নবীজী (صلى الله عليه و آله وسلم) কে আমাদের মত মানুষ বলা কাফেরদের স্বভাব।

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

নবীজী (صلى الله عليه و آله وسلم) কে আমাদের মত মানুষ বলা কাফেরদের স্বভাব।

প্রশ্ন : নিম্নোক্ত আলোচনার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘য়াতের বক্তব্য কি? উল্লেখ্য যে, আমি নিজে সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং এ বক্তব্যটি জনৈক মুফতি সিরাজী সাহেবের একটি লেখা থেকে নেয়া।

আল্লাহ তা‘য়ালা মানব জাতীকে মাটি থেকে, জিন জাতিকে আগুন থেকে এবং ফেরেশতাদেরকে নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ মাটির তৈরী এ কথা পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও মানুষ ছিলেন কিন্তু মহামানব। তবে অনেকেই বিশ্বাস করে আল্লাহ’র রাসূল আল্লাহ’র জাতী নূরের সৃষ্টি, অথচ কুরআন-সুন্নাহ বলছে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি। সাধারণভাবে চিন্তা করলে বুঝা যাবে যে, নবীজীর পিতা-মাতা মানুষ ছিলেন। আবার বুঝা যাবে মানুষ থেকে মানুষই সৃষ্টি হয়। অনুরূপ পূর্ববর্তী সকল নবীগণও মানুষ ছিলেন, তেমনি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও মানুষ। তবে মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি সবার উর্ধ্বে এবং ওনার সীরত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বিশদ বিবরণ রয়েছে।
নবীজী (صلى الله عليه و آله وسلم) কিসের তৈরী সে ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ বলেন-

ولقد خلقنا الانسان من صلالة من طين
অর্থাৎ, আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকা মূল উপাদান হতে।
[সূরা মু’মিনূন : ১২।]
আর তিনিও যেহেতু মানুষ তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনিও মাটির তৈরী।
পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণও যে মানুষ ছিলেন এ মর্মে কুরআন থেকে দলীল:
(১) নূহ আলাইহিস সলিাম সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন-

فقال الملأ الذين كفروا من قومه ما ترك الا بشرا مثلنا
অর্থাৎ, তার সম্প্রদায়ের প্রধানেরা যারা কাফের ছিল, তারা বলল, আমরাতো তোমাকে আমাদের মতই মানুষ ব্যতীত আর কিছুই দেখিনা।
[সূরা হুদ : ২৭।]

(২) আল্লাহ তা‘য়ালা আরো বলেন-

قالت رسلهم أفي الله شك فاطر السموات والارض يدعوكم ليغفرلكم من ذنوبكم ويوخركم الي اجل مسمى قالوا ان انتم الا بشر مثلنا
অর্থাৎ, তাদের রাসূলগণ বলেছিলেন, আল্লাহ সম্বন্ধে কি সন্দেহ আছে, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেবার জন্য? তারা বলত, তোমরাতো আমাদের মতই মানুষ।
[সূরা ইব্রাহীম : ১০।]

(৩) আল্লাহ তা‘য়ালা আরও বলেন-
قالت لهم رسلهم ان نحن الا بشر مثلكم
অর্থাৎ, তাদের রাসূলগন তাদেরকে বলেছিলেন, নিশ্চয় আমরা তোমাদের মত মানুষ।
[সূরা ইব্রাহীম : ১১।]

(৪) আল্লাহ পাক আরও ইরশাদ করেন-

وما منع الناس ان يومنوا ان جاءهم الهدى الا ان قالوا ابعث الله بشرا رسولا
অর্থাৎ, যখন তাদের নিকট আসে পথ-নির্দেশ, তখন লোকদেরকে এই উক্তিই বিশ্বাস স্থাপন হতে বিরত রাখে যে, আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন!
[সূরা বনী ইসরাইল : ৯৪।]

(৫) আল্লাহ আরো বলেন-

واسروا النجوى الذين ظلموا اهل هذا الا بشر مثلكم
অর্থাৎ, যারা জালিম তারা গোপনে পরামর্শ করে, এতো তোমাদের মত একজন মানুষই।
[সূরা আম্বিয়া : ৩।]

(৬) আল্লাহ ইরশাদ করেন-

فقال الملأ الذين كفروا من قومه ما ترك الا بشرا مثلنا
অর্থাৎ, তার সম্প্রদায়ের প্রধানেরা যারা কাফের ছিল, তারা বলল, আমরাতো তোমাকে আমাদের মতই মানুষ ব্যতীত আর কিছুই দেখিনা।
[সূরা মু’মিনূন : ২৪।]

