পঁচিশতম অধ্যায়ঃ দাফন করার পদ্ধতি

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

প্রশ্নঃ কিভাবে লাশ কবরে নামাতে হবে এবং ঐ সময় কি পড়তে হবে? কবরে তিন মুষ্ঠি মাটি দেওয়া কি? কবর দেওয়া শেষ হলে পানি ছিটানো কি? কবরের চার কোণায় রসুন লাগানো এবং  কবরের উপরে খেজুরের বা বরইগাছের ডাল লাগানো জায়েয কিনা? এতে উপকার আছে কিনা? মাটি দেওয়া শেষ হলে যিয়ারতে  কি পড়া উত্তম? কবরে তাল্ক্বীন করার উপকারিতা কী? কবরে পাথর বসিয়ে বা বেড়া দিয়ে চিহ্নিত করা জায়েয কিনা? কবরের পাশে নীরব কান্না করা বৈধ কিনা?

উত্তরঃ কেব্লার দিক থেকে লাশ কবরে নামাতে হয়। ঐ সময় “বিছমিল্লাহ ওয়া আলা মিল্লাতে রাসুলিল্লাহ্” বা “বিছমিল্লাহ ওয়া আ’লা  সুন্নাতি রাসুলিল্লাহ্” অথবা “বিছমিল্লাহ ওয়া আলা ইছমে রাসুলিল্লাহ্” পড়তে হয় (যযবুল কুলুব)। মাটি দেওয়ার সময় তিন মুষ্ঠি মাটি আস্তে কবরে রাখতে হয়। প্রথম মুষ্ঠি মাটি রাখার সময় পড়তে হয় “মিন্হা খালাক্নাকুম”। দ্বিতীয় মুষ্টির সময় পড়তে হয়- “ওয়া ফীহা নুঈদুকুম”। তৃতীয় মুষ্ঠির সময় পড়তে হয় “ওয়া মিন্হা নুখ্রিজুকুম তারাতান উখ্রা”।

কবর দেওয়া শেষ হলে কবরের উপর মাথা থেকে পা পর্য্যন্ত তিনবার  পানি ছিটকাবে এবং কবরের উপর বরই বা খেজুরের ডাল গেড়ে দিবে এবং চার কোণায় ৪টি রসুন গেড়ে দিবে, চার “ক্বল” পড়বে।

কবরকে চিহ্নিত রাখার জন্য চারদিকে ওয়াল অথবা মাথার  দিকে পাথরখণ্ড অথবা পিলার গেড়ে দিতে পারবে। আল্লাহর ওলী  হলে কবরের উপর গম্বুজ করতে পারবে। কবরের পাশে  বসে নীরবে শোক পালন করতে পারবে এবং কান্না করতে পারবে। কবর দেয়া শেষ হয়ে গেলে সকলে মিলে যিয়ারত করবে। ছুরা  বাক্বারার প্রথম পাঁচ আয়াত এবং শেষ তিন আয়াত পড়া উত্তম। কবর তাল্ক্বীন করা সুন্নাত  ও উত্তম।  তাল্ক্বীনের প্রমাণ ইতিপূর্বে সপ্তদশ অধ্যায়ে উল্লেখ  করা হয়ে গেছে। এখন শুনুন ধারাবাহিক প্রমাণ।

(১) ক্বিব্লার দিক থেকে লাশ নামানো
عن ابن عباسؓ قال دخل النبی ﷺ قبرا لیلا فاسرج لہ بسراج فاخذ من قبل القبلۃ ۔ رواہ الترمذی۔
অর্থাৎ- হযরত  ইবনে আব্বাস (রাঃ) আনহুমা হতে বর্ণিত- “নবী করিম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে এক কবর যিয়ারতে গেলেন। তাঁর জন্য আলো জ্বালানো হলো। তিনি কেব্লার দিক  থেকে লাশ  নামানোর নির্দেশ দিলেন”।  (তিরমিযি ও মিশকাত দাফনুল মাইয়েত)। ইহাই হানাফী মাযহাবের নিয়ম।

(২) বিস্মিল্লাহ্ বলে লাশ নামানো এবং শোয়ানো
وعن ابن عمرؓ ان النبی ﷺ کان اذا دخل المیت القبر قال بسم اللّٰہ وباللّٰہ وعلی ملۃ رسول اللّٰہ وفی روایۃ وعلی سنۃ رسول اللّٰہ ۔ رواہ احمد والترمذی ومشکوۃ ۔
অর্থাৎ- হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) আনহুমা হতে বর্ণিত- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে লাশ রাখার সময় বলতেন- “বিছমিল্লাহ, ওয়া বিল্লাহ্, ওয়া আলা মিল্লাতি রাছুলিল্লাহ্”। অন্য সাহাবীর বর্ণনায়  “ওয়া আলা ছুন্নাতি রাছুলিল্লাহ্”  উল্লেখ  আছে”। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযি ও মিশকাত)।

