নামাযে “আমীন” আস্তে বলা।

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আহলে হাদিস নামধারনকারীদের “আমীন” জোরে বলার কোন দলিল নেই।

নামাযে “আমীন” আস্তে বলা।

কুরঅান থেকে
_____________
“আমীন” একটি দুআ/
আতা ইবনে রাবাহ বলেন, ‘আমীন হচ্ছে দুআ।’
ﺁﻣﻴﻦ ﺩﻋﺎﺀ
[সূত্রঃ সহীহ বুখারী ১/১০৭]।

লুগাতুল হাদীসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ মাজমাউল বিহারে (১/২০৫) আছে,
‘আমীন অর্থ, ইয়া আল্লাহ আমার দুআ কবুল করুন, বা ইয়া আল্লাহ্ এমনই হোক।’
ﻭﻣﻌﻨﺎﻩ ﺍﺳﺘﺠﺐ ﻟﻲ ﺃﻭ ﻛﺬﻟﻚ ﻓﻠﻴﻜﻦ
হযরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে উদ্ধৃত নবীয়ে পাক (صلى الله عليه و آله وسلم) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা (দুঅার স্থলে) আমীন (এর নিয়ামত)  একমাত্র আমাকেই দান করেছেন। আমার পূর্বে হারুন (আ) ব্যাতীত আর কোন নবীকে দেননি। হযরত মুসা (আ) দুঅা করতেন আর হারুন (আ) আমীন বলতেন।
[সূত্রঃ সহিহ ইবনে খুজাইমা হা/ ১৫৮৬]।
হযরত আবু হোরায়রা (রা) বলেন যখন হযরত মুসা আ. দুআ করতেন তখন হযরত হারুন আ তার দোয়ার উপর আমীন বলতেন।

আল্লাহ তায়ালা (হযরত মুসা আ. ও হযরত হারুন আ. এর দুয়ার জবাবে) বললেন তোমাদের দোয়া কবুল হল। সুতরাং তুমরা দৃঢ় পদ থাক।
[সুরা ইউনুস : ৮৯]।
সুতরাং প্রমানিত হলো যে আমীন একটি দোআ।
অতএব প্রথমেই দেখা উচিত, দুআ কি জোরে করা উত্তম, না আস্তে। যদিও জোরে দুআ করাও জায়েয এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরেও দুআ করেছেন, তবে দুআর মূল তরীকা হল আস্তে করা। কুরআন মজীদে ইরশাদ
হয়েছে-
ﺍﺩﻋﻮﺍ ﺭﺑﻜﻢ ﺗﻀﺮﻋﺎ ﻭﺧﻔﻴﺔ
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ডাকো কাতরভাবে ও গোপনে।
তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।”
[সূরা আ’রাফ : ৫৫]।
হযরত যাকারিয়া আ. সম্পর্কে বলা হয়েছে-
ﺍﺫ ﻧﺎﺩﻯ ﺭﺑﻪ ﻧﺪﺍﺀ ﺧﻔﻴﺎ
“যখন তিনি তার প্রতিপালককে ডাকলেন অনুচ্চস্বরে।”-
[সূরা মারইয়াম : ৩]।
আমীন যেহেতু দুআ তাই কুরআন মজীদের উপরোক্ত নীতি অনুযায়ী তা আস্তে ও অনুচ্চস্বরে বলতে হবে।

