29 – بَابُ مَا جَاءَ فِي لَا يَجْهَرُ بِـ «بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ فِى الصّلَوة»
100 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ، وَأَبُوْ بَكْرٍ، وَعُمَرُ لَا يَجْهَرُوْنَ بِبِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ.
বাব নং ৪৪. ২৯. নামাযে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়বে না
১০০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) , হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত ওমর (রা.) (নামাযে) উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন না। (মুসনাদে আহমদ, ৩/১৭৯/১২৮৬৮)
ব্যাখ্যা: সূরা ফাতিহার পূর্বে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়া বা না পড়া সম্পর্কে ইমামগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম মালিক (رحمة الله)’র মতে উচ্চস্বরে হোক বা নিন্মস্বরে হোক বিসমিল্লাহ পড়া যাবে না। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফল (رضي الله عنه)’র হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করেন। ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)’র মতে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত। উচ্চস্বর বিশিষ্ট নামাযে উচ্চস্বরে নিন্মস্বর বিশিষ্ট নামাযে নিন্মস্বরে পড়তে হবে। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ এবং ইমাম ইসহাক (رحمة الله)’র মতে বিসমিল্লাহ সুন্নত তবে সর্বাবস্থায় নিন্মস্বরে পড়া উত্তম। সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনের মধ্যে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হযরত ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه), হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (رضي الله عنه) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফল (رضي الله عنه), হযরত হাসান (رضي الله عنه), হযরত শা’বী (رحمة الله), হযরত ইব্রাহীম নখঈ (رحمة الله), ইমাম আওযাঈ (رحمة الله), ইমাম সুফিয়ান সওরী (رحمة الله), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (رحمة الله), হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (رحمة الله), হযরত আ’মশ (رحمة الله), ইমাম যুহ্রী (رحمة الله), হযরত মুজাহিদ (رحمة الله), হযরত হাম্মাদ (رحمة الله), ইমাম আহমদ (رحمة الله) এবং হযরত ইসহাক (رحمة الله) এই মত পোষণ করতেন।
এই বিষয়ে ইমাম বুখারী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন-
ان النبى وابابكر وعمر كانوا يفتحون الصلوة بالحمد لله رب العالمين
“রাসূল (ﷺ) এবং হযরত আবু বকর (رحمة الله) ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন দ্বারা নামায শুরু করতেন।”
➥ ইমাম বুখারী (رحمة الله), (২৫৬ হিঃ) সহীহ বুখারী, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ২৫৯, হাদীস নং ৭১০, বৈরুত
মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে-صليت خلف النبى صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان فلم اسمع احدا منهم يقرأ بسم الله الرحمن الرحيم-“আমি রাসূল (ﷺ) , হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত ওমর (رضي الله عنه) ও হযরত ওসমান (رضي الله عنه)’র পেছনে নামায পড়েছি, তাঁদের কাউকে বিসমিল্লাহ পড়তে শুনিনি।”
➥ ইমাম মুসলিম (رحمة الله), (২৬১ হিঃ), সহীহ মুসলিম, খন্ড ২, পৃষ্ঠাঃ ১২, হাদীস নং ৯১৮, বৈরুত
তবে এর পক্ষ ও বিপক্ষদলের নিকট রাসূল (ﷺ) ’র হাদিস রয়েছে। এগুলোকে সমন্বয় করতে হবে। তা হলো উচ্চস্বর সম্পর্কিত হাদিস সমূহ কেবল তালীমের জন্য। অথবা প্রথমে উচ্চস্বরে পড়ার বিধান ছিল পরে তা রহিত হয়ে গিয়েছে। এর সমর্থনে আবু দাউদ শরীফে হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিস বিদ্যমান। এই হাদিসের শেষাংশে বলা হয়েছে فامر الله رسوله باخفاء فما جهر حتى مات “অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলকে নিন্ম বা অনুচ্চ আওয়াযে পড়ার নির্দেশ দেন। সুতরাং তিনি ইন্তেকাল পর্যন্ত উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়েন নি।”
উল্লেখ্য যে, ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) তাঁর মতের পক্ষে বহু হাদিস পেশ করেছেন। হাফেয যা‘আলী (رحمة الله) ‘নসবুর রিয়া’ নামক গ্রন্থে ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)’র সব দলীলের উত্তর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
101 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ سُفْيَانَ، عَنْ يَزِيْدَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ ، أَنَّهُ صَلَّىٰ خَلْفَ إِمَامٍ، فَجَهَرَ بِبِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ، فَلَـمَّا انْصَرَفَ، قَالَ: يَا عَبْدَ اللهِ! احْبِسْ عَنَّا نِعْمَتَكَ هَذِهِ، فَإِنِّيْ صَلَّيْتُ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ ، وَخَلْفَ أَبِيْ بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ، فَلَـمْ أَسْمَعْهُمْ يَجْهَرُوْنَ بِهَا، وَهَذَا صَحَابِيٌّ. قَالَ الْـجَامِعُ: وَرَوَتْ جَمَاعَةٌ هَذَا الْـحَدِيْثَ عَنْ أَبِيْ حَنِيْفَةَ، عَنْ أَبِيْ سُفْيَانَ، عَنْ يَزِيْدَ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنِ النَّبِيِّ ، قِيْلَ: وَهُوَ الصَّوَابُ، لِأَنَّ هَذَا الْـخَبَرَ مَشْهُوْرٌ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ.