শেখ আবদুল হক দেহলভী (রহঃ) জযবুল কুলুব গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- হুযুর (ﷺ) আপন চাচী ফাতেমা বিনতে আছাদ রাদিয়াল্লাহু আন্হার লাশ নামানোর সময় পড়েছিলেন- “বিছমিল্লাহ- ওয়া আলা ইছমে রাসুলিল্লাহ্” অর্থাৎ আল্ল্রা নামে শুরু করছি এবং আল্লাহর রাছুলের নামে সোপর্দ করছি”  (জযবুল কুলুব)।

(৩) তিন মুষ্ঠি মাটি প্রথমে কবরের ভিতরে রাখতে  হয়
وعن جعفر بن محمد عن  ابیہ مرسلا  ان النبی ﷺ حتی علی المیت ثلٰث حثیات بیدیہ جمیعا ۔ وانہ رش علی قبر ابنہ ابراھیم ووضع علیہ حصباء ۔ رواہ فی شرح السنۃ ۔
অর্থঃ জাফর ইবনে মুহাম্মদ তাঁর পিতা মুহাম্মদ থেকে মুরছাল সনদে বর্ণনা করেছেন- “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুর্দারের কবরে উভয় হাতে তিন মুষ্ঠি মাটি রেখেছেন। তিনি আপন শিশুপুত্র  হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) -এর কবরের উপর পানি ছিটিয়েছিলেন এবং তাঁর কবরের  মাথার দিকে পাথর  স্থাপন করেছিলেন”। (শরহে সুন্নাহ)

তিন মুষ্ঠিতে একটি আয়াতের তিনটি অংশ তিনবারে পড়তে হয়-  যথা মিন্হা খালাক্নাকুম; ওয়া ফীহা  নুয়ীদুকুম; ওয়া মিন্হা নুখ্রিজুকুম তারাতান উখ্রা”।

(৪) কবর দেওয়া শেষে পানি ছিটানো, ডালা স্থাপন ও রসুন লাগানোঃ
وعن جابرؓ قال رش قبر  النبی ﷺ وکان الذی رش الماء علی قبرہ بلال بن رباح بقربۃ ۔ بداء من قبل رأسہ حتی انتھی الی  رجلیہ رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ ۔
অর্থঃ হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওযা মোবারকে পানি ছিটানো হয়েছিল। যিনি লোটায় করে পানি ছিটিয়েছিলেন- তিনি হযরত বিলাল ইবনে রিবাহ্ (রাঃ)। তিনি মশকে পানি এনে মাথা মোবারক থেকে পা মোবারক পর্যন্ত পানি ছিটিয়েছিলেন। (বায়হাকীর দালায়েলুন নবুয়াত ও মিশ্কাত)

মন্তব্যঃ পানি ছিটানোর পর খেজুরের  ডাল গেড়ে দেওয়া ও চার কুল পড়ে চার কোণায় লাগিয়ে দেওয়া উত্তম। কেননা, ডালও রসুন গাছ যতক্ষণ  তাজা থাকবে, ততক্ষণ আল্লাহর যিকির   করবে। এতে মুর্দারের উপকার হবে। বুখারী শরীফে দুই  কবরে খেজুরের তাজা  ডালা গেড়ে দেয়ার প্রমাণ আছে। উদ্দেশ্য- মুর্দারের উপকার। কোরআন তিলাওয়াতেরও একই হুকুম।

(৫) কবরের মাথায় পাথর দিয়ে চিহ্নিত করাঃ
وعن المطلب  بن ابی وداعۃؓ قال لما مات عثمان بن مظعون ۔ اخرج    بجنازتہ فدفن  ۔ امرالنبی ﷺ  رجلا ان  یاتیہ بھجر۔ فلم یستطع  حملھا   فقام الیھا رسول اللّٰہ ﷺ وحسی عن ذراعیہ ۔ قال المطلب :   قال الذی یخبرنی عن   رسول  اللّٰہ ﷺ کانی  انظر الی بیاض ذراعی رسول اللّٰہ ﷺ حین حسر عنھما ۔ ثم حملھا فوضعھا عند رأسہ ۔ وقال : اعلم ۔ بھا قبر اخی وادفن الیہ من مات من اھلی۔ رواہ ابوداؤد۔

অর্থঃ হযরত মুত্তালিব ইবনে আবি  ওয়াদাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন রাসূলে পাকের  দুধভাই হযরত ওসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) মদিনায় প্রথম মুহাজির হিসাবে ইন্তিকাল  করেন, তখন তাঁর লাশ  জান্নাতুল বাক্বীতে নিয়ে দাফন করা হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম একজন  লোককে  একটি পাথরখন্ড আনতে বললেন। ঐ লোকটি পাথরখানা উঠাতে সক্ষম ছিলেন না। অত:পর নবী করিম (ﷺ) ঐ পাথরের কাছে গেলেন এবং দুই বাহুর আস্তিন গুটিয়ে পাথরটি তুলতে লাগলেন। মুত্তালিব (রাঃ) বলেন- আমাকে ঐ ঘটনা বর্ণনাকারী বলেছেন- যখন নবী    করিম  (ﷺ) দুই বাহু থেকে জামা সরালেন, তখন আমি হুযুরের বগল মোবারক দেখেছি, একেবারে সাদা ধবধবে”। তিনি নিজে পাথরখানা তুলে হযরত ওসমান ইবনে মাযউনের কবরের মাথার দিকে স্থাপন করে দিলেন এবং বললেন, “আমি এই  পাথর দ্বারা আমার দুধভাই ওসমানের কবরকে চিহ্নিত করলাম। আমার বংশের কেউ ইন্তিকাল করলে তাঁর পার্শেই যেন দাফন করতে পারি” (আবু দাউদ ও মিশকাত)।

ফতোয়া  : এই হাদীসে প্রমাণিত হলোঃ কবরকে নিশ্চিহ্ন করা দুরস্ত নেই, বরং পাথর, ওয়াল বা ছাদ দিয়ে কবরকে চিহ্নিত করা বা তাঁর উপর গম্বুজ নির্মাণ করা সুন্নাত- যদি তিনি ওলী হন। যেমন হযরত আবু বকর ও উমর (রাঃ)-এর মাযার। আরো প্রমাণিত  হলো, আপনজনদেরকে এক জায়গায় কবর দেয়া  মোস্তাহাব (যদি দেশে মারা যায়)।

(৬) কবর দেওয়ার পর যিয়ারত করা উত্তম
وعن عبد اللّٰہ  بن عمرؓ قال   سمعت النبی  ﷺ یقول اذا  مات احدکم فلا تحبسوہ ۔ واسرعوا بہ الی قبرہ ولیقرا عند راسہ فاتحۃ البقرہ ۔ وعند رجلیہ بخاتمۃ البقرۃ ۔ رواہ البیھقی ۔
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর  রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লামকে একথা এরশাদ করতে শুনেছি, “যখন তোমাদের কেউ ইন্তিকাল করে, তাহলে তাঁকে বেশীক্ষণ আটকিয়ে  রেখোনা- বরং যথাসম্ভব শীঘ্র কবরে নিয়ে যেয়ো। দাফন শেষে তাঁর মাথার কাছে ছুরা বাক্বারার প্রথম ৫ আয়াত মুফলিহুন পর্যন্ত পড়বে এবং পায়ের দিকে উক্ত  ছুরার শেষের তিন আয়াত কাওমিল কাফিরীন পর্যন্ত তিলাওয়াত করে বখশিষ করে দিবে” (বায়হাকীর শুয়াবুল ঈমান)।

ব্যাখ্যাঃ বুঝা গেল, বিনা ওযরে কবর দিতে বিলম্ব করা ঠিক  নয়।  বিশেষ  কারণে  নবী করিম (ﷺ) কে দুইদিন পর  দাফন করা হয়েছিল  রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে  এবং দুরদূরান্তের সাহাবীগণের আগমনের অপেক্ষায়। হযরত বড়পীর (রহঃ)-এর দাফন হয়েছিল দুদিন  পর। ঈমাম আবু হানিফার দাফনেও বিলম্ব হয়েছিল- বহুবার জানাযা হওয়ার কারণে। কারো আপনজন  বিদেশে থাকলে তাতেও বিলম্ব করা যায়।

(৭) কবরের পাশে বসে নীরব কান্না করা বৈধঃ
عن   انسؓ قال  شھدنا بنت رسول  اللّہ  ﷺ  تدفن  ورسول  اللّٰہ  ﷺ جالس علی القبر فرأیت عینیہ تدمعان رواہ البخاری۔
অর্থঃ হযরত আনাছ ইবনে মালেক  (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলে পাকের তৃতীয় ছাহেবজাদী হযরত উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু আন্হার জানাযায় ও দাফনে শরিক ছিলাম। যখন তাঁর দাফন  শেষ হলোঃ তখন আমি দেখেছি- রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কবরের পাশে বসে অঝোর নয়নে কেঁদেছিলেন” (বুখারী ও মিশকাত)।

বুঝা গেল, নীরবকান্না করা জায়েয। উচ্চস্বরে চিৎকার করে কান্না করা, কপাল চাপড়ানো, বুক ফাটানো, চুল ছেঁড়া- ইত্যাদি ধরণের কান্না ও মর্সিয়া গাওয়া এবং কান্নার মাহফিল আয়োজন করা জাহেলিয়াত যুগের প্রথা।  এগুলো নিষিদ্ধ।  হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) ইন্তিকালের পর হুযুর (ﷺ) কান্না  করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ইহা রহমত  ও দয়ার কান্না। এই কান্না না করলে এবং শোক না করলে বুঝা যাবে, সে একজন সীমার ও দয়ামায়াহীন পাষণ্ড।

বিশেষ বিবরণঃ দ্বিতীয় হিজরীতে  হুযুরের দ্বিতীয় সাহেবজাদী হযরত রোকেয়া (রাঃ) প্রথম ইন্তিকাল  করেন। এরপর ইন্তিকাল করেন তৃতীয় সাহেবজাদী হযরত  উম্মে কুলছুম (রাঃ)। তারপর ৮ম হিজরীতে ইন্তিকাল করেন বড় সাহেবজাদী হযরত যয়নাব (রাঃ)। সর্বশেষ ইন্তিকাল করেন হযরত ফাতেমা (রাঃ)। তিনি রাসুলে পাকের ছয়মাস পর ইন্তিকাল করেন।

(৮)  কোন্ ধরণের কান্না করা জায়েয এবং কোন্ ধরণের বিলাপ করা নাজায়েয?
=======
ধৈর্য্যরে সাথে কান্না করা সুন্নাতঃ
عن انس  بن  مالکؓ  قال  دخلنا مع رسول اللّٰہﷺ علی ابی سیف القین وکان ظئرا لابراھیم۔ فاخذ رسو ل اللّٰہ ﷺ ابراھیم فقبلہ وشمہ ۔ ثم دخلنا علیہ  بعد ذلک وابراھیم یجود  بنفسہ ۔ فجعلت عینا رسول اللّٰہ ﷺ تذرفان قال لہ عبد الرّحمٰن بن عوف وانت یا رسول اللّٰہ ؟ قال یاابن عوف انھا رحمۃ ثم اتبعھا باخری فقال ان العین تدمع والقلب یحزن ۔ ولا نقول الا ما یرضی ربنا وانا بفراقک یا ابراھیم لمحزونون ۔ متفق علیہ۔

অর্থঃ হযরত আনাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- আমরা কিছু সাহাবী  রাসুলপাকের  সাথে কর্মকার আবু সাইফের (বারা) বাড়ীতে গেলাম।  তাঁর স্ত্রী (খাওলা বিন্তে মুন্যির অথবা রাইয়ান আনসারীয়া) ছিলেন হুযুর (ﷺ) -এর শিশুপুত্র হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) -এর ধাত্রীমা। রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনপুত্র হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) কে কোলে নিয়ে চুমু খেলেন এবং  তাঁর শরীরের ঘ্রান নিলেন। এরপর আরেক দিন আমরা হুযুর (ﷺ) সহ কর্মকার সাহাবী হযরত  আবু সাইফ বারা -এর বাড়ীতে গিয়ে দেখি- হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) ইন্তিকাল করেছেন।  এ  অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম -এর দুই চোখ থেকে অশ্র“ গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