(৭) আল্লাহ বলেন-

وقال الملأ من قومه الذين كفروا وكذبوا بلقاء الاخرة واترفناهم فى الحياة الدنيا ماهذا الا بشر مثلكم يأكل مما تأكلون منه و ويشرب مما تشربون ولئن اطعتم بشرا مثلكم انكم اذا لخاسرون
অর্থাৎ, সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফুরী করেছিল ও আখিরাতের সাক্ষাতকারকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমি দিয়েছিলাম পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগ-সম্ভার, তারা বলেছিল, এতো তোমাদের মত একজন মানুষ, তোমরা যা আহার করো সেও তাই করে এবং তোমরা যা পান কর সেও তাই পান করে। যদি তোমরা তোমাদেরই মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
[সূরা মু’মিনূন : ৩৩, ৩৪।]

(৮) মূসা ও হারুন সম্পর্কে এসেছে-

فقالوا أنومن لبشرين مثلنا وقومهما لنا عابدون
অর্থাৎ, তারা বলল, আমরা কি এমন দু’ ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব, যারা আমাদের মত মানুষ এবং তাদের সম্প্রদায় আমাদের দাসত্ব করে।
[সূরা মু’মিনূন : ৪৭।]

(৯) ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

ان مثل عيسى عند الله كمثل ادم خلقه من تراب
অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ’র নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ; তিনি তাঁকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
[সূরা আলে ইমরান : ৫৯।]

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মোবারক কিসের তৈরী এ সম্পর্কে কুরআনের দলীল:
(১) আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন-

قل سبحان ربى هل كنت الا بشرا رسولا
অর্থাৎ, বলুন, পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক! আমিতো শুধু একজন মানুষ, একজন রাসূল।
[সূরা বনী ইসরাইল : ৯৩।]

(২) আল্লাহ তা‘য়ালা আরো বলেন-

قل انما انا بشر مثلكم يوحى الى انما الهكم اله واحد فمن كان يرجو لقاء ربه فليعمل عملا صالحا ولا يشرك بعبادة ربه احدا
অর্থাৎ, বলুন, আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ, আমার নিকট ওহী আসে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে তার রবের সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।
[সূরা কাহাফ : ১১০।]
প্রমানিত হল যে, সকল নবীগণ এবং আমাদের নবীও মাটির তৈরী মানুষ।

জবাব :
নবীগনকে আমাদের মত মানুষ বলা মূলতঃ কাফেরদেরই প্রথা। যেমন, ‘সূরা ইয়াসীন’-এর ১৫ নং আয়াতে এসেছে-

قالوا ما انتم الا بشر مثلنا
অর্থাৎ, তারা (কাফেররা) বলত, তোমরা (নবীগণ) আমাদের মতই মানুষ ছাড়া অন্য কিছু নও। অনুরূপ আরো আয়াতে রয়েছে। যেমন-
(১) সূরা হুদ : ১০
(২) সূরা ইবরাহীম : ১০
(৩) সূরা বনী ইসরাইল : ৯৪
(৪) সূরা আম্বিয়া : ৩
(৫) সূরা মু’মিনূন : ২৪
(৬) সূরা মুমিনূন : ৩৪
(৭) সূরা মু’মিনূন : ৪৭; প্রভৃতি।
এখন শুনুন কথিত মুফতি সাহেবের উদৃতিগুলোর জবাব:
প্রথমত,
সকল মানুষই সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি নয়, সেখানে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কি করে মাটির তৈরী বলে প্রমান করা যাবে? একমাত্র হযরত বাবা আদম আলাইহিস সালামই হলেন সরাসরি মাটি হতে সৃষ্টি। হযরত মা হাওয়া হলেন বাবা আদমের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম হযরত জিব্রাইল-এর ফুৎকারে সৃষ্টি। আমরা হলাম নুতফা বা বীর্য হতে সৃষ্টি। আর এ নুতফা যেহেতু রক্ত হতে আর রক্ত মাটিতে উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রী হতে সৃষ্টি হয়, সে হিসেবে নুতফার মূল নির্যাস মাটি হতে সাব্যস্ত হয়। আর আল্লাহ পাক এ আয়াতেও তাই বলেছেন যে-

ولقد خلقنا الانسان من صلالة من طين
অর্থাৎ, আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকা মূল উপাদান হতে।
[সূরা মু’মিনূন : ১২।]
অনুরূপ অন্য আয়াতে এসেছে-

فَإِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ
অর্থাৎ, আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে অতঃপর বীর্য হতে।
[সূরা হাজ্জ্ব : ৫।]
আর কারো শানে ‘বাশার’ শব্দের ব্যবহার হলেই প্রমান হয়না যে, সে মাটি হতে সৃষ্টি। যেমন, হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম-এর ব্যাপারেও ‘বাশার’ শব্দটি কুরআনে ব্যবহার হয়েছে। কুরআন পাকে এসেছে-

