বিতর সালাত: পরিশিষ্ট (প্রথম অংশ)
মুযাফফর বিন মুহসিন তার ‘জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর ছালাত’ বইয়ে বিতর নামায সম্পর্কেও অনেক জালিয়তি ও ভুল তথ্য পেশ করেছেন। তিনি চেষ্টা করেছেন একথা প্রমাণ করার যে, বিতর ছালাত এক রাকাত অথবা তিন রাকাত হলে দুই সালামে কিংবা দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক ব্যতিত এক সালামে। এখানে সে সম্পর্কে কিছু পর্যালোচনা তুলে ধরা হল। সামনের আলোচনায় ‘গ্রন্থকার’ বলে সাধারণত মুযাফফর বিন মুহসিনকেই বুঝানো হয়েছে।
পর্যালোচনা: বিতর ছালাত অধ্যায়
গ্রন্থকার – ১
গ্রন্থকার বলেন: “একাদশ অধ্যায় বিতর ছালাত: … কিন্তু এক রাক‘আত বলে কোন ছালাতই নেই এ কথাই সমাজে বেশি প্রচলিত। উক্ত মর্মে কিছু উদ্ভট বর্ণনাও উল্লেখ করা হয়:” (পৃ.৩২৫)
পর্যালোচনা
(ক) এক রাকাত বলে কোন নামায নেই
ইমাম ইবনুছ ছালাহ (র.) বলেন, নবীজী থেকে কেবলই এক রাকাত বিতর পড়ার কথা প্রমাণিত নয়। [আত-তালখীছুল হাবীর ২/৩৯]
(খ) গ্রন্থকার বলেন: “উক্ত মর্মে কিছু উদ্ভট বর্ণনাও উল্লেখ করা হয়”: অতঃপর গ্রন্থকার একটি মারফু ও একটি মওকুফ বর্ণনা উল্লেখ করে দুটোকেই যঈফ বলার চেষ্টা করেছেন! অভিধানে ‘উদ্ভট’ শব্দের অর্থ: আজগুবি কোন কথা যার কোনই বাস্তবতা নেই। গ্রন্থকারের উল্লিখিত দুটি বর্ণনাকে কোন মুহাদ্দিস জাল, ভিত্তিহীন বা উদ্ভট বলেছেন এমন কোন উদ্ধৃতি তিনি দিতে পারেননি। তিনি নিজেও সাহস করে বর্ণনা দুটির সাথে জাল বা উদ্ভট শব্দ যোগ করতে পারেননি। বরং তিনি শুধু ‘যঈফ’ বলেছেন। তবে কেন ‘কিছু উদ্ভট’ না বলে ‘কিছু যঈফ’ বর্ণনা বলা হল না?
আর যদি ‘যঈফ’কেই তিনি ‘উদ্ভট’ বলে থাকেন তাহলে তা চরম অন্যায়। কারণ, হাদীস শাস্ত্রের পরিভাষায় ‘যঈফ’ (দুর্বল) ও ‘মউজু’ (জাল) দুটি ভিন্ন পরিভাষা। দুটোর ভিন্ন ভিন্ন বিধান রয়েছে। দুটোকে একাকার করে ফেলা একটি পরিভাষাকে নষ্ট ও বিকৃত করে ফেলা ছাড়া আর কিছুই নয়।
গ্রন্থকার – ২ (প্রথম বর্ণনা)
গ্রন্থকার ‘উদ্ভট’ বর্ণনার দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে প্রথমে উল্লেখ করেন: “(ক) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (ছা.) এক রাক‘আত বিতর পড়তে নিষেধ করেছেন। তাই কোন ব্যক্তি যেন এক রাক‘আত ছালাত আদায় করে বিজোড় না করে” (পৃ.৩২৫)
পর্যালোচনা : ভুল তরজমা
এখানে তিনি হাদীসের ভুল তরজমা করেছেন। সঠিক তরজমা হল: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘বুতাইরা’ থেকে নিষেধ করেছেন: (বুতাইরা হল) যে, ব্যক্তি শুধু এক রাকাত পড়বে বিতর হিসেবে’। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যেন এক রাকাত বিতর না পড়ে। আর গ্রন্থকারের তরজমায় এসেছে: ‘কোন ব্যক্তি যেন এক রাক‘আত ছালাত আদায় করে বিজোড় না করে’। এর অর্থ দাড়ায় ইবনে মাসউদ রা. বলতে চাচ্ছেন দুই রাকাত ছালাত আদায় করে জোড় করে নিলেই হয়!
