কোন কোন নগদ অর্থের যাকাত দিতে হবে এবং কি পরিমাণ হলে দিতে হবে?
নিম্নের নগদ অর্থের যাকাত দিতে হবে:
নগদ অর্থ, টাকা-পয়সা, ব্যাংকে জমা, পোষ্টাল সেভিংস, বৈদেশিক মুদ্রা (নগদ, এফসি একাউন্ট, টিসি, ওয়েজ আর্নার বন্ড), কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, জমাকৃত মালামাল (রাখী মাল), প্রাইজবন্ড, বীমা পলিসি (জমাকৃত কিস্তি), কো-অপারেটিভ বা সমিতির শেয়ার বা জমা, পোষ্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট, ডিপোজিট পেনশন স্কীম কিংবা নিরাপত্তামূলক তহবিলে জমাকৃত অর্থের যাকাত প্রতি বছর যথা নিয়মে দিতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের রীতি অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে চাকুরীজীবির বেতনের একটি অংশ নির্দিষ্ট হারে কর্তন করে ভবিষ্য তহবিলে জমা করা হলে ঐ অর্থের উপর যাকাত ধার্য্য হবে না। কারণ ঐ অর্থের উপর চাকুরীজীবির কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভবিষ্য তহবিলের অর্থ ফেরৎ পাওয়ার পর যাকাতের আওতাভূক্ত হবে।
ঐচ্ছিকভাবে (অপ্শনাল) ভবিষ্য তহবিলে বেতনের একটা অংশ জমা করা হলে তার উপর যাকাত প্রযোজ্য হবে অথবা বাধ্যতামূলক হারের চাইতে বেশী হারে এই তহবিলে বেতনের একটা অংশ জমা করা হলে ঐ অতিরিক্ত জমা অর্থের উপর বছরান্তে যাকাত প্রযোজ্য হবে। চাকুরীজীবির অন্যান্য সম্পদের সাথে এই অর্থ যোগ হয়ে নিছাব পূর্ণ হলে যাকাত প্রদান করতে হবে। পেনশনের টাকাও হাতে পেলে যাকাত হিসাবে আসবে। মান্নত, কাফ্ফারা, স্ত্রীর মাহরের জমাকৃত টাকা, হজ্ব ও কুরবানীর জন্য জমাকৃত টাকার উপরে বছরান্তে যথানিয়মে যাকাত দিতে হবে।
উপর্যুক্ত নগদ অর্থ বা টাকার পরিমাণ যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্য বা এর চেয়ে বেশী হয় তাহলে এর উপর যাকাত ফরজ হবে। তাই সমূদয় নগদ অর্থ বা টাকার ৪০ ভাগের এক ভাগ নগদ টাকা বা সমমূল্যের যেকোন সম্পদ যাকাত হিসেবে দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, নগদ টাকার ক্ষেত্রে স্বর্ণ বা রূপা হতে যার মূল্য ধরলে যাকাত ফরজ হবে তারই মূল্য ধরতে হবে। যেমন, স্বর্ণের প্রতি ভরির মূল্য যদি ৪৫,০০০/- টাকা হয় তাহলে সাড়ে সাত ভরির মূল্য হবে ৩,৩৭,৫০০/- টাকা। আর রূপার প্রতি ভরির মূল্য যদি ৮০০/- টাকা হয় তাহলে সাড়ে বায়ান্ন ভরির মূল্য হবে ৪২,০০০/- টাকা। তাই নগদ টাকার যাকাত দিতে বর্তমানে স্বর্ণের মূল্য না ধরে রূপার মূল্য ধরতে হবে।
বৈদেশিক মুদ্রার যাকাত কিভাবে দিতে হবে?
যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হলে মালিকানাধীন সকল বৈদেশিক মুদ্রার নগদ, ব্যাংকে জমা, টিসি, বন্ড, সিকিউরিটি ইত্যাদি যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তির বসবাসের দেশের মুদ্রাবাজারে বিদ্যমান বিনিময় হারে মূল্য নির্ধারণ করে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যোগ করে যাকাত প্রদান করতে হবে।
মোহরানার অর্থের উপর কিভাবে যাকাত দিতে হবে?
‘মাহর’ বিধানের মাধ্যমে ইসলাম নারীদের জন্য এক অনন্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। কনে, বরের সাথে তার বিবাহবন্ধনে স্বীকৃতির সম্মানীস্বরূপ, বরের কাছ থেকে মাহর (মোহরানা) পেয়ে থাকে।
মাহর বাবদ প্রাপ্ত জমাকৃত অর্থের উপর যাকাত ধার্য হবে। মাহরের অর্থ নিছাব পরিমাণ হলে অথবা অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যোগ হয়ে নিছাব পূর্ণ হলে যাকাত প্রদান করতে হবে। মোহরানার যে অর্থ আদায় করা হয়নি তার উপর যাকাত ধার্য হবে না, কারণ এই অর্থ তার আওতাধীন নয়।
প্রচলিত মুদ্রায় (টাকায়) ধার্যকৃত ‘মাহর’ বিয়ের সময় সাথে সাথে পরিশোধ না করে, বিলম্বে প্রদান করা হলে তা আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়।
বর্তমানকালে বিদ্যমান মুদ্রার ক্রমবর্ধমান মূল্য হ্রাসের ফলে এই পাওনা পরবর্তীতে যখন পরিশোধ করা হয়, তখন মাহরের বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থ একান্ত নগন্য বা তুচ্ছ পরিমাণ হয়ে যায়। শরীয়াহ্ বিশারদগণ এই সমস্যার সমাধানে দৃঢ় মত পোষণ করেন যে, প্রচলিত মুদ্রার পরিবর্তে স্বর্ণ বা রৌপ্যের পরিমাণের ভিত্তিতে ‘মাহর’ নির্ধারণ করা উচিত, যাতে করে বিবাহিত নারীদের এই অধিকার যথার্থভাবে সংরক্ষিত থাকে এবং পরবর্তীকালে প্রচলিত মুদ্রার মূল্য হ্রাসজনিত কারণে তাদের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
ইসলামী গবেষণা বিভাগ
বাগদাদী ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা- ৩৫০০, বাংলাদেশ।