فتمثل لها بشرا سويا
অর্থাৎ, আর সে তার নিকট পূর্ণ ‘বাশার’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল।
[সূরা মারইয়াম : ১৭।]
সরকারে দু’ আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাপারে একথা কোথাও নেই যে, তিনি মাটি হতে সৃষ্টি, বরং ‘বাশার’ শব্দটিই ব্যবহার হয়েছে। আর নবী পাক (صلى الله عليه و آله وسلم)এর ‘বাশারিয়াত’ তথা মানবাকৃতির কথা কেউ অস্বীকারও করেনা। তিনি জাতীতে নূর অর্থাৎ, তাঁর প্রকৃত সত্ত্বা নূর হওয়া সত্ত্বেও মানবরূপ বিশিষ্ট ছিলেন এবং মানবীয় পূর্ণতা সহকারেই এ পৃথিবীতে আগমন করেছেন এবং এ কারণেই তিনি আমাদের মত পানাহার করেছেন, বিবাহ করেছেন, সন্তানাদী হয়েছে এবং মাতা-পিতার মাধ্যমে এ ধরাধামে আগমন করেছেন। এ মানবীয়তা এবং মানবীক গুণাবলী তাঁর অন্যতম মু‘জেযারই বহিঃপ্রকাশ। আর এ বিষয়গুলো নূর হওয়ারও প্রতিবন্ধকতা নয়। যেমন হারুত-মারুত উভয়ই ফেরেশতা এবং নূরের তৈরী। কিন্তু যখন তাঁদেরকে মানবীয় আকৃতি এবং গুণাবলী দিয়ে পাঠানো হয়েছে তখন তাঁদের পানাহার, পোষাক-পরিচ্ছেদ, এবং সহবাসেরও প্রয়োজন হয়েছে। হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম হযরত মূসা নবীর দরবারে যখন মানবাকৃতি নিয়ে আসলেন মূসা নবীর থাপ্পরে তাঁর চক্ষু খসে পড়েছিল। তখনও এ ফেরেশতারা নূরই ছিলেন, এমনটি নয় যে, মানবাকৃতি ধারন করার কারনে তখন তাঁরা মাটিরই মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। এগুলোর কোনটিই তাঁদের নূরানিয়াত অস্বীকার করে না।
অতএব নবীয়ে কায়েনাত হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্ষেত্রে মানব রূপ বিশিষ্ট হওয়ায় তিনি কি করে মাটির তৈরী মানুষ হয়ে যাবেন, যার প্রকৃত সত্ত্বা সমস্ত সৃষ্টি এমনকি মাটি সৃষ্টিরও পূর্বে নূর হতেই আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন! আর হযরত আদম আলাইহিস সালাম ব্যতিত মানব জাতির কেউই সরাসরি মাটির নন।
দ্বিতীয়ত,
এখানে কথিত মুফতী সাহেব পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণকে মানুষ প্রমান করার জন্য পবিত্র কুরআন কারীম থেকে ৯টি আয়াতে কারীমা তুলে ধরেছেন। আসলে নবীগণকে মানুষ বলার জন্য আদা-জল খেয়ে এভাবে ব্যর্থ চেষ্টায় নামলেন কেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
মুফতী সাহেবের উল্লেখিত একটি আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত হয় না যে, পূর্ববর্তী নবীগণ আমাদের মত মানুষ ছিলেন; যদিও আহলুস সুন্নাহ’র সকল উলামাগণ এ ব্যাপারে একমত যে, পূর্ববর্তী সকল নবীগণ মূলতঃ মানুষই ছিলেন, তবে সাধারণ মানুষের মত ছিলেন না। কোন মুসলমানই তা অস্বীকার করছে না। তথাপিও এ নিয়ে বিভ্রান্ত্রি ছড়ানোর অন্তর্নিহিত রহস্য কি নবীগণের প্রতি জনসাধারণকে বিতশ্রদ্ধ করা এবং ইসলাম বিদ্বেষীদেরকে উসকানী দেয়া নয়?
যাই হোক, নিম্নে তার উল্লেখিত আয়াতে কারীমাগুলোর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা পেশ করা হল। যাতে এ কথাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, নবীগণকে আমাদের মত মানুষ বলে জপ করা মূলতঃ কাফেরদেরই অভ্যাস।

১নং আয়াতের পর্যালোচনা:
হযরত নূহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন-

فقال الملأ الذين كفروا من قومه ما ترك الا بشرا مثلنا
অর্থাৎ, তার সম্প্রদায়ের প্রধানেরা যারা কাফের ছিল, তারা বলল, আমরাতো তোমাকে আমাদের মতই মানুষ ব্যতীত আর কিছুই দেখিনা।
[সূরা হুদ : ২৭।]
এখানে বলা হয়েছে যে, কাফেররা হযরত নূহ আলাইহিস সালামকে তাদের মতই মানুষ বলত।

২নং আয়াতের পর্যালোচনা:
আল্লাহ তা‘য়ালা আরো বলেন-

قالت رسلهم أفي الله شك فاطر السموات والارض يدعوكم ليغفرلكم من ذنوبكم ويوخركم الي اجل مسمى قالوا ان انتم الا بشر مثلنا
অর্থাৎ, তাদের রাসূলগণ বলেছিলেন, আল্লাহ সম্বন্ধে কি সন্দেহ আছে, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেবার জন্য? তারা বলত, তোমরাতো আমাদের মতই মানুষ।
[সূরা ইব্রাহীম : ১০।]
এখানেও কাফেরদের কথাই উদৃত হয়েছে যে, তারা নবীগণকে তাদের মত বলত।

৪নং আয়াতের পর্যালোচনাঃ
আল্লাহ পাক আরও ইরশাদ করেন-

وما منع الناس ان يومنوا ان جاءهم الهدى الا ان قالوا ابعث الله بشرا رسولا
অর্থাৎ, যখন তাদের নিকট আসে পথ-নির্দেশ, তখন লোকদেরকে এই উক্তিই বিশ্বাস স্থাপন হতে বিরত রাখে যে, আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন!
[সূরা বনী ইসরাইল : ৯৪।]
এখানেও কাফের-বিধর্মীদের কথাই বলা হয়েছে।

৫নং আয়াতের পর্যালোচনা:
আল্লাহ আরো বলেন-

واسروا النجوى الذين ظلموا اهل هذا الا بشر مثلكم
অর্থাৎ, যারা জালিম তারা গোপনে পরামর্শ করে, এতো তোমাদের মত একজন মানুষই।
[সূরা আম্বিয়া : ৩।]
এখানেও নবীকে কাফির-মুশরিকরাই তাদের মত বলত বলে উদ্ধৃত হয়েছে এবং বলা হয়েছে তারা তা গোপনে বলত। কেননা একথা প্রকাশ্যে বলার সাহস তাদের ছিলনা। কারণ তারাও নবীগণের সাথে অনেক দিকেই তাদের পার্থক্য স্বচক্ষে দেখতে পেত। কিন্তু আপসোস! মুসলিম নাম নিয়ে নবীগণের শানে যা-তাই না বলে বেড়াচ্ছে।

৬নং আয়াতের পর্যালোচনা:
আল্লাহ ইরশাদ করেন-

فقال الملأ الذين كفروا من قومه ما ترك الا بشرا مثلنا
অর্থাৎ, তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানেরা যারা কাফের ছিল, তারা বলল, আমরাতো তোমাকে আমাদের মতই মানুষ ব্যতীত আর কিছুই দেখিনা।
[সূরা মু’মিনূন : ২৪।]
এটিও কাফিরদেরই উক্তি।

৭নং আয়াতের পর্যালোচনা:
আল্লাহ বলেন-

وقال الملأ من قومه الذين كفروا وكذبوا بلقاء الاخرة واترفناهم فى الحياة الدنيا ماهذا الا بشر مثلكم يأكل مما تأكلون منه و ويشرب مما تشربون ولئن اطعتم بشرا مثلكم انكم اذا لخاسرون
অর্থাৎ, সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফুরী করেছিল ও আখিরাতের সাক্ষাতকারকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমি দিয়েছিলাম পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগ-সম্ভার, তারা বলেছিল, এতো তোমাদের মত একজন মানুষ, তোমরা যা আহার করো সেও তাই করে এবং তোমরা যা পান কর সেও তাই পান করে। যদি তোমরা তোমাদেরই মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
[সূরা মু’মিনূন : ৩৩, ৩৪।]
এখানেও কাফেরদের কথাই বলা হয়েছে যে, তারা নবীগণকে তাদেরই মত মনে করত এবং বলত তারাতো আমাদেরই মত পানাহার করে।

৮নং আয়াতের পর্যালোচনা:
মূসা ও হারুন সম্পর্কে এসেছে-

فقالوا أنومن لبشرين مثلنا وقومهما لنا عابدون
অর্থাৎ, তারা বলল, আমরা কি এমন দু’ ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব, যারা আমাদের মত মানুষ এবং তাদের সম্প্রদায় আমাদের দাসত্ব করে।
[সূরা মু’মিনূন : ৪৭।]
এখানে ফেরাউন ও তার সাথীদের কথা উদৃত হয়েছে যে, তারা নবী মূসা ও হারুন আলাইহিমাস সালামকে তাদেরই মত বলত।
লক্ষ্যণীয় যে, পূর্ববর্তী নবীগণ মানুষ বটে, তবে আমাদের মত নয়। কিন্তু কথিত মুফতী সাহেব ৯ টি উদ্ধৃতির একটি দ্বারাও নবীগণ আমাদের মত দূরের কথা মানুষই প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার উদ্ধৃত নয়টি আয়াতের সাতটি আয়াতই প্রমান করে যে, নবীগণকে আমাদের মত মানুষ কাফেররাই বলত।

৯নং আয়াতের পর্যালোচনা:
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

ان مثل عيسى عند الله كمثل ادم خلقه من تراب
অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ’র নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ; তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
[সূরা আলে ইমরান : ৫৯।]
এখানে ঈসা আলাইহিস সালামকে আদম আলাইহিস সালাম-এর সাথে উপমা দেয়া হয়েছে এ অর্থে যে, আদম আলাইহিস সালাম যেমন পিতা-মাতা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছেন অনুরূপ ঈসা আলাইহিস সালামও সৃষ্টি হয়েছেন পিতা ছাড়াই জিব্রাইল আলাইহিস সালাম-এর ফুঁক দ্বারা। এখানে ঈসা আলাইহিস সালামকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি বলা হয়নি, বরং তাঁকে যেন খোদার পূত্র বলা না হয়- এরই প্রতিবাদ করা হয়েছে।

৩নং আয়াতের পর্যালোচনা:
আল্লাহ তা‘য়ালা আরও বলেন-

قالت لهم رسلهم ان نحن الا بشر مثلكم
অর্থাৎ, তাদের রাসূলগন তাদেরকে বলেছিলেন, নিশ্চয় আমরা তোমাদের মত মানুষ।
[সূরা ইব্রাহীম : ১১।]
এখানে পূর্ববর্তী রাসূলগণ তাঁদের অস্বীকারকারীদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে, আমরা তোমাদের মত মানুষ। এটা ছিল তাঁদের বিনয় ও নম্রতা। এর অর্থ এ নয় যে, তাদের উম্মতগণও তাদের মত মানুষ বলবে।
জ্ঞাতব্য যে, নবীগণকে ‘বাশার’ শব্দ দ্বারা হয়তো আল্লাহ পাক নিজে সম্বোধন করেছেন, না হয় নবীগণ নিজেই নিজের ক্ষেত্রে বলেছেন। আর তৃতীয়ত, তাঁদেরকে অস্বীকারকারী কাফেররা ‘বাশার’ বলে সম্বোধন করেছে। এছাড়া অন্যকেহ কখনোই নবীগণকে নিজেদের মত ‘বাশার’ বলে সম্বোধন করেছেন মর্মে কোন প্রমান নেই। অতএব আজকে যারা নবীগণকে ‘বাশার’ বলে বলে হয়রান হয়ে যাচ্ছে, তারা না খোদা, আর না নবী। কাজেই তারা কারা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন কারীমে এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে যে-

فقالوا أبشر يهدوننا فكفروا
অর্থাৎ, তারা বললো, আমাদেরকে কি মানুষই হিদায়াত করবে? অতএব তারা কাফের হয়ে গেল।
[সূরা আত-তাগাবুন : ৬।]
উল্লেখিত আলোচনার দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হয়ে গেল যে, পূর্ববর্তী সকল নবীগণ মূলতঃ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁদেরকে মানুষ বলা সম্পূর্ণ বেয়াদবী এবং কাফেরদেরই স্বভাব।
তৃতীয়ত,
দয়াল নবী সরকারে দু’ আলম রবের প্রেমাষ্পদ নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মাটির তৈরী প্রমান করতে গিয়ে কথিত মুফতী পবিত্র কুরআন হতে দু’টি আয়াত উপস্থাপন করেছে। নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূলতঃ কিসের তৈরী এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষ হতে একটি জবাব দেয়া হয়েছে, যা এ আলোচনার শেষাংশে সংযোজন করা হবে (ইন শাআ-ল্লাহ)। এখন উদ্ধৃত দু’টি আয়াতের পর্যালোচনায় আসা যাক।

১নং আয়াতের পর্যালোচনা:
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন-

قل سبحان ربى هل كنت الا بشرا رسولا
অর্থাৎ, বলুন, পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক! আমিতো শুধু একজন মানুষ, একজন রাসূল।
[সূরা বনী ইসরাইল : ৯৩।]
সূরা বনী ইসরাইলের ৯৩নং এ আয়াতের পূর্বাংশে এবং তৎপূর্বের ৯১ ও ৯২ নং আয়াতসমূহে আলোচনা করা হয়েছে যে, কুরআনের ব্যাপারে কাফের-মুশরিকরা যখন চ্যালেঞ্জে হেরে গেল-অপারগ হলো, তখন তারা বলতে লাগল যে, আপনি নিম্নোক্ত কাজগুলো করে দেখান, না হয় আপনার উপর আমরা ঈমান আনব না। আপনি ভূমি হতে কোন প্রস্রবণ উৎসারিত করবেন অথবা আপনার জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের কোন বাগান থাকবে এবং তাতে চলমান নদী নালা প্রবাহিত করবেন। অথবা, আমাদের উপর আসমানকে খন্ড-বিখন্ড করে পতন ঘটান কিংবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে জমীনে নিয়ে আসুন। অথবা, আপনার জন্য একটি স্বর্ণ নির্মিত ঘর হবে কিংবা আপনি আকাশে আরোহন করবেন এবং একটি কিতাব নিয়ে আসবেন।
আর এর জবাব হিসেবেই আল্লাহ পাক নবীজীকে এ বিনয় প্রকাশের কথা বলেছেন এবং বলেছেন যে, এর পূর্বেও এ সকল সম্প্রদায় পূর্ববর্তী নবীগণকে এ ধরনের অনেক কিছু বলেছিল এবং তারা ঈমান আনেনি। কাজেই আপনি বলে দিন যে, আমিতো ‘বাশার’ এবং আল্লাহ’র রাসূল।
এখন কথিত সে মুফতির নিকট জিজ্ঞাসা যে, এখানে কোথায় বলা হয়েছে, নবী পাক মাটি দ্বারা সৃষ্টি? বরং এখানে ‘বাশার’ শব্দটিই ব্যবহার হয়েছে। আর পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে, ‘বাশার’ মানেই মাটির তৈরী মানুষ নয়। এছাড়াও এ আয়াতসমূহে অনেক কিছুরই অপারগতার কথা বলা হয়েছে। যেমন, জমীন হতে প্রস্রবণ, আসমান খন্ড-বিখন্ড করা প্রভৃতি। এ আয়াত দ্বারা যদি নবীজী মূলতঃ বা জাতীতেই মানুষ বলে সাব্যস্ত হয়, তবে বাকীগুলোরও অপারগ বলে সাব্যস্ত হবেন। অথচ এগুলো হুযুর পাকের মু’জেযা ও ক্ষমতার অধিন ছিল। এর অনেক দৃষ্টান্ত হাদীস শরীফে রয়েছে। এমনকি নবী পাকের এ ক্ষমতার কথা খোদ কুরআন পাকেও রয়েছে। যেমন, নবী পাকের আঙ্গুলের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে। (সূরা আল-ক্বামার)

২নং আয়াতের পর্যালোচনা:
আল্লাহ তা‘য়ালা আরো বলেন-

قل انما انا بشر مثلكم يوحى الى انما الهكم اله واحد فمن كان يرجو لقاء ربه فليعمل عملا صالحا ولا يشرك بعبادة ربه احدا
অর্থাৎ, বলুন, আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ, আমার নিকট ওহী আসে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে তার রবের সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।
[সূরা কাহাফ : ১১০।]
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বায়ান শরীফে বলা হয়েছে-

قل يا محمد ما انا الا أدمي مثلكم فى الصورة ومساويكم في بعض الصفات البشرية
অর্থাৎ, বলুন হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমিতো আকৃতিতে তোমাদের মতই মানুষ আর কতেক মানবীয় বৈশিষ্ট্যে তোমাদের সমান।
[সূত্রঃ রুহুল বায়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, খন্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ৩৫৩, ছাপা: দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন।]

এ বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল যে, নবী পাক (صلى الله عليه و آله وسلم) আকৃতি ও কতেক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মানুষের মত, কিন্তু হাকীকতে আমাদের মত নয়।
আর এ বিষয়টি ছিল নবী পাকের একান্ত নিজস্ব বিষয় এবং তাঁর জন্যই খাছ। এ কারণেই আয়াতে انما শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। যা আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী সীমাবদ্ধতার অর্থে এসে থাকে। সুতরাং অর্থ হবে এই যে, হে নবী একমাত্র আপনি বলুন। নবীগণ নিজের ক্ষেত্রে বিনয় শিক্ষা দেয়ার জন্য অনেক কিছুই বলতে পারেন, যা উম্মতের জন্য বলা হারাম বরং কখনো কুফুরীও বটে। যেমন- আদম আলাইহিস সালাম বলেছিলেন- ربنا ظلمنا انفسنا অর্থাৎ, হে আমার রব, আমি আমার নফসের উপর যুলুম করেছি। হযরত ইউনূস আলাইহিস সালাম বলেছিলেন- لا اله الا انت سبحانك انى كنت من الظالمين অর্থাৎ, হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, পবিত্রতা তোমারই। নিশ্চয়ই আমি যালিমদের অন্তর্ভূক্ত।
অথচ উম্মতের কেহ তাদেরকে যালিম বললে কাফের হয়ে যাবে। নবীজী (صلى الله عليه و آله وسلم) নিজেকে নিজে ‘বাশার’ বলেছেন এটাও নবীজী (صلى الله عليه و آله وسلم) এর একান্ত একক বৈশিষ্ট্য-বিনয় ছিল। এর অর্থ এ নয় যে, উম্মত তোমরাও আমাকে তোমাদের মত বল।
অনেকে আবার বলে থাকে যে, নবীজী (صلى الله عليه و آله وسلم) জাতীতে মানুষ ছিলেন বটে, তবে আমাদের মত নয় এবং দলীল হিসেবে এ আয়াতটিও উপস্থাপন করে থাকে। তাদেরকে বলছি, এ আয়াত দ্বারা যদি নবীজী (صلى الله عليه و آله وسلم) জাতীতেই অর্থাৎ মূলতই মানুষ বলে সাব্যস্ত হয়ে থাকে, তবে এ আয়াতে ‘বাশার’ শব্দের সাথে সাথে ‘মিছলুকুম’ শব্দটিও এসেছে। কাজেই নবীজীকে আমাদের মতও বলতে হবে। সুতরাং উভয় দাবীই বাতিল। তবে নবী পাক (صلى الله عليه و آله وسلم) এর বাশারীয়াত তথা মানবীয় আকৃতি ও গুণাবলীকে অস্বীকার করলেও কুফুরী হবে। আল্লাহ বুঝার তৌফিক দিন।
অতএব, প্রেমিক হৃদয় প্রেমাষ্পদের দোষ খোঁজে না বরং সর্বদা তার গুণই প্রত্যক্ষ করে। আর নবীজী (صلى الله عليه و آله وسلم) কে আমাদের মত মানুষ বলার দ্বারা দোষীই সাব্যস্ত করা হয়। কেননা-

الانسان مركب من الخطاء والنسيان
অর্থাৎ, মানুষ ভুল-ত্রুটির সংমিশ্রণেই হয়ে থাকে। কিন্তু তিনিতো সেই সত্ত্বা যিনি যাবতীয় ভুল-ত্রুটির অনেক উর্ধ্বে, স্বয়ং রবের মাহবুব।
হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূর হওয়ার ব্যাপারে পূর্বে প্রদত্ত ফতোয়াটি হলো:

সকল সৃষ্টির মূল, আল্লাহপাকের প্রিয়তম প্রেমাষ্পদ, হুযুর নবী করীম রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিঃসন্দেহে আল্লাহর জাতী নূর থেকে সৃষ্টি। আর এর অর্থ এ নয় যে, তিনি আল্লাহ’র নূরের টুকরা বা অংশ বরং তিনি কোন মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহর জাতী (সত্ত্বাগত) নূরের ফয়য বা জ্যোতি। যেমনটি যারকানী আলাল মাওয়াহিব কিতাবের ১ম খন্ডের ৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। এমনকি দেওবন্দী ও নূর অস্বীকারকারীদের ইমাম আশ্রাফ আলী থানবী সাহেবও তার নশরুত্বীব নামক কিতাবের ৫নং পৃষ্ঠায় অনুরূপ বর্ণনা করেন। মাতালিউল মাস্রাত শরহে দালাইলুল খায়রাত নামক কিতাবে রয়েছে, ইমামে আহলে সুন্নাত আবুল হাসান আশয়ারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন –

انه تعالى نور ليس كالانوار والروح القدسية لمعة من نوره والملاءكته شرر تلك الانوار وقال صلى الله عليه و سلم اول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق كل شىء
অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা নূর, তবে অন্য কোন নূরের মত নন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র রূহ্ সে নূরেরই ফয়য বা জ্যোতি। আর ফেরেশ্তাগণ ঐ জ্যোতিরই ফুল। হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- “আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমার নূর হতেই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।”
-সালাতুচ্ছফা ফী নূরিল মুস্তফা, পৃষ্ঠা: ০৩।
* পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين
অর্থাৎ, তোমাদের নিকট আল্লাহ্ হতে নূর এসেছে এবং স্পষ্ট কিতাব।
-সূরা মায়িদা, আয়াত: ১৫।
* রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবী, পবিত্র কুরআনের ভাষ্যকার হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন-

قد جاءكم من الله نور رسول يعنى محمدا صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ তোমাদের নিকট আল্লাহ্ হতে নূর তথা রাসূল এসেছে, অর্থাৎ এ নূর হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
-তাফসীরে ইবনে আব্বাস, পৃষ্ঠা: ১১৯ (ছাপা: দারুল কুতুবুল এলমিয়া, বৈরুত, লেবানন)

* বাংলাদেশের সকল আলীয়া ও খারেজী মাদ্রাসাসমূহের পাঠ্য ও সর্বজনমান্য কিতাব তাফসীরে জালালাইন শরীফে বলা হয়েছে-

قد جاءكم من الله نور رسول هو النبى صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ, আল্লাহ হতে তোমাদের নিকট নূর এসেছে। আর এ নূর হলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
-তাফসীরে জালালাইন, পৃষ্ঠা: ১৩৯ (ছাপা: দারুল হাদিস, কায়রো, মিশর)

* যারা ‘কিতাবুম মুবিন’ তথা কুরআন শরীফকেই নূর বলে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তাদেরকে লক্ষ্য করে আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন –

هذا ضعيف لان العطف يوجب المغايرة بين المعطوف عليه
অর্থাৎ, কিতাবই নূর এ অভিমতটি দূর্বল। কারণ ‘আতফ’ (ব্যাকরণগত সংযোজন) ‘মা’তুফ’ (সংযোজিত) ও ‘মা’তুফ আলাইহি’ (যার সাথে সংযোজন করা হয়েছে) এর মধ্যে ভিন্নতা আবশ্যক।
-তাফসীরে কবীর, খন্ড: ১১, পৃষ্ঠা: ১৮৯ (ছাপা: আল ই’লাম আল ইসলামী)

* মারফু’-মুত্তাসিল সূত্রে হুযুর পাকের একনিষ্ঠ খাদেম ও মদীনার ৬ষ্ঠ সাহাবী হযরত জাবের ইব্নে আব্দুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত-

قال سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن اول شىء خلقه الله تعالى فقال هو نور نبيك يا جابر خلقه الله
অর্থাৎ, হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা-এর নিকট আরজ করলাম যে, আল্লাহ্ তায়ালা সবকিছুর পূর্বে সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন। জবাবে আল্লাহ’র রাসূল বললেন- হে জাবের, আল্লাহ্ সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।
-মুসান্নাফে আবর্দু রাযযাক (আল জুুযউল মাফকুদ মিনাল জুযইল আওয়াল), খন্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ৬৩ (ছাপা: দুবাই থেকে ডঃ ঈসা বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন মানে’ আল হুমায়রী’র তাহক্বীক্ব সম্বলিত, ২০০৫ইং)
উক্ত হাদীসটি ‘আল মুসান্নাফ’ কিতাবে ইমাম আবদুর রায্যাক মুত্তাসিল ও মারফু’ সূত্রে বর্ণনা করেন। আর তিনি স্বয়ং ইমাম বুখারীর দাদা উস্তাদ এবং ইমাম মালেকের ছাত্র। পরবর্তীতে এ হাদীসখানা কিছু শব্দগত পার্থক্যসহ অন্যান্য অনেক হাদীস বিশারদগন তাঁদের স্ব-স্ব গ্রন্থেও সন্নিবেশিত করেন। তন্মধ্যে কয়েকটি হল-
১) শারেহে বুখারী ইমাম কাসতুলানী’র আল মাওয়াহেবুল্লাদুনিয়াহ্,
২) আল্লামা ইউসুফ নাব্হানী রচিত আনোয়ারে মুহাম্মদীয়াহ্,
৩) আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহ্লবী কৃত মাদারেজুন্নবুয়াত,
৪) ইমাম যারকানী এর র্শহে মাওয়াহেব,
৫) ইমাম বায়হাকী রচিত দালেলুন্ নবূয়াত,
৬) আল্লামা ফাসী এর মাতালিউল মাস্রাত,
৭) ইমাম আহ্মাদ রেজা রচিত নূরুল মুস্তফা এবং
৮) স্বয়ং নূর অস্বীকারকারীদের মান্যবর আশরাফ আলী থানবী এর নশরুত্বীব।
এত অধিকসংখ্যক মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিক আলেমগণের উদ্ধৃতির দ্বারাই বুঝা যায় যে, হাদিসটি নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য।
এছাড়াও-
(১) তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫৪৩।
(২) যারকানী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২২০।
(৩) কিতাবুশ্ শিফা, পৃষ্ঠা: ২৪২।
(৪) দেওবন্দীদের ইমাম রশিদ আহ্মাদ গাঙ্গুহী রচিত ইমদাদুস সুলুক, পৃষ্ঠা: ৮৫।
(৫) দেওবন্দীদের আরেক ইমাম আশ্রাফ আলী থানবী রচিত নশরুত্বীব, পৃষ্ঠা: ৫ সহ অনেক তাফসীর, হাদীস ও অন্যান্য কিতাবে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূর হওয়ার ব্যাপারে বহুসংখ্যক বর্ণনা রয়েছে। বিবেকবানদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
______

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment