(1) রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, আমার প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করিলে কোয়ামতের দিন তাহার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজেব হইয়া যায়।
(2) রাসূলে পাক এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ্ পাক তার উপর দশটি রহমত অবতীর্ণ করবেন। (মেশকাত শরীফ)
(3) আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, হযরত রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাহার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করবেন এবং তাহার দশটি গোনাহ মাফ করা হবে, আর তাহার মর্যাদা দশগুণ উচ্চ করা হবে। (নাসায়ী শরীফ)
(4) হযরত আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে, রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমার উম্মতের যে কোনো লোক যদি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ্ পাক তার প্রতি দশটি রহমত নাজিল করেন, দশটি উচ্চ মর্যাদা দান করন, আমলনামায় দশটি নেকি লেখা হয় এবং দশটি গুনাহ মাফ করে দেন। (নাসায়ী শরীফ)
(5) হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, হযরত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের নিকট আমার উপর দরুদ পাঠ করবে, আমি তা শুনবো, আর যে ব্যক্তি আমার উপর গায়েবানা (অর্থাৎ দূরে থেকে) দরুদ পাঠ করবে, তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হবে। (বায়হাকী)
(6) হযরত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, আল্লাহ্ তায়ালার বহু ফেরেশতা যমীনে ভ্রাম্যমাণ রয়েছে, যারা আমার নিকট আমার উম্মতের পক্ষ থেকে তাদের সালাম পৌঁছে দেয়। (নাসায়ী ও দারমী)।
(7) হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আরও বর্ণনা করেন, মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি দরুদ শরীফ পড়া মাত্র একজন ভ্রাম্যমাণ ফেরেশতা আমার দরবারে উপনীত হয়ে খবর দেয়, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! অমুকের সন্তান অমুক আপনার উপর এত মোর্তবা দরুদ শরীফ পাঠ করেছেন। অমনি আমি ও তার ওপর ঠিক তত মোর্তবা দরুদ পাঠ করি। অতঃপর সেই ফেরেশতা আল্লাহর দরবারে আরজি পেশ করে- হে মাবুদ! অমুকের সন্তান অমুক আপনার হাবীবের ওপর এত মর্তবা দরুদ পাঠ করেছেন। তৎক্ষণাৎ আল্লাহ্ পাক তাকে জানিয়ে দেন, উত্তম কিরামান ও কাতেবীনকে বলে দাও, তার প্রত্যেক মোর্তবা দরুদ পাঠের পরিবর্তে যেন তার আমলনামা থেকে দশটি করে গোনাহ্ কেটে দেয় এবং আমার তরফ থেকে প্রত্যেক কাটা স্থানে দশটি করে নেকী লিখে রাখে। (মুয়াত্তা শরীফ)
(8) হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি কৃপণ, যার সম্মুখে আমার নাম উল্লেখ হয়, অথচ সে আমার নামে দরুদ পাঠ করে না। (তিরমিযী)
(9) হযরত আবু দাররা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা আমার ওপর দশবার দরুদ পড়বে সে কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভ করবে। (তাবারানী)
(10)এক হাদীসে উল্লেখ আছে, একদা রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে বসেছিলেন। এ সময় চারজন প্রধান ফেরেশতা এসে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় দেখে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কী চিন্তা করছেন? রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মতের চিন্তা করছি, কীভাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে নেওয়া যায়। এই কথা শুনে
প্রথম ফেরেশতা আজরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপনার ওই উম্মত যে সকালে দশবার এবং সন্ধ্যায় দশবার আপনার প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করবে, আমি মৃত্যুর সময় তার জান সম্মান ও ইজ্জতের সাথে সহজে কবজ করব।
দ্বিতীয় ফেরেশতা ইসরাফিল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপনার যে উম্মত সকাল-সন্ধ্যা দশবার করে আপনার উপর দরুদ ও সালাম ভেজবে, আমি তার জন্য হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের নিচে সেজদারত অবস্থায় তার জন্য গুনাহ মাফির জন্য প্রার্থনা করব এবং প্রার্থনা কবুল না হওয়া পর্যন্ত সেজদা থেকে মাথা তুলব না।
তৃতীয় ফেরেশতা মিকাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপনার যে উম্মত প্রাতে দশবার এবং সন্ধ্যায় দশবার আপনার প্রতি দরুদ ও সালাম জানাবে, আমি হাশরের ময়দানে তাকে নিজ হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান করাব।
চতুর্থ ফেরেশতা জিব্রাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাহু ধরে বললেন, অনুরূপ দরুদ পাঠকারীকে আমি এভাবে পুলসিরাত পার করে জান্নাতে পৌঁছে দেবো। (মাওয়াহের লুদ্নী)
(11) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি ওযু করে আদবের সাথে বসে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করলে, আল্লাহ্তায়ালা তাহার ওপর দশবার দরুদ শরীফ পাঠ করেন। যদি আমার ওপর কেউ দশবার দরুদ পাঠ করেন তবে আল্লাহ্তায়ালা তার ওপর একশতবার দরুদ পাঠ করেন। কেউ একশত বার আমার ওপর দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ্পাক তার উপর একহাজার বার দরুদ শরীফ পাঠ করেন এবং তার জন্য বেহেশত হালাল ও দোযখ হারাম করে দেন। (মুসলিম শরীফ)
(12) হযরত ইবনে মাস্উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উপর সর্বাধিক দরুদ পাঠকারী কিয়ামতের দিন লোকদের মধ্যে আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে। (তিরমিযী)
(13) হযরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার নামে অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করি; অতএব দরুদ পাঠের জন্য আমি কতটুকু সময় নির্দিষ্ট করব?
_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও। আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ সময়। আঁ_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও; আর যদি আরও বেশি কর, তবে তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? আঁ_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও আর যদি আরও বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম_ তবে দুই তৃতীয়াংশ সময়। আঁ_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও আর যদি আরও বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম, আমি আপনার উপর দরুদ পাঠের জন্য আমার সমুদয় সময় নির্দিষ্ট করব। আঁ_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তোমার যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার দ্বীন ও দুনিয়ার সকল উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে আর তোমার সমস্ত গোনাহ্ মাফ হবে। (তিরমিযী)
(14) রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার সুপারিশের পূর্বে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না কিন্তু যারা আমার ওপর সব সময় দরুদ শরীফ পাঠ করেছে, তারা আমার সুপারিশের পূর্বেই জান্নাতে চলে যাবে। তাদের জন্য আমার কিছুমাত্র সুপারিশের প্রয়োজন হবে না। (মুসলিম শরীফ)।
পবিত্র কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ও বিভিন্ন ইসলাম ধর্মীয় গ্রন্থসমূহে দরুদ শরীফ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অনেক প্রকার দরুদ শরীফ আছে, যার প্রত্যেকটির মোর্তবা বা ফজিলত বা সৌভাগ্য ভিন্ন ভিন্ন। ইমাম ইব্নে কাইয়ূ্যম রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু-এর মতে, দরুদ শরীফ পাঠে কম-বেশি চলি্লশ প্রকার মোর্তবা বা ফজিলত বা সৌভাগ্য রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, দরুদ শরীফ পাঠে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। সর্বাবিধ বিপদ-আপদ দূরীভূত হয়। দেহ রোগমুক্ত থাকে। স্বাস্থ্য অটুট হয়। হায়াত বৃদ্ধি পায়। যাবতীয় অভাব-অভিযোগ মোচন হয়। ইহকাল এবং পরকালের কল্যাণসহ দ্বীন-দুনিয়ার সকল মক্বসূদ হাসিল হয়। নিয়মিত বেশি বেশি দরুদ পাঠকারীর হাশরের মাঠে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশ প্রাপ্তি ও মুক্তি লাভের আশা করা যায়। দরুদ শরীফ পাঠের সর্বাপেক্ষা স্বাদের ও মধুর বিশেষত্ব এই যে, দরুদ শরীফ পাঠের উছিলায় পাঠক উন্নতির পথে অগ্রসর হয়। তার সমগ্র জীবনের সকল প্রকার গুনাহ্ মাফ হয়ে যায় এবং স্বপ্নযোগে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দীদার নছিব হয়। অর্থাৎ জিয়ারত বা দর্শন লাভ হয়। আর সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তির জন্য দোযখ হারাম এবং বেহেস্ত অনিবার্য হয়ে যায়।