জিজ্ঞাসা–২৭৫: আসসালামু আলাইকুম। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার কোন আমল থাকলে অনুগ্রহ করে জানাবেন।–Nomaan Hossain:fjarfim1205@gmail.com
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, সফলতার জন্য আল্লাহ রহমত অপরিহার্য বিষয়। আর কোনো কাজে আল্লাহ তাআলার রহমত তখনি আসে যখন বান্দার পক্ষ থেকে চেষ্টা ও দোয়া থাকে। এ জন্য উদ্দিষ্ট সুফল লাভের জন্য চেষ্টা যেমন প্রয়োজন, তেমনি আল্লাহ তাআলার রহমত ও বরকতের জন্য সকাতরে তার সাহায্য প্রার্থনা করা আবশ্যক। সুতরাং পরীক্ষায় কামিয়াব হতে হলে পরীক্ষার্থীদের প্রতি অভিজ্ঞমহল ও বিশিষ্ট আলেমদের পরামর্শ হল–
প্রথমত, অলসতা ত্যাগ করে নিজের সাধ্যানুযায়ী কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, যারা ব্যাপক পরিশ্রমী তাদের সাফল্য ব্যাপক হয় আর যারা অপেক্ষাকৃত অলস তারা সফলতা থেকে তুলনামূলকভাবে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَلِكُلّٖ دَرَجَٰتٞ مِّمَّا عَمِلُواْۖ وَلِيُوَفِّيَهُمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ
‘আর সকলের জন্যই তাদের কর্ম অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবে না।’ (সূরা আল-আহকাফ ১৯)
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে, তিনিই সকল কাজে সফলতা দান করেন, তাই তিনি অবশ্যই আমাকে সফলতা দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা ত্বলাক : ৩)
তৃতীয়ত, মহান আল্লাহর নিকটে বিনয়ের সাথে দোয়া করতে হবে। প্রয়োজনে “সালাতুল হাজত” পড়ে দোয়া করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, বিশেষ কোন হালাল চাহিদা পূরনের জন্য আললাহ’র উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করাকে “সালাতুল হাজত” বলা হয়। (ইবনু মাজাহ ১৩৮৫) হুযায়ফা রাযি. বলেন, كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন নামাজে রত হতেন’। (আবু দাউদ ১৩১৯)
এই নামাজের আলাদা কোনো নিয়ম নেই। স্বাভাবিক নামাজের মতোই উত্তমভাবে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে। নামাজ শেষে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে।
চতুর্থত, পরীক্ষার্থীরা সময়ভিত্তিক নিম্নোক্ত দোয়াগুলো পড়লে পরীক্ষায় কামিয়াব হয় বলে অভিজ্ঞ আলেমরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
পড়ার পূর্বে : اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْألُكَ فَهْمَ الأَنبِياءِ وَحِفظَ المُرسَلينَ و المَلائكَةِ المُقَرَّبِينَ
পড়ার পর: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَودِعُكَ ما قَرَأتُ وَ ما فَهِمْتُ وَ ما تَعَلَّمْتُ فَرُدَّهُ إليَّ عِندَ حَاجَتِي لَهُ أنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
পরীক্ষার দিন: اللَّهُمَّ إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَيْكَ وَسَلَّمْتُ أَمْرِي إلَيكَ لا مَلْجَأَ وَلا مَنْجَا مِنكَ إلَّا إلَيك
পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময়: رَّبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَل لِّي مِن لَّدُنكَ سُلْطَانًا نَّصِيرًا
পরীক্ষা শুরুর পূর্বে: رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي بِسم اللهِ الفَتَّاح
পরীক্ষার মাঝে: يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ رَبِّ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
কোনকিছু ভুলে গেলে: اللَّهُمَّ رَبَّ الضَّالَّةِ ، هَادِيَ الضَّالَّةِ ، تَهْدِي مِنَ الضَّلَالَةِ ، رُدَّ عَلَيَّ ضَالَّتِي بِقُدْرَتِكَ وَسُلْطَانِكَ مِنْ عَطَائِكَ وَفَضْلِكَ
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হলে: اللُّهُمَّ لاَ سَهْلَ إِلاَّ مَا جَعَلْتَ سَهْلاً ، وَأَنْتَ إِنْ شِئْتَ جَعَلْتَ الْحَزْنَ سَهْلاً
পরীক্ষা শেষ করে : الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ
উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবায়ে কেরাম রাযি., তাবেইন ও পরবর্তী মনীষীগণ এ দোয়াগুলো বা এগুলোর একাংশ বিভিন্ন সময়ে পড়তেন। সুতরাং বাড়িতে বা যে কোনো স্থানে লেখাপড়ার শুরুতে কিংবা সাধারণ দোয়াতেও এ দোয়াগুলো পড়া যেতে পারে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী




Users Today : 47
Users Yesterday : 357
This Month : 47
This Year : 171918
Total Users : 287781
Views Today : 6265
Total views : 3413828