মীনায় ৪ দিন অবস্থান করার পর নবী করীম [ﷺ] জিলহজ্ব চাঁদের ১৩ তারিখ মধ্যাহ্নে মক্কায় রওয়ানা হন। পথিমধ্যে মোহাচ্ছাব বা আবতাহ বা কাদা নামক স্থানে অবতরণ করে যোহর, আসর, মাগরীব ও এশার নামায তথায় আদায় করেন। সফরের প্রথম দিকেও এখানেই চারদিন অবস্থান করেছিলেন। জনৈক সাহাবী আরজ করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার পৈত্রিক বাড়িতে অবস্থান করলে কী ভালো হতোনা”? নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করলেন, “আমার চাচাতো ভাই আকিল কি সে সুযোগ রেখেছে? সেতো তা বিক্রি করে দিয়েছে।”
এই মোহাচ্ছাব বা ফাতহা নামক স্থান থেকেই নবী করীম [ﷺ] হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنها) -কে তাঁর শরীর পাক হওয়ার পর তাঁর ভাই আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর সাথে তানঈন নামক স্থানে প্রেরণ করেন। হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) সেখান থেকে এহরাম করে ক্বাজা ওমরাহ আদায় করেন। তাঁর উছিলায় এই স্থানটি চিরকালের জন্য ওমরার মীকাত ও হারাম শরীফের উত্তর সীমানা নির্ধারিত হয়ে যায়।
এশার নামায মোহাচ্ছাবে আদায় করে কিছুক্ষণ আরাম করার পর নবী করীম [ﷺ] সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে ফজরের পূর্বেই ক্বাবা শরীফে প্রবেশ করেন এবং ফজরের নামায আদায় করেন। ঐদিন ছিলো ১৪ই জিলহজ্ব। ফযরের নামায আদায় করে তিনি সকলকে নিয়ে বিদায়ী তাওয়াফ সম্পাদন করে মদীনা শরীফের দিকে রওয়ানা হন। তাওয়াফে বিদা ওয়াজিব।
গাদীরে খুমের ঘটনা এবং শিয়াদের ঈদের দিনঃ
যিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখ পথিমধ্যে ‘গাদীরে খুম’ নামক কুপের স্থানে বিশ্রামের জন্য নবী করীম [ﷺ] অবতরণ করেন। এখানে হযরত আলী (رضي الله عنه)-এঁর ফজিলত ও মর্তবা বয়ান করে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দান করেন। সে ভাষণে নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেন, (نسائى) من كنت مولاه فعلى مولاه ـ اللهم وال من والاه و عا دمن عاداه
অর্থঃ আমি যার মুনিব বা মাওলা, হযরত আলীও তাঁর মাওলা। হে আল্লাহ যে ব্যক্তি হযরত আলীর সাথে বন্ধুত্ব রাখে, তুমিও তার সাথে বন্ধুত্ব রাখো এবং যে তার সাথে শত্রুতা পোষণ করে, তুমিও তাকে শত্রুতার উপযুক্ত জবাব দাও (সূত্র : কানযুল উম্মাল ১১:৬০৯/৩২৯৫০, আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১০৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১০৪, আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী ৪:১৭৩/৪০৫৩, তিরমিযী ৫:৬৩৩/৩৭১৩, মুসনাদে আহমাদ ১:৮৪, ৮৮, ১১৯, ১৫২, ৩৩১ ও ৪:২৮১, ৩৬৮, ৩৭০, ৩৭২ ও ৫:৩৪৭, ৩৫৮, ৩৬১, ৩৬৬, ৪১৯)। উল্লেখ্য, কোন কোন সাহাবী হযরত আলী (رضي الله عنه)-এঁর কঠোরতা সম্পর্কে নবী করীম [ﷺ]-এঁর খেদমতে আরজি পেশ করলে নবী করীম [ﷺ] ঐরূপ উক্তি করেন।
উক্ত হাদীসে একটি জিনিস প্রমাণিত হলো যে, মাওলা শব্দটি আল্লাহ, রসূল ও হযরত আলী (رضي الله عنه) এঁর শানে ব্যবহার করা হয়েছে। পরবর্তীতে জনৈক সাহাবী হযরত আলী (رضي الله عنه) কে মাওলা বলে এভাবে সালাম দিতেন। আচ্ছালামু আলাইকা ইয়া মাওলানা (সূত্র : ইবনে কাসীর কৃত বেদায়া-নেহায়া)।
কিন্তু শিয়ারা এই হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা করে বলে যে, নবী করীম [ﷺ] নাকি হযরত আলী (رضي الله عنه)-কেই তাঁর একমাত্র উত্তারাধীকারী নিযুক্ত করে যান। সুতরাং ‘গাদীরে খুম’ এ উপস্থিত যেসব সাহাবী নবী করীম [ﷺ]-এঁর ইনতেকালের পর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর হাতে খেলাফতের বায়াত করেছিলেন তারা শিয়াদের মতে সবাই কাফের হয়ে গেছে। (নাউযুবিল্লাহ!)
শিয়ারা গাদীরে খুম’ দিবসে অর্থাৎ ১৮ই যিলহজ্ব তারিখে ঈদ পালন করে থাকে। এমনকি কোরবানীর ঈদের চেয়েও এই দিনকে তাঁরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আহলে সুন্নতের আক্বিদা হলা – “মাওলা” শব্দটি দ্বারা খলিফা বুঝায় না। পরবর্তীকালের সাহাবীরাও মাওলা অর্থ খলিফা বলেননি। কিন্তু শিয়া সম্প্রদায় এর অর্থ করে “একমাত্র নিযুক্ত খলিফা” এটি তাদের ভুল। (তাহফায়ে ইনসা আশারিয়া-কৃত শাহ আবদুল আযিয (رضي الله عنه)।
হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত হাদীস – রাসূল করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেন – “হে আলী, তোমার মধ্যে হযরত ঈসা (عليه السلام)-এঁর সাদৃশ্য বিদ্যমান। হযরত ঈসা (عليه السلام)-এর সাথে ইয়াহুদীরা শত্রুতা পোষণ করত। তারা তাঁর মাতার চরিত্রের উপর মিথ্যা তোহমত দিতো। আর ঈসায়ী বা নাছারাগণ তাঁকে সীমাতিরিক্ত মহব্বৎ করতো। তারা হযরত ঈসা (عليه السلام) কে এমন পর্যায়ে নিয়েছিলো যা তার মধ্যে ছিলোনা।” অর্থাৎ তারা তাকে আল্লাহর বেটা বলতো।
এই হাদীস বর্ণনা করে হযরত আলী (رضي الله عنه) নিজ সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন- আমার ব্যাপারে দু-প্রকারের লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে- একদল আমার সম্মন্ধে সীমাহীন বাড়াবাড়ি করবে যা আমার মধ্যে নেই। আর একদল লোক আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমার ব্যাপারে মিথ্যা দোষারোপ করবে।” (ইমাম আহমদ ও মিশকাত ৫৬৫ পৃষ্ঠা, আরবী)
[বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ অত্র হাদীসে বর্ণিত প্রথমোক্ত দল হলো শিয়া এবং দ্বিতীয়োক্ত দল হল খারিজী ও মওদূদী। শিয়ারা হযরত আলী (رضي الله عنه) সম্মন্ধে এমন সব আজগুবি কথা বলে যা তাঁর মধ্যে ছিলো না। খারেজী ও মউদূদীরা এমন সব অপবাদ হযরত আলী (رضي الله عنه) এঁর উপর বর্তায় যা হতে তিনি পবিত্র।