সহিহ হাদিস থেকে
________________
১ম দলিল/
তিরমিযী রহ. আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীছ হযরত শো’বা রহ. এর সনদে হযরত ওয়াইল (রা) থেকে এইভাবে  রিওয়ায়ত করেছেন, “ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমীন’ মৃদু আওয়াজে বলেছেন” (যা চুপে বলার সমতুল্য)।
[সূত্রঃ তিরমিযি, ২৪৯; দারাকুতনি ১ম খন্ড ৩৩৪ পৃষ্ঠা; বাইহাকি খন্ড ২, পৃষ্ঠা-৫৭]।
এই হাদিসকে হাকেম (রহ) সহিহ বলেছেন। যাহাবী (রহ)ও তার সংগে একমত হয়েছেন। ইবনে জারীর তাবারী (রহ)ও এটিকে সহিহ বলেছেন। কাযী ইয়ায (রহ)ও এটিকে সহিহ বলেছেন।
[সূত্রঃ শারহুল উব্বী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৬০৮ পৃষ্ঠা]।
ইমাম তিরমিযী রহ. ইমাম শো’বা রহ. এর সনদের উপর তিনটি অভিযোগ আরোপ করেছেন।
অভিযোগ সমুহ :
০১. এই হাদীছের একজন রাবী সালামা বিন কুহাইলের উস্তাদের নাম হুজর  ইবনুল আম্বাস (আম্বাসের ছেলে হুজর)। হযরত শো’বা রহ. হুজর ইবনুল  আম্বাস না বলে বলেছেন হুজর আবুল আম্বাস (আম্বাসের পিতা)।  মানুষকে কখনো কখনো তার আসল নামে ডাকা হয়, আবার কখনো  কখনো সন্তানের দিকে সম্বোধন করে ডাকা হয়। যেমন- আবু আব্দিল্লাহ অর্থাৎ আব্দুল্লাহর পিতা। ছেলের দিকে কিংবা পিতার দিকে সম্বোধন করে পিতা কিংবা ছেলেকে যে নামে ডাকা হয় তাকে আরবী ভাষায় কুনিয়ত  (উপনাম) বলা হয়। হযরত শো’বা রহ. ওয়াইল ইবনে হুজরের কুনিয়ত আবুল আম্বাস বলেছেন, অথচ তার প্রকৃত কুনিয়ত হলো আবুস সাকান। আর তিনি  হলেন আম্বাসের ছেলে, আম্বাসের পিতা নন।
০২. শো’বা রহ. তাঁর সনদে হুজর ইবনে আম্বাস এবং ওয়াইল ইবনে হুজর  এই দুইয়ের মাঝে আলকমা ইবনে ওয়াইল রহ.এর ওয়াসেতা তথা মাধ্যম নিয়ে এসেছেন, অথচ মূল সনদে আলকমা  নেই।
০৩. ইমাম তিরমিযী রহ. নিজের কিতাব ইলালুল কাবীর গ্রন্থে লিখেছেন,  আলকমা তার পিতা ওয়াইল বিন হুজর থেকে কোনো হাদীছ সরাসরি শুনেন নি।  কারণ, আলকমা স্বীয় পিতার মৃত্যুর ছয় মাস পর ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। তাই আলকমা স্বীয় পিতা থেকে হাদীছ শুনেছেন বলে যে কথা হযরত শো‘বা রহ. নিজ সনদে উল্লেখ করেছেন তা, তাঁর ভুল।     উল্লিখিত ভুলসমূহের কারণে শো’বা রহ.এর সনদ গ্রহণযোগ্য নয়।
অপর  দিকে হযরত সুফিয়ান রহ. এর সনদ যেহেতু উপর্যুক্ত ভুলসমূহ থেকে মুক্ত তাই তাঁর সনদ গ্রহণযোগ্য।

ইমাম তিরমিযী রহ.এর অভিযোগসমূহের উত্তরঃ
 
বোখারী শরীফের অন্যতম ব্যাখ্যাকারী আল্লামা আইনী রহ.নিজ রচিত বোখারীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘উমদাতুল কারী’তে ইমাম তিরমিযী রহ. এর  উত্থাপিত অভিযোগসমূহকে অত্যন্ত জোরালো ভাষায় খণ্ডন করেছেন।
তা নিন্মে তুলে ধরা হলোঃ

প্রথম অভিযোগের উত্তর/
মূলত হুজরের পিতা ও ছেলে উভয়ের নাম ছিলো আম্বাস। তাই তাঁকে আবুল আম্বাস (আম্বাসের পিতা) কিংবা ইবনুল আম্বাস উভয়ের যেকোনো একটা কিংবা উভয় কুনিয়ত উল্লেখ করা যথাযথ ও শুদ্ধ। আরব দেশে দাদা ও নাতির নাম এক হওয়া এমনকি পিতা ও ছেলের নামও এক হওয়া আয়েব বা দোষের কিছু নয়। তার অনেক নযীর রয়েছে।
ইবনে হিব্বান রহ. তাঁর লিখিত কিতাবুস সিকাতে উক্ত রাবীর ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, তাঁকে হুজর ইবনুল আম্বাস ও হুজর আবুল আম্বাস উভয় প্রকারে সম্বোধন করা হত।
ইবনে হাজর আসকালানী রহ. শাফেঈ মাযহাবের কট্টর ভক্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর “তাহযীবুত তাহযীব” কিতাবে তা স্বীকার করেছেন।
ইমাম আবু দাউদ রহ.ও উক্ত হাদীছটি সুফিয়ানের সনদেও আবুল আম্বাস নামে  নকল করেছেন। ইমাম দারে কুতনী রহ. উক্ত হাদীছে  হুজর আবুল আম্বাস  লিখেছেন, সাথে সাথে এই কথাও লিখে দিয়েছেন যে, তাকে ইবনুল আম্বাসও  বলা হয়। এই তথ্যপূর্ণ আলোচনার পর হযরত শো’বা রহ.এর সনদের উপর  আরোপিত প্রথম অভিযোগ নিশ্চিতভাবে দূর হয়ে যায়।

