জোরে আমীন বলা শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে ছিল
এমন কোন সহীহ হাদীস নেই, যেখানে স্পষ্টভাবে ইমামকে জোরে আমীন বলতে বলা হয়েছে। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে জোরে আমীন বলেছেন, সে সম্পর্কেও সুফিয়ান ছাওরী র. এর সূত্রে বর্ণিত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. এর হাদীসটি ছাড়া অন্য কোন সহীহ হাদীস নেই।
সুফিয়ান ছাওরীর হাদীসটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জোরে আমীন বলার যে উল্লেখ পাওয়া যায় তা ছিল শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে। হযরত ওয়াইল রা. ছিলেন ইয়ামানের নবাব খান্দানের মানুষ। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে মদীনা শরীফে হাজির হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নামাযে নিজের পেছনে প্রথম কাতারে জায়াগা করে দেন। যাতে করে তিনি দেখেশুনে নামায শিখতে পারেন। তাঁকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন নামাযে জোরে আমীন বলেছেন। এটা তাঁর সাধারণ নিয়ম ছিল না। সাধারণ নিয়ম হয়ে থাকলে তা শুধু ওয়াইল রা. কেন, অন্যান্য সাহাবীও তা বর্ণনা করতেন।
জোরে আমীন বলা যে শেখানোর জন্য ছিল তার প্রমাণ
ক.হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন:
رأيت النبى صلى الله عليه وسلم دخل فى الصلاة ، فلما فرغ من فاتحة الكتاب قال آمين ثلاث مرات.رواه الطبرانى فى الكبير ১৬/১৮ وقال الهيثمى : رجاله ثقات
অর্থ: আমি দেখলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করলেন। তিনি যখন সূরা ফাতিহা শেষ করলেন তখন তিনবার আমীন বললেন। তাবারানী, আল কাবীর ১৬/১৮ আল্লামা হায়ছামী র. বলেছেন, এর বর্ণনা কারীগণ বিশ্বস্ত।
এ হাদীস সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. বলেছেন:
الظاهر انه رآه فى ثلاث صلوات فعل ذلك. لا انه ثلّث التأمين. حكاه الزرقانى فى شرح المواهب ৭/১১৩
তিনবার আমীন বলার অর্থ এই নয় যে, এক রাকাতেই তিনবার আমীন বলেছেন। বরং এর অর্থ হলো তিন নামাযে তিনবার আমীন বলেছেন। তার মানে তিনি তিন নামাযে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমীন বলতে শুনেছেন। বাকি নামাযে শোনেন নি। অথচ এ যাত্রায় তিনি বিশ দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে অবস্থান করেছিলেন।
খ. নাসায়ী শরীফের বর্ণনায় হযরত ওয়াইল রা. বলেন:
فلما قرأ غيرالمعضوب عليهم ولا الضالين قال آمين، فسمعته وانا خلفه. رقم
অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনغيرالمعضوب عليهم ولا الضالين পড়ে শেষ করলেন তখন আমীন বললেন। আমি তাঁর পেছনেই ছিলাম। তাই তা শুনতে পেয়েছি। নাসায়ী (৯৩২), আলকুবরা (১০০৬)। ইমাম দারাকুতনী এই সনদকে সহীহ বলেছেন ১/৩৩৫(৫); তাবারানী ২২/২৩, ইবনে মাজাহ (৮৫৫)।
এ হাদীস থেকেও বোঝা যায়, তাঁকে শেখানোর উদ্দেশ্যেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন শব্দটি সামান্য জোরে উচ্চারণ করেছিলেন।
গ. অপর বর্ণনায় হযরত ওয়াইল রা. বলেন:
رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم حين فرغ من الصلاة حتى رأيت خده من هذا الجانب ومن هذا الجانب. وقرأ غير المغضوب عليهم ولا الضالين، فقال آمين يمد بها صوته ما اراه الا ليعلمنا. رواه أبو بشر الدولابي في الكنى والأسماء. قال النيموى : وفيه يحى بن سلمة ، قواه الحاكم وضعفه جماعة
অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে সালাম ফেরানোর সময় আমি তাঁর ডান গাল ও বাম গাল দেখেছি। আর তিনি غير المغضوب عليهم ولا الضالين পড়ার পর লম্বা আওয়াযে আমীন বললেন। আমার মনে হলো আমাদেরকে শেখাবার জন্যই তিনি এমন করেছিলেন। (দ্র.হাফেজ আবূবিশর আদ দূলাবী র. রচিত ‘আল কুনা ওয়াল আসমা’, ১ম খ, ১৯৭ পৃ., নং ১০৯০) সনদটি যঈফ।
ঘ. হযরত ওয়াইল রা. কূফায় বসবাস করতেন। কূফার সাধারণ আমল ছিল আমীন আস্তে বলা। ওয়াইল রা., তাঁর দুই ছেলে আলকামা ও আব্দুল জব্বার এবং অন্যান্য শাগরেদদের কেউ জোরে আমীন বললে তা অবশ্যই বর্ণিত হতো। কিন্তু এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না । এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি নিজেও মনে করতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যেই জোরে আমীন বলেছিলেন।
ঙ. হযরত ওয়াইল রা. উক্ত হাদীসটি সুফিয়ান ছাওরীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি নিজেও নিঃশব্দে আমীন বলতেন। (দ্র. আল মুহাল্লা, ২/২৯৫) এতে প্রতীয়মান হয় যে, তিনিও উক্ত হাদীসকে শিক্ষা দানের অর্থে গ্রহণ করেছেন।
মুহাম্মদ ইবনে নাসর আল মারওয়াযী (মৃত্যু ২৯৪ হি.) তার ইখতিলাফুল উলামা গ্রন্থে লিখেছেন, قال سفيان : آمين يخفيه সুফিয়ান বলেছেন, আমীন নিঃশব্দে বলবে। (নং ৫)
ইবনুল মুনযির (মৃত্যু ৩১৯ হি.) আল আওসাত গ্রন্থে বলেছেন :
وقال سفيان الثورى : فاذا فرغت من قراءة فاتحة الكتاب فقل آمين تخفيها.
অর্থাৎ সুফিয়ান ছাওরী র. বলেন, তুমি যখন সূরা ফাতেহা সমাপ্ত করবে তখন নিঃশব্দে আমীন বলবে। (দ্র. ৩/২৯৫