১০১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু সুফিয়ান থেকে, তিনি ইয়াযিদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি একদা কোন একজন ইমামের পেছনে নামায আদায় করেন। নামাযে ইমাম উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়েন। নামায শেষে তিনি ইমামকে বললেন হে, আল্লাহর বান্দা! তুমি তোমার গান বন্ধ কর (অর্থাৎ উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়া বন্ধ কর), কেননা আমি রাসূল (ﷺ) , হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত ওমর (رضي الله عنه) এবং হযরত ওসমান (رضي الله عنه)’র পেছনে নামায পড়েছি, কিন্তু আমি তাদেরকে বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তে শুনিনি। জামে‘ গ্রন্থে বর্ণিত আছে, একটি দল এই হাদিস হযরত ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) থেকে, তিনি আবু সুফিয়ান থেকে তিনি ইয়াযিদ থেকে, তিনি স্বীয় পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (رضي الله عنه) থেকে এবং তিনি রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন। (অর্থাৎ হাদিসটি মারফু’) আর এটাই সঠিক। কেননা এই হাদিস আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (رضي الله عنه) থেকে মশহুর হয়েছে।
১০২ – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَدِيٍّ، عَنِ الْبَرَاءِ ، قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ الْعِشَاءَ، وَقَرَأَ بِالتِّيْنِ وَالزَّيْتُوْنِ.
১০২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আদী থেকে, তিনি হযরত বারা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) ’র পেছনে এশা’র নামায আদায় করি। তিনি এতে সূরা ওয়াত্তীনি ওয়ায-যায়তুন তিলাওয়াত করেন।
ব্যাখ্যা: রাসূল (ﷺ) এশা’র প্রথম রাকাতে ওয়াত্-তীন এবং দ্বিতীয় রাকাতে اذا السماء انشقت তিলাওয়াত করেন। তিনি হযরত মুয়ায (رضي الله عنه) কে বলেন, এশা’র নামাযে তুমি কেন সূরা বুরূজ এবং সূরা ইনশিকাক তিলাওয়াত করনা? একই বাক্যের মাধ্যমে এই হাদিস তিরমিযী, নাসাঈ আহমদ এবং ইমাম মালিক (رحمة الله) রেওয়ায়েত করেছেন।
103 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ، وَمِسْعَرٌ: عَنْ زِيَادٍ، عَنْ قُطْبَةَ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقْرَأُ فِيْ إِحْدَىٰ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ: «[وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَـهَا طَلْعٌ نَضِيْدٌ] {ق: 50}».
১০৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মিস্আর থেকে, তিনি যিয়াদ থেকে, তিনি কুতবা ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে ফজরের এক রাকাতে والنخل باسقات لها طلع نضيد পাঠ করতে শুনেছি।
ব্যাখ্যা: এই হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে হানাফী মাযহাবে ফজর নামাযে তিওয়ালে মুফাস্সল (طوال مفصل) তথা একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করা সুন্নত বলা হয়েছে। তাদের এই মত হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র খিলাফতকালে বিভিন্ন রাজ্যের শাসনকর্তাদের নামে যে দ্বীনি নির্দেশ খলিফার দরবার থেকে জারী হয়েছিল তা এর উপর নির্ভর করেই পেশ করা হয়েছে।