মানুষ সামাজিক জীব। একটি সমাজকে সাজাতে সবার থেকেই ইতিবাচক কাজ করতে হবে এবং নেতিবাচক কাজ পরিহার করতে হবে। আর সমাজ সাজানোর এই কার্যক্রমের সূচনা হতে হবে পরিবার থেকে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَهۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّقُوۡدُهَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ
হে ঈমানদারগণ! নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে ওই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর। (সুরা তাহরিম, ৬৬:৬)।
উক্ত আয়াতে রাব্বে কারিম আমাদের নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি নির্দেশ দিয়েছেন নিজের পরিবারকেও বাঁচাতে। তাই একজন আদর্শ মুসলিম শুধু নিজের সংশোধনে থেমে থাকেনা, বরং পদক্ষেপ নেই পরিবার ও সমাজকে বাঁচাতেও। অপর ভাইকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতের পথ দেখাতে দাওয়াতের কাজ করে যায় আমৃত্যু। দাওয়াতের কণ্টকাকীর্ণ পথে তার সইতে হয় নানা লাঞ্চনা, অপমান ও কষ্ট। অবুঝ ভাইয়েরা সত্যের দাওয়াত পেয়ে সত্যকে গ্রহণের পরিবর্তে দা‘ঈর সাথে বাজে আচরণ করে। শয়তানের ধোকায় পড়ে নিজের নফসের তাড়নায় নানা অন্যায় অনাচারে ডুবে থাকা মানুষ খুব সহজে দ্বীন আঁকড়ে ধরতে পারেনা। অনেকসময় সে চাইলেও পরিবেশ তাকে বাঁধা দেয় সত্যকে আঁকড়ে ধরতে। আর তখন একজন দা‘ঈ-র কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। দিনের পর দিন সময় দিতে হয় আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। যার প্রতিদান ঘোষণায় আল্লাহ বলেন,
مَنۡ یَّشۡفَعۡ شَفَاعَۃً حَسَنَۃً یَّکُنۡ لَّهٗ نَصِیۡبٌ مِّنۡهَا ۚ وَ مَنۡ یَّشۡفَعۡ شَفَاعَۃً سَیِّئَۃً یَّکُنۡ لَّهٗ کِفۡلٌ مِّنۡهَا ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ مُّقِیۡتًا
যে ব্যক্তি ভালো সুপারিশ করে তার জন্য সেটার মধ্যে অংশ রয়েছে এবং যে মন্দ সুপারিশ করে তার জন্য সেটার মধ্যে অংশ রয়েছে আর আল্লাহ প্রত্যেক কিছুর উপর শক্তিমান। (সুরা নিসা, ৪:৮৫)।
অর্থাৎ, আমরা যখন কাউকে ভালোর জন্য আহ্বান করি সেই ব্যক্তি যদি আমার দাওয়াত কবুল করে ভালো কাজে অংশ নেয় তবে সেই ব্যক্তি ভালো কাজ করে যে পরিমাণ সাওয়াব পাবে আমি দাওয়াত করার কারণে একই পরিমাণ সাওয়াব পাবো। কাউকেই কম দেওয়া হবে না। বিপরীতে, আমি যদি কাউকে মন্দ কাজের দিকে ডেকে নিয়ে যায় কিংবা সহযোগিতা করি, আমি সেই মন্দ কাজ সম্পাদনকারীর সমান গুণাহের ভাগীদার হবো।
রাসুলে পাক এরশাদ করেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا .
আবু হুরাইরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে, সে তার অনুসারীর সমান সাওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না। (সহিহ, সুনান আবু দাউদ, ৪৬০৯)।
ভালো কাজ করলেও সাওয়াব, ভালো কাজের আহ্বান করলেও সাওয়াব। মন্দ কাজ করলেও গুণাহ, মন্দ কাজের আহ্বান করাও গুণাহ। যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করি, কোরআনের দরসে বসার সুযোগ যাদের হয়; তারা যদি আরো দুই-চারজন অন্তত সাথিকে নিয়ে যায়, তবে সাওয়াব কতইনা বেড়ে যাবে। আর যারা পাপাচারে লিপ্ত, বিভিন্ন দিবসে গাড়ি ভাড়া করে বন্ধুদের নিয়ে নাচের আসর জমাচ্ছি আমাদের গুণাহের পাল্লাটা কতইনা ভারী হচ্ছে। ভাবুন একবার!
সমাজে ইতিবাচক কর্ম ছড়িয়ে দিতে ও নেতিবাচকতা দূর করতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কী সুন্দর বিধান। রাসুলে আরবির কত সুন্দর শিক্ষা আমাদের জন্য। তাই আসুন, মানুষকে ভালো কাজের আহ্বান করি। নিজের সংশোধনের পাশাপাশি আশেপাশে থাকা প্রত্যেকের সংশোধনের জন্য দাওয়াতি কাজ অব্যাহত রাখি। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় হয়ে যাওয়া পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখি। আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা দ্বীন বিমুখ মানুষদেরকেও দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকি। আমাদের কাজ দাওয়াত দেওয়া, হিদায়ত প্রদান করবেন আল্লাহ। আসুন, সমাজকে ইতিবাচকতা দিয়ে সাজিয়ে তুলি, নেতিবাচকতা মুক্ত রাখি।
-আবু মুহাম্মদ মুশফিক ইলাহী