১. মুহাররম ‘হারাম’ বা সম্মানিত মাস হিসাবে পরিগণিত
আবূ বাকরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ
বারো মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক : যিলকদ, যিলহজ্ব, মহররমআর চতুর্থটি হল রজব, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস।(সহীহ বুখারী ২/৬৭২)
২. রামাযানের পরেই মুহাররমের রোজার অবস্থান
আবূ হুরায়রাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ
রামাযানের পরে সর্বোত্তম রোজা হল মুহাররম মাসের রোজা (অর্থাৎ আশূরার রোজা) এবং ফরয নামাজ পরে সর্বোত্তম নামাজ হল রাতের নফল নামাজ। (মুসলিম হা/১১৬৩)
৩.আশুরা (মুহাররমের দশম দিন ) একটি মহান দিন
ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قدم المدينة فوجد اليهود صياما يوم عاشوراء، فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم : ما هذا اليوم الذي تصومونه؟ قالوا هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وقومه، وغرق فرعون وقومه فصامه موسى شكرا فنحن نصومه. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : فنحن أحق وأولى بموسى منكم. فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأمر بصيامه
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে রোজাপালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন্ দিন যে তোমরা রোজা পালন করছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ মুছা আ. ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন মুছা আ. শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা আ. এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাপালন করলেন ও অন্যদেরকে রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন।( মুসলিম হা/ ১১৩০)
৪.আশুরা একটি ভাল দিন
মুসলিমের বর্ণনাهذا يوم عظيم এটি একটি মহান দিন; পক্ষান্তরে সহীহ বুখারীর বর্ণনায় আছে, هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌএটি একটি ভাল দিন। (সহীহ বুখারী ১৮৬৫)
৫.এই দিন আল্লাহ মুছা আ. ও তাঁর সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন
أنجى الله فيه موسى وقومه، وغرق فرعون وقومه فصامه موسى شكرا
এই দিন আল্লাহ মুছা আ. ও তাঁর সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন।(প্রাগুক্ত)
৬.এই দিন নূহ আ.-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল
ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেখানে আছে,
وهو اليوم الذي استوت فيه السفينة على الجودي فصامه نوح شكراً
এটি সেই দিন যাতে নূহ আ.-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে সেদিন রোজা রেখেছিলেন।(ফাতহুল বারী ৫/৪৩৯)
৭.এই দিনে মুছা আ. ও নূহ আ. রোজারেখেছিলেন
فصامه موسى شكرا মুছা আ. শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন।فصامه نوح شكراً নূহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে এদিন রোজা রেখেছিলেন।(প্রাগুক্ত)
৮.এই দিনের অপেক্ষা করতেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ
আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই দিন অর্থাৎ আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমজান মাসের রোজার প্রতি।(সহীহ বুখারী ১৮৬৭)
৯.এই দিনের রোজায় এক বছরের গোনাহ থেকে মুক্তিলাভ হয়
আবু কাতাদাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
صيام يوم عاشوراء، إني أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله
আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।( মুসলিম হা/১৯৭৬)
১০.আশুরার সাথে তাসুআর রোজাও মুস্তাহাব
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযি.) বর্ণনা করেন,
حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ”. قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে।( মুসলিম হা/১৯৪৬)