সাম্প্রতিক সময়ে সোস্যাল মিডিয়ায় চলছে ইমাম আলা হযরতের সেই বিখ্যাত কালাম “মুস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম” এর রাজত্ব। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যাঁর অশেষ দয়া ও মেহেরবানীতে আমরা শয়তানের শিং ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদীর অনুসারী না হয়ে (তার মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে) ইমাম আহমদ রেজা খান রহঃ এঁর অনুসারী হতে পেরেছি, যিনি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মাজহাব হানাফী এবং সবচেয়ে প্রসিদ্ধ তরীকা ক্বাদেরীয়া’র অনুসারী। আহ আমরা কতই সৌভাগ্যবান এজন্য যে, আমরা ঐ মনীষির মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি যিনি ছিলেন ইমামে আজমের অনুসারী, যেই ইমামে আজম আবূ হানিফা রাঃ হলেন একজন তাবেঈ; আমরা তার মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত যিনি আওলাদে রাসূল ﷺ, নবী বংশের এক উজ্জ্বল প্রদীপ হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রাঃ এঁর অনুসারী।
আমরা সেই ইমামের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত যিনি কুরআন, হাদিস ও ইমামদের মতানুসারে দলিল উপস্থাপন করে আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে সম্মানার্থে বা তাজিমার্থে সিজদা দেওয়াকে হারাম এবং অন্য কাউকে ইবাদতের নিয়তে সিজদা করাকে শিরক ফতোয়া দিয়েছেন। অথচ, বড়ই আফসোসের সাথে বলতে হয়, ইমামের অনুসারীদেরকে মাজারপুজারী বলে অপবাদ দেয়া হয় এমনকি ইমামের নামেও বিভিন্ন রকম অপবাদ ছড়ানো হয়।
আমরা সবসময় কোন দোয়া করি!!!
“আমাদেরকে সোজা পথে (সিরাতে মুস্তাকিম) পরিচালিত কর। তাঁদেরই পথে, যাঁদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছো। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
(সূরা ফাতিহাঃ ৫-৭)
কাদের প্রতি মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন!!
“যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাঁদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তাঁরা কতই না উত্তম সঙ্গী!” (সূরা নিসাঃ ৬৯)
‘‘জেনে রাখো! আল্লাহর অলি বা বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’’ (সূরা ইউনুসঃ ৬২)
আর কারা পথভ্রষ্ট হয়েছে!! ইহুদী-নাসারা’গণ তো পথভ্রষ্ট হয়েছেই, এছাড়াও কুরআন পাঠকারী হয়েও কারা পথভ্রষ্ট হয়েছে??? হ্যা, আমি সেই পথভ্রষ্ট খারেজীদের কথা বলতে চাইছি। যাদের পূর্বপুরষ প্রকাশ পেয়েছিল প্রিয় নবী ﷺ এঁর শানে বেয়াদবীর মাধ্যমে এবং যার বংশধররা কুরআন পাঠ করেও পথভ্রষ্ট হবে বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে কেননা এরা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন এদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না।
যায়দ ইবনু ওয়াহব আল জুহানী রাঃ থেকে বর্ণিত। যে সৈন্যদল আলী (রাঃ) এঁর সাথে খারিজীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল- তিনি তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন। আলী (রাঃ) বললেন, হে লোক সকল! আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ “আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা কুরআন পাঠ করবে। তোমাদের পাঠ তাদের পাঠের তুলনায় নিম্নমানের হবে। অনুরূপভবে তাদের নামাজ ও রোজার তুলনায় তোমাদের নামাজ রোজা সামান্য বলে মনে হবে। কুরআন পাঠ করে তারা ধারণা করবে এতে তাদের খুব লাভ হচ্ছে। অথচ এটা তাদের জন্য ক্ষতির কারণই হবে। তাদের নামাজ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনটি তীর বেরিয়ে যায় শিকার থেকে।….
