প্রশ্নঃ আমাদের নবী, সাহাবী, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনদের কি কোন মাজহাব ছিলো? থাকলে দলিল দেন।
========= ✍ইমরান বিন বদরী।
নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আলা রাসুলীহিল কারীম।।আম্মা বা’দঃ-
সদ্য এক লা মাজহাবী ভাই এভাবে প্রশ্নটি করেছেন। আসলে আপনার প্রশ্নের ধরন দেখলেই বুঝা যায় আপনি কতোটা মাজহাব বিদ্বেষী। তবুও উত্তর দেয়ার পূর্বে খুব জানতে ইচ্ছে করে মাজহাব অনুসরণ করতে কি কেউ আপনাকে বাধ্য করেছেন? মোটেওনা। যদিওবা আপনার পূর্বপুরুষগন মাজহাবের গন্ডি দিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। মাজহাব অনুসরণ করলে যদি ইসলামি শরিয়তের কোন হুকুম আহকাম পালনে ব্যর্থ হয়ে থাকেন তো আপনার পূর্বপুরুষেরাও ব্যর্থ হয়েছিলেন। মাজহাব অনুসরণ করার কারণে যদি কেই জাহান্নামে যায় তো আপনার পূর্বপুরুষরাও জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত।
এছাড়া ইসলামি শরিয়তের দলিল তো কেবল পবিত্র কুরআন আর হাদিসের ভিত্তিতে দেয়া হয়। মাজহাব অনুসরণ করতে আপনি দলিল খোঁজেন কেন? রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কি মাজহাব ছিলো? এমন অবান্তর প্রশ্ন কেবল একজন বিখ্যাত মূর্খ ছাড়া কেউ করতে পারেনা। ইসলামের নূন্যতম জ্ঞান সম্বলিত কোন ব্যক্তি মাজহাব অনুসরণ করতে বোকার মতো দলিল খোঁজবেনা। মাজহাব তো শরীয়তের কোন হুকুম আহকাম নয় বরং হুকুম আহকামকে সহজতর করে ইজতিহাদি উপস্থাপনের নাম। সত্যি কথা বলতে কি! কেউ আপনার মত অনাকাঙ্ক্ষিত মুফতি সাহেবকে মাজহাব অনুসরণ করতে বাধ্য করেননি। গায়ে পড়ে ফতোয়া তালাশ করে ফিতনা করা যে কোন প্রকৃত মুফতির কাজ নয় সে ব্যাপারে সবাই অবগত। সুতরাং যারা মাজহাবকে অনুসরণ করে তাদের সাথে মাজহাব নিয়ে বিদ্বেষমূলক কথা বলে নিজ পাণ্ডিত্য দেখাতে গিয়ে মূর্খতার পরিচয় না দেয়াই উত্তম।
আলহামদুলিল্লাহ, আমি মাজহাব মেনে চলি এবং হানাফি মজহাবের ইমাম, ইমামু-না ইমামে আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে অনুসরণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি।
সুপ্রিয় পাঠক- মনে রাখবেন, উল্লেখিত প্রশ্নটি লা মাজহাবীদের কমন প্রশ্নগুলির একটি প্রশ্ন। তাদের এ ধরনের প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে কেবল মাজহাবকে অনুসরণ করা নয় বরং মাজহাব মানা ব্যক্তিদেরকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা মাত্র। যাদের মস্তিষ্কে এমন অবান্তর প্রশ্নের জন্ম হয় তারা বস্তুত মাজহাব কি সে ব্যপারে ধারণাহীন।
আজকের আগেও এসব বিষয়ে বেশ কয়েকটি পোস্ট অলরেডি করেছি, কিন্তু বিষয়গুলি নিয়ে আমাদের মাঝে দিনদিন নতুন রূপে প্রশ্ন আর তর্কের আবির্ভাব হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিষয়গুলি নিয়ে সমাধানের পথে এগুচ্ছে এমন একটা সম্ভাবনার দ্বার যেন ক্ষীণ।
আজ ‘লা মাজহাবী’ দাবীকরা সেই সব অতীতে মাজহাব অনুসরণ করা ভাইদের বোধগম্যের জন্য কয়েকটি কথা বলবো যারা সহিহ হাদিসের বুলি দিয়ে সাধারণত মানুষকে নিয়মিত বিভ্রান্তি করে যাচ্ছেন।
শুনুন! মাজহাবের উৎপত্তি হয় তাবেইনদের যুগে। যখন আমার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে ছিলেন তখন সাহাবায়ে কেরামগন অজানা বিষয় জানতে, বোধগম্যহীন বিষয় বুঝতে তারা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী দরবারে উপস্থিত হতেন। হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ জগৎ থেকে বিদায়ের পরবর্তী সময়ে ছিলেন বিখ্যাত সাহাবিরা অর্থাৎ খোলাফা এ রাশেদ্বীনদের সময় যাঁরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণকারী এবং দিক নির্দেশনাকারী। এর পরে এসে যখন বিভিন্ন বিষয়ে এখতেলাফ লক্ষনীয় তখনি এসব বিষয়ে ইজতিহাদী ফায়সালা দিয়েছিলেন ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। সে সময়ে ইমাম আবু হানিফা বর্তমান ইরাকে অবস্থান করলেও পরবর্তীতে ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি কিন্তু মদিনায় দরবারে মুস্তফায় অবস্থান করেছিলেন। আর সেই সময় থেকে উনাদের দিকনির্দেশনা গুলোকে অনুসরণ করার নামই মাজহাব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যারা তাবেঈনদের যুগে মাজহাব ছিলো কিনা তাবে তাবেঈনদের যুগে মাজহাব ছিলো কিনা এমন অবান্তর প্রশ্ন করেন তারা জানেওনা যে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি একজন বিখ্যাত তাবেঈ ছিলেন।
আরেকটি কথা এখানে না বললেই নয় যে, নিজেকে ছোট করে উপস্থাপন করা মানে এ-ই নয় যে তিনি জ্ঞানী নয়। মাযহাব কে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে সালাফীরা বারবার ইমামে আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির এই কথাটিকে হাইলাইট করে বলে যে “আমার কথার বিপরীতে যদি কুরআন হাদিস এর স্পষ্ট দলিল পাওয়া যায় তো কুরআন হাদিসের কথাকে প্রাধান্য দিবেন” এখন কথা হচ্ছে সেই সময়ে কি এমন কোন পণ্ডিত ছিলেননা যিনি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির এই কথাটিকে বাস্তবে রূপদানকারী।
আফসোস হয় সেই সব মূর্খদের জন্য যারা ১৩০০ বছর পরে এসে ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে পরক্ষোভাবে ইসলাম বুঝেনি তিনি ইসলামের ভুল ব্যখ্যা দিয়েছেন তাই প্রমাণ করতে মরিয়া। শুধু কি তাই আজকের দিনে যারা সহিহ হাদিসের আলোকে কথা বলতে ইচ্ছে পোষণ করে তারা কি জানেন ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহিহ হাদিসের আলো দেখানোর কতো আগেই মাজহাবের উৎপত্তি! জানেওনা।
বেকুবের দল “আজিজি এনকেসারী” কি তাও জানেনা! এটাতো কেবলমাত্র আল্লাহ পাকের কাছে নিজেকে ছোট করার একটি মাধ্যম মাত্র। মানুষ হিসেবে ভুল হতে পারে আর সেই ভুলের উপর অটল থাকা যে অন্যায় তাই শিক্ষা দিয়েছেন কথাটি বলে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহ। তার মানে এই নয় যে, তিনি ভুল করেছেন! উনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার এতটা বছর পর এসে কিভাবে উনার ভুল ধরার সাহস দেখাও মূর্খের দল? আর কতো ধোঁকাবাজী করবে সাধারণ মানুষদের নিয়ে। ঠিকমতো আয়াতে কুরআন উচ্চারণ করতে পারেনা, এমনকি হরকত বিহীন হাদিসের ইবারতও পড়তে পারেনা অথচ দেখা যায় সেও ইমাম আযমের বিরোধিতা করে।
কথায় আছে যদি না বুঝে নিজ জ্ঞানে তাকে কেউ বুঝাতে পারেনা। সুতরাং আপন জ্ঞানে বুঝে নেওয়ার অনুরোধ রইলো।