দ্বিতীয় অভিযোগের উত্তর/
হুজর বিন আম্বাস উক্ত আমীনের হাদীছটি দুইভাবে রেওয়ায়ত করেছেন। একবার সরাসরি হযরত ওয়াইল বিন হুজর থেকে শুনেছেন, আর সুফিয়ান রহ. এই রেওয়ায়তটি বর্ণনা করেছেন। আরেকবার তিনি আলকমা ইবনে ওয়াইল থেকে শুনেছেন, যা শো’বা রহ. রেওয়ায়ত  করেছেন।
মুসনাদে আহমদ ও সুনানে আবু মুসলিম মক্কী কিতাদ্বয়ে স্পষ্টভাবে লিখা হয়েছে, উক্ত হাদীছটি উভয় পদ্ধতিতে রেওয়ায়ত করা হয়েছে। ইমাম দারে কুতনী রহ.ও উক্ত হাদীছটি শো’বা রহ. এর সনদে আলকমা রহ.এর  মধ্যস্থতায় রিওয়ায়ত করেছেন। যেহেতু সব হাদীছের কিতাবে এপ্রকারের  হাদীছ অনেক বিদ্যমান, যেগুলোর রাবীগণ কখনো কখনো মূল রাবী থেকে সরাসরি হাদীছ শুনেছেন, আবার কখনো অন্য রাবীর মধ্যস্থতায় হাদীছ শুনেছেন, এইজন্য রেওয়ায়ত করতেও উভয় প্রকারে রেওয়ায়ত করেছেন।

তাতে কোনো প্রকারের দোষ নাই। আমীনের ব্যাপারে সুফিয়ান রহ. ও শো’বা  রহ. কর্তৃক হাদীছটিও অনুরূপ। তাই দ্বিতীয় অভিযোগটিও শো’বার সনদ থেকে  পরিপূর্ণরূপে দূরিভূত হয়ে গেলো।

তৃতীয় অভিযোগের উত্তর/
তৃতীয় অভিযোগটি ছিলো, শো’বা রহ. আলকমা বিন ওয়াইলের মধ্যস্থতায় তাঁর পিতা থেকে রেওয়ায়ত করেছেন। অথচ  আলকমা তাঁর পিতা ওয়াইলের মৃত্যুর ছয় মাস পর জন্মগ্রহণ করেন। এই  ছিলো অভিযোগ।
উক্ত অভিযোগটি একেবারে ভিত্তিহীন। কারণ, প্রকৃত তথ্যের  ভিত্তিতে জানা যায় যে, ওয়াইল ইবনে হুজরের দুই ছেলে ছিলো
যথাঃ
১.  আলকমা
২. আব্দুল জব্বার।
আব্দুল জব্বার ছিলো বয়সে ছোট। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি পিতার মৃত্যুর পর জন্মগ্রহণ করেছেন। আর কেউ কেউ বলেছেন, তিনি পিতার মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছেন। মোদ্দাকথা, আব্দুল জব্বার নিজ পিতা থেকে হাদীছ শুনে নি। কিন্তু আলকমা নিজ পিতা ওয়াইল ইবনে হুজর থেকে হাদীছ শুনেছেন। যা নিশ্চিতভাবে সাব্যস্ত হয়েছে। স্বয়ং ইমাম তিরমিযী রহ. باب ماجاءفي المرأة إذااستكرھت عل ى الزنا অর্থাৎ, “মহিলাকে যখন যিনা করতে বাধ্য করা হয়” নামক অধ্যায়ে বলেছেন, আমি ইমাম বোখারী রহ. কে বলতে শুনেছি, আব্দুল জব্বার বিন ওয়াইল বিন হুজর আপন পিতা ওয়াইল বিন হুজর থেকে কোনো হাদীছ শ্রবণ করেন নি। কারণ, আব্দুল জব্বার তার পিতার মৃত্যুর পর জন্মগ্রহণ করেছেন। অন্য একটি তথ্যানুযায়ী পিতার মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছেন। ইমাম তিরমিযী  রহ. ও ইমাম বুখারী রহ. উভয়ের চূড়ান্ত তাহকীক দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, আলকমা বিন ওয়াইল সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে, তিনি যেহেতু পিতার  মৃত্যুর পর জন্মগ্রহণ করেছেন তাই তিনি তাঁর কাছ থেকে হাদীছ শুনেননি, তা ভুল তথ্য। বরং উক্ত তথ্য তাঁর ছোট ছেলে আব্দুল জব্বারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। স্বয়ং ইমাম তিরমিযী রহ. উপরিউক্ত অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে লিখেছেন যে, আলকমা  নিজ পিতা ওয়াইল ইবনে হুজর থেকে হাদীছ শুনেছেন। নাসাঈ শরীফের এক  হাদীছের আলোচনায় ইমাম নাসাঈ রহ. বলেছেন, হাদ্দাছানা আলকমা,  হাদ্দাছানা আবী অর্থাৎ আলকমা থেকে রেওয়ায়তকারী আম্বরী রহ. বলেছেন,  আমাকে আলকমা ইবনে ওয়াইল হাদীছ বর্ণনা করেন, আলকমা বলেছেন,  আমাকে আমার পিতা ওয়াইল হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
ইমাম বুখারী রহ. “জুয্ও রফ‘ঈল ইয়াদাইন” নামক কিতাবে একটি হাদীছ নকল করেছেন, যার সনদ এইভাবে বর্ণনা করেছেন,  قا   ل سمعت علقمة بن وائل بن حجر حدثني أبي   অর্থাৎ আলকমা থেকে বর্ণনাকারী রাবী বলেছেন, আমি আলকমা বিন ওয়াইল বিন হুজর থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার পিতা আমাকে  হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।
উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে সাব্যস্ত হয়ে গেলো যে, আলকমা  তার পিতা ওয়াইল বিন হুজর থেকে হাদীছ শুনেছেন। তাই শো’বার সনদের  উপর যে অভিযোগ করা হয়েছিলো অর্থাৎ তিনি আমীনের হাদীছে আলকমাকে  মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়ে এসেছেন, অথচ তিনি নিজ পিতা থেকে শ্রবণ  করেননি। উক্ত অভিযোগটি উপরি-উক্ত বিবরণ দ্বারা সমূলে দূর হয়ে গেছে।

আরেকটি অভিযোগ/
প্রতিপক্ষ থেকে শো’বা রহ.এর আমীন চুপে চুপে বলার রেওয়ায়তের উপর আরেকটি অভিযোগ পেশ করা হয়েছে। তা হলো, ইমাম  বাইহাকী রহ. শো’বার সনদে একটি হাদীছ রেওয়ায়ত করেছেন, যাতে আছে رافعابھا صوته অর্থাৎ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বড় আওয়াজে বলেছেন।

