আপনাদের জিজ্ঞাসাবাদের জবাব
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
আমরা শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ ( ﷺ ) এর উম্মত এবং আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনিত ধর্ম ইসলাম নামের শান্তির ধর্মের অনুসারী । তাতে আমরা গর্ভিত। আসুন কোরআন, সুন্নাহ ও হাদিসের আলোকে আলেম ওলামা ও মোর্শেদ বা কামেল পীর মাসায়েখ থেকে ইসলামের শরিয়ত ও তরিকতের সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে আমল করতে শুরু করি। তাহলে আমরা দেখতে পাব জীবনের প্রত্যেকটি কাজই এবাদত হচ্ছে এবং অনুভব করতে পারব ইসলাম শান্তির ধর্ম । ( সাবধানতাঃ আল্লাহর এবাদত করে নিজে কিছু অর্জন করলেও তার দিকে তাকানো নিষেধ। নিজেকে বড় মনে করে অহংকার করলে সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়। এরকম বাস্তব অনেক উধাহরন রয়েছে। তাই নিজেকে সর্বদা সর্বনিকৃষ্ট ভাবতে হবে। )
প্রশ্নঃ জান্নাত পাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আমাকে কি করতে হবে? উত্তরঃআল্লাহ ও রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। জীবনের প্রত্যেকটি কাজই যেন আমলে পরিনত হয়।
নিজের কুপ্রভৃত্তি দূর করে ফরয এবাদতের পাশাপাশি তরিকতের নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ্ ও রাসুলের সন্তুষ্টি পাওয়া সহয। রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেছেন, اَفْضَلُ الْجِهَادِ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ فِيْ ذَاتِ الله عَزَّ وَ جَلَّ ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ হ’ল যে আল্লাহর জন্য স্বীয় কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করে’।তিরমিযী; ত্বাবারানী, সিলসিলা ছহীহা হা /১৪৯১।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতা’লা সবাইকে সর্তক করে বলেন, أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (62) الَّذِينَ آَمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ (63) لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (64) উচ্চারনঃ(আলা ইন্না আওলিয়া আল্লা-হি লা-খাওফুন ‘আলাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহ্য্বানূন। আল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া কা-নূ ইয়াত্তাকূন। লাহুমুল্ বুশ্রা-ফিল্ হায়া-তিদ্ দুন্ইয়া ওয়াফিল্ আ-খিরাতি; লা-তাব্দিলা লিকালিমা-তিল্ লা-হি; যা-লিকা হুওয়াল্ ফাওযুল ‘আজীম। )
অর্থঃ সর্তক হও! জেনে রাখো, আল্লাহর বন্ধু অলি-আউলিয়াদের কোন ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তাযুক্তও হন না। যাঁরা বিশ্বাস করেন এবং সাবধানতা অবলম্বন করেন, তাঁদের জন্য ইহকাল ও পরকালের জীবনে সুসংবাদ আছে, আল্লাহর বাণীর কোন পরিবর্তন নেই, এটিই মহা সাফল্য। (সূরা ইউনুস, আয়াত, ৬২-৬৪)
হাদিস- বুখারী/তিরমিযীঃ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহতা’লা বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি আমার কোনো প্রিয় বান্দাকে আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কারণে শত্রু মনে করে, তবে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। অর্থাৎ আমার প্রিয় বান্দার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করা মানে আমার সঙ্গেই যুদ্ধ করার নামান্তর। আর আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করে দিয়েছি, শুধু তা পালন করেই কোনো বান্দা আমার নৈকট্যলাভ করতে পারবে না। সুতরাং আমার প্রিয় বান্দারা ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতের মাধ্যমেই সদাসর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। ফলে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। আর যখন আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যে কান দিয়ে সে শ্রবণ করে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যে চোখ দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যে হাত দিয়ে সে স্পর্শ করে। আমি তার পা হয়ে যাই, যে পা দিয়ে সে হাঁটে। অর্থাৎ, তার চোখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি সবই আমার করুণা পরিবেষ্টিত হয়ে যায়। অনন্তর সে যদি আমার নিকট কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাৎক্ষণিক তা প্রদান করি। যদি আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি। আমি যে কাজ করতে চাই, তা করতে কোনো দ্বিধা-সংকোচ করি না, যতটা দ্বিধা-সংকোচ করি একজন মুমিনের জীবন সম্পর্কে। কেননা সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে, অথচ আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি।টীকা: আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করি’ এই বাক্যটির মর্ম হল, আল্লাহর অলির সঙ্গে কোনো প্রকার বেয়াদবী করা কিংবা শত্রুতা করা, আল্লাহর কাছে তা খুবই অপছন্দনীয় এবং ঘৃণিত কাজ। সে কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহারকারী বা শত্রুতাকারীর সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। অথবা অলির সঙ্গে বেয়াদবীর মাধ্যমে স্বয়ং আল্লাহর সঙ্গে বেয়াদবী করা হয়, সে জন্যেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা করা হয়েছে।
আল্লাহর জিকিরঃ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- ‘তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব।’ (সূরা বাকারা : ১৫২)। দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহর জিকির। বেশি বেশি করে মহান আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে।’ (সূরা আহজাব : ৪১-৪২)। পবিত্র কোরআনে আছে-“সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।-সূরা বনি ইসরাইল : আয়াত নং ৪৪”
আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মধ্যে এক মাত্র মানুষ আর জ্বিন ছারা সবকিছু আল্লাহর সর্বদা আল্লাহ্ নামের তসবিহ পড়তেছে। এমনকি পায়খানার একটি কিটও আল্লাহর জিকির করছে তাই একটা পায়খানার কিট থেকেও আমি নিকৃষ্ট। তাই নিজেকে আল্লাহর কাছে ছোট মনেকরতে হবে এধরনের চিন্তা করে তরিকতের মাধ্যমে অহংকার দুর করতে হয়। ঈমানদার লোকদের মধ্যে যারা নবী ( ﷺ ) কে যারা সরাসরি দেখেছে তারা বেলায়াতের স্তরে সাহাবী, যারা সাহাবী দেখেছে তারা বেলায়াতের স্তরে তাবেয়ীন, যারা তাবেয়ীন দেখেছে তারা বেলায়াতের স্তরে তাবেয়ীনতাব্য়ে তাবেয়ীন। তাব্য়ে তাবেয়ীনের যুগ শেষ হওয়ার পর কেহ চাইলেও সাহাবী,তাবেয়ীন,তাব্য়ে তাবেয়ীন হতে পারবে না। এর দরজা বন্ধ আল্রাহর ওলীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরজা গাউসুল আ’জমের স্তর মাত্র তিন জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় এই দরজা ও পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এর নিচের দরজাগুলো এখনও খোলা। মানুষের মধ্যে অলীগণের স্তর নিম্নে বর্ননা করা হয়েছে। তাই বর্তমান যুগে বেলায়েতের উচ্চ স্তরে পৌঁছাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।