নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিরক্ষর ছিলেন না।
অনেকে নিজের অজ্ঞতার কারণে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নিরক্ষর বলে সম্বোধন করে। নাউযুবিল্লাহ!!
এখন কথা হচ্ছে গিয়ে “নাবিয়্যুল উম্মী” মানে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজীকে(দ) কি নিরক্ষর বলা হয়েছে?
অথচ আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লিখতেন ও লেখার ব্যাপারে তা’লীম দিতেন।
হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমস্ত ইলমের অধিকারী। সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখন উনার মু’জিযা। তিনি মুয়াল্লিম হিসেবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)কে আক্ষরিক জ্ঞান শিক্ষা দিতেন।
ﺍﻟﺬﻯ ﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﻘﻠﻢ .
অর্থঃ- “যিনি (আল্লাহ্ পাক) কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আলাক্ব/৪)
অর্থাৎ হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে স্বয়ং আল্লাহ পাক লিখার যাবতীয় ইলম্ দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন,
ﺧﻠﻖ ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ ﻋﻠﻤﻪ ﺍﻟﺒﻴﺎﻥ .
অর্থঃ- তিনি (আল্লাহ্ পাক) ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন এবং কথা বলা শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আর রহমান /২,৩)
এখানে ﺑﻴﺎﻥ এর তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে,
ﻣﺎﻛﺎﻥ ﻭﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ .
অর্থাৎ- যা সৃষ্টি হয়েছে এবং হবে। অর্থাৎ পূর্ব ও পরবর্তী সব ঘটনার জ্ঞান। (তাফসীরে মাআলিমুত তানযীল)
অর্থাৎ আয়াতের অর্থ হচ্ছে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে আল্লাহ্ পাক সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সমস্ত কিছুর জ্ঞান দান করেছেন।
যেমন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
ﺍﺗﻴﺖ ﻋﻠﻢ ﺍﻻﻭﻟﻴﻦ ﻭﺍﻻﺧﺮﻳﻦ .
অর্থঃ- আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জ্ঞান দান করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, ছাহিবে সালাত ও সালাম, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
ﺍﻋﻄﻴﺖ ﺟﻮﺍﻣﻊ ﺍﻟﻜﻠﻢ .
অর্থঃ- ‘আমাকে (শুরু হতে শেষ পর্যন্ত) সমস্ত ইলিম প্রদান করা হয়েছে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলমের অধিকারী। আর লিখাও হচ্ছে ইলমের একটা অংশ। লিখা যে ইলমের অংশ তা সূরা আলাক্ব-এর ৪নং আয়াতের ﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﻘﻠﻢ . ‘তিনি (আল্লাহ পাক) উনাকে কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন’, এ আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। কারণ ﻋﻠﻢ (আল্লামা) শব্দটির ﻣﺼﺪﺭ (মাছদার) বা ক্রিয়ামূল হচ্ছে ﺗﻌﻠﻴﻢ (তা’লীম) বা শিক্ষা দেয়া।
অতএব, স্বয়ং আল্লাহ পাক যাকে লিখার উপকরণ তথা কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি লিখতে জানতেন না বা লিখতে পারতেন না এ ধারণা পোষণ করা মিথ্যা তোহমত ও কুফরীর নামান্তর।
মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)অবশ্যই লিখতে জানতেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে,
ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﻖ ﺍﻟﺪﻭﺍﺓ ﻭﺣﺮﻑ ﺍﻟﻘﻠﻢ ﻭﺍﻗﻢ ﺍﻟﺒﺎﺀ ﻭﻓﺮﻕ ﺍﻟﺴﻴﻦ ﻭﺗﻌﻮﺭ ﺍﻟﻤﻴﻢ ﻣﻊ ﺍﻧﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻟﻢ ﻳﻜﺘﺐ ﻭﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﻣﻦ ﻛﺒﺎﺏ ﺍﻻﻭﻟﻴﻦ .
