৬/৬৭]

♠পরকালেও তাঁর বাশারীয়াত মোটেই থাকবে না।যেমন শাহ্ আবদুল আযীয মুহাদ্দিছে দেহলভী সূরা দ্বোহার
وللاخرة خير لك من الاولى
এ আয়াতে কারীমার তাফসীরে লিখেন-
یعنی والبتہ ہر حالت آخر بہتر باشد ترا از معاملت اول تا آنکہ بشریت ترا اصلا وجود نماند وغلبۂ نور حق برتو علی سبیل الدوام حاصل شود
‘আঁপনার জন্য ইহকাল থেকে পরকাল উত্তম। এমনকি পরকালে আঁপনার বাশারীয়াত বা মানবত্বের অস্তিত্ব (ওজুদ) বাকি থাকবে না বরং সদা সর্বদা আঁপনার উপর নূরে হকের প্রাধান্য থাকবে।’
[শাহ্ আবদুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী, তাফসীরে আযীযী: ২১৭]

♠এখন মানা,না মানা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment