মায়ের কোলে শিশু নবী ﷺ
দশম অধ্যায়ঃ মায়ের কোলে শিশু নবীঃ
প্রসঙ্গঃ আবু লাহাবের খুশী ও তার শাস্তির বিরতি – চাঁদের সাথে কথা বলা ও খেলা করা
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা [ﷺ] ভূমিষ্ট হওয়ার পর ছুয়াইবা নাম্মী এক দাসী তার মনিব আবু লাহাবকে এই সুসংবাদ জানায়। আবু লাহাব ভাতিজার জন্মসংবাদে খুশী হয়ে আপন দাসী ছোয়াইবাকে আযাদ করে দেয়। ৫৫ বৎসর পর বদরের যুদ্ধের ৭দিন পর প্লেগ রোগে আবু লাহাবের মৃত্যু হয়। আবু লাহাবের ভাই হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) স্বপ্নে আবুলাহাবকে দেখে নবী দুশমনির পরিনতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আবু লাহাব আফসোস করে বললো- “নরকে আমার স্থান হয়েছে। তবে নবী করীম [ﷺ]-এঁর জন্মসংবাদে খুশী হয়ে দাসীকে শাহাদৎ আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে প্রতি সোমবার আমার কবরের আযাব কিছুটা হালকা হয় এবং শাহাদৎ আঙ্গুল চুষে কিছুটা তৃষ্ণা নিবারণ করি।” (বুখারী শরীফ : ৪৭৩০, ৫১০১ *তৌহিদ ফাউন্ডেশন ও মাওয়াহেব)।
ইবনে জজরী (رحمة الله عليه) এ প্রসঙ্গে বলেন- “আবু লাহাব নবী করীম [ﷺ]-এঁর একজন কট্টর দুশমন- যার বিরুদ্ধে সূরা লাহাব নাযেল হয়েছে। নবীজীর [ﷺ] জন্মদিনের খুশীতে যদি তার এই পুরষ্কার হয়, তাহলে যে মুসলমান মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে খুশী উদযাপন করবে এবং নবীর মহব্বতে সাধ্যমত খরচ করবে, তার পুরষ্কার কী হতে পারে? আমার জীবনের শপথ করে বলছি – নিশ্চয়ই আল্লাহ জাল্লা শানুহু আপন অনুগ্রহে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (আন্ওয়ারে মুহাম্মদীয়া)।”
উক্ত ছোয়াইবা নবী করীম [ﷺ]-কে কয়েক দিন দুধ পান করিয়েছিলেন। সেজন্য নবী করীম [ﷺ] তাঁকে মা বলে সম্মান করতেন। জন্মের পর নবী করীম [ﷺ] ১৬/১৭ দিন আপন মা ও ছুয়াইবার দুধ পান করেছিলেন।
চাঁদের সাথে খেলা করাঃ
এ সময়ের একটি ঘটনা দেখে নবীজীর চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) পরবর্তীকালে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) একদিন কথা প্রসঙ্গে বললেন- “ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি যখন শিশুকালে দোলনায় ছিলেন – সেই সময়ের একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা আপনার নবুয়তের প্রমাণস্বরূপ আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম এবং এই ঘটনাই পরবর্তীকালে আমাকে আপনার ধর্মে দীক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত করেছে বেশী। ঘটনাটি ছিল এই- “আপনি দোলনায় শুয়ে শুয়ে আকাশের চাঁদের সাথে খেলা করছিলেন। আপনি আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদকে যে দিকে হেলে যেতে বলতেন, চাঁদ সেদিকেই হেলে যেতো। এই ঘটনা আমাকে আকৃষ্ট করেছে।”
একথা শুনে একটু মুচকি হাসি হেসে হুযুর [ﷺ] বললেন- “চাচাজান, শুধু তাই নয়। আমি সে সময় চাঁদের সাথে কথাও বলতাম এবং চাঁদও আমার সাথে কথা বলতো। চাঁদ ছিল আমার খেলার নূরের পুতুল।”
[তথ্যসুত্রঃ ইমামহাকিম রহঃ এর মুস্তাদরাক, এছাড়াও বর্ণিত হয়েছে যেসকল কিতাবে সগুলোর মধ্যে রয়েছে— ইমাম তাবারানী (রঃ)-এর ‘মুয়াজ্জামুল কাবীর’, ইমাম ইবনে হাজর হাইসামী (রঃ)-এর ‘মাজমুয়া’ জাওয়ায়ীদ’, ইমাম আবূ নয়ীম (রঃ)-এর ‘হিলিয়া’, ইমাম কুরতুবী (রঃ)-এর ‘জামে লি আদিল আহকামিল কুরআন’, ইমাম হালাবী (রঃ)-এর ‘সীরাতে হালাবীয়া’, ইবনে কুরদামা (রঃ)-এর ‘আল-মুগনী’। (হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)-এর রেওয়ায়াত সূত্রে-মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া)।]
খাছায়েছে কুবরা ও তারিখে খামিছ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, নবী করীম [ﷺ] ভূমিষ্ট হয়েই কলেমা শাহাদাত অর্থাৎ তৌহিদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন-
– أشهد أن لا اله الا الله وأنى رسول الله
অর্থাৎ – “আমি চাক্ষুস সাক্ষ্য দিচ্ছি – আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নেই এবং নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসূল।” এটা ছিল হুযুরের দেখা সাক্ষ্য। তাই তিনি চাক্ষুস সাক্ষী।
প্রিয় নবী [ﷺ] জন্মসূত্রেই নবী। ভূমিষ্ট হয়ে তৌহিদ ও আপন রিসালাতের সাক্ষ্যই প্রমাণ করে যে, নিজের নবুয়ত সম্পর্কে তিনি শিশুকালেই অবহিত ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব তার সিরাতুন্নবী সংকলনে লিখেছেন- “চল্লিশ বৎসরের পূর্বে তিনি জানতেন না যে, তিনি নবী হবেন। তবে তাঁর আচার আচরণ ছিল নবীসুলভ।” এটা তার বেদ্বীনী উক্তি এবং প্রকৃত ঘটনার সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা, নবী [ﷺ] না জেনে ও না বুঝে নিজের নবুয়তের সাক্ষ্য দেবেন- এটা কোন বিবেকবান লোক বলতে পারে না।
বুঝা গেলো- তিনি শিশুকাল থেকেই চাঁদের খবরও রাখতেন- হাতের খেলনাকে যেদিকে ঘোরানো হয় সেদিকেই খেলনা ঘুরে। আরো প্রমাণিত হলো- তিনি তাওহীদ ও রিসালাতের শিক্ষা নিয়েই আগমন করেছেন। তাওহীদ ও রিসালাত সম্বলিত কলেমা পরবর্তীতে উম্মতের জন্য নাযিল হয়েছিল। কোরআনের “তালিমপ্রাপ্ত” হয়েই তাঁর আগমন হয়েছিল। কোরআনের “তানযীল” বা নুযুল হয়েছে পরবর্তীকালে।