২১ ও ২৩ এর মধ্যে সমন্বয়
তাছাড়া ২১ রাকআতের বর্ণনাটি তো লা-মাযহাবী বন্ধুদের মতানুসারে ২৩ রাকআতের বর্ণনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় না। কারণ তারা বলে থাকেন, বেতের এক রাকআতও পড়া যায়, তিন রাকআতও পড়া যায়। তাহলে মূল তারাবীহ ২০ রাকআতই প্রমাণিত হলো। ফলে হাদীসটি মুযতারিব থাকল না।
মুযতারিব কোনটি?
এখানে একথাও বলা অত্যন্ত যৌক্তিক হবে যে, ২১ রাকআতের বর্ণনাটি দ্বারা হাদীস মুযতারিব হলে ১১ রাকআতের হাদীসটি হবে, ২৩ রাকআতের হাদীসটি নয়। কারণ সাইব রা. এর এই ছাত্র ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফার বর্ণনায় কোন বিভিন্নতা নেই। বরং তার দুই ছাত্র ইবনে আবূ যি’ব ও মুহাম্মদ ইবনে জাফর একবাক্যে ২৩ রাকআতের কথা বর্ণনা করেছেন। পক্ষান্তরে সাইব রা. এর অপর ছাত্র মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফের বর্ণনায় বিভিন্নতা রয়েছে। তার ৬ জন ছাত্র ছয়ভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।
১.ইমাম মালেক । উমর রা. উবাই ইবনে কাব ও তামীম দারী রা.কে নির্দেশ দিলেন, তারা যেন লোকদের নিয়ে ১১ রাকআত পড়েন। (এতে এ কথা বলা নেই যে, নির্দেশটি তামিল করা হয়েছে কি না।)
২.ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তান। উমর রা. উবাই ও তামীম রা.এর নিকট লোকদের একত্রিত করলেন। তারা দুজন ১১ রাকআত পড়তেন। (এতে উমর রা.এর নির্দেশ দেওয়ার কথা নেই।) (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা)
৩.আব্দুল আযীয ইবনে মুহাম্মদ। আমরা উমর রা.এর যুগে ১১ রাকআত পড়তাম। (এতে উমর রা.এর নির্দেশের উল্লেখ নেই। উবাই ও তামীম রা.এরও উল্লেখ নেই) (সুনানে সাঈদ ইবনে মানসুর)
৪.ইবনে ইসহাক। আমরা উমর রা.এর যুগে রমযান মাসে ১৩ রাকআত পড়তাম। (এতেও নির্দেশের উল্লেখ নেই। উবাই ও তামীম রা.এরও উল্লেখ নেই। আবার এতে ১১ এর স্থলে ১৩ এর কথা এসেছে।) (কিয়ামুল লাইল লিইবনি নাসর)
৫.দাউদ ইবনে কায়স। উমর রা. ২১ রাকআতের হুকুম দিয়েছেন। (এতে ১১ এর পরিবর্তে ২১ এর কথা এসেছে।) (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক)
৬.ইসমাইল ইবনে জাফর। তারা উমর রা.এর যুগে ১১ রাকআত পড়তেন। (আহাদীসু ইসমাইল ইবনে জাফর, ৪৪০)
মূলত এ হাদীসটিই মুযতারিব। একই উস্তাদ থেকে ছয়জন ছাত্র ছয়ভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। রাকআত সংখ্যা নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বিমত হয়েছে। কেউ ১১, কেউ ১৩ আবার কেউ ২১ রাকআতের কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং ২১ রাকআতের বর্ণনার কারণে হাদীস মুযতারিব হলে ১১ রাকআতের হাদীসটি হবে, ২৩ রাকআতেরটি নয়।
লা-মাযহাবী বন্ধুদের মতামত
লা মাযহাবী বন্ধুরা ১১ রাকআতের বর্ণনাকে অগ্রগণ্য আখ্যা দিয়ে ২১ রাকআতের বর্ণনাটিকে ভুল আখ্যা দিয়েছেন। মুযাফফর বিন মুহসিন লিখেছেন, এটি মুনকার হিসাবে যঈফ। আব্দুর রাযযাক এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। শায়খ আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলেন, আছারটি তিনি এই শব্দে এককভাবে বর্ণনা করেছেন। অন্য কেউ এভাবে বর্ণনা করেন নি। এর কারণ হল, তিনি শেষ জীবনে অন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্ণনাগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। (আলবানীও অনুরূপ বলেছেন।) এছাড়া এর সম্পূর্ণ সনদ নেই, মাঝে রাবী বাদ পড়ে গেছে। (পৃ. ৩১)
কিন্তু এসব বক্তব্য রিজালশাস্ত্র সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার পরিচায়ক। আব্দুর রাযযাক এ বর্ণনাটি তাঁর মুসান্নাফ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন। মুসান্নাফ রচনার সময় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। সুতরাং শেষ বয়সে তার অন্ধ হয়ে যাওয়া ও বর্ণনাগুলো এলোমেলো হওয়ার কোন প্রভাব মুসান্নাফের হাদীসের উপর পড়বে না। তাই এই খোঁড়া অজুহাতে তার বর্ণনাকে ভুল ও যঈফ আখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই।
মুযাফফর সাহেব শেষে যে কথা বলেছেন যে, এর সম্পূর্ণ সনদ নেই, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। সম্পূর্ণ সনদ রয়েছে। কোন রাবী বাদ পড়ে নি।