আর আল্লাহর অলী পীর আওলীয়ারা কোরআন ও হাদিসের আলোকে ‘ মানুষের সর্বাংগে জিকির জারি করার জন্য সহয নফল ইবাদত পদ্ধতি’ বা তরিকা নামে চালু করেছেন। যেমন বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী রাঃ জিকির করার কতগুলো পদ্ধতি বের করে তিনি তার নাম দেন ‘কাদেরিয়া তরীকা’ আল্লাহর নিকট তা কবুল হওয়ার জন্য কান্নাকাটি করেন আল্লাহ তা কবুল করলেন।একই ভাবে খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রঃ) ‘চিশতিয়া তরিকা’ নিয়ে আল্লাহর নিকট তা কবুল হওয়ার জন্য কান্নাকাটি করেন আল্লাহ তা কবুল করলেন। একই ভাবে নকশবন্দীয়া ও মুজাদ্দেদীয়া তরীকার জিকির, ফিকির ও মোরাকাবার নিয়মাবলী চালু হয়। আরও বিস্তারিত জানার জন্য বাংলাভাষায় ইসলামের সঠিক তাওহীদ, কোরআন ও ছুন্নার আকায়েদ ও আমলের খাঁটি তাৎপর্য দলীল ও ব্যাখ্যার সঙ্গে মাওলানা আব্দুল খালেক এম এ (রঃ) এর লেখা একখানা কিতাব “ছেরাজুছ্-ছালেকীন” পাঠ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।
আল্লাহর অলীঃ নবীগণের যুগ যতদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে, ততদিন তাঁদের উম্মতের মধ্যেও আল্লাহর অলী বিদ্যমান থাকেন। তাঁদের নবুয়তের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে অলীদের যুগও খতম হয়ে যায়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের নবুয়ত প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব নবীর উম্মতের মধ্যে বেলায়েত বিদ্যমান ছিল। যেমন বহিরা পাদ্রী ও অন্যান্য হযরত ঈসা (আঃ) এর উম্মত মনিষিগণ মানস চক্ষে নবী করিম ( ﷺ ) – এর নবুয়তের পরিচয় পেয়ে অনেক ভবিষ্যৎবাণীও করেছিলেন এবং তা ফলেছে। নবী করিম ( ﷺ ) – এর আবির্ভাবের পর উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে বেলায়েত স্থানান্তরিত হয়ে এসেছে। হুজুর আকরাম ( ﷺ )- এর পর যেহেতু আর কোন নবী আসবেন না এবং নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, তাই কেয়ামত পর্যন্ত নবীজীর মোজেজা স্বরূপ তাঁর উম্মতের মধ্যেই বেলায়েত চালু থাকবে। যুগে যুগে ওলীদের আবির্ভাব হতে থাকবে এবং এ ধারা বিশুদ্ধ আকিদাপন্থী তথা আহলে সুন্নতের অনুসারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে-(সুত্রঃ তাফসীরে নাঈমী সুরা ফাতেহা)।
আল্লাহর প্রিয় হাবীব, দোজাহানের বাদশাহ হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা ( ﷺ ) – এর ফয়েজ প্রাপ্ত হয়ে এ পর্যন্ত লক্ষ কোটি আল্লাহর অলী পয়দা হয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও পয়দা হতে থাকবেন। তাঁদের মাধ্যমেই আল্লাহর যাবতীয় নেয়ামত ও রহমত বর্ষিত হতে থাকবে। ইবনে আসাকীর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে মারফু হাদীস বর্ণনা করেছেন যা মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) মিরকাত শরীফে উল্লেখ করেছেন। উক্ত হাদীসে নবী করিম ( ﷺ ) এরশাদ করেছেন- যার অনুবাদ নিম্নরূপঃ “আমার উম্মতের মধ্যে সর্বদা তিনশত ছাপ্পান্নজন শীর্ষস্থাণীয় অলী-আল্লাহ বিদ্যমান থাকবেন। তন্মধ্যে তিনশত জন হবেন হযরত আদম (আঃ) – এর কলবের (হালের) উপর প্রতিষ্ঠিত। চল্লিশজন হবেন হযরত মুছা (আঃ) – এর কলবের উপর প্রতিষ্ঠিত। সাতজন হবেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – এর কলবের উপর প্রতিষ্ঠিত। পাঁচজন হবেন হযরত জিব্রাইল (আঃ) – এর কলবের উপর, তিনজন হবেন হযরত মীকাঈল (আঃ) – এর কলবের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং একজন হবেন হযরত ইসরাফিল (আঃ) – এর কলবের উপর। তাঁদের মধ্যে উপরের কউ ইনতেকাল করলে নীচের স্তর থেকে এনে আল্লাহ তায়ালা উক্ত শূন্যস্থান পূরণ করেন। তাঁদের উছিলায়ই আমার উম্মতের বালা মুসিবত দূর হয় ” (সূত্রঃ মিশকাত শরীফঃ ইয়ামেন ও শাম অধ্যায়ের আব্দাল সম্পর্কীত হাদীসের টীকা নং-১)।
উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ওলীগণের উছিলায় আধ্যাত্মিক ও জাগতিক – উভয়বিদ কল্যাণ সাধিত হয়ে থাকে। যারা ওলীর কারামত স্বীকার করে না, তারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। ওলীগণের মধ্যে আবার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যাঁদের হতে দুনিয়ার শাসনভার ও শৃঙ্খলা বিধানের ভার ন্যাস্ত, তাঁদের সংখ্যা তিনশত জন। তাঁদেরকে আখইয়ার বলা হয়। যাঁদের উছিলায় রহমতের বারী বর্ষিত হয়ে জমিন ধন-ধান্যে ও শষ্য-শ্যামলে সুশোভিত হয়, তাঁদের সংখ্যা চল্লিশ জন। তাঁদেরকে আবদাল বলা হয়। এ ছাড়া আরও সাতজন জন আছেন যাদেরকে আবরার বলা হয়। পাঁচজন এমন অলী আছেন, যাদেরকে আওতাদ বলা হয়, তাঁদের উছিলায়ই পৃথিবী স্থীর থাকে। এমন তিনজন অলী আছেন, যাঁদের নকীব বলা হয়। আর এমন একজন আছেন, যাঁকে কুতুব ও গাউস বলা হয়। সর্বযুগের গাউস গণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন হযরত বড়পীর আবদুল ক্বাদের জিলানী (রাঃ)। এজন্যই তাঁকে গাউসুল আজম বলা হয়। (সুত্রঃগাওসুল আজম- মাওঃ নূরুর রহমান।) ‘ ইরগামুলমুরীদিন’ নামক গ্রন্থে গাউসের সংগা এভাবে বলা হয়েছেঃ “গাউস এমন কুতুবকে বলা হয়, যাঁর কাছে বৈধ কোন জিনিস প্রার্থনা করা যায় এবং যাঁর উছিলায় ফরিয়াদ কবুল হয়”।
মূলতঃ অলী-আল্লাহগণ হলেন নবী করিম ( ﷺ ) -এর ধর্মের সত্যিকার প্রমাণ। মোজেজার প্রতিচ্ছবিই হচ্ছে কারামত। অলীগণের কারামত মূলতঃ নবীজীর মোজেজা হতে উৎপন্ন ও উৎসারিত। নবীগণ হলেন মাসুম বা বে-গুনাহ এবং অলীগণ হলেন মাহফুজ বা গুনাহ্ হতে সংরক্ষিত।
অলী- আল্লাহগণের স্তর বিন্যাস সম্পের্কে মতামত সমুহ। যেমনঃ আল্লামা সৈয়দ জামাআত আলী শাহ- যিনি মোহাদ্দেস আলীপুরী নামে সমধিক পরিচিত – তাঁর মতে অলীদের শ্রেণী বিন্যাস হচ্ছে – আব্রার, আওতাদ, আব্দাল, কুতুব, কুতুবুল আক্তাব, গাউস ও গাউসুল আজম। মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ)- এর মতে ইমাম হাসান (রাঃ) সাহাবী ও প্রথম গাউসুল আজম, দ্বিতীয় গাউসুল আজম হচ্ছেন হযরত বড়পীর সাহেব (রহঃ) এবং তৃতীয় ও শেষ গাউসুল আজম হবেন হযরত ইমাম মাহ্দী । (সুত্রঃ নুজহাতুল খাতির-মোল্লা আলী ক্বারী(রহঃ))। হযরত ইমাম হাসান(রাঃ) যদিও গাউসিয়তে উজমার মর্তবা লাভ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর মূল পরিচয় হচ্ছে রাসুলুল্লাহর (সাঃ) দৌহিত্র, সাহাবী ও বেহেস্তীগণের সর্দার হিসাবে, যা গাউসুল আজম পদবীরও অনেক উর্দ্ধে। তাই তাঁকে উর্বোচ্চ লকবে অর্থাৎ সাহাবী হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
“গাউসুল আ’জম” পদবীটি কি মানুষের, না আল্লাহর – এ নিয়ে ইদানিং বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কোন কোন নামধারী বিতর্কিত মোফাস্সেরে কোরআন বা বক্তা মাহফিলে বলে বেড়াচ্ছে যে, “যেহেতু গাউসুল আজম শব্দের অর্থ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী- সুতরাং এটা মানুষের পদবী হতে পারেনা। বরং কোন মানুষকে গাউসুল আজম বলাও শির্ক। আসল গাউসুল আ’জম হচ্ছেন আল্লাহতায়ালা”। বলা বাহুল্য, এরা পীর মাশায়েখ বিরোধী গোত্র। এরা বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) কে গাউসুল আজম বলে মানে না। (শিয়ারাও উনাকে মানে না। কেননা, তিনি তাঁর গ্রন্থে শিয়াদেরকে আকিদায় ইয়াহুদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। )
প্রশ্নঃ বড়পীরের শানে গাউসুল আজম ডাকা কি শিরক?
