দুয়া ইউনুস কি এবং দুয়া ইউনুস কিভাবে পড়তে হয়?
গভীর সমুদ্রের নীচে, মাছের পেটের ভেতরে নিকষ অন্ধকারে হাবুডুবু খাওয়ার অবস্থায় ইউনুস আ’লাইহিস সালাম নীচের এই দোয়া করেছিলেন এবং সেই কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন।
ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺇِﻧِّﻲ ﻛُﻨْﺖُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ
উচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লা-আংতা সুবহা’-নাক, ইন্নি কুংতু মিনায-যোয়ালিমিন।
অর্থঃ (হে আল্লাহ!) তুমি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি জালিম (অত্যাচারী বা অপরাধী ব্যক্তির) অন্তর্ভুক্ত।
ক্বুরআনুল কারীমে এই দুয়া বর্ণিত হয়েছে সুরা আল-আম্বিয়াতে, ৮৭ নাম্বার আয়াত।
দুয়া ইউনুসের ফযীলত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি এই দুয়া ইউনুসের সাহায্যে আল্লাহর নিকট কিছু চাইবে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।” অন্য হাদীস অনুযায়ী, “এই দুয়া পড়লে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।” সুনানে আত-তিরমিযীঃ ৩৫০৫, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
দুয়া ইউনুস কিভাবে পড়তে হবে
বিপদ আপদ বা দুঃশ্চিন্তার সময় এই দুয়া বেশি বেশি করে পড়তে হয়। আপনার যতবার ইচ্ছা ও যতবার সম্ভব হয়, ততবার পড়বেন। তবে আমাদের দেশে টাকা কিংবা হাদিয়ার বিনিময়ে হুজুর বা মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে ভাড়া করে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার এই দুয়া পড়ে যে ‘খতমে ইউনুস’ পড়ানো হয়, এমন দুয়া কেনাবেচা করা বিদআ’ত। এরকম খতম করানোর কোনো দলীল নেই। আপনার যতবার সম্ভব হয় ততবার দুয়া ইউনুস পড়বেন, এত এত বার পড়তে হবে, এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আপনি নিজের জন্য নিজে যেই দুয়া করবেন, আল্লাহ তাআ’লার কাছে সেটাই বেশি পছন্দনীয়। ভাড়া করে হুজুর দিয়ে দুয়া পড়ানো বা ক্বুরআন খতম পড়ানোর কোন উপকারীতা বা প্রয়োজন নেই। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অতুলনীয় রহমতের ছায়ার মধ্যে আশ্রয় দিন, আমীন।
দুয়া ইউনুসের মাঝে কি রয়েছে?
(১) ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺃَﻧْﺖَ – “হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নাই” – এই কথার মাঝে রয়েছেঃ আল্লাহর ‘উলুহিয়াত’ এবং ‘তাওহীদের’ সাক্ষী।
(২) ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ – “তুমি পবিত্র ও মহান” – এই কথার মাঝে রয়েছেঃ আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা।
(৩) ﺇِﻧِّﻲ ﻛُﻨْﺖُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ – “নিশ্চয় আমি জালিম (অত্যাচারী বা অপরাধী ব্যক্তির) অন্তর্ভুক্ত” –
এই কথার মাঝে রয়েছেঃ আল্লাহর কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
(৪) সর্বোপরি এই দুয়ার মাঝে রয়েছেঃ আল্লাহর উলুহিয়াত এবং তাওহীদের স্বীকৃতি জ্ঞাপন, আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা এবং নিজের কৃত দোষ-ত্রুটি স্বীকার করার বিনিময়ে বান্দা তার উপস্থিত বিপদ থেকে আল্লাহ কাছে মুক্তির জন্য দুয়া করা।
ইউনুস আ’লাইহিস সালাম মাছের পেটের অন্ধকারে এই দুয়া করেছিলেন, যার ফলে আল্লাহ তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন। আর নয়তো ক্বিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাকে মাছের পেটেই রেখে দিতেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ يُونُسَ لَمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٣٩
إِذۡ أَبَقَ إِلَى ٱلۡفُلۡكِ ٱلۡمَشۡحُونِ ١٤٠
فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ ٱلۡمُدۡحَضِينَ ١٤١
فَٱلۡتَقَمَهُ ٱلۡحُوتُ وَهُوَ مُلِيمٞ١٤٢
فَلَوۡلَآ أَنَّهُۥ كَانَ مِنَ ٱلۡمُسَبِّحِينَ ١٤٣
لَلَبِثَ فِي بَطۡنِهِۦٓ إِلَىٰ يَوۡمِ يُبۡعَثُونَ ١٤٤
অর্থঃ আর নিশ্চয় ইউনুস ছিল রাসুলদের একজন। স্মরণ করুন, যখন তিনি বোঝাই নৌযানের দিকে পালিয়ে গেলেন। অতঃপর (দোষী খোঁজার জন্য যে লটারী করা হল সেই) লটারীতে তিনি অংশ নিলেন আর তাতে হেরে গেলেন। অতঃপর একটি বড় আকারের মাছ তাঁকে গিলে ফেলল, আর তিনি ছিলেন ধিকৃত। অতঃপর তিনি যদি আল্লাহর ‘তাসবীহ’ (পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারীদের) অন্তর্ভুক্ত না হতেন, তাহলে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত তাঁকে (মাছের) পেটে থাকতে হতো।
[সুরা আস-সাফফাতঃ আয়াত নং ১৩৯-১৪৪]