প্রত্যাশা : নান্দনিক মানুষের!

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

প্রত্যাশা : নান্দনিক মানুষের!
রুমানা আখতার

সময় বয়ে চলে তার আপনগতিতে। দিন আসে দিন যায়। এভাবে বছর, দশক, যুগ গড়িয়ে শতাব্দী যায়। নতুন দিন, নতুন বর্ষ নিয়ে আসে শুভ সময়ের বার্তা।
সৃষ্টির সেরাজীব মানুষ। মহান আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সুন্দর, রূপে-গুণে গুণান্বিত করে। এক একজন মানুষ এক এক রকম সুন্দর। কাজেই প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বিসত্মার করছে শিল্প গুন। কোন মানুষের সুন্দর দিকগুলো প্রস্ফুটিত, আর কোন মানুষের সুন্দর দিকগুলো ঘুমমত্ম। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এর ব্যবধান স্বরূপ নির্ণয় করা যায়। তাই কোনো মানুষকেই ছোট করে দেখা উচিত নয়, হোক না সে ‘অটিস্টিক’। সুতরাং সব মানুষই একজন শিল্পী। যেহেতু সব মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি, সেহেতু জন্মগতভাবে সব মানুষই সম্মানের অধিকারী। পুরুষ-নারী, ধনী-গরীব, বড়-ছোট যেই হোক সবাইকে সম্মান করা ও ভালবাসা নান্দনিক মানুষের কর্তব্য। মানুষের জীবনে রয়েছে আলো-অাঁধারীর খেলা। এই আলো-অাঁধারী খেলার মধ্য অাঁধারকে দুমড়ে ফেলে আলোকে উদ্ভাসিত করা নান্দনিক মানুষোর শোভা।
আর যে মানুষ আলোর সন্ধান না করে অাঁধারে নিমজ্জিত থেকে অন্যের স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত না হয়ে বরং আলোকে অাঁধারে অাঁধারে পূর্ণ করে অমাবস্যায় পরিণত করতে চায়, সেই মানুষ আর যাই হোক না কেন; কোনরূপেই নান্দনিক মানুষ হতে পারে না। তাই নান্দনিক মানুষ হতে হলে চাই- ‘‘সততা, সদিচ্ছা, সদাচার, পরোপকারিতা, সুচারুতা এবং নিজেকে নিজে চেনার সম্মিলনে স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালবাসা।’’
মানুষ মূলত আশাবাদী। শত কষ্ট, হতাশা, গ্লানি, দুঃখ-বেদনা সত্ত্বেও সে স্বপ্ন দেখে নতুন কিছু সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। মানুষ যখন তার কু-প্রবৃত্তিকে মাটি চাপা দিয়ে আলোকিত জ্ঞানের বীজ বপন করতে সক্ষম তখনই মনের অজামেত্ম উল্লাসে মেতে গেয়ে ওঠে- ‘‘কোনো বাধা মানব না, ছিনিয়ে আনব কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের রক্তিম সূর্যকে।’’
বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশটিকে স্বাধীন করেছিলেন। সেই মুক্তিযোদ্ধারা হৃদয়ে যে চেতনা লালন করেছিলেন, তার প্রকৃত অর্থ আমরা আজও উপলব্ধি করতে শিখিনি বা পারিনি। তা না হলে হত্যা, চক্রামত্ম, ষড়যন্ত্র, দূর্নীতির মতো অপরাধগুলো অহরহ চলছে কেন? আজ তা ভাববার বিষয়! স্বাধীনতা লাভের ৪৩ বছর পেরিয়ে যাওয়ার সন্ধিক্ষণে-ধর্মীয় জীবন বোধ, নৈতিক শিক্ষা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে এখনো যথার্থ মুক্তি আসেনি; বিকৃত করা হয়েছে ইতিহাসকে। কিন্তু কারা করেছে এসব? আমাদের এ সমাজে বসবাসকারী মানুষেরাই।
আমরা আমাদের সমাজের মানুষদের সুন্দর ও নান্দনিক মানুষ তৈরি করার প্রত্যয় নিয়ে সত্যের সন্ধানে চলব এবং একই মঞ্চে একীভূত হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমেরিকান লেখক ‘শিব খেরা’, ‘বিজেতা’ এবং ‘বিজয়ী’ শব্দ দুটির ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেছেন, ‘বিজেতা’- ‘‘কাজটি করা সহজ, তবে আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’ ‘বিজয়ী’-‘‘কাজটি করা কঠিন, তবে আমার পক্ষে সম্ভব।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘বিজয়ীরা ভিন্নধর্মী কোনো কাজ করে না। একই কাজ ভিন্ন ভিন্নভাবে করে।’’ আমরা সুহৃদরা ধর্মীয় জীবন বোধের মূল্যায়ন, নৈতিক শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক কল্যান মূলক কাজকে অন্যদের থেকে ভিন্নরকম করে বিজয়ীবেশে একটি নতুন সমাজ তৈরি করার মন্ত্র শিখতে পারি যেন; এ হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। এসব কাজের মধ্যে দিয়ে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করব। কী নেই আমাদের? অর্থ-বিত্ত, জনবল-মনোবল, সম্পদ কিংবা সংস্কৃতি এসবের কোনোটারই অভাব নেই আমাদের। এখন দরকার একটি সঠিক সিদ্ধামেত্মর, দরকার একটি সাহসী পদক্ষেপের। আমরা সুহৃদরা যেন, এমন একটি পদক্ষেপ নিতে পারি যে পদক্ষেপ দ্বারা, যে সিদ্ধামত্ম দ্বারা সমাজের মানুষের জীবন নব নির্মাণ সংকল্প, অতীত-বর্তমানের ব্যর্থতা বিদীর্ণ করে নতুন সম্ভাবনাময় মুক্তির স্বপ্ন পূরণ করে নান্দনিক মানুষ তৈরি করে আলোকিত একটি সুন্দর সমাজ প্রস্ফুটিত করতে পারি। আর যদি সমাজের মানুষগুলোকে নান্দনিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তবেই একটি আলোকিত ভোর ছিনিয়ে আনা সম্ভব।
কোন পদ্মবীজকে যদি অাঁসত্মাকুড়ের নিচেও রাখা হয়, তবুও সে সব বৈরিতা উপেক্ষা করে তার সজীব-শোভিত ভবিষ্যতের মুক্ততায় জেগে ওঠে। আমরা সুহৃদরা একত্রিত হয়ে সুখ-দুঃখ ও সফলতা-ব্যর্থতার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সত্য, সুন্দর, নান্দনিক মানুষ ও আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায় জেগে উঠব- এ হোক সকল সুহৃদ বন্ধুর দৃঢ় অঙ্গীকার। এর সবকিছুর মুখ্য ভূমিকার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারে জ্ঞানের মশাল জ্বালানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর তা যদি হয় কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলিয়া (কামিল) মাদ্রাসার মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান!

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment