✍ কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) ➡ মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]
❏ মাসয়ালা: (১২৭)
اسبال (আছ্বাল) অর্থাৎ পায়জামা কিংবা তাহ্বন্দ লম্বা হওয়াটা যদি অহংকার ও গৌরব হিসেবে হয় তবে নিঃসন্দেহে গুনাহ ও নাজায়েয।
➠এ ক্ষেত্রে হাদীস শরীফে وعيد তথা শাস্তির যোগ্য বলে এরশাদ করা হয়েছে। আর যদি অহংকার ও আত্মগৌরব হিসেবে না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কোন সন্দেহ ছাড়াই জায়েয। যেমন- আজকাল অবহেলার কারণে ও ফ্যাশন, রছম এবং রেওয়াজ হিসাবে রাখা হয়ে থাকে।
পায়ের গোড়ালীর নিচে পায়জামা লম্বা রেখে নামাজ আদায় করা কোন প্রকার মাকরূহ ব্যতীরেখে জায়েয ও দুরস্ত। উক্ত মাসয়ালা সাধারণ মানুষ তাদের মনগড়া হিসাবে বানিয়ে নিয়েছে, যে নামাজের সময় পায়জামা গোড়ালীর উপরে করে নামাজ আদায় করে। পায়জামা গোড়ালীর উপরে তোলা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত নয়।
➠আ’লা হযরত ইমাম শাহ আহমদ রেজা খান (رحمة الله) এবং শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
“যদি অহংকার ও আত্মগৌরব হিসাবে না হয় তাহলে জায়েয।”
উক্ত মাসয়ালা দ্বারা ইহা প্রতীয়মান হয় যে, যদি আলীশান ও মনোরম সৌন্দর্য মন্ডীত বিল্ডিং নিজে থাকার জন্য তৈরী করাটা যদি অহংকার ও আত্মগৌরবের উদ্দেশ্যে ও নিয়্যতে হয় তবে তা নিষেধ ও গোনাহ। আর যদি অহংকার ও আত্মগৌরবের নিয়্যতে না হয় তা হলে জায়েয ও মুবাহ।
➠তাছাড়াও হাদীস শরীফে রয়েছে; “যখন কোন ব্যক্তি সাত গজের উপরে দেওয়াল (প্রাচীর) উঠায় তখন ফেরেশতাগণ বলে থাকেন হে মোনাফেক আর কত উঁচু উঠাবে।”
উক্ত হাদীসের মর্মার্থ হচ্ছে:
যে ব্যক্তি অহংকার, আত্মগৌরব ও লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বাসস্থান তৈরী করে তাদের জন্য وعيد তথা শাস্তির কথা বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে অহংকার ও গৌরবের নিয়্যতে না হলে তা জায়েয ও বৈধ। অধিকাংশ হাদীস ব্যাখ্যাকার এ সমস্ত হাদীসের সারকথা ও মর্মার্থ ইহাই বর্ণনা করেছেন। যা আমি সংক্ষিপ্ত ভাবে উপরোল্লেখ করেছি।
➥ [ফতোয়ায়ে রেজভীয়া, খন্ড-১০, পৃষ্ঠা ৯৯]
পায়জামা ও তাহ্বন্দ পায়ের গোড়ালীর নিচে হওয়াকে আরবী ভাষায় اسبال (আছ্বাল) বলা হয়। যদি পায়ের গোড়ালীর নিচে পায়জামা ও তাহ্বন্দ হওয়াটা অহংকার ও গৌরব হিসাবে হয় তবে তা হারাম ও নিষেধ, এর উপর কঠিন শাস্তির কথা হাদীসে উলেখ রয়েছে। আর যদি অহংকার ও গৌরব হিসাবে না হয় তাহলে হাদীসের দৃষ্টিতে তা জায়েয।
➠হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) আরজ করলেন;
ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমার পায়জামার দামান এক পার্শ্বে লম্বাভাবে ঝুলিয়ে যায়। রাসূল (ﷺ) এরশাদ ফরমালেন, তুমি তাদের মধ্যে গণ্য নয়। অর্থাৎ তুমি وعيدতথা কঠিন শাস্তির যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত নয়।”
এক কথায় যারা অহংকার ও গৌরব হিসাবে পায়ের গোড়ালীর নীচে কাপড় পরিধান করবে তারা শাস্তির যোগ্য এবং এ রকম করাটা হারাম। তবে আলেমগণ অহংকারের বেলায় মাকরূহে তানজীহির হুকুম দিয়েছে।
(ফতোয়ায়ে রেজভীয়া)
ফিকহের সাথে সংশিষ্ট আলেমগণ মনে করে, মাকরূহে তানজীহি কর্ম জায়েয হয়ে থাকে। ইহা হারাম ও মাকরূহে তাহরীমি বলা নিম্ন স্তরের অজ্ঞতা।
➥ [ফতোয়ায়ে বরকাতুল উলুম, পৃষ্ঠা-৬৬ ও ফতোয়ায়ে রেজভীয়া ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৯৯