সময় গড়িয়ে চললো। সফর মাসের মধ্যভাগে নবীজী [ﷺ] একদিন মদীনার পবিত্র গোরস্থান জান্নাতুল বাকীতে রাত্রে যেয়ারত করতে গেলেন। দীর্ঘক্ষণ ধরে তিনি যেয়ারত করলেন এবং ইনতিকালপ্রাপ্ত সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে কবরবাসী সাহাবীগণ! তোমাদের উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা ভালোয় ভালোয় চলে গেছো। আগামীতে ফেতনা ফাসাদ অন্ধকার রাত্রির মত ঘনিয়ে আসছে। পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে পরবর্তী সময়টি হবে নিকৃষ্ট। এরপর তার সহগামী আবু মোয়াইহাবা (رضي الله عنه)-কে লক্ষ্য করে বললেনঃ “আমাকে দুনিয়ার যাবতীয় ধন ভান্ডারের চাবী প্রদান করা হয়েছে এবং দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা অথবা জান্নাতে গমনের এখতিয়ারও দেয়া হয়েছে। আবু মোয়াইহাবা (رضي الله عنه) আরজ করলেন, “ইয়া রাসূলআল্লাহ! আপনি দুনিয়ার ধন ভান্ডার এবং দীর্ঘদিন দুনিয়াতে অবস্থানের বিষয়টি প্রথমে গ্রহণ করুন। তারপর বেহেস্তে গমন!” নবী করীম [ﷺ] তাঁর কথা শুনে বললেন – “না, বরং আমার প্রতিপালকের সান্নিধ্য এবং জান্নাতকেই আমি গ্রহণ করেছি।”
এরপর জান্নাতুল বাকী কবরবাসীদের জন্য দোয়া করে অধিক রাতে হুযরা শরীফে ফিরে আসলেন। এসে দেখেন বিবি আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنها) “মাথা গেল, মাথা গেল”- বলে কাৎরাচ্ছেন। নবী করীম [ﷺ] বললেন, না তোমার মাথা নয় বরং আমার মাথা।” এ কথা বলার সাথে সাথে হযরত আয়শা (رضي الله عنها) সুস্থ্য হয়ে উঠলেন আর মাথা ব্যাথা শুরু হলো নবী করীম [ﷺ]-এঁর। একজনের অসুখ বা বিপদ আপদে অন্যজনে নিজের মধ্যে টেনে নেয়াকে আরবীতে “ছাল্ব” বলা হয়। এটা ফয়েজের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এভাবেই নবী করীম [ﷺ] সেচ্ছায় অসুখ বরণ করে নিলেন।
হযরত আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنها) বলেন- যখন আমি মাথা ব্যাথায় কাৎরাচ্ছিলাম- “মাথা গেল, মাথা গেল” বলে, তখন নবী করীম [ﷺ] আমাকে বললেন, “যদি তুমি আমার পূর্বেই মারা যাও তাহলে তো তোমার ভাগ্য ভালো! কেননা, আমি নিজে তোমার গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করবো। আমার হাতে তুমি মারা যাবে। এটা তোমার বড় সৌভাগ্য। তখন আমি অভিমান করে বললাম, তাহলেতো বরং আপনারই বড় সৌভাগ্য হবে আমার বিছানায় আর একজন বিবিকে নিয়ে সংসার করতে পারবেন।” এ কথা শুনে নবী করীম [ﷺ] মৃদু হাসলেন এবং মাথা ব্যাথা নিয়েই শুয়ে পড়লেন।
অসুখ নিয়ে নবী করীম [ﷺ] প্রত্যেক বিবির ঘরে সমান সমান পালায় অবস্থান করতে লাগলেন। বিবি মায়মুনা (رضي الله عنها)-এঁর ঘরে অবস্থানকালে অসুখ অনেক বেড়ে যায়। তখন সকল বিবিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন – অসুস্থ্য অবস্থায় কার ঘরে তিনি অবস্থান করবেন? সকলেই বিবি আয়শা (رضي الله عنها)-এঁর ঘরে থাকার অনুমতি প্রদান করেন। এ ছিলো বিবিগণের মধ্যে সমতা রক্ষা করার আদর্শ। হযরত আয়শা (رضي الله عنها) বললেন- “নবী করীম [ﷺ] বিবি মায়মুনার ঘর থেকে হযরত ফজলে ইবনে আব্বাস ও হযরত আলী (رضي الله عنهما)-এঁর কাঁধের উপর ভর দিয়ে বের হলেন। তখন তার পাঁ মোবারক মাটিতে হোঁচট খাচ্ছিল।”