আরিফ আজাদ তার লেখা ‘নবী জীবনের গল্প’ বইয়ে কত সুক্ষ্মভাবে লিখে দিলেন রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরক্ষর ছিলেন। আফসোস তাদের এই নবি বিদ্বেষ সাধারণ মুসলমান টেরও পাবে না।
প্রিয় নবীজীর ইলম:
আবু হুরায়রা রা. নিজের এক আর্জি নিয়ে আসলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের কাছে। মনে নিশ্চিত বিশ্বাস যে সমস্যার সমাধান হবেই। আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ আমি আপনার নিকট থেকে পবিত্র বাণীসমূহ শুনি। কিন্তু পরবর্তীতে ভুলে যাই, মনে রাখতে পারি না।
মালিকে জান্নাহ, কাসিমে নিয়ামাহ ﷺ তখন ইরশাদ করলেন, আবু হুরায়রা(রা.)! তোমার চাদর বিছাও। তিনি কথামতো আপন চাদর বিছিয়ে দিলেন। তখন প্রিয় নবী ﷺ অদৃশ্য কিছু একটা চাদরে ঢেলে দিলেন এবং বললেন, এবার চাদরটি বুকে জড়িয়ে নাও। তিনি তাই করলেন। সুবহানাল্লাহ! আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমার জ্ঞান এরপর থেকে এতটাই তীক্ষ্ণ হয়ে গেল যে আমি আর কোনো কিছুই ভুলি নি। [১]
এ কেমন মু’জেজা! আল্লাহু আকবার। স্মৃতিশক্তির মতো অদৃশ্য শক্তি দান করার ক্ষমতাও তিনি রাখেন। যিনি তাঁর সাহাবিকে জ্ঞানের ভান্ডার দান করে দিতে পারেন স্বয়ং তাঁর জ্ঞানের স্তর কি হবে! আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
অত্যন্ত আফসোস ও পরিতাপ! কত মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণায় পরে সেই রাসূলে পাকের ﷺ ইলম নিয়ে সমালোচনা করার মতে দুঃসাহস করে। তিনি “আলিফ, বা, তা” জানতেন না, “নিরক্ষর” বলে মন্তব্য করে। নাউজুবিল্লাহ। যুগে যুগে ইসলামের লেবাস লাগিয়ে এমন মুনাফেকি অনেকেই করেছে। এবং তারা রব তায়ালার আযাবে নিপতিত হয়েছে।
প্রিয় নবীর ﷺ জ্ঞান নিয়ে সমালোচনা মানেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনা। আপনার বন্ধুকে কেউ গালি দিলে আপনি সহ্য করেন না। তাহলে স্বয়ং রব তায়ালার মাহবুবকে নিয়ে কেউ যদি বেয়াদবিমূলক মন্তব্য করে তাহলে তিনি কি তাকে ছেড়ে দিবেন?
হযরত সায়্যিদুনা আনাস রা. বলেন, একদা এক খ্রীষ্টান মুসলমান হয়ে সূরা বাকারা ও সূরা আল ইমরান মুখস্থ করেছিল। সে হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর অন্যতম কাতেব নিযুক্ত হল। কিছু দিন পর সে আবার মুরতাদ হয়ে খ্রীষ্টান ধর্মে ফিরে গেল। খ্রীষ্টান ধর্মে ফিরে যাওয়ার পর সে গলাবাজি করে বলতে লাগল আমি মুহাম্মদ ﷺ কে যা লিখে দিতাম তিনি শুধু তাই জানতেন। বেশি দিন গড়ায় নি।
আল্লাহ তায়ালা তার প্রান কেড়ে নিলেন এবং অস্বাভাবিক ভাবে তাকে মৃত্যু দান করলেন। তার গােত্রের লােকেরা একটি কবর খনন করে তাকে তাতে সমাহিত করল। কিন্তু রাতে জমিন তাকে কবর থেকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিল। তার গােত্রের লােকেরা বলল, এটা হযরত মুহাম্মদ ﷺ এবং তাঁর অনুসারীদেরই কাজ। কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে চলে এসেছিল। তাই তারা আমাদের সঙ্গীকে কবর থেকে বের করে ফেলেছে।
অতঃপর তারা আরেকটি কবর খনন করে তাতে তাকে পুনরায় সমাহিত করল। কিন্তু সকালে তাকে আবারাে কবরের বাইরে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেল। এবারও তারা বলাবলি করল, এটা হযরত মুহাম্মদ ﷺ তাঁর অনুসারীদেরই কাজ। কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে চলে এসেছিল।
তাই তারা তার কবর খনন করে তাকে বাইরে ফেলে দিয়েছে । তৃতীয় দিন তারা তার জন্য যত গভীরে খনন করা যায় তত গভীরে একটি কবর খনন করে তাতে তাকে সমাহিত করল। কিন্তু সকালে তাকে আবারাে জমিনের ওপর পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেল। এবার তারা নিশ্চিত হল, তার সাথে এ আচরণ মানুষের পক্ষ থেকে নয়। অতঃপর তাকে তারা আর সমাহিত না করে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় ফেলে রেখে চলে আসল। [২]
আল্লাহু আকবার! বেয়াদবকে জমিন পর্যন্ত গ্রহণ করে নি! আল্লাহ আমাদেরকে এমন বেয়াদব থেকে হিফাজত রাখুন এবং বেশি বেশি মোস্তফার শান বর্ণনার তৌফিক দিন।
রেফারেন্সঃ
[১] সহিহ বুখারী, খন্ড- ১ম, ২য়; পৃষ্ঠা: ৬২, ৯৪; হাদিস নং- ১১৯, ২৩৫।
[২] সহিহ বুখারী, খন্ড- ২য়, পৃষ্ঠা: ৫০৬, হাদীস নং- ৩৬১৭। সহিহ মুসলিম, পৃষ্ঠা: ১৪৯৭, হাদীস নং- ২৭৮১।
“না ওঠ ছাকেগা কিয়ামাত তলক খোদা কি কাসম, কে জিসকো তুনে নাজারসে গিরা কে ছুড দিয়া।”