আমাদের সাথী হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এ অবস্থা দেখে আরয করলেন- ইয়া রাছুলাল্লাহ্! (লোকেরা এ অবস্থায় কান্নাকাটি করে অস্থির হয়। ) আপনিও কি অধৈর্য্য হয়ে কান্নাকাটি করছেন? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন- “না, অধৈর্য্য হয়ে নয়- বরং ধৈর্য্যরে সাথে কান্নাকাটি করা রহমত ও  দয়ামায়ার প্রতীক”। একথা বলেই তিনি পুনরায় কাঁদতে লাগলেন। কান্না অবস্থায়ই আল্লাহর প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলতে লাগলেন- “চোখ অশ্র“ বর্ষণরত,  অন্তর শোকাবিভূত”। আমরা এসময় এমন কথাই বলি- যাতে আমাদের আল্লাহ্ রাযী থাকেন। হে  প্রিয় ইব্রাহীম! তোমার বিদায়ে আমরা সবাই শোকাবিভূত” (বুখারী  ও মুসলিম, মিশকাত- বাবুল বুকা)।

বুঝা গেল- প্রিয়জনের মৃত্যুতে ধৈর্য্যরে সাথে কান্নাকাটা করা জায়েয- বরং ইহা আল্লাহর রহমতস্বরূপ  এবং দয়ামায়ার প্রতীক। যার চোখ অশ্রু শূন্য এবং অন্তর কঠোর- সে দয়ামায়াহীন পাষানহৃদয়। আল্লাহর রহমত থেকে সে বঞ্চিত।

(৯) কারো মৃত্যুতে ধৈর্য্য ধারণের  উপদেশ দেয়া সুন্নাত
وعن  اسامۃ  بن زید قال ارسلت ابنۃ النبی ﷺ الیہ ان ابنا  لی قبض فاتنا۔ فارسل یقرء السلام ویقول: ان للّٰہ ما اخذ ولہ  ما اعطی۔ وکل عندہ فاجل مسمی ۔ فلتصبر ولتحتسب ۔ فارسلت الیہ تقسم علیہ لیأتیھا ۔ فقام ومعہ سعد بن عبادۃ ومعاذ بن جبل وزید بن ثابت ورجال ۔ فرفع الی رسول اللّٰہ ﷺ الصبی ونفسہ  تتقعقع فاضت عیناہ ۔ فقال سعد بن عبادۃ رسول اللّٰہ ﷺ ما ھذا ؟ قال ھذہ رحمۃ جعلھا اللّٰہ فی  قلوب عبادہ فانما یرحم اللّٰہ من عبادہ الرحماء ۔ متفق علیہ۔

অর্থঃ হযরত উছামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বর্ণনা করেন- রাসুলপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বড় কন্যা হযরত যয়নব রাদিয়াল্লাহু আন্হা হুযুরের কাছে লোক পাঠালেন একথা বলে যে- আমার শিশুপুত্র মারা যাচ্ছে-  আপনি শীঘ্র আসুন! হুযুর  (ﷺ) তাঁকে ছালাম পাঠিয়ে বললেন- “প্রাণ  দেওয়া-নেওয়া আল্লাহর  ইখ্তিয়ারাধীন। প্রত্যেকেরই নির্ধারিত সময় রয়েছে আল্লাহর কাছে। অতএব তুমি ধৈর্য ধারন করো এবং প্রতিদানের আশা রাখো”।

হযরত যয়নব (রাঃ) পুনরায় খবর পাঠালেন এবং কছম দিয়ে তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য বললেন। এবার হুযুর (ﷺ) উঠে দাঁড়ালেন।  তাঁর সাথী হলেন হযরত ছাআদ ইবনে উবাদাহ্,  মুয়ায ইবনে জাবাল, যায়েদ ইবনে  ছাবেত-  প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম। যখন মৃত শিশুর মুখ দেখানো হলো- তখন রসুল পাকের প্রাণ বিচলিত হয়ে উঠলো এবং দুইচোখ দিয়ে অশ্র“ গড়াতে লাগলো। হযরত ছাআদ (রাঃ)  আরয করলেন- এরূপ  করা   কি?  হুযুর (ﷺ) বললেন- “ইহা  আল্লাহর  রহমতের প্রতীক। আল্লাহ্পাক এ ধরণের রহমত ও দয়ামায়া তাঁর  বান্দাদের অন্তরে পয়দা করেছেন। আল্লাহ্পাক আপন দয়াবান বান্দার উপরই রহমত বর্ষন করেন”। (বুখারীও মুসলিম)।

(১০) কবরের পাশে কান্না করাঃ
وعن انس قال ؛ امرالنبی ﷺ بامراۃ تبکی عند قبر ۔ فال اتقی اللّٰہ واصبری الخ۔ متفق علیہ ۔
অর্থঃ হযরত আনাছ (রাঃ) বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি একজন মহিলাকে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদ্তে দেখলেন। তিনি তাঁকে ডেকে এনে শান্তÍনা দিয়ে বল্লেন- “আল্লাহর ভয়  অন্তরে পোষণ করো এবং  বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করো”। (বুখারীও মুসলিম -এর সম্মিলিত ইবারত)