(সহীহ মুসলিম ২৩৫৭) (আরো দেখুনঃ সহীহ বুখারী ৩৬১০, ৫০৫৮)
যাদের বৈশিষ্ঠ্য বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম নাসাঈ রহঃ আরো বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তাদের পরিচয়-নমুনা হলো- তাদের মাথা মুন্ডিত থাকবে। তারা সর্বাবস্থায় আবির্ভূত হতে থাকবে। পরিশেষে তাদের সর্বশেষ দলটি বের হবে মাসীহে দাজ্জাল-এর সাথে। (মিশকাত ৩৫৫৩, নাসাঈ ৪১০৩)
আমাদের উচিৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ঐসব ভন্ড দলকে চিহ্নিত করে নাজাতপ্রাপ্ত দলকে আঁকড়ে ধরা (অবশ্য এত সুন্দর করে বৈশিষ্ট্যবলী বর্ণনার পরও যারা ঐ ভন্ডদের চিনতে পারেনি, সঠিক দলের সন্ধান পায়নি, তাদের মত বড় দূর্ভাগা আর কে-ই বা হতে পারে..!)।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যে ব্যক্তি (নাজাতপ্রাপ্ত) জামা‘আত (দল) হতে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে গেছে, সে ইসলামের রশি (বন্ধন) তার গলা হতে খুলে ফেলেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ ১৮৫, সূনান আবূ দাঊদ ৪৭৫৮, মুসনাদে আহমাদ ২১০৫১)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমাদের কাছে আমি এমন (দুটি) জিনিস রেখে যাচ্ছি যা তোমরা শক্তরূপে আঁকড়ে ধরলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ (একটি হল) আল্লাহ তা’আলার কিতাব যা আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং (অন্যটি) আমার আহলে বাইত। এ দুটি কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না কাউসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য রেখ আমার পরে উভয়ের সঙ্গে কিভাবে আচরণ কর। (সূনান আত তিরমিজী ৩৭৮৮)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ নিঃসন্দেহে আমার উম্মতের ওপর এমন একটি সময় আসবে যেমন বনী ইসরাঈলের ওপর এসেছিল। যেমন এক পায়ের জুতা অপর পায়ের জুতার ঠিক সমান হয়। এমনকি বনী ইসরাঈলের মধ্যে যদি কেউ তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে কুকর্ম করে থাকে, তাহলে আমার উম্মতের মধ্যেও এমন লোক হবে যারা অনুরূপ কাজ করবে। আর বনী ইসরাঈল ৭২ ফিরক্বায় (দলে) বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ ফিরক্বায়। এদের মধ্যে একটি ব্যতীত সব দলই জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! জান্নাতী দল কারা? উত্তরে তিনি ﷺ বললেন, যার ওপর আমি ও আমার সাহাবীগণ প্রতিষ্ঠিত আছি, যারা তার উপর থাকবে। (সুনান আত তিরমিযী ২৬৪১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭১)
ফলে নব্য সৃষ্ট দলগুলো সম্পর্কে জানবেন, সচেতন থাকবেন। কেননা নাজাতপ্রাপ্ত দল একটামাত্র। কোনো দলের অনুসরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখবেন যে, এদের সিলসিলা এবং আদর্শ সাহাবায়ে কেরাম পর্যন্ত পৌঁছেছে কিনা!! নাকি ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদী কিংবা ইবনে তাইমিয়াতেই থাইমা গেছে!!
ইবনু উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের শামদেশে বরকত দান করুন, হে আল্লাহ! আমাদের ইয়ামানদেশে বরকত দান করুন। লোকেরা বলল, আমাদের নাজদের জন্যও (দুআ করুন)। তিনি পুনরায় বলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের সিরিয়ায় বরকত দান করুন, আমাদের ইয়ামানদেশে বরকত দান করুন। এবারও লোকেরা বলল, আমাদের নাজদের জন্যও (দু’আ করুন)। তিনি বললেনঃ সেখানে তো ভূমিকম্প, বিশৃঙ্খলা বা ফিতনা আর সেখান হতেই শয়তানের শিং আবির্ভাব হবে। (সূনান আত তিরমিজী ৩৯৫৩, সহিহ বুখারী ৭০৯৪)
যেখানের জন্য দুআ করতে অনুরোধ করা সত্ত্বেও দুআ করেননি এবং বলেছেন সেখানে ভূমিকম্প, বিশৃঙ্খলা বা ফিতনা আর সেখান হতেই শয়তানের শিং আবির্ভাব হবে; আর সেখান থেকেই এই উম্মতের অন্যতম একজন ফেতনাবাজ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদীর জন্ম হয়েছে; যার অনুসারীরা আজ সবকিছুতেই বেদাত শিরিক ফতোয়া মারে। মক্কা শরীফের অন্যতম মুফতি ও মুহাদ্দিস আল্লামা আহমদ ইবনে যাইনী দাহলান মক্কী রহঃ ঐ হাদিসের ব্যাখ্যায় শয়তানের শিং হিসেবে ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদীর প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন।
পরিশেষে বলতে চাই,
হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান (র.) বলেনঃ আমি মু‘আবিয়া (রা.)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ‘ইলম দান করেন। আল্লাহ্ই দানকারী আর আমি বন্টনকারী। এ উম্মত সর্বদা তাদের প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী থাকবে, আল্লাহর আদেশ (কিয়ামত) আসা পর্যন্ত আর তারা থাকবে বিজয়ী।’ (সহীহ বুখারী ৩১১৬)