হাদীসের আরবী পাঠটি :
(أن النبي صلى الله عليه و سلم نهى عن البتيراء أن يصلي الرجل واحدة يوتر بها)
গ্রন্থকার – ৩
গ্রন্থকার আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত উপর্যুক্ত হাদীসটির মান নিয়ে আলোচনা করে বলেন:
১. “আব্দুল হক বলেন: উক্ত বর্ণনার সনদে উসমান বিন মুহাম্মদ বিন রবীআ রয়েছে”
পর্যালোচনা :
বর্ণনাকারী সম্পর্কে আব্দুল হক ইশবীলীর আপত্তি গ্রন্থকার টীকায় আরবীতে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: ‘তার হাদীসে ভুলের সংখ্যাই বেশি’।
অন্যদিকে ‘আল মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন’ গ্রন্থে (হা.২৩৪৫) উক্ত উসমান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে রাবীআর একটি প্রসিদ্ধ বর্ণনা (لا ضرر ولا ضرار) উল্লেখপূর্বক হাকিম আবু আব্দিল্লাহ বলেন: হাদীসটি মুসলিম শরীফের শর্তানুযায়ী সহীহ। ইমাম যাহাবীও তার সমর্থন করে বলেন: এটি মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। উসমান ইবনে মুহাম্মদ এর হাদীসকে হাকিম ও যাহাবী সহীহ সাব্যস্ত করেছেন। তাই উসমান সম্পর্কে আব্দুল হকের সিদ্ধান্তই একক সিদ্ধান্ত নয়। সুতরাং হাকেম ও যাহাবীর বক্তব্যের আলোকে আলোচ্য বর্ণনাটি সহীহ।
আব্দুল হক ইশবীলীর মন্তব্যকে যদি সঠিক ধরেও নেয়া হয়। আর এ কারণে এ হাদীসকে যঈফ বলা হয়: তবু এর পক্ষে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে শক্তিশালী সহীহ ‘মওকুফ’ বর্ণনা রয়েছে যার বিবরণ সামনে আসছে। আর এ বিষয়ক মওকুফ বর্ণনাও সাধারণ নিয়মে ‘মারফু হুকমী’ তথা পরোক্ষ মরফু এর অন্তর্ভুক্ত, যা শাস্ত্রীয় জ্ঞান সম্পন্ন সকলেরই জানা।
গ্রন্থকার – ৪
এ হাদীস সম্পর্কে গ্রন্থকার আরো বলেন: “ইমাম নববী বলেন এক রাকাত বিতর নিষেধ মর্মে মুহাম্মদ ইবনে কা‘ব -এর হাদীছ মুরসাল ও যঈফ” (পৃ.৩২৫)
পর্যালোচনা
(ক) এক হাদীস বিষয়ক আপত্তি অন্য হাদীসে জুড়ে দেয়া
ইমাম নববীর এ বক্তব্যটি আবু সাঈদ খুদরী (রা) এর বর্ণনার বিষয়ে নয়। বরং বরাত হিসেবে উল্লিখিত কিতাব ‘খুলাছাতুল আহকামে’ (হা.১৮৮৮) ইমাম নববী আবু সাঈদ রা. বর্ণনা উল্লেখও করেননি। এবং এ বিষয়ে কোন মন্তব্যও করেননি। তিনি যা বলেছেন: তা মুহাম্মদ ইবনে কা‘ব (তাবেঈ) থেকে ভিন্ন সনদে বর্ণিত স্বতন্ত্র আরেকটি মুরসাল বর্ণনা সম্পর্কে! যা হানাফীদের কেউ দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন বলে আমার জানা নেই।
আশ্চর্য! গ্রন্থকার এক হাদীসের তাহকীকের নামে অন্য হাদীস সম্পর্কিত বক্তব্য উল্লেখ করে দিলেন!
(খ) নববী (রহ) কৃর্তৃক উদ্ধৃত বর্ণনাটি আবু সাঈদ (রা) এর বর্ণনার সমর্থক
উদ্ধৃত মুহাম্মদ ইবনে কা‘ব আল কুরাজী এর মুরসাল বর্ণানাটি কোন কিতাবে সনদসহ আছে তা নববী (রহ.)ও উল্লেখ করেননি। এবং তাকে কেন যঈফ বলেছেন: তার কারণও তিনি বলেননি। এতে কোন বর্ণনাকারী আছেন যার কারণে তাকে যঈফ বলতে হয় তাও তিনি চিহ্নিত করেননি। আবার তিনিই এ বর্ণনাটি তাঁর ‘আল-মাজমূ’ কিতাবে (৪/২২) উল্লেখ করেছেন। সেখানে এর পরবর্তী হাদীস বিষয়ে মন্তব্য করলেও এ হাদীস সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেননি।
আর যদি এটি যঈফও হয়ে থাকে তবুও এটি পূর্ববর্তী আবু সাঈদ খুদরী (রা) এর বর্ণনার সমর্থক। এতে আবু সাঈদ (রা) এর পূর্বোল্লিখিত বর্ণনাটি আরো শক্তিশালী হয়।
রয়ে গেল বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ হওয়ার বিষয়। তো এটি পরিত্যাগযোগ্য মুরসাল নয়। কারণ মুহাম্মদ ইবনে কা‘ব সরাসরী সাহাবী বা প্রথম স্তরের প্রবীণ তাবেঈ। ইমাম তিরমিযী রহ. কুতায়বা সূত্রে উল্লেখ করেছেন: মুহাম্মদ ইবনে কাব রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিবদ্দশায়ই জন্ম গ্রহণ করেছেন। [সুনানে তিরমিযী হা.২৯১০] এজন্য অনেকেই তাঁকে সাহাবীদেরও দলভুক্ত করেছেন। বরং ইবনুস সাকানের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি নবীজীকে পেয়েছেন এবং একটি হাদীসও শুনেছেন। [দেখুন আল-ইসতী‘আব, ২৩৪২] আর সাহাবীদের মুরসাল বর্ণনা সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য। তাবেঈদের মুরসালও অনেক ইমাম ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণের নিকট শর্তসাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য। ইমাম আবু হানীফা ও তাঁর অসংখ্য অনুসারী ইমাম ও ফকীহ, ইমাম মালেক ও তাঁর অসংখ্য অনুসারী মুহাদ্দিস ও ফকীহ এবং ইমাম শাফেঈ ও তাঁর অনুসারী অসংখ্য মুহাদ্দিসও শর্ত সাপেক্ষে মুরসালকে গ্রহণ করেন। (আত-তামহীদ :এর ভূমিকা ১/৫-৬) স্বয়ং নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেবও মুরসালকে দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (দেখুন: ইরওয়াউল গালীল ২/৭১)
গ্রন্থকার – ৫ (দ্বিতীয় বর্ণনা)
গ্রন্থকার ‘উদ্ভট’ বর্ণনার আলোচনায় উল্লেখ করেন:
عن حصين قال : بلغ ابن مسعود أن سعدا يوتر بركعة قال : ما أجزأت ركعة قط
(খ) হুছাইন (রাঃ) বলেন, ইবনু মাসউদ (রাঃ) -এর কাছে যখন এই কথা পৌছল যে, সা‘দ এক রাকআত বিতর পড়েন। তখন তিনি বললেন, আমি এক রাকআত ছালাতকে কখনো যথেষ্ট মনে করিনি। অন্যত্র সরাসরি তার পক্ষ থেকে বর্ণনা এসেছে :(عن ابن مسعود ما أجزأت ركعة قط) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি কখনো এক রাক‘আত ছালাত যথেষ্ট মনে করি না”। ( ) (পৃ.৩২৫-৩২৬)
পর্যালোচনা
(ক) হাদীসের তরজমায় সুস্পষ্ট ভুল
গ্রন্থকার (أجْزَأَتْ) শব্দের অর্থ করেছেন: ‘যথেষ্ট মনে করিনি/করিনা’ এটি ভুল। এর সঠিক অর্থ হল: ‘যথেষ্ট হয় না বা হবে না’। আসলে গ্রন্থকার শব্দটিকে পড়েছেন:(أَجْزَأْتُ) ‘আজ্যা‘তু’ যা এখানে সঠিক নয়। বিশুদ্ধ হল:(أَجْزَأَتْ) ‘আজ্যা‘আত্’। আর এ ভুলের কারণেই তিনি পরবর্তী শব্দটিকে (رَكْعَةً) ‘রাক্‘আতান্’ : তা-এ যবর দিয়ে পড়ে আরেকটি ভুলের শিকার হয়েছেন। অথচ এখানে হবে (رَكْعَةٌ)‘রাক‘আতুন্’ :তা-এ পেশ।