অভিযোগের উত্তর/
আল্লামা নিমভী রহ. তার লিখিত হাদীছের কিতাব আছারুস সুনানে অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন এই ভাবে, ইমাম শো’বা রহ. থেকে উক্ত  হাদীছ ডজনের অধিক বড় বড় হাফেযে হাদীছ ও ইমামে হাদীছ রেওয়ায়ত করেছেন।
প্রত্যেক রেওয়ায়তে আছে,
خفض بھا
صوته
অর্থাৎ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃদু আওয়াজে আমীন বলেছেন। একমাত্র ইমাম বাইহাকী রহ. শো’বা রহ. থেকে একজন  রেওয়ায়তকারীর মাধ্যমে বড় আওয়াজের রেওয়ায়তটি নকল করেছেন। এটাকে  মুহাদ্দিছীনের পরিভাষায় “শায” বলা হয়। অর্থাৎ যদি কোন বড় ইমামে হাদীছ থেকে অনেক মুহাদ্দিছ হাদীছ রেওয়ায়ত করেন তাদের থেকে সব মুহাদ্দিসের রেওয়ায়ত একপ্রকার; শুধু একজন শাগরিদের রেওয়ায়ত অন্যরকম হয় তবে তাকে হাদীছে শায বলা হয়।
সকল বড় বড় শাগরিদের বিপরীতে ঐ একজনের রেওয়ায়ত গ্রহণযোগ্য নয়। তাই ইমাম বাইহাকীর রেওয়ায়তকৃত হাদীছটি গ্রহণযোগ্য নয়।
[উপর্যুক্ত আলোচনার হাওয়ালা: দরসে তিরমিযী, এ‘লাউস সুনান]।

আমীন চুপে চুপে বলার দ্বিতীয় দলীল
_____________________
হানফী ও মালেকী মাযহাবের পক্ষ থেকে আরেকটি ছহীহ হাদীছ পেশ করা হয়, তা হলো-
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে ছহীহ সনদে বর্ণিত, রাসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম যখন গাইরিল মাগদ্বুবি আলাইহিম ওয়া  লাদ্ব দ্বাল্লীন বলেন তখন তোমরা আমীন বল। কেননা, তখন ফেরেশতাগণ আমীন বলেন এবং ইমামও আমীন বলেন। যাদের আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তাদের পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে”।
হাদীছটি ছহীহ সনদে রেওয়ায়ত করেছেন ইমাম আহমদ, ইমাম নাসাঈ ও  দারমী রহ.প্রমুখ। তদ্রুপ রেওয়ায়াত করেছেন ইবনে হিব্বান তাঁর ছহীহ  হাদীছের কিতাবে।
[সূত্রঃ আছারুস সুনান, খ. ১, পৃ. ১৯১; যাইলে‘য়ী, খ. ১, পৃ., ১৯৪; ই‘লাউস সুনান খ., ১, পৃ., ২৪৬]।
উক্ত হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম আমীন চুপে চুপে বলবেন। কারণ, ইমাম  যদি আমীন প্রকাশ্যে বলে তাহলে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামের পক্ষ থেকে এই খবর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না যে, ফেরেশতাগণ  আমীন বলবেন, ইমামও আমীন বলবেন, তাই তোমরাও আমীন বলবে। তাই ইমাম যখন আমীন চুপে চুপে বলবেন মুক্তাদীরাও আমীন চুপে চুপে বলবে। 