তাদের উক্ত আপত্তি ও দাবীর জবাব হচ্ছেঃ আল্লাহর ৯৯ সিফাতি নামের মধ্যে গাউসুল আ’জম শব্দ নেই। এমন কি, বিভিন্ন হাদীস ও সিরাত গ্রন্থে আল্লাহর এক হাজার সিফাতি নামের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এক হাজার নামের মধ্যেও গাউসুল আজম শব্দ নেই। এই পদবীটি আল্লাহর হয়। এটি মানব রচিত। মানব রচিত কোন পদবী আল্লাহর শানে হতে পারে না। গাউসুল আ’জম পদবীটি হচ্ছে – অলী-আল্লাহগণের মধ্যে নির্ধারিত কয়েকজনের জন্যে। অলী-আল্লাহগণের শ্রেণীবিন্যাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পদবী হচ্ছে গাউসুল আ’জম। সুতরাং এই পদবীটি আল্লাহর শানে ব্যবহার করাই অসঙ্গত, বরং কুফরী।
প্রশ্নঃ আল্লাহর অলীগণের স্তর বেলায়াতের সাধারণ মানুষের স্তর থেকে কত উপরে?
উত্তরঃ বিখ্যাত মোহাদ্দেস হযরত সৈয়দ জামাআত আলী শাহ আলী পুরী (রহঃ)(১৮৩৪-১৯৫১) মানুষের মধ্যে অলীগণের স্তর এভাবে বর্ননা করেছেনঃ (নিচু স্তর থেকে যথাক্রমে ১,২,৩….. উচ্চস্তরে)
১। সাধারণ মানুষের স্তর;
২। ঈমানদারের স্তর;
৩।সাধারণ আউলিয়ায়ে কেরামের স্তর;
৪।শহীদগণের স্তর;
৫।মুত্তাকীগণের স্তর;
৬।মুজতাহিদগণের স্তর;
৭।আবরার অলীগণের স্তর;
৮।আওতাদ শ্রেণীর অলিগণের স্তর- যাদের উসি্লায় দুনিয়ার বন্ধন ঠিক থাকে;
৯।আবদাল শ্রেণীর অলীগণের স্তর- যারা এক মুহু্র্তে বিভিন্নস্থানে আবির্ভূত হতে পারেন;
১০। কুতুব শ্রেণীর অলিদের স্তর- যারা দিকদর্শনের কাজ করেন;
১১। কুতুবুল আকতাব শ্রেণীর অলীগণের স্তর;
১২। গাউস শ্রেণীর অলীগণের স্তর- যারা মানুষকে সাহায্য করেন;
১৩।গাউসুল আ’জমের স্তর। (এখানেই অলীগণের স্তর শেষ)
——————————————————-
১৪ নম্বরে তাব্য়ে তাবেয়ীন এবং ১৯ নম্বরে সিদ্দিক সাহাবীর স্তর। ২০ নম্বর থেকে নবীগণের স্তর শুরু এবং ২৭ নম্বরে গিয়ে নবী মোস্তফা (সাঃ)এর্ স্তর সমাপ্ত হয়েছে বলে মোহাদ্দেস আলীপুরী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন। পাঠকগণের পিপাসা নিবরনের জন্য শুধু স্তরগুলো নীচে উল্লেখ করছি। ব্যখ্যা করা এখানে সম্ভব নয়।
১৪।তাব্য়ে তাবেয়ীন;
১৫।তাবেয়ীন;
১৬।সাহাবী;
১৭।আনসার;
১৮।মুহাজির;
১৯।সিদ্দীক; হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ);
২০।নবীগণের স্তর (আঃ);
২১।রাসুলগণের স্তর (আঃ);
২২।উলুল আজম বা বিশিষ্ট পয়গাম্বরগণের স্তর (৭জন);
২৩।খলিলুল্লাহ; (হযরত ইবরাহীম (আঃ))
২৪।খাতামুন্নাবিয়ীন(সাঃ)- নবী করিম (সাঃ)
২৫।রাহ্মাতুল্লিল আলামীন (সাঃ)- নবী করিম (সাঃ)
২৬।হাবিবুল্লাহ (সাঃ)- নবী করিম (সাঃ)
২৭।মোহাম্মদ মোস্তফা(সাঃ)- নবী করিম (সাঃ)
এরপরে আল্লাহর শান আরম্ভ- শানে উলুহিয়াত।
তথ্য সূত্র- অধ্যক্ষ হাফেয এম এ জলিল(এম এম, এম এ, বিসিএস)