ব্যাখ্যাঃ আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন-
ھذا الحدیث وغیرھا من الاحادیث یدل علی جواز زیارۃ القبور للرجال والنساء ۔ وجواز بکاء النساء عند القبر۔ ولو کان بکاؤھن ۔ وزیارتھن منھیا وحراما ۔ لنھی النبی  ﷺ المراۃ ولزجرھا زجرا بزجر مثلہ من اتی  محرما وارتکب منھیا۔

অর্থঃ কুরতুবী বলেন- “এই হাদীস  এবং এ ধরণের অন্যান্য হাদীস প্রমাণ করে যে- নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই কবর যিয়ারত করা বৈধ- বরং সুন্নাত। আরো প্রমাণ করে যে- কবরের পাশে বসে নারীদের নীরব কান্না করা  জায়েয। যদি না জায়েয হতো- তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম অবশ্যই তাঁকে নিষেধ করতেন এবং ধমক দিতেন- যেভাবে ধমক দিতেন অন্যান্য হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ দেখে”। (পূর্বেও  একবার তাঁর  মন্তব্য পেশ করা হয়েছে)।

(১১) হযরত ওমর (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন-
قال عمر : دعھن بکین علی ابی سلیمان مالم یکن نقعا او لقلقۃ۔
অর্থঃ (আবু সোলায়মান (রাঃ) ইন্তিকাল  করার পর পরিবারের  মহিলারা কান্নাকাটি করছিল। ) হযরত ওমর (রাঃ) বল্লেন- “মহিলাদেরকে কাঁদতে দাও আবু সোলায়মান -এর শোকে” যে পর্যন্ত নাক্আ ও লাক্লাকা সীমায় না পৌঁছে- ততক্ষন পর্যন্ত নিষেধ করোনা”।

ব্যাখ্যাঃ “নাক্আ” অর্থ- উচ্চ আওয়াজে কান্না করা এবং ‘লাক্লাকা’ অর্থ- অবিরাম  চিৎকার করা ও মাথায় ধূলাবালি মাখা। নীরব কান্নাতে কোনই দোষ নেই।

যারা বলে- নারীদের কান্না করা মোটেই দুরস্ত নেই- অথবা যারা বলে- নারীদের কান্নায় কবর আযাব হয়- তাঁরা হাদীসের ভুল  ব্যাখ্যাকারী এবং প্রাকৃতিক ও স্বভাবজাত নিয়ম বিরোধী। এমনকি- রাসূল বিরোধীও। নীরব কান্নার অসংখ্য নযীর রয়েছে। খোদ নবী করীম (ﷺ) -এর বিবিগণ এবং হযরত  ফাতেমা (রাঃ) -এর কান্নাকাটি করার কথা  হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। ইবনে কাছির তাঁর বেদায়া নেহায়া গ্রন্থে তাই লিখেছে। (নূরনবী দেখুন)

(১২) কোন্ ধরণের কান্নাকাটি ও বিলাপ করা নিষিদ্ধ এবং এর দ্বারা মুর্দারের আযাব হয়?

(ক) عن عبد اللّٰہ بن مسعودؓ قال قال رسول  اللّٰہ ﷺ لیس منامن ضرب الخدود وشق الجیوب۔ ودعا بدعاء الجاھلیۃ ۔ متفق علیہ ۔

অর্থ : হযরত  আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত- রাসূল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “যারা শোকে নিজ গালে ও মুখে আঘাত  করে অথবা জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহেলিয়াত যুগের ন্যায় বিলাপ করে ও আজেবাজে বকে- তারা আমার দলের অন্তর্ভূক্ত নয়”। (বুখারী ও মুসলিম)

(খ) عن ابی سعید  الخدریؓ قال :  لعن رسول اللّٰہﷺ النائحۃ المستمعۃ  ۔ رواہ ابوداؤد ۔

অর্থঃ হযরত আবু ছায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি  বলেন- “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  চিৎকার করে বিলাপকারিনী এবং তা শ্রবণ কারিনীদের ওপর অভিসম্পাত বা লা’নত করেছেন”। (আবু দাউদ ও মিশকাত)

(গ) عن ابی موسی الاشعریؓ قال فی مرضہ لامراتہ ام عبد اللّٰہ الم تعلمی ان رسول اللّٰہ ﷺ قال : انا برئ ممن حلق وصلق وخرق ۔ متفق علیہ ۔