আমীন চুপে চুপে বলার তৃতীয় দলীল
______________________
জলীলুল কদর তাবে‘ঈ হাসান বসরী রহ. থেকে হাদীছ বর্ণিত আছে,    ‘‘একদা সামুরা বিন জুনদুব এবং ইমরান বিন হোসাইন রা. এর মধ্যে একটি  হাদীছ আলোচনা হয়। তা হলো, সামুরা বিন জুনদুব রা. বলেছেন, তিনি রাসূল  ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায থেকে দুটি ‘সেকতা’ তথা চুপ থাকা সংরক্ষণ করেছেন, প্রথম তাকবীরের পর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। আর যখন গাইরিল মাগদ্বুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্ব দ্বাল্লীন পড়তেন তখন কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। ইহা বলার পর ইমরান বিন হোসাইন তাঁর কথাটি গ্রহণ করতে আপত্তি জানিয়েছেন। অতঃপর উভয়জন মিলে জলীলুল কদর ছাহাবী উবাই বিন কা‘আব রা. এর নিকট ব্যাপারটি লিখে পাঠালেন। প্রতিউত্তরে উবাই বিন কা‘আব রা. লিখেছেন, সামুরা বিন জুনদুব  রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায থেকে চুপ থাকা বিষয়ক যা সংরক্ষণ করেছেন সেটাই হক ও সত্য।
সাঈদ বলেন, আমরা কাতাদা (রহ) কে জিজ্ঞাসা করলাম দুটি সাকতা কোথায় ছিল? তিনি বল্লেন রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) যখন কিরয়াত পাঠ আরম্ভ করতেন এবং যখন কিরয়াত পাঠ সমাপ্ত করতেন। এর পর কাতাদা বলেছেন, যখন ওয়ালাদ্ব দ্ব়াল্লিন পাঠ শেষ করতেন। তিনি আরো বলেছেন রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) এর পছন্দ ছিল যখন কিরাত পাঠ সমাপ্ত করতেন তখন শ্বাস স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত নিরব থাকতেন।
[সূত্রঃ ই’লাউস সুনান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৪৮; তিরমিযি/ ২৫১; আবু দাউদ/ ৭৮০; মুসনাদে আহমাদ, ৫ খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩]।
ইমাম আবু দাউদসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছীনে কেরাম হাদীছটি ছহীহ সনদে নকল করেছেন।
এ হাদিস থেকে বুঝা যায় রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) নামাজে দুই সময় নিরব থাকতেন।
প্রথম নিরবতা তাকবীরে তাহরীমার সময়, তখন তিনি সানা পড়তেন; আর ২য় নিরবতা সুরা ফাতিহা শেষ করার পর, এ সময় তিনি আমিন বলতেন।
বুঝা গেল আমীন তিনি নি:শব্দে বলতেন।
হাদিসটিতে কাতাদা প্রথমত : বলেছিলেন ২য় নিরবতা হত কেরাত শেষ করার পর। পরে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন যে, কেরাত শেষ করা মানে সুরা ফাতেহার কেরাত শেষ করা। আর সম্পূর্ণ কেরাত শেষ করার পর রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) এতটুকু নিরব থাকতেন যাতে শ্বাস স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এটা সামান্য নিরবতা হতো।
আবু দাঊদ শরীফে (৭৭৯) কাতাদা (রহ) হতে সাঈদের সুত্রে ইয়াযীদ র. এর বর্ণনায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে-
“একটি সাকতা হতো তাকবীরে তাহরীমার পর, আরেটি সাকতা হতো ওলাদ্ব দ্বাল্লিন বলার পর।”
দারাকুতনি (রহ) ও ইবনে উলাইয়া থেকে, তিনি ইউনুস ইবনে উবায়দার সুত্রে হাসান বসরী থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
[সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ ৫/২৩ (২০৫৩০)]।

ইবনে হিব্বান তার সহিহ গ্রন্থে এ হাদিসের উপর শিরোনাম দিয়েছেন :-
“সুরা ফাতিহা শেষ করার পর ২য় বার নিরব থাকা মুস্তাহাব।”
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম (রহ) যার তাহকিক ও গবেষনার উপর লা মাযহাবীদেরও বেশ আস্থা আছে, তিনি তার যাদুল মায়াদ গ্রন্থে লিখেন,
“সামুরা (রা) উবাইয়্যা ইবনে কা’ব (রা) ও ইমরান ইবনে হোসাইন (রা) হতে সহিহ সনদে দুই সাকতার হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে।
এই হাদিস আবু হাতিম কে [ইবনে হিব্বান] হিসেবে তার “সহিহ ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আর সামুরা (রা) হলেন ইবনে জুনদুব। এ থেকে স্পষ্ট যে সামুরা (রা)ও দুই সাকতার হাদিসটি বর্ণনাকারীদের একজন। তিনি তার হাদিসে বলেছেন আমি রাসুল (صلى الله عليه و آله وسلم) হতে দুটি সাকতার কথা স্মরন রেখেছি। একটি হলো তিনি যখন “তাকবির “দিতেন আর আরেকটি হলো তিনি যখন “ওয়ালাদ্ব দ্বাল্লিন” শেষ করতেন।
কোন কোন বর্ণনায় হাদিসটি এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে যে, তিনি যখন কিরাত শেষ করতেন তখন নিরব থাকতেন। এই বর্ণনাটি অস্পষ্ট। প্রথম বর্ণনাটি ব্যাখ্যা সম্বলিত এবং সুস্পষ্ট।
[সূত্রঃ যাদুল মায়াদ, ১ম খন্ড, ৭৯ পৃষ্ঠা]।
অতএব বুঝা গেল ‘আমীন’ আস্তে বলতে হবে।
উপরোল্লোখিত হাদিসগুলি ছাড়াও “আমীন” আস্তে বলার আরো অনেক হাদিস আছে যা এখানে উল্লেখ করা হল না।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment