নবী ﷺ এঁর নখ, চুল, কাপড় মুবারক এবং মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এঁর অসীয়ত
হযরত আমীরে মুআবিয়া রঃ বলেন, জেনে রাখ, একদিন আমি নবীজী ﷺ এঁর সামনে ছিলাম আর তিনি তাঁর নখ কাটছিলেন, তখন আমি তাঁর কর্তিত নখ মুবারক উঠিয়ে নিলাম এবং তা একটি কাঁচের বােতলে সংরক্ষণ করলাম, আর তা আমার কাছে রয়েছে, এছাড়া আমার কাছে তাঁর কিছু চুল মুবারকও রয়েছে। আমি যখন মারা যাব আর তোমরা আমাকে গােসল দিয়ে কাফন পরাবে তখন ঐ কর্তিত নখ মুবারকসমূহ আমার চোখে আর চুল মুবারকগুলো আমার মুখে ও কানে দিও। (ইবনুল আছমেঃ ৪/২৬৪)
আমীরে মুআবিয়া রঃ বলেন, আমার মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে একজন বুদ্ধিমান লােককে আমার গােসলের দায়িত্ব দিবে। কেননা, আল্লাহ’র কাছে বুদ্ধিমানের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তারপর সে যেন আমাকে ভালভাবে গােসল করায় এবং উচ্চস্বরে তাকবীর পড়ে। এরপর জানাযার ঐ রূমাল নিয়ে আসবে যাতে রসূলুল্লাহ্ ﷺ এঁর ব্যবহৃত একটি কাপড় মুবারক এবং তাঁর চুল মুবারক ও নখ মুবারকের কর্তিত অংশ রয়েছে। কর্তিত এই নখ মুবারক ও চুল মুবারক গুলোকে আমার নাকে, মুখে, কানে ও চোখে দিয়ে দিবে। (আর ঐ কাপড়কে অামার দেহ সংলগ্ন করে দিবে।) (ইমাম ইবনে কাসিরঃ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮ম খন্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আমীরে মু’আবিয়া রঃ অসীয়ত করেছিলেন তাঁকে যেন রসূলুল্লাহ্ ﷺ এঁর ঐ কাপড়ে দাফন করা হয় যা তিনি ﷺ তাকে পরিয়ে দিয়েছিলেন, আর তা তার কাছে এই দিনের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এছাড়া তিনি আরােও অসীয়ত করেছিলেন তার কাছে রসূলুল্লাহ ﷺ এঁর যে চুল মুবারক ও কর্তিত নখ মুবারক ছিল তা তাঁর মুখে, নাকে এবং কানে দিতে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খন্ড, ২৭১ পৃষ্ঠা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
শুধু আমীরে মুআবিয়া রঃ নন, অন্যান্য সাহাবীরাও এমন করতেন।
হযরত আনাস (রঃ) বলেনঃ উম্মু সুলায়ম (রঃ) নবী ﷺ এঁর জন্য চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন এবং তিনি সেখানেই ঐ চামড়ার বিছানার উপর কায়লুলা (বিশ্রাম) করতেন। অতঃপর তিনি যখন ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তিনি তাঁর শরীরের কিছুটা ঘাম ও চুল সংগ্রহ করতেন এবং তা একটা বোতলের মধ্যে জমা করতেন এবং পরে ‘সুক্ক’ নামক সুগন্ধিতে মিশাতেন। রাবী বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রঃ) এঁর মৃত্যু সন্নিকট হলে, তিনি আমাকে অসীয়ত করলেন যেন ঐ সুক্ক থেকে কিছুটা তাঁর সুগন্ধির সাথে মিলানো হয়। তাই তা তাঁর সুগন্ধিতে মেশানো হয়েছিল। (সহিহ বুখারী ৬২৮১)
বিখ্যাত তাবেঈ ইবনু সীরীন (রঃ) বলেনঃ আমি আবীদাকে বললাম, আমাদের নিকট নবী ﷺ এঁর চুল রয়েছে যা আমরা আনাস (রঃ)-এঁর নিকট হতে কিংবা আনাস (রঃ)-এঁর পরিবারের নিকট হতে পেয়েছি। তিনি বললেন, তাঁর একটি চুল আমার নিকট থাকাটা দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা অর্জনের চেয়ে অধিক পছন্দের। (সহিহ বুখারী ১৭০)
হযরত আনাস (রঃ) বলেন, আমি নাপিতকে দেখেছি রসূলুল্লাহ ﷺ এঁর চুল কাটছে আর সাহাবীরা তাঁর চতুর্পাশ ঘিরে রেখেছেন। তাঁরা চাইতেন যে, কোন চুল (যেন মাটিতে না পড়ে তা) যেন কারো না কারো হাতে পড়ে। (সহিহ মুসলিম ৫৯৩৭)
এখানে শিরিক বেদাতের গন্ধ পাওয়ার কিছুই নেই। ইনারাই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ, ইনাদের মাধ্যমেই আমরা তাওহীদ রিসালাত শিখেছি। বস্তুত, এগুলো হচ্ছে উসিলা অন্বেষণ, ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সবার বুঝে আসবে না।
হযরত হুমায়দ রহঃ বলেন, আমি মু‘আবিয়া রঃ কে খুতবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন- আমি নবী ﷺ -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ‘ইলম দান করেন। আল্লাহ্ দান করেন (দাতা) আর আমি বন্টন করি (কাসিম বা বন্টনকারী)। এ উম্মত সর্বদা তাদের প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী থাকবে, আল্লাহ’র আদেশ (কিয়ামত) আসা পর্যন্ত আর তারা থাকবে বিজয়ী।’ (সহীহ বুখারী ৩১১৬)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ইরশাদ করেন,
“ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ’কে ভয় কর, উসিলা (তাঁর নৈকট্য লাভের উপায়) অন্বেষণ কর এবং তার পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়িদাহঃ ৩৫)
“নবী (ﷺ) মুমিনদের নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়/ ঘনিষ্ঠ/ নিকটবর্তী।” (সূরা আহযাবঃ ৬)