ব্যাকরণের পরিভাষায় (رَكْعَةٌ) ‘রাক‘আতুন’ শব্দটি(أَجْزَأَتْ) ‘আজ্যা‘আত্’ এর কর্তা। কিন্তু এখানে গ্রন্থকার কর্তা ধরেছেন ইবনে মাসউদকে। অথচ আরবী ভাষা এর সমর্থন করে না। কেননা (أَجْزَأْتُ) ‘আজ্যা‘তু’ শব্দটি নির্গত হয়েছে : (إِجْزَاء) ‘ইজ্যা’ (মূলে: ج، ز، ي জা-যা-ইয়া) থেকে। আর শব্দটি (لازم) অকর্মক ক্রিয়া (ওহ ঃৎধহংরঃরাব) এর অর্থ হওয়া বুঝায়। একে (متعدي)সকর্মক ক্রিয়া (ঞৎধহংরঃরাব) করতে হলে পরবর্তী শব্দে (باء) ‘বা’ বর্ণটি যোগ করতে হয়। এখানে শব্দটি(باء) ‘বা’ ব্যতীতই ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এর দ্বারা ‘যথেষ্ট মনে করা’ অর্থ নেয়া সুস্পষ্ট ভুল।
আরো আশ্চর্যের বিষয় হল, গ্রন্থকার এ হাদীসের তাহক্বীকের বরাত দিয়েছেন: (টীকা নং ১২৫৮) তাহক্বীক মুওয়াত্তা মুহাম্মদ। অর্থাৎ ড. তকীউদ্দীন নদবীর তাহক্বীক যার গ্রন্থকারের টীকা (নং ১২৫২) থেকে স্পষ্ট। আর তকীউদ্দীন নদবী তার কিতাবে (২/১৭-১৮) হাদীসটিতে হরকত দেওয়া রয়েছে এভাবে (أجزأتْ) ‘আজ্যা‘আত্’ ও(ركعةٌ) ‘রাক‘আতুন’। গ্রন্থকারের বরাত দেওয়া থেকে বুঝা যায় এ কিতাবটিও তার কাছে ছিল। কিন্তু তার পরও কেন এত বড় ভুল এর রহস্য আল্লাহ তাআলাই ভার জানেন।
গ্রন্থকার – ৬
গ্রন্থকার বর্ণনাদুটি উল্লেখপূর্বক লেখেন: “তাহক্বীক: ইমাম নববী উক্ত আছার উল্লেখ করার পর বলেন: এটি যঈফ ও মাউকুফ। ইবনু মাসউদের সাথে হুছাইনের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। ইবনু হাজার আসক্বালানীও তাই বলেছেন।” (পৃ.৩২৬)
পর্যালোচনা
(ক) গ্রন্থকারের তাহক্বীক!
গ্রন্থকার ইমাম নববীর বক্তব্যের কোন বরাত উল্লেখ করেননি। আমি ইমাম নববীর এবক্তব্যটি পেয়েছি: তার ‘খুলাছাতুল আহকাম’ গ্রন্থে (হা. ১৮৮৯)। কিন্তু এতে তিনি উক্ত বর্ণনাকে যঈফ বলার কোন কারণ উল্লেখ করেননি। আর এটাকেই গ্রন্থকার ‘তাহক্বীকের’ নামে চোখ বুজে মেনে নিয়েছেন।
(খ) বর্ণনাটি কি যঈফ?
বর্ণনাটি পেয়েছি: ‘আল মু‘জামুল কাবীর: তাবারানী (হা.৯৪২২), মুআত্তা মালেক: ইমাম মুহাম্মদের বর্ণনা (হা.২৬৪) কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনা (১/১৯৭) এ তিনটি কিতাবে।
তিন কিতাবে বর্ণিত বর্ণনাটির সকল বর্ণনাকারীই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। তাই একে যঈফ বলার সুযোগ নেই (দেখুন: তাবারানীর সনদ: ১. আলী ইবনে আব্দিল আযীয (সিয়ার) ২. আবূ নুআইম ফাযল ইবনে দুকাইন (তাহ্যীব) ৩.ক্বাসেম ইবনে মা‘ন (সিয়ার) ৪.হুছাইন ইবনে আব্দির রহমান (তাহ্যীব)। মুয়াত্তা ও কিতাবুল হুজ্জার সনদ: ১.আবু ইউসূফ ২.হুছাইন ইবনে আব্দুর রহমান ৩.ইবরাহীম আন নাখাঈ। নূরুদ্দীন হাইসামী তাবারানীর বরাত দেওয়ার পর বলেন: এর সনদ হাসান। (মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৪২ হা.৩৪৫৭)
অতঃপর গ্রন্থকার বলেছেন: “এটি মওকুফ”। তাতো বটেই। কিন্তু এটি মওকুফ তথা সাহাবীর কথা হলেও: এ অধ্যায়ে ‘মারফুয়ে হুকমী’ তথা পরোক্ষ মারফূ। (নছবুর রায়া: বরাতে মুয়াত্তা মুহাম্মদের টীকা: তাকী উদ্দীন নদবী ২/২২) আবার গ্রন্থকার নিজেও তার গ্রন্থের বিতর অধ্যায়েই (পৃ.৩৩২ ও ৩৩৩) একটি মওকুফ বর্ণনা ও দুটি তাবেঈর আমল দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন!
(গ) রয়ে গেল গ্রন্থকারের কথা :“ইবনু মাসউদের সাথে হুছাইনের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি”
গ্রন্থকার এর দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন: বর্ণনাকারী হুছাইন হযরত ইবনে মাসউদকে পাননি। তাই এটি সূত্রবিচ্ছিন্ন। নুরুদ্দীন হাইসামী তাঁর মাজমাউয যাওয়াইদ (২/২৪২) গ্রন্থে কেবল তাবারানীর বর্ণনা সম্পর্কেই এ সূত্র বিচ্ছিন্নতার আপত্তি করেছেন।
কিন্তু মুয়াত্তা ও কিতাবুল হুজ্জার বর্ণনায় রয়েছে হুছাইন বর্ণনাটি ইবরাহীম নাখাঈ থেকে শুনেছেন। সুতরাং হুছাইন ইবনে মাসউদের সাক্ষাৎ পাওয়ার কোন প্রয়োজনই নেই। এমনকি ‘নছবুর-রায়া’ ও ‘আদ্-দিরায়া’ গ্রন্থে উদ্ধৃত তাবারানীর বর্ণনাতেও রয়েছে: হুছাইন বর্ণনা করেছেন ইবরাহীম থেকে ।
কারো প্রশ্ন হতে পারে, নুরুদ্দীন হাইসামীও এ কথা বলেছেন? তাহলে বলবো তিনি শুধু তাবারানীর বর্ণনা সম্পর্কে বলেছেন। হয়ত তাঁর কাছে সংরক্ষিত তাবারানীর কপিতে এমনই ছিল। কিন্তু ইমাম যাইলাঈ হাইসামীল আগের এবং ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর পরের। তাদের দুজনের কপিতে ছিল এর ব্যতিক্রম। তাছাড়া হাইসামী সকল বর্ণনাকে অনির্দিষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেননি। এবং সাথে সাথে তিনি বলেছেন: ‘এর সনদ হাসান’। গ্রন্থকার যদি হাইসামীল বক্তব্যই উদ্ধৃত করে থাকেন: তাহলে ‘এর সনদ হাসান’ :এ কথাটি বাদ দিলেন কোন উদ্দেশ্যে?
আর ইবরাহীম নাখাঈ (রহ.) হযরত ইবনে মাসউদ থেকে সরাসরি হাদীস না শুনলেও মুহাদ্দিসগণের নিকট স্বীকৃত যে, ইবনে মসউদ থেকে তাঁর সকল বর্ণনা মুরসাল হলেও গ্রহণযোগ্য ও প্রামাণ্য। ইবরাহীম নাখাঈ (রহ.) বলেন: ‘ইবনে মাসউদ থেকে যখন কোন বর্ণনা এক ব্যক্তি সূত্রে শুনি তখন তার নাম উল্লেখ করি। আর যখন একাধিক ব্যক্তি থেকে শুনি তখন তাদের নাম বাদ দিয়ে সরাসরি ইবনে মাসউদ থেকেই বর্ণনা করি’।
[দেখুন সুনানে দারা কুতনী: ৪/২২৬ হা.২৯৩৬ কিতাবুল ইলাল- তিরমিযী]
তদুপরি কিতাবুল হুজ্জাহ এর পরবর্তী বর্ণনাটিতেই ইবরাহীম নাখাঈ হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে এ কথাটিই ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন: আলকামার সূত্রে। সুতরাং বুঝা যায় পূর্বের বর্ণনাটিও ইবরাহীম আলকামাসহ অন্যদের সূত্রেই শুনেছেন। আর আলকামা হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) এর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য শিষ্য। সুতরাং বাহ্যিকভাবেও বর্ণনাটি সূত্রবিচ্ছিন্ন রইল না। [দেখুন, মাহদী হাসান শাহজাহানপুরীর বক্তব্য: কিতাবুল হুজ্জার টীকা ১/১৯৭-১৯৮]
গ্রন্থকার বলেছেন: “ইবনু হাজার আসক্বালানীও তাই বলেছেন।” কিন্তু এর কোন বরাত তিনি উল্লেখ কনেনি। আবার ‘তাই’ বলতে গ্রন্থকার কি ‘যঈফ ও মওকুফ’ বুঝিয়েছেন, না ‘ইবনে মাসউদ (রা.) এর সাথে হুছাইন এর সাক্ষাত হয়নি’ সেকথা বুঝিয়েছেন তাও পরিস্কার করেননি। যাই হোক : ‘আদ-দিরায়া’ (১/১৯২) গ্রন্থে ইবনে হাজার (রহ.) বর্ণনাটি তাবারানী ও মুয়াত্তাসূত্রে উল্লেখ করে তাতে কোন মন্তব্যই করেননি। তাই আমি যথেষ্ট সন্দিহান ইবনে হাজার এ ধরণের কোন একটি মন্তব্য এ বর্ণনার উপর করবেন! তাছাড়া এতে ইবনে হাজার ‘তাবারানীর’ বর্ণনায়ও ‘হুছাইন ইবরাহীম থেকে’ বলেছেন। সুতারাং হুছাইনের সাক্ষাত বিষয়ে তিনি কোন আপত্তি করতেই পারেন না।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর এ জাতীয় একাধিক বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত বলেই ইবনু আব্দিল বার মালেকী (মৃত.৪৬৩) বলেন: (وكره ابن مسعود الوتر بركعة ليس قبلها شيء وسماها البتيراء.) ইবনে মাসউদ পূর্বে কোন নামায ব্যতিত এক রাকাতে বিতরকে অপসন্দ করেছেন এবং একে ‘বুতাইরা’ নাম দিয়েছেন। [আল ইসতিযকার ৫/২৮৫]
(ঘ) একটি ধোঁকা
বরং আমার মনে হয় “(ইবনে মাসউদের সাথে হুছাইনের কোন সাক্ষাতই হয়নি। ইবনু হাজার আসক্বালানীও তাই বলেছেন।” এ কথাটি গ্রন্থকারের একটি ধোঁকা মাত্র। কারণ তিনি এর বরাত দিয়েছেন (টীকা-১২৫৮) তাহক্বীক মুওয়াত্তা মুহাম্মদ ২/২২। এর দ্বারা তিনি ড. তকীউদ্দীন নদবীর তাহক্বীককৃত মুওয়াত্তার নসখাটিই বুঝিয়েছেন যার বরাত তিনি পূর্ববর্তী টীকা নং ১২৫২ এ উল্লেখ করেছেন। প্রথমত এখানে তিনি (১) পৃষ্ঠা নম্বর দিয়েছেন ২/২২। এটি মূলত আল-মাকতাবাতুশ শামেলার পৃষ্ঠা। মূল কিতাবে রয়েছে ২/১৭-১৮ পৃষ্ঠায়। (২) মুওয়াত্তার বর্ণনাটি হুছাইন হযরত ইবনে মাসউদ থেকে নয় বরং ইবরাহীম নাখাঈ থেকে নিয়েছেন। তাই ইবনে মাসউদের সাথে হুছাইনের সাক্ষাতের কোন প্রয়োজনই নেই। (৩) উল্লিখিত বরাতে ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এর এরূপ কোন বক্তব্যই নেই। সুতরাং ইবনে হাজারের উদ্ধৃতি ও টীকার বরাত সবই একটি ধোঁকামাত্র।
গ্রন্থকার – ৭
গ্রন্থকার “এক রাক‘আত বিতর পড়ার ছহীহ হাদীছ সমূহ:” শিরোনামে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে চারটি এবং আবু আইয়্যুব আনছারী ও ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে একটি করে মোট ছ’টি হাদীস উল্লেখ করেছেন। আমি এ বিষয়ে সংক্ষেপে কিছু মৌলিক কথা আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
গ্রন্থকার এখানে শব্দ ব্যবহার করেছেন: ‘হাদীছ সমূহ’। অথচ তার উদ্ধৃত ইবনে উমর (রা) এর চারটি বর্ণনা মূলত একই হাদীস যা গ্রন্থকারও ভালরকম জানেন বলেই মনে হল। অথবা বলা যেতে পারে এখানে দুটি বর্ণনা। আর পঞ্চম ও ষষ্ট বর্ণনা দুটি এক রাকাতের কোন দলিল হয় না।
সুতরাং ছটি বর্ণনার সবকটি মিলে হাদীস একটিই- হযরত উবনে উমর (রা.) থেকে। একেই তিনি, ‘হাদীছ সমূহ’ বলে ব্যক্ত করেছেন।
পর্যালোচনা
ইবনে উমর (রা.) এর বর্ণনার কি উদ্দেশ্য
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বিতর বিষয়ক বর্ণনাটি: হযরত নাফে, আবু সালামা, আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার, আব্দুল্লাহ ইবনে শাক্বীক, সালেম ইবনু আব্দিল্লাহ, হুমাইদ ইবনে আব্দির রাহমান, আলী ইবনে আব্দিল্লাহ আল বারিকী, কাসেম ইবনে মুহাম্মদ, উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্দিল্লাহ, আবু মিজলায, আতিয়্যা ইবনে সা‘দ, মুহাম্মদ ইবনে আব্দির রাহমান, উকবা ইবনে হুরাইস, তাউস, আনাস ইবনে সীরীন প্রমুখ (১৫ জন) তাবেয়ীগণ বর্ণনা করেছেন। (দেখুন: আলমুসনাদুল জামে’ হা.৭৪১৪-৭৪২৯ ১০/১৯৫-২০৮ কাশফুসসিত্র:আন সালাতিল বিতর:কাশমিরী পৃ.২৬)
আনাস ইবনে সীরীন ব্যতীত অবশিষ্ট চৌদ্দজনের বর্ণনা মূলত একই ঘটনার বিবরণ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জনৈক ব্যক্তি রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি মিম্বরে থেকেই এর জবাবে হাদীসটি ইরশাদ করেন। সুতরাং হাদীসটি ‘কওলী’ তথা নবীজীর বক্তব্য। সবগুলোই মূলত একই হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনা। শুধু আনাস ইবনে সীরীনের বর্ণনায় এসেছে: ইবনে উমর (রা) বলেন: নবীজী এভাবে নামায পড়তেন :যা গ্রন্থকার প্রথম নম্বরে উল্লেখ করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় হাদীসটি ‘ফে‘লী’ তথা কর্মবিষয়ক বিবরণ। এবং এটি ভিন্ন হাদীস। সুতরাং এতে বুঝা যায় ইবনে উমর থেকে এ বিষয়ের হাদীস দুটি।
ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত:
ويوتر بركعة/ والوتر ركعة من آخر الليل/ فإذا خشي الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلى/ والوتر ركعة واحدة)
এ জাতীয় শব্দগুলো মূলত একটি বর্ণনার বিভিন্ন শব্দ। তাই মুসনাদে বায্যার সংকলক বলেন: (وَهَذَا الْحَدِيثُ قَدْ رُوِيَ عَنِ ابْنِ عُمَرَ مِنْ وُجُوهٍ بِأَلْفَاظٍ مُخْتَلِفَةٍ، وَالْمَعْنَى وَاحِدٌ أَوْ قَرِيبٌ) :এ হাদীসটি ইবনে উমর রা. থেকে বিভিন্ন সূত্রে ও বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে, তবে সবগুলি বর্ণনার অর্থ একই বা কাছাকাছি। (দেখুন, আল-বাহরুয যাখ্খার হা.৬১৫৪)।
আর এ জাতীয় শব্দ থেকে এক রাকাত বিতর এর পক্ষে স্পষ্ট দলিল হয় না। কেননা এর একটি শব্দে আছে:(ويوتر بركعة) যার অর্থ যেমন হতে পারে: ‘এক রাকাত বিতর পড়তেন’ তেমনি এও হতে পারে: ‘এক রাকাতের মাধ্যমে বিতর করতেন’ অর্থাৎ পূর্বের দুই রাকাতের সাথে এক রাকাত যোগ করে বিতর (বেজোড় তথা তিন) করে নিতেন। অন্য শব্দে আছে: (صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلى) :এক রাকাত পড়ে নিবে যা পূর্বের সব নামাযকে বিতর বানিয়ে দেবে। অর্থাৎ বিতর এক রাকাত নয় বরং এই এক রাকাত পূর্বের নামাযকেও বিতর বানিয়ে দেবে। তাই ইবনে উমর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত মৌখিক বর্ণনা থেকে এক রাকাত বিতর পড়ার স্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং এতে বিতর তিন রাকাত দুই সালামে বা তিন রাকাত এক সালাম ও দুই বৈঠকে হওয়ারও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা:
(ক) ইবনে উমর (রা) থেকে একাধিক সূত্রে এসেছে:(صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلى) :“এক রাকাত পড়ে নেবে যা পূর্বের আদায়কৃত নামাযকে বিতর বানিয়ে দেবে”। অর্থাৎ বিতর এক রাকাত নয় বরং পূর্বের নামাযও বিতর হয়ে গেল। দেখুন: গ্রন্থকারের উদ্ধৃত বর্ণনা (পৃ.৩২৭)
(খ) ইবনে উমর (রা.) যখন বিতর পড়তেন তখন তিন রাকাত বিতর পড়তেন। তবে দুই সালামে। যার বিবরণ গ্রন্থকার (পৃ.৩৩৩) দিয়েছেন এভবে: “জ্ঞাতব্য: তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে দুই রাক‘আত পড়ে সালাম ফিরিয়ে পুনরায় এক রাক‘আত পড়া যায়। তিন রাক‘আত বিতর পড়ার এটিও একটি উত্তম পদ্ধতি। (টীকায়:বুখারী হাদীস/৯৯১ ইরওয়াউল গালীল ২/১৪৮” বর্ণনাটি হল:
]رواه مالك (১/১২৫/২০) عن نافع: أن عبد الله بن عمر كان يسلم بين الركعتين والركعة فى الوتر حتى يأمر ببعض حاجته
সুতরাং ইবনে উমর (রা.) নিজেই বর্ণনা থেকে বুঝেছেন: বিতর তিন রাকাত। সাহাবী বর্ণিত অস্পষ্ট হাদীসের জন্য সাহাবীর নিজস্ব আমলই উৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা। তাই ইবনে উমরের আমলই বলে দেয়: এ হাদীসে বর্ণিত বিতর নামায তিন রাকাত।
(গ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে: (صلاة المغرب وتر النهار) (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হা. ৬৭৭৩) গ্রন্থকারের মতাদর্শী আলেম আব্দুল্লাহ আল-কাফি স্বরচিত ‘বিতর ছালাতে’ এ বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন। এবং তিনি বলেছেন: “এখানে রাকাতের সংখ্যার দিক থেকে বিতরকে মাগরিবের মত বলা হয়েছে।” (পৃ.৩২-৩৩) এ হাদীসে মূলণীতিরূপে ইবনে উমর বলেছেন: মাগরিব হল দিনের বিতর। সুতরাং রাতের বিতরকেও মাগরিবের অনুরূপ করে পড়। আলোচ্য হাদীসের বর্ণনাকারী ইবনে উমর (রা) এ বক্তব্যই প্রমাণ করে তিনি মনে করতেন বিতর নামায তিন রাকাত। আর তাই এখানে আলোচ্য হাদীসের সঠিক ব্যখ্যার ইঙ্গিত বহন করে।
(ঘ) ইমাম শা‘বী সূত্রে একটি সহীহ বর্ণনায় ইবনে আব্বাস এর মত ইবনে উমর (রা)ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামাযের বিস্তারিত বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন: ‘তিনি তিন রাকাতে পড়তেন’। [ সুনানে ইবনে মাজা হা. ১৩৬১, আরো দ্রষ্টব্য বিতির নামায তিন রাকাত অধ্যায়]
(ঙ) তাবেয়ী আবু-মিজ্লায্ হাদীসটি ইবনে উমর ও ইবনে আব্বাস দুজন থেকেই বর্ণনা করেছেন। যা সহীহ মুসলিমের বরাতে গ্রন্থকার :(والوتر ركعة من آخر الليل)শব্দে উল্লেখ করেছেন [হা.১৭৯৩]। এতে বুঝা যায় মূল বর্ণনাটি ইবনে আব্বাস (রা.)ও শুনেছেন। তথাপি ইবনে আব্বাস রা. বিতর এক সালামে তিন রাকাতই পড়তেন এবং এক রাকাত পড়াকে অপসন্দ করতেন। [আরো দেখুন: সুনানে ইবনে মাজা হা.১২৩১ আল মু‘জামুল কাবীর: তাবারানী হা.১০৯৬৩ আননুকাতুত তারীফা পৃ. ১৮৬ কাশফুস সিতর পৃ. ৩২]
(চ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী: ‘এক রাকাত পড়ে নাও’: বাক্যে এক রাকাত বিতর পড়ার বর্ণনাটি সম্পর্কে বলেন, (এতে এক রাকাত বিতর এর পক্ষে স্পষ্ট দলিল নেই বরং) ‘দুই সালামে তিন রাকাত বিতর পড়া’ (অর্থাৎ দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে আরেক রাকাতযোগে মোট তিন রাকাত বিতর) এর পক্ষে স্পষ্ট দলিল হয় না। হতে পারে এতে উদ্দেশ্য হল: ‘পূর্বের পড়া দুই রাকাতের সাথে মিলিয়ে এক সালামে মোট তিন রাকাত বিতর পড়’। অথচ তিনি শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী একজন বিখ্যাত হাফেজে হাদীস। তাঁর মতে বিতর দুই সালামে তিন রাকাত। তবুও তিনি এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। (টীকা-১)
সম্ভবত এ কারণেই এক রাকাত বিতর নামাযের ইঙ্গিত বহনকারী এ ধরণের হাদীস বর্ণনা করার পরও ইমাম আবু-হানীফাসহ অনেক ইমামের মতই ‘মুয়াত্তা’ সঙ্কলক ইমাম মালেক, ‘মুসনাদ’ সঙ্কলক ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) প্রমুখ এক রাকাত বিতর পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন। (কিতাবুল হুজ্জা আলা আহলিল মদীনা ১/১৯৩ আল-ইশরাফ ২/২৬২ ও আল-আউসাত ৮/১৬০, মাসাইলে আহমদ: ইবনে হানী পৃ. ১/৯৯ ফাতহুল বারী : ইবনে রাজাব ৬/১৯৯, এমনকি ইমাম আহমদ বলেন, বিতর ছুটে গেলে তিন রাকাতই কাযা করবে। ফাতহুল বারী :ইবনে রাজাব ৬/২২৭)
গ্রন্থকার – ৮
গ্রন্থকার পঞ্চম নম্বরে হযরত আবু-আইয়ুব আনছারী (রা.) এর নিম্নোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করেন: “রাসূল (ছাঃ) বলেছেন: … সুতরাং যে পাঁচ রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে। আর যে তিন রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তা পড়ে এবং যে এক রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে”।
বাকী অংশের জন্যে “বিতর সালাত: পরিশিষ্ট-(দ্বিতীয় অংশ)” দেখুন!!