অর্থঃ হযরত আবু মূছা আশ্আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি অসুখ অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে পড়লে তাঁর স্ত্রী উম্মে আব্দুল্লাহ্ রোনাজারী ও  চিৎকার শুরু করে দেন। ইতোমধ্যে  তিনি হুঁশ ফিরে পেয়ে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে রাগতঃ স্বরে বল্লেন- “তুমি কি জাননা- রাসুল করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- যেসব লোক চুল ছিঁড়ে, চিৎকার করে বিলাপ করে এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে- আমি তাঁদের থেকে মূক্ত”। (তাঁদের প্রতি আমার কোন দায় দায়িত্ব নেই)। – (বুখারী ও মুসলিম এবং মিশকাত বাবুল বুকা)।

ব্যাখ্যাঃ ইমাম কুরতুবী তাঁর “আত্-তাযকিরাহ্” গ্রন্থে বলেন- যেসব হাদীসে কান্না করা  নিষেধ এসেছে- তাহলো আরবদেশে  আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের প্রচলিত বিলাপ- শুধূ  নীরব কাঁদা নয়। জাহেলিয়াত যুগে বিলাপের জন্য অছিয়ত করা হতো এবং মহিলা ভাড়া করে এনে অনেক দিন পর্যন্ত মাতম- মজলিসা করা হতো। তিনি আরো বলেন-
وتکون التیاحۃ وقد یکون معھما الصیاح وضرب الخدود وشق الجبوب وحلق الشعر ۔ وھذا محرم باجماع العلماء وھو الذی (ورد فیہ الوعید)
অর্থাৎঃ “জাহেলিয়াত যুগে প্রচলিত কান্না ও মাতমের মজলিসে চিৎকার করা হতো,। মুখে  আঘাত করা হতো, জামা কাপড় ছিঁড়া হতো এবং চুল ছিঁড়া হতো। এ ধরণের বিলাপ করা ইমামগণের ঐক্যমত্যে হারাম এবং হাদীসে শুধূ এ ধরণের বিলাপ ও মাতমই নিষিদ্ধ করা হয়েছে”। (আত্-তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা ২১ ও ২২)।

(১৩) কবরের উপর ঘর বা গম্বুজ তৈরী করা (যিকির আযকারের সুবিধার জন্য)
وعن البخاری تعلیقا قال لما مات الحسن بن الحسن بن علی رضی اللّٰہ عنھم ضربت امرأتہ القبہ علی قبرہ سنۃ ثم رفعت ۔
অর্থঃ ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ণনা  করেছেন- “হযরত ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর পুত্র দ্বিতীয় হাসান (রাঃ) ইন্তিকাল করার পর তাঁর স্ত্রী তাঁর কবরের উপর একটি কুব্বা বা ঘর তৈরী করে  তাতে এক বৎসর পর্য্যন্ত বসবাস করেছিলেন শোক পালন করতে।  তারপর তা তুলে নেন”। (তা’লীকে বুখারী)।

ব্যাখ্যাঃ কোন সাইয়েদ বা অলী বা হাক্কানী উলামাদের কবরের উপর ঘর তৈরী করা, কোব্বা নির্মাণ করা  জায়েয। হযরত দ্বিতীয় হাসান (রাঃ) -এর এই ঘটনাই তাঁর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। নবীর বংশধর সন্তান কোনদিন  বিদ্আত বা হারাম কাজ করেন নি। হযরত  দ্বিতীয় হাসানের কবর ছিল তাঁর নিজ বাড়িতে।

মিশকাতের হাশিয়া ৯-তে বলা হয়েছে,
الظاھر انہ لاجتماع الاحباب للذکر والقرأءۃ وحضورا لاصحاب للدعاء واحمل فعلھا علی اللبث۔
অর্থাৎঃ “হযরত দ্বিতীয় হাসান (রাঃ) -এর মাযারের উপর কুব্বা তৈরী করা হয়েছিল- বন্ধু বান্ধবদের যিকির আয্কার ও তিলাওয়াত করার উদ্দেশ্যে। লোকদের যিয়ারতের সুবিধার্থে মাযারের উপর কুব্বা তৈরী করা হয়েছিল। কিন্তু হাদীসের প্রকাশ্য  ভাষায় বুঝা যায়- হযরত হাসানের স্ত্রী নিজে থাকার জন্যই ঐ ঘর তৈরী করেছিলেন। অবশ্য পরে  তা সরিয়ে নেয়া হয়”। এতেই প্রমানিত হয়- মাযারের উপর কুব্বা বা গম্বুজ তৈরী করা নবীবংশের সুন্নাত।

ফতোয়া বা রায়ঃ এই হাদীসের উপর আমল করেই সমগ্র বিশ্বে সৈয়দ খান্দান ও নবী-অলীগণের মাযারে গম্বুজ তৈরী করা হয়েছে। অদ্যাবধি তা চালু আছে।

কিন্তু ৭২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম ইবনে তাইমিয়া নামক এক খবিছ মৌলভী গম্বুজ নির্মাণের বিরুদ্ধে ফতুয়াবাজী শুরু করে এবং তার শাগরিদ ইবনে কাইয়েম (৭৫১ হিঃ) সর্বত্র তা প্রচার করে। তারপর তাদের এই গলদ ফতোয়া অবলম্বন করে নজদের মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী (১১১১-১২০৬ হিজরী) মাযার ভাঙ্গার আন্দোলন  শুরু করে।  এই  মাযার বিরোধী আন্দোলনের নামই ওহাবী আন্দোলন। ভারতবর্ষে এই মাযার বিরোধী  আন্দোলন শুরু করে  ইসমাঈল দেহলভী, তার পীর সৈয়দ আহমদ বেরলবী  এবং দেওবন্দ মাদ্রাসা। এই মাযার বিরোধী  ভারতীয় আন্দোলনের নামই আওর মোহাম্মদীয়া।

ভারতবর্ষে এই মাযার বিরোধী আন্দোলন সর্বপ্রথম আমদানী করে ইসমাঈল দেহলভী ও তার পীর সৈয়দ আহমদ বেরলভী। তারা সীমান্ত প্রদেশে সকল মাযার ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। দেখুন حقائق تحریک بالا کوٹ এবং সৌদি  বাদ্শাহ ফয়সল কর্তৃক অনুমোদিত ও রাজকীয় প্রকাশনা কর্তৃক প্রকাশিত আরবী বই “আশ্ শায়েখ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব”। আমার লিখিত “বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত” দেখুন।

এই ওহাবী আন্দোলন প্রচারের জন্য  এবং ওহাবী আলেম পয়দা করার জন্য কাশেম  নানুতবী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, মৌলভী ইয়াকুব ও হাজী এমদাদুল্লাহ্ কর্তৃক ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসা।  বাংলাদেশে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় হাটহাজারী, লালবাগ,  বড় কাটারা, বি-বাড়ীয়া,  কিশোরগঞ্জ, বরুড়া-  প্রভৃতি স্থানে। এগুলো থেকে বছরে বছরে অসংখ্য নামধারী ওহাবী মুফতী বের হয়ে আসছে। বর্তমানে তাঁরা ওহাবী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন জঙ্গী  প্রতিষ্ঠান,  যথা, জামাআতুল মোজাহেদীন বাংলাদেশ (জে.এম.বি.), হারকাতুল জেহাদ, হিজবুত তাহরীর- ইত্যাদি জঙ্গী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তাদের রাজনৈতিক সংগঠন হচ্ছে, ইসলামী ঐক্যজোট বা ৬ দলীয় ঐক্য। তাদের উদ্দেশ্য একটিই, তা হচ্ছে, ইসলামের দোহাই দিয়ে এদেশে একটি ওহাবী রাষ্ট্র  প্রতিষ্ঠা করা। বিদেশী ওহাবী রাষ্ট্রের অর্থের ঢল নেমে আসছে তাদের কাছে। এই ওহাবী মতবাদ গ্রহণ করেছে মউদুদী, মিশরের সৈয়দ  কুতুব-এর ইখ্ওয়ানুল মোসলিমুন থেকে। মিশরের রশিদ  রেযা হলো মউদুদীবাদের এক পূর্ব নেতা। মউদূদীর জামায়াতে ইসলামও জড়িয়ে পড়েছে জঙ্গীবাদের সাথে। ওহাবীদের জঙ্গী নেতা হচ্ছে মুফতী হান্নান। ফরিদপুর গহরডাঙ্গা কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক সে। আর জামায়াতে ইসলামীর জঙ্গী নেতা ছিল শেখ আবদুর রহমান ও সাদেকুল ইসলাম বাংলা  ভাই। এদের একটিই লক্ষ্য, এদেশ থেকে মাযার ও দরবার সমূহ উৎখাত করে ওহাবী মতবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ্ আমাদেরকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment