স./সা./দ. লেখা পরিহার করুন
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ইসলাম নিয়ে লেখালেখির প্রবণতা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে।এক্ষেত্রে রাসুলে আরাবি ﷺ এরঁ পবিত্র নাম মুবারকের ব্যবহার এককথায় বলতে গেলে আবশ্যক।কেননা আমার মতো একজন একেবারে নিম্নপর্যায়ের সাধারণ লেখকটাও চান যে,উনার লেখনীর সাথে হাদিস শরিফের যোগসূত্র লেখাটাকে কম করে হলেও তথ্যবহুল করবে।
এক্ষেত্রে বিপত্তিটা দেখা যায়,রাসুলে কারিম মুহাম্মাদ মুস্তফা ﷺ এঁর নাম এর পর দুরুদ লেখা নিয়ে।আমাদের মধ্যে একপ্রকার কুপ্রথা হিসেবে দাঁড়িয়েছে দুরুদের পরিবর্তে (সা:)/স:/সা./স./সা.আ. ইত্যাদি লেখা যেগুলো হুযুর ﷺ এর সম্মানের বিপরিত।এব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা উচিত।
দুরুদের ব্যাপারে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আয়াতটি সুরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াত।এখানে আল্লাহ বলেন,❝সাল্লু আলাইহি ওয়াসাল্লিমু তাসলিমা❞—আলা হযরত এর তরজমা করেন,আল্লাহ বলেন,❝হে ইমানদারগণ!তোমরাও তাঁর ﷺ প্রতি দুরুদ এবং খুব সালাম প্রেরণ করো।❞
ইমাম মুনযিরি,ইমাম তবারানি প্রমুখ মরফুভাবে হাদিস নক্বল করেন,নবিজি ﷺ বলেন,
من ذكرتُ عنده فخطى الصلاة علي خطى طريق الجنة
—যার নিকট আমার যিকর(স্মরণ) করা হয়,আর সে আমার উপর দুরুদ পড়তে ভুলে যায়,সে যেনো জান্নাতের পথই ভুলে গেলো।(তারগীব ২/৫০৮)
ইমাম তবারানি বিশুদ্ধভাবে উল্লেখ করেন,নবিজি বলেন,একবার উনার কাছে জিব্রাইল عليه السلام এসে জানালেন,
و من ذكرت عنده فلم يصل عليك فمات فدخل النار
—❝…এবং যার নিকট আপনার ﷺ যিকর/স্মরণ করা হয় অথচ সে দুরুদ পড়েনা,সে যদি মারা যায় তবে জাহান্নামে যাবে।❞
[কানযুল উম্মাল,১৬/৪২]
সুতরাং এ হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হয়,হুযুর ﷺ এরঁ ওপর দুরুদ-সালাম প্রেরণ করার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য প্রদর্শন অনুচিত।তাই হুযুরের নামের পর সংক্ষিপ্ত আকারে দুরুদ লেখাটা হলো হুযুরের প্রতি তাযিমের কমতির একটা স্বরূপ।❝ওয়াসাল্লিমু তাসলিমা❞ আয়াতাংশের হুকুম ব্যাকরণিক দৃষ্টিকোণ থেকে হলো জোরালোতা প্রকাশকের মতই।এর আদেশ অনেকটা আক্ষরিকভাবে এরকম—❝সালামের মত করে সালাম দাও❞।এরকম আরো আছে —❝ইউত্বাহহিরাকুম তাত্বহিরা❞— বা পবিত্রের মত পবিত্র করে দেয়া (যতটুকু পবিত্রতা শোভা দেয়)!কেউ যদি বলে “একটা চমৎকার ঘুম ঘুমিয়েছি”— এ বাক্যটা ঘুমের প্রাবল্য/গভীরতা বোঝাতে ব্যবহার হয়।তেমনি ❝তাসলিমা❞—দ্বারা দুরুদ সালাম দেয়ার/প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তাযিমের প্রবলতার দিকেই নির্দেশ করে।আর দুরুদ/সালামের সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন কখনোই সম্মানজনক বিষয় হতে পারেনা।
➤➤আরো হাদিস শরিফ থেকে ব্যাখ্যা:
শায়খুল ইসলাম ইমাম তাজউদ্দিন ইবনে শায়খুল ইসলাম তকিউদ্দিন আস-সুবুকি র. উনার বিখ্যাত ‘তবাকাতুশ শাফেইয়াতিল কুবরা‘ গ্রন্থে ১/১৩৪ পৃষ্ঠায় সনদ সহকারে উল্লেখ করেন,হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত,নবিজি ﷺ বলেন,
من صلى على في كتاب لم تزل صلاته جارية له ما دام اسمي في ذلك الكتاب
—❝যে ব্যক্তি তার কিতাবে আমার (নাম উল্লেখ করার পর আমার) ওপর দুরুদ অন্তর্ভুক্ত করে, যতদিন পর্যন্ত ঐ কিতাবে আমার নাম (দুরুদ সহকারে) উল্লেখ থাকবে,ততদিন ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহর রহমত জারি থাকবে।❞
হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওযিয়াহ ‘জালাউল আফহাম’ এর ৪৪৩ নং হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে সমার্থক হাদিস বর্ণনা করেছেন। এরপর উনি লিখেন,❝ইবনে আব্বাস,আবু বকর সিদ্দিক,আয়িশাহ হতে অনুরুপ হাদিস বর্ণিত রয়েছে।❞ رضي الله تعالى عنهم
আলবানি ইমাম মুনযিরির ‘আত-তারগীব’ এর তাহকিকে এ হাদিসের ব্যাপারে বিশুদ্ধতার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে,ইমাম হুসাইন সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিসসালাম বলেন,নবি ﷺ বলেন
وعن الحسين بن علي بن أبي طالب رضي الله تعالى عنهما قال: قال: قال رسول الله ﷺ: البَخيلُ مَنْ ذُكِرْتُ عِندَهُ، فلَمْ يُصَلِّ علَيَّ؛ صححه الألباني في (صحيح الترغيب: 1683)
—❝সবচেয়ে কৃপণ ঐ ব্যক্তি যার নিকট আমার আলোচনা হয় অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়েনা।❞[সহিহ তারগীব,১৬৮৩]
☞ইমামরা বলেন,
মুকাদ্দিমাতু ইবনুস সালাহ ৩৭২পৃ. (দারুল মা’আরিফাহ) গ্রন্থে উল্লেখ আছে,
ينبغي أن يحافظ على كتبة الصلاة والتسليم على رسول اللہ ﷺ عند ذكره، ولا يسأم من تكرير ذلك عند تكرره، فإن ذلك من أكبر الفوائد التي يتعجلها طلبة الحديث وكتبته، ومن أغفل ذلك حرم حظا عظيما، وقد روينا لأهل ذلك منامات صالحة”. وما يكتبه من ذلك فهو دعاء يشيته، لا كلام يرويه، فلذلك لا يتقيد فيه
—❝কিতাবে নবিজি ﷺ এঁর নাম মুবারক লেখার পর দুরুদ ও সালামের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।এক্ষেত্রে হাদিসের শিক্ষার্থী এবং হাদিসের লিপিবদ্ধ কারিরা যেহেতু বেশি বেশি নবি ﷺ এঁর নাম নেয়,তাই তাদের এক্ষেত্রে (দুরুদ ও সালাম বারবার লেখার ক্ষেত্রে ) ক্লান্ত হওয়া উচিত নয়।যে এব্যাপারে অবহেলা করবে সে বহু কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হবে।❞
ইমাম আবুল আব্বাস আহমাদ বিন মুহাম্মাদ আল-আক্বলিশি আল-মালিকি (৫৫০হি.) উনার ‘আনওয়ারুল আছার’ নামক গ্রন্থে লিখেন,
وكما تصلي على نبيك عليـه الصـلاة والسلام بلسانك
فكذلـك تخطـر بـبنـانك مهمـا كـتـبـت اسـمـه المبـارك في كتاب،فإن لك بذلك أعظم الثواب
—❝কোনো ব্যক্তির দ্বারা নবি ﷺ এর ওপর মুখে দরুদ পড়া বা কিতাবে উনার নাম মুবারক লেখনীর পর দুরুদ লিপিবদ্ধ করা গেলে,প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বিপুল সাওয়াবের অধিকারি সে হবে।❞
➤‘শরফু আসহাবিল হাদিস ও নাসিহাতু আহলুল হাদিস’ গ্রন্থের ৩৬ পৃষ্ঠায় ইমাম খাতিবে বাগদাদি লিপিবদ্ধ করেন,
وقال محمد بن أبي سليمان : رأيت أبي في النوم, فقلت : يا أبت ! ما فعل الله بك ؟ فقال : غفر لي.قلت:بم؟قال: بكتــابتي الصـلاة علـى الـنـبي ﷺ في كل حديث
—মুহাম্মাদ বিন আবি সালামাহ বলেন,’আমি আমার পিতাকে মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখলাম।জিজ্ঞেস করলাম,আপনার সাথে আল্লাহ কিরূপ আচরণ করেছেন?’উনি বললেন,উনাকে ক্ষমা করা হয়েছে।তখন তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলাম।তিনি বললেন,❝আমি প্রত্যেক হাদিস লেখার সময় নবিজির পবিত্র নাম মুবারকের পর দুরুদ লিপিবদ্ধ করতাম।❞
সাইয়্যিদি আলা হযরত قُدِّسَ اللّه سِرّه লিখেন,
❝ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী র. বলেছেন,যে ব্যক্তি দরূদ শরীফকে প্রথমে সংক্ষেপ করেছিল তার হাত কেটে দেয়া হয়।সাইয়্যেদ তাহতাভি ‘দুররুল মুখতার’ এর হাশিয়ায় ফাতাওয়া তাতারখানিয়া হতে উল্লেখ করেন,যে ব্যক্তি ‘আলাইহিস সালাম’ এর পরিবর্তে ع এবং م লিখে,তাকে কাফের বলা হবে কেননা তা হলো নবিদেরকে হেয় করা,এবং নবিদের হেয় করা কুফুরি।…..ওয়াজিব কিংবা মুবাহ যেভাবে হোক প্রত্যেক বার নবীর নাম শুনলে,মুখে উচ্চারণ করলে কিংবা কলম দ্বারা লিখতে এ বিধান (সূরা আহযাবের আয়াতটির) প্রযোজ্য। লেখাতে হুযুর ﷺ এঁর নাম মোবারক আসলে ﷺ লেখার বিধান রয়েছে।এর পরিবর্তে অর্থহীন صـلـلم/صلعم/ع.م লিখলে তার পরিণামে তারা কি আল্লাহর গযব নাযিল হওয়ার ভয় করে না?আলইয়াযু বিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।এটা দরূদের বিষয় যা হালকা মনে করলে কুফরী হবে।❞
☞আধুনিক সমাধান:
বর্তমানে ফেসবুকে লেখালেখির কাজে যেহেতু বেশি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করা হয়,সেক্ষেত্রে কিভাবে সহজে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং একটা আরবী মনোগ্রাম ‘ﷺ’ ব্যবহার করা যায় সেটা নিয়ে অল্প আলোচনা করবো।
Ridmik Keyboard version 7.0.1 এবং এর ওপরের আপডেটেড গুলোতে এই ফিচারটি পাওয়া যায়।সেটা হল কোনো Copy কৃত লেখা ভবিষ্যতে একাধিকবার ব্যবহারের সুবিধার্থে Pin করে রাখা।
প্রথমে আপনি কেবল মনোগ্রামটি কপি করবেন।এরপর রোটেটিং T (Rotating T) অপশনে ক্লিক করলে এর ডানে ইমোজি এবং ৩য় নম্বরে একটা পিনবোর্ড দেখা যাবে। পিনবোর্ডে ক্লিক করলে কপিকৃত লেখাটার নিচের ডান কোণায় একটা পিন দেখা যাবে।এতে ক্লিক করলেই আপনার লেখাটা Pin হয়ে Pinned অপশনে চলে আসবে।আমরা এখানে ‘জাল্লা ওয়া আলা’ এবং ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পিনড অবস্থায় দেখিয়েছি।
সুতরাং সাবধান হোন!তাজিমে মুস্তাফা ﷺ ব্যতীত ঈমান পরিপূর্ণ নয়।যারা আগে সংক্ষেপে লিখতেন এবং এ আর্টিকেলটি পড়ছেন তারা মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিন যাতে পূর্বের ভুলের জন্য তাওবা করে নবি ﷺ এঁর প্রতি যথাযথ তাজিম আদায়ের তাওফিক যাতে আল্লাহ আপনাকে দেন,সে দুআ করুন।আমিন!