অর্থঃ- হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সামনে (ওহী) লিখতেন, অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অক্ষর লিখার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ করেন, দোয়াত এভাবে রাখ, কলম এভাবে ঘুরাও, “ﺑﺎ” (বা) কে এভাবে সোজা করে লিখ, ﺳﻴﻦ (সীন) কে পৃথক কর, আর মীম ﻣﻴﻢ (মীম) কে বাঁকা করোনা, অথচ তিনি দুনিয়াবী কোন কাতিবের (লিখকের)-এর নিকট থেকে লিখা শিখেননি, আর কোন প্রাচীনকালীন কিতাব থেকেও তা পড়েননি।
(ফতহুল বারী লি শরহে বুখারী ৭/৫০৪, আস শিফা বিতারীফি হুকমিল মুস্তফা ১/৩৫৮, কিতাবু জামিউল কুরআন ১/১৪১, তাফসীরে কুরতুবী ১৩/৩৫৩) ” (সুবহানাল্লাহি বিহামদিহী)
উল্লেখ্য, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর লিখার প্রয়োজন হতো না। কারণ মানুষ লিখে থাকে এজন্য যে, লিখে না রাখলে ভুলে যাবে। কিন্তু রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর লিখার প্রয়োজন নেই। কারণ তিনি কিছুই ভুলতেন না। তিনি সব কিছুই লওহে মাহফুজ থেকে দেখে নিতেন। তাঁর মুয়াল্লিম স্বয়ং আল্লাহ পাক। সুতরাং তাঁর লিখা-পড়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। আর তিনি যদি লিখা-পড়া করতেন তাহলে বাতিলপন্থীরা সন্দেহ করতো।
যেমন, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আবির্ভাবের পরিচয় দেয়া ছিল কয়েকটি। যেমন, তিনি হবেন ‘উম্মী’ (অর্থাৎ নবীগণের মূল হবেন) এবং সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখবেন কিন্তু পার্থিব ওস্তাদের কাছে লিখা-পড়া করবেন না। কোন বই-পুস্তক পড়বেন না।
যেমন, এ সম্পর্কে কুরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে,
ﻣﺎﻛﻨﺖ ﺗﺘﻠﻮﺍ ﻣﻦ ﻗﺒﻠﻪ ﻣﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﻭﻻ ﺗﺨﻄﻪ ﺑﻴﻤﻴﻨﻚ ﺍﺫﺍ ﺍﻻﺭﺗﺎﺏ ﺍﻟﻤﺒﻄﻠﻮﻥ .
অর্থঃ- “এর পূর্বে (নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে) হে হাবীব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি না কোন কিতাব পড়তেন এবং না নিজ হাতে কোন কিছু লিখতেন, যদি তা করতেন, তবে বাতিলপন্থীরা নিশ্চয়ই সন্দেহ করতো (যে এটা আল্লাহ পাক-এর বাণী নয়, আপনার রচিত কোন কিতাব)।” (সূরা আনকাবুত/৪৮)
এই আয়াতের ব্যাখায়া বিখ্যাত মুফাসসির হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻳﻌﻠﻢ ﺍﻟﺨﻄﻮﻁ ﻭﻳﺨﺒﺮ ﻋﻨﻬﺎ
অর্থ: হুযুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লিখতে জানতেন এবং অপরকেও জানাতেন। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৬/৬১০)
আর তিনি যে লিখতে জানতেন এ প্রসঙ্গে “ছহীহ বুখারী শরীফ”-এর ‘কিতাবুল ইলম্’-এর ‘বাবু কিতাবাতিল ইলমে’ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে,
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﺍﺷﺘﺪ ﺑﺎﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺟﻌﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﺋﺘﻮﻧﻰ ﺑﻜﺘﺎﺏ ﺍﻛﺘﺐ ﻟﻜﻢ ﻛﺘﺎﺑﺎ ﻻ ﺗﻀﻠﻮﺍ ﺑﻌﺪﻩ .
অর্থাৎ -“হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল। তখন তিনি উপস্থিত ছাহাবী(রা)দের বললেন, তোমরা এক টুকরা কাগজ নিয়ে এস। আমি তোমাদের জন্য কতিপয় উপদেশ লিখে দিব, যাতে তোমরা পরবর্তী কালে পথভ্রষ্ট হবেনা।
(বুখারী শরীফ ৮/১৩: হাদীস ৪৪৩২, মুসলিম শরীফ ১৬৩৭, মিশকাত শরীফ ৫৯৬৬)
উক্ত হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ হলো হুযুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লিখতে জানতেন। আর সে কারনেই তিনি খাতা কলম নিয়ে আসার জন্য বললেন, যাতে তিনি উপদেশ লিখে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি কিন্তু এটা বলেন নাই, কাগজ কলম এনে তোমরা লেখ আমি বলি। বরং তিনি বলেছেন , তোমরা এক টুকরা কাগজ নিয়ে এস। আমি তোমাদের জন্য কতিপয় উপদেশ লিখে দিব। যার প্রমাণ বুখারী মুসলিম শরীফেই বিদ্যমান।
হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
ﻟﻤﺎ ﺍﻋﺘﻤﺮ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻰ ﺫﻯ ﺍﻟﻘﻌﺪﺓ ﻓﺎﺑﻰ ﺍﻫﻞ ﻣﻜﺔ ﺍﻥ ﻳﺪﻋﻮﻩ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻜﺔ ﺣﺘﻰ ﻓﺎﺿﺎﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻧﻴﻘﻴﻢ ﺑﻬﺎ ﺛﻠﺜﺔ ﺛﻠﺜﺔ ﺍﻳﺎﻡ ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺘﺒﻮﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻛﺘﺒﻮﺍ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻗﺎﺿﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻻﻧﻘﺮ ﺑﻬﺬﺍ ﻟﻮ ﻧﻌﻠﻢ ﺍﻧﻚ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﻣﻨﻌﻨﺎﻙ ﺷﻴﺌﺎ ﻭﻟﻜﻦ ﺍﻧﺖ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻧﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﻌﻠﻰ ﺍﻣﺢ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻪ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﻻ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻﺍﻣﺤﻮﻙ ﺍﺑﺪﺍ ﻓﺎﺧﺬ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﻟﻴﺲ ﻳﺤﺴﻦ ﻳﻜﺘﺐ ﻓﻜﺘﺐ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻗﺎﺿﻰ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ .
অর্থাৎ- নবীয়ে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যিলক্বদ মাসে ওমরাহ্ করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু মক্কাবাসী তাঁকে মক্কা শরীফে প্রবেশ করতে দিতে রাজী ছিলনা, যতক্ষণ না তিনি তাদের সাথে এ মর্মে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হন যে, তিনি সেখানে (মক্কা শরীফে) তিনদিনের অধিক অবস্থান করবেন না। অতঃপর যখন সন্ধিপত্র লিখার উপর ঐক্যমত হলো, তারা লিখলো ‘এতদ্বারা মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের সাথে সন্ধি করলেন।’ অতঃপর মক্কার কাফিররা বললো, আমরা এটা মানিনা, কারণ যদি আমরা আপনাকে আল্লাহর রসূল হিসেবে মেনে নিয়ে থাকি তাহলে আমরা আপনাকে তো কোন রকম বাঁধাও দিতাম না বরং আপনি হলেন, মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ্। সুতরাং এটাই লিখতে হবে।” তখন হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল এবং আমিই আব্দুল্লাহর পুত্র, তারপর তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, “রসুলুল্লাহ” শব্দটা কেটে দাও।”
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, না, আল্লাহ পাক-এর কসম! আমার পক্ষে (আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত্ব) আপনার (গুণবাচক) নাম কাটা সম্ভব নয়। অতঃপর হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উক্ত চুক্তিপত্র খানা হাতে নিলেন। তাঁর নিজ হাতে লিখার ইচ্ছা ছিলনা, তবুও সুন্দরভাবে লিখলেন,
ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻗﺎﺿﻰ ﻣﺤﻤﺪﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ .
“এতদ্বারা চুক্তি করলেন মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।” (মুসনাদে আহমদ ১৮৬৫৮, সুনানে কুবরা বায়হাকী ৭/৪২: হাদীস ১৩৬৬৮, দালায়েলুন নবুওওয়াত ৪/৩৩৮, সুনানে দারেমী ২৫০৭, ফতহুল বারী ৭/৫০৩, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৭/৩৫৯, তাফসীরে বাগবী ৭/৩১৭, রুহুল মায়ানী ১১/৬)
কুরআন শরীফে এবং হাদীছ শরীফে বর্ণিত ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺍﻻﻣﻰ . দ্বারা মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেহেতু দুনিয়াবী কোন শিক্ষক কর্তৃক লিখা-পড়া শিখেননি সেহেতু তিনি “নাবিয়্যুল উম্মী” লক্ববে অভিহিত। যা তাঁর শ্রেষ্ঠ নবী(দ) এবং রসূল(দ) হওয়ার প্রমাণ। কিন্তু তার পরেও তিনি যে লিখতেন সেটা ছিল তার মু’জিযা। যেমন, বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকারী আল্লামা কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “এখানে উম্মী মানে এ লিখাটা হচ্ছে তাঁর মু’জিযা।” (বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড)
উম্মি শব্দটি আরবি ‘উম্মুন’ ধাতুর সঙ্গে সম্পৃক্ত। উম্মুন শব্দের অর্থ হচ্ছে মা বা কোনো জিনিসের মূল বা আসল। যেমন মক্কা নগরীকে ‘উম্মুল কুরা’ অর্থাৎ দুনিয়ার সব নগরীর উৎসমূল এভাবে সূরা ফাতিহাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বা কোরআনের মূল বলা হয়। আরবি সমৃদ্ধ একটি ভাষা। একটি শব্দের অনেক অর্থ হয়ে থাকে। তাই বাক্যের ভাবধারা অনুযায়ী শব্দের অর্থ করতে হয়। অন্যথায় অনুবাদ বা অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। উম্মি শব্দের অর্থ যেমন মূল বা আসল, তেমনি তার অর্থ নিরক্ষর, লেখাপড়াহীন, মূর্খ ইত্যাদিও হয়। কিন্তু সূরা আরাফের ১৫৭, ১৫৮ নং আয়াতে যেখানে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা উল্লেখ আছে সে সব আয়াতে নিরক্ষর লেখাপড়াহীন অর্থ নেয়াটা মূর্খতারই পরিচায়ক।
প্রকৃত পক্ষে যারা মূর্খ তারাই নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শানে ব্যবৃহৃত ‘উম্মি’ শব্দটিকে নিরক্ষর, লেখাপড়াহীন এ অর্থে ব্যবহার করেন। অথচ উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে ‘উম্মি’ শব্দটি নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি বিশেষ বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শানে ব্যবহৃত উম্মি শব্দটির অর্থ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
এবার জানানোর চেষ্টা করব পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত ‘নবী ও রাসূল-ই-উম্মি’ শব্দের প্রকৃত অর্থ কী?
মুলতঃ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺍﻻﻣﻰ এখানে ﺍﻣﻰ অর্থ সাইয়্যিদ, মূল, অভিভাবক, প্রধান, শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি। অর্থাৎ যিনি সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মূল বা যাকে ব্যতীত কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই সৃষ্টি হতেন না তিনিই ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺍﻻﻣﻰ (নাবিয়্যূল উম্মী) লক্ববে ভূষিত।
উপরোক্ত অর্থ ছাড়াও অভিধানে ﺍﻣﻰ শব্দটি ভিন্ন অর্থেও ব্যবহৃত হয় কিন্তু তা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে প্রযোজ্য নয়।
স্মরণীয় যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ক্ষেত্রে কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফের এমন তাফসীর, অনুবাদ, ব্যাখ্যা করা যাবেনা যার কারণে তাঁদের শানের খিলাফ হয়। তাদের শানে চু-চেরা, কিল-কাল করার অর্থই হচ্ছে তাঁদের বিরোধিতা করা; আর তাদের বিরোধিতা করা হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর বিরোধিতা করা। ফলে তাদের জাহান্নাম ছাড়া আর কোন পথ নেই।
আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে নাবিয়্যূল উম্মী তথা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন তিনি যে লিখতে জানতেন এ সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আক্বীদা রাখার তাওফীক দান করেন এবং এর খিলাফ সমস্ত কুফরী আক্বীদা থেকে হিফাযত করেন। (আমীন) (কপি)