আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) (জাদুগ্রস্ত হওয়ার পর) এত এত দিন এমন অবস্থায় অতিবাহিত করছিলেন যে, তাঁর খেয়াল হতো যেন তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, অথচ তিনি মিলিত হননি। আয়েশা (রা.) বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! আমি যে ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম, সে বিষয়ে আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। (আমি স্বপ্নে দেখলাম) আমার কাছে দুজন লোক এলো। একজন বসল আমার পায়ের কাছে এবং আরেকজন মাথার কাছে।
পায়ের কাছে বসা ব্যক্তি মাথার কাছে বসা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করল, এ ব্যক্তির অবস্থা কী? সে বলল, তাঁকে জাদু করা হয়েছে। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, তাঁকে কে জাদু করেছে? সে বলল, লাবিদ বিন আসাম। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, কিসের মধ্যে? সে বলল, নর খেজুরগাছের খোসার ভেতরে তাঁর চিরুনির এক টুকরা ও আঁচড়ানো চুল ঢুকিয়ে দিয়ে ‘জারওয়ান’ কূপের মধ্যে একটা পাথরের নিচে রেখেছে। এরপর নবী (সা.) সেখানে গিয়ে দেখে বললেন, এই সেই কূপ যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে।
সেখানের খেজুরগাছের মাথাগুলো যেন শয়তানের মাথা এবং সে কূপের পানি যেন মেহেদি ভেজা পানি। এরপর নবী (সা.)-এর হুকুমে তা কূপ থেকে বের করা হলো।
আয়েশা (রা.) বলেন, তখন আমি বললাম। হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এটি প্রকাশ করলেন না? নবী (সা.) বললেন, আল্লাহ তো আমাকে আরোগ্য করে দিয়েছেন, আর আমি মানুষের কাছে কারো দুষ্কর্ম ছড়িয়ে দেওয়া পছন্দ করি না।
আয়েশা (রা.) বলেন, লাবিদ বিন আসাম ছিল ইহুদিদের মিত্র বনু জুরাইকের এক ব্যক্তি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৬৩)
হাদিস গবেষকরা বলেন, নবী করিম (রা.)-কে যে জাদু করেছিল তার প্রভাব ছিল শারীরিক। আল্লাহ তাঁর অন্তরকে জাদুর প্রভাবমুক্ত রেখেছিলেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণেই কখনো কখনো তাঁর খেয়াল ছুটে যেত। আলোচ্য হাদিসে জাদু করার যে পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে অন্য হাদিসে এর কিছুটা ব্যতিক্রম বর্ণনা পাওয়া যায়।
তবে উভয় বর্ণনার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। সুনানে নাসায়ির বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কূপের ভেতর থেকে জাদুর উপকরণগুলো বের করলেন, তখন তার ভেতর একটি সুতা পাওয়া গেল, যাতে ১১টি গিঁট ছিল। জিবরাইল (আ.) সুরা নাস ও ফালাকের একেকটি আয়াত পড়ছিলেন এবং একেকটি গিঁট খুলে যাচ্ছিল। সবগুলো গিঁট খুলে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) সুস্থবোধ করতে শুরু করেন।
আলোচ্য হাদিসের মুসলমানের জন্য কয়েকটি শিক্ষা রয়েছে। যেমন—
১. চিকিৎসার মাধ্যমে জাদু-টোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হতে পারে।
২. কোনো উপকার লাভের চেয়ে ফেতনা-ফাসাদ থেকে বেঁচে থাকা বেশি আবশ্যক।
৩. বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ মুমিনের করণীয়।
৪. অধিক পরিমাণ দোয়া পাঠ জাদু থেকে বেঁচে থাকার উপায়।
৫. এই ঘটনা নবীজি (সা.)-এর মুজিজাস্বরূপ।
৬. উপায়-অবলম্বন গ্রহণ করা তাকওয়ার পরিপন্থী নয়।
৭. মুমিন নিজের স্বার্থের ওপর সামগ্রিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে।