নামাযে বিসমিল্লাহ নীচু স্বরে পড়া

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

সুন্নাত হলো নামাযী সূরা ফাতিহার পূর্বে নীচু স্বরে বিসমিল্লাহ পড়ে আল হামদু লিল্লাহে থেকে ক্বিরআত শুরু করবে। কিন্তু মাযহাব অমান্যকারী ওয়াহাবী সম্প্রদায় ‘বিসমিল্লাহও’ উচুস্বরে পড়ে যা সুন্নাতের পরিপন্থী। বিসমিল্লাহ আস্তে পড়ার ব্যাপারে প্রচুর হাদীস শরীফ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে এখানে কিছু উল্লেখ করা হচ্ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবূল করুন।

হাদীস নং-১-৩: ইমাম মুসলিম বোখারী ও আহমদ (রাহিমাহুমুল্লাহ) হযরত আনাস (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণনা করেন:

قَالَ صَلَيَّتَ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلْفَ أَبِىْ بَكَرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ فَلَمْ اَسْمَعْ اَحْدًا مِنْهُمْ يَقْرَءُ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ

আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর সিদ্দীক, ওমর ফারুক ও উসমান যুননূরাইন (রাদ্বিআল্লাহু আনহুম) এর পিছনে নামায পড়েছি। কিন্তু তাদের কাউকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়তে শুনিনি।
হাদীস নং-৪: ইমাম মুসলিম (রহ:) হযরত আনাস (রাদ্বি) থেকে বর্ণনা করেনঃ

وَعَنْ اَنَسٍ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَبَابَكَرِ وَعُمَرَ كَانوْا يَفْتَتِحُوْنَ الصَّلَاةَ بِلْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

নিশ্চয়ই নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত আবূ বকর সিদ্দীক ও হযরত ওমর (রাদ্বিআল্লাহু আনহুমা) আল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন পড়ে নামাযের কিরাত শুরু করতেন।
হাদীস নং-৫-৭: ইমাম নাসাঈ ইবনে হাব্বান তাহাবী প্রমুখ হযরত আনাস (রাদ্বি:) থেকে বর্ণনা করেন:-

قَالَ صَلَيَّتُ خَلْفَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِىْ بَكَرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَان فَلَمْ اَسْمَعُ اَحْدًا مِنْهُمْ يَجْهَرُ بِبِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ

অর্থাৎ আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর সিদ্দীক, ওমর ফারুক ও ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহুম) এর পিছনে নামায পড়েছি। তাদের কাউকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম উচু আওয়াজে পড়তে শুনিনি।
হাদীস নং-৮-১১: তাবরানী মু’জামুল কবীরে আবূ নুআইম হুলিয়া’তে ইবনে খুযাইমাহ এবং তাহাবী হযরত আনাস(রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা করেন:

أَنَّ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبَابَكَرٍ وَعُمَرُ كَانُوْا يُسِرُّوْنَ بِبِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ

অর্থাৎঃ নিশ্চিই নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর, ওমর ফারুক (রাদ্বিআল্লাহু আনহুমা) ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ নীচু স্বরে পড়তেন।
হাদীস নং-১২-১৪: আবূ দাউদ দারিমী তাহাবী প্রমুখ হযরত আনাস (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন:

أَنَّ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَابَكَرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ كَانُوْا يَسْتَفْتِحوْنَ الْقِرَ اءةَ بِالْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

অর্থাৎ নিশ্চয়ই নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর, ওমর ফারুক ও ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহুম) ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ থেকে ক্বিরাআত শুরু করতেন।
হাদীস নং- ১৫: ইমাম মুসলিম হযরত আনাস (রাদ্বি) থেকে বর্ণনা করে:
নিশ্চয়ই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর, ওমর ও ওসমান (রাদআল্লাহু আনহুম) ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বলে ক্বিরাআত আরম্ভ করতেন। আর ক্বিরাআতের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়তেন না, ক্বিরাআতের শেষেও পড়তেন না।”
হাদীস নং-১৬: ইবনে আবি শায়বাহ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্ব.) থেকে বর্ণনা করেন-

عَنْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ يُخْفِى بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّ حِيْمِ وَالْاِسْتِعَاذَةَ وَرَبَّنَالَكَ الْحَمْدَ

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্ব.) ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ আঊযুবিল্লা এবং ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ নীচুস্বরে পড়তেন।
হাদীস নং -১৭: ইমাম মুহাম্মদ কিতাবুল আছার এ হযরত ইবরাহীম নাখয়ী (রাদ্বি.) হতে বর্ণনা করেনঃ

قَالَ اَرْبَعٌ يُخْفِيْهِنَّ الاِمَامُ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ  وَسُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَالتَّعُوْذَ وَاَمِيْنَ

তিনি বলেন চার বিষয়ে ইমাম নীচু স্বরে পড়বেন- বিসমিল্লাহ, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা, আঊযুবিল্লাহ ও আমীন।
হাদীস নং-১৮-১৯ ইমাম মুসলিম, আবূ দাউদ (রহ:) হযরত আয়িশা (রাদ্বি.) হতে বর্ণনা করেন:

قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَفْتِم الصَّلَاة بِالتَّكْبِيْرِ وَالْقَرَاءَةَ بِالْحَمْدِ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীরে তাহরীমা বলে নামায শুরু করতেন এবং ‘আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামী’ দিয়ে ক্বিরাআত আরম্ভ করতেন।
হাদীস নং-২০: আবদুর রাযযাক আবূ ফাখতাহ থেকে বর্ণনা করেনঃ-

اَنَّ عَلِيًّا كَنَ لَايَجْهَرُ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ وَكَانَ يَجْهَرُ  بِالحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

হযরত আলী মুরতোদ্বা (রাদ্বি.) বিসমিল্লাহ উচু স্বরে পড়তেন না আলহামদুলিল্লাহ উচু স্বরে পড়তেন।
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক হাদীস শরীফ পেশ করা যেতে পারে, কিন্তু আমরা এখানে শুধুমাত্র বিশটা হাদীসকে যথেষ্ট মনে করছি। বিস্তারিত জানার ইচ্ছা হলে তাহাবী ও সহীহ বোখার শরীফ কিতাবদ্বয় অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
বিবেকও চায় যে বিসমিল্লাহ উচু স্বরে পাঠ না করা। প্রত্যেক সূরার শুরুতে যে বিসমিল্লাহ লেখা আছে তা ঐ সূরাগুলোর অংশ তথা অন্তর্ভুক্ত নয়। শুধুমাত্র সূরাগুলোকে বিভক্ত করার জন্য লেখা হয়েছে এবং হাদীস শরীফেও বর্ণিত আছে, যে নেককাজ ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে শুরু করা হয়নি তা অপূর্ণ। যেমনি ভাবেনামাযী বরকতের জন্যই ক্বিরাআতের শুরুতে আঊযুবিল্লাহ পড়ে অথচ তা নীচু স্বরেই পড়ে। কেননা আঊযুবিল্লাহ কোন সূরার অংশ নয়।
একইভাবে বরকতের জন্যই বিসমিল্লাহ পড়া হয় এবং তা নীচু স্বরেই পড়া হয়। কেননা বিসমিল্লাহও প্রত্যেক সূরার অংশ নয়। তবে সূরা নামল শরীফে যে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ রয়েছে তা ঐ সূরারই অংশ আর ইমামও তা উঁচু স্বরেই পড়ে থাকেন। কেননা তা ঐ সূরার আয়াত। এ জন্য ইমাম শুধুমাত্র কোরআনুল করীমকে উঁচু স্বরে পড়বেন। কিন্তু যে বিসমিল্লাহ সূরার প্রথমে লেখা হয় তা সূরার অংশ নয় বিধায় নীচু স্বরে পড়াই বাঞ্চনীয়। -সুত্রঃ জা’আল হক ৩য় খন্ড-

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment