হজরত আনাস থেকে বর্ণিত আছে, একদা রসুলেপাক (ﷺ) হজরত আবু বকর, হজরত ওমর ও হজরত ওছমানকে সঙ্গে নিয়ে উহুদ পাহাড়ে উঠেছিলেন। উহুদ মদিনা মনোয়ারার নিকটবর্তী একটি পাহাড়। উহুদ এমন একটি পাহাড় যে আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরা তাকে ভালোবাসি। তিনজন উহুদ পাহাড়ে আরোহণ করলে সে কাঁপতে লাগলো। রসুলেপাক (ﷺ) স্বীয় কদম মোবারক তার উপরে রেখে বললেন, হে উহুদ! স্থির থাকো। তোমার উপর এ মুহূর্তে একজন নবী, একজন সিদ্দিক এবং দুজন শহীদ ব্যতীত আর কেউ নেই।
হাদীছটি ইমাম আহমদ, বোখারী ও তিরমিযী আবু হাতেম থেকে বর্ণনা করেছেন। আরেকখানা হাদীছ হজরত ওছমান ইবনে আফফান যুন্নুরাইন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) একদা মিনার বাশীর নামক পাহাড়ে উঠলেন। তখন রসুলেপাক (ﷺ) এর সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক, ওমর ফারুক এবং আমি ছিলাম। পাহাড় কাঁপতে লাগলো। এমনকি তার টুকরোগুলো গর্তের ভিতরে গিয়ে পড়তে লাগলো। রসুলেপাক (ﷺ) বললেন, হে বাশীর! তুমি আপন স্থানে স্থির থাকো। এ মুহূর্তে তোমার উপর নবী, সিদ্দিক আর দু’জন শহীদ ছাড়া আর কেউ নেই।
হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, বোখারী, আহমদ, তিরমিযি এবং আবু হাতেম। হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, একদা রসুলেপাক (ﷺ) মক্কা-মুকাররমার হেরা পর্বতে আরোহণ করলেন। ওহী নাযিলের পূর্বে তিনি হেরা পর্বতে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। সেখানেই সর্বপ্রথম তাঁর উপর ওহী নাযিল হয়েছিলো। ওই ঘটনার সময় রসুলেপাক (ﷺ) এর সঙ্গে ছিলেন হজরত আবু বকর, হজরত ওমর, হজরত ওছমান, হজরত আলী, হজরত তালহা এবং হজরত যুবায়ের (رضي الله عنه)। হেরা পর্বত কেঁপে উঠলে তিনি বলেছিলেন, হে হেরা শান্ত থাকো। তোমার উপর এখন নবী, সিদ্দিক এবং কতিপয় শহীদ ব্যতীত আর কেউ নেই। হজরত সাআদ ইবনে আবী ওয়াক্কাসের হাদীছে হজরত আলীর কথা নেই। অন্য এক হাদীছে হজরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ ছাড়া সমস্ত আশারা মুবাশশারার নাম রয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, কুরাইশরা যখন নবী করীম (ﷺ) কে খোঁজাখুঁজি করছিলো, তখন বাশীর নামক পাহাড় নবী করীম (ﷺ) এর নিকট নিবেদন করেছিলো, ইয়া রসুলাল্লাহ! আপনি অনুগ্রহ করে আমার উপর থেকে অবতরণ করুন। আমার ভয় হচ্ছে, দুশমনেরা যদি আপনাকে শহীদ করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ্তায়ালা আমার উপর আযাব নাযেল করবেন।
তখন হেরা পর্বত বলেছিলো, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি আমার উপর তশরীফ নিয়ে আসুন। বাশীর আর হেরা মক্কা মুকাররমার সামনাসামনি দু’টি পাহাড়। উলামা কেরাম বলেন, হজরত মুসা (عليه السلام) এর কাওমের লোকেরা যখন তাদের কলেমা পরিবর্তন করে ফেলেছিলো, তখন সেখানকার পাহাড় পর্বতও প্রকম্পিত হয়েছিলো। তবে বাশীর এবং হেরা পর্বতের কম্পন ওই পাহাড় পর্বতের কম্পনের মতো ছিলো না। সেগুলো কেঁপেছিলো আল্লাহতায়ালার গজবের ভয়ে, আর বাশীর ও উহুদ কেঁপেছিলো আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের কারণে। এ ওসিলায় নবী করীম (ﷺ) নবী, সিদ্দীক এবং শহীদের মাকাম স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]