আলহামদুলিল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়ানু সাল্লি আ’লা রাসুলিহিল কারীম। আম্মা বা’আদ। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) যে কত বড় বিজ্ঞানী ও যুগশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ছিলেন তা কিছু হাদিস সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। আজকে এ নিয়ে আলোচনা করব তার আগে জেনে নেয়া ভাল যে,
আবিষ্কার দুই ধরনের। যেমনঃ
● এক প্রকার হল (Discover) : যার অস্তিত্ব পূর্বে ছিল কিন্তু মানুষ জানত না। তাকে সর্বপ্রথম খুঁজে বের করে অন্যকে জানানো। উদাহরণঃ ক্রীস্টোফার কলোম্বাস অমেরিকা আবিষ্কার করেন।
● দ্বিতীয় প্রকার হল (Invention) : নিজের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞান থেকে একেবারেই নতুন কিছুর তৈরি করা। উদাহরণঃ থমাস আলভা এডিসন বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করেছিলেন।
আফসোসের বিষয় হল কিছু কিছু আবিষ্কার ছিল এমন যার পিছনে মুসলিম সভ্যতারই সর্বপ্রথম অবদান ছিল কিন্তু অনেক কিছুর কোন নাম নিশানা পর্যন্ত রাখেনি। অবাক হবেন। আপনি জানেন কি নিউটনের তিনটি সূত্রই মুসলিম স্কলারদের (বিজ্ঞানীদের) ভিন্ন ভিন্ন বইয়ের থিওরিতে বিদ্যমান ছিল। বলা যেতে পারে তিন জায়গার সূত্র Modify করে একত্র করা হয়েছে। আমাদের কারো খবর নেই। আমার কাছে তার সোর্সসহ প্রমাণ আছে।
এবার আসা যাক হাদিসের বিষয় ও ব্যাখ্যা নিয়ে।
A) একটি হাদিসেরর ১ম অংশঃ
“তোমরা কোন এলাকায় মহামারীর কথা শুনলে সেই এলাকায় গমন করিও না।”
B) পরের অংশঃ
“আর যখন তোমরা কোথাও থাকাকালে সেখানে মহামারী দেখা দেয়, তবে তোমরা সেই এলাকা হতে বাহির হইও না।”
INVENTED THEORY (আবিষ্কৃত তত্ত্ব) :
১) হাদিস থেকে Isolation পদ্ধতির তত্ত্ব।
২) হাদিস থেকে Incubation period এর তত্ত্ব।
ELABORATION :
এবার ফিরে তাকাই হাদিসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার দিকে।
ISOLATION :
চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ কোন রোগী যদি ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস কিংবা এমন কোন ফাঙ্গাস দ্বারা আক্রান্ত হয় যেটার সংস্পর্শে আসলে অপর কোন সুস্থ মানুষও এর দ্বারা আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। তখন তাদেরকে পৃথক করে রাখার পদ্ধতি হল Isolation.তাদেরকে Isolated করে Hospital এ আলাদা রাখা হয়। যেন রোগ জীবনু সুস্থ মানুষের দিকে ছড়াতে না পারে। এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা কেবল চিকিৎসকরা বুঝবে।
হাদিসের ব্যাখ্যাঃ কিছু নাস্তিক কিংবা ইসলাম বিদ্বেষী কিংবা তথাকথিত পন্ডিতগণ হাদিসটিকে Criticize করতে চাইবে। তারা অভিযোগ আনবে যে,
(প্রশ্ন ১) তাহলে তো সে এলাকার সবাই মরবে? জেনে শুনে সবাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিব? (এর সমাধান জবাব ১.১ & C নং স্টেপে জবাব ১.২ এ দেয়া হয়েছে)
(জবাব ১.১) COVID-19 কেন ১১০টি দেশে?
সুষ্পষ্ট চেয়ে দেখুন চিনের কোন এক অঞ্চলে Corona virus (COVID-19) এর সংক্রমণ হয়েছিল কিন্তু আজ তা বিশ্বের ১১০টি দেশে প্রবল মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আপনে কি একটি অঞ্চলে থাকাটাই শ্রেয় মনে করতেন না? মানবতার নবীও তাই একজনের জন্য যেন হাজার মানুষ ভোগান্তির স্বীকার না হন সেই সচেতনতা তৈরি করেছেন। এই শিক্ষা পদ্ধতি কতটা বাস্তবিক ও বৈজ্ঞানিক বুঝতেই পারছেন। যদি হাদিস অনুযায়ী কেউ মেনে চলত কেবল (COVID-19) হয়ত ঐ অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকত ১১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ত না। এবার বলুন কে বোকামী করছে? আর সত্যিকার বৈজ্ঞানিক ধর্ম কোনটি? আমাদের নবীজী (ﷺ) তাহলে কত বড় বিজ্ঞানী? যিনি উম্মী সম্প্রদায়ের মধ্যে সর্বোচ্চ জ্ঞান নিয়ে এত কঠিন লেভেলের জ্ঞানগুলো সরলভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এত বৈজ্ঞানিক নিদর্শন দেখিয়ে গেছেন? তাও কি ইসলাম বৈজ্ঞানিক ধর্ম নয়? বলা বাহুল্য আমি যদি FCPS করে এসে সেই জ্ঞান ৫ম শ্রেণীতে সেই জ্ঞান প্রকাশ করতে যাই কেউ কি তার মর্ম বুঝবে? আর তৎকালীন আরব ছিল অনেকটাই শিক্ষা-দিক্ষা থেকে অনেক দূরে।
আজকে এসব পদ্ধতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করছেন, স্ব স্ব নামে আবিষ্কারক এর নাম বসিয়ে সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছেন। অথচ এসব গবেষণার মূল তথ্য-সূত্র-উপাদান যিনি আজ থেকে ১৫০০ পূর্বে দিয়ে গেলেন তাঁর নাম কিন্তু কেউ নিচ্ছে না। কারণ আমরা অজ্ঞ জাতি। তিনি মানবতার কল্যাণে রবের পক্ষ থেকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে গেছেন বিনিময়ে কোন নাম ধাম কিংবা প্রতিদান চান নি। তিনি আমাদের প্রিয় নবী সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল (ﷺ)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কতটা বৈজ্ঞানিক ও বাস্তব শিক্ষা দিতেন তার আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছিঃ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে মানবদেহে অসংখ্য গ্রন্থি (Gland) আছে। যেগুলো আমাদের দেহের সুস্থতা ও সার্বিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। আপনে জানেন কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদিসেও এই গ্রন্থি (Gland) এর কথা আছে? একটা হাদিসের মূল শিক্ষাঃ
“মানবদেহের অসংখ্য গ্রন্থি রয়েছে। মানুষের উচিত ইবাদতের মাধ্যমে সেই গ্রন্থি সমুহের সদকাহ আদায় করা।”
সুবহানাল্লাহ! আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) আজ থেকে ১৫০০ বছর পূর্বেই এসব তত্ত্ব অতি সাধারণভাবে জানিয়ে দিয়ে গেছেন। কিন্তু তখন এসব গবেষণা করার মত কেউ ছিল না। পরবর্তীতে শত শত বছর চিকিৎসা-বিজ্ঞানীগণ এসব Discover করেছেন। তার মধ্যে কিছু গ্ল্যান্ডের নাম উল্লেখ করা হল।
কিছু এক্সোক্রাইন গ্ল্যান্ড (exocrine glands) :
✧লালাগ্রন্থি (salivary gland)- মুখে
✧ঘর্মগ্রন্থি (sweat gland)-লোমকূপে
✧স্তনগ্রন্থি (mammary gland)-স্তনে
✧মেদ/তৈলগ্রন্থি (sebaceous gland) – মেদবহুল জায়গায়।
✧অশ্রুগ্রন্থি (lacrimal gland)-চোখের পাতায়।
✧চোখে আরো গ্ল্যান্ড আছেঃ মিবোমিয়ান গ্ল্যান্ড, গ্ল্যান্ড অফ জিস, গ্ল্যান্ড অফ মোল।
✧কিছু এপোক্রাইন (Apocrine Gland) পাওয়া যায় দেহের বিভিন্ন স্থানেঃ eyelids (চোখের পাতায়), areola and nipples (স্তনবৃন্ত ও এর চারপাশের অংশ), nose (নাক), ears (কান)।
কিছু এন্ডোক্রাইন গ্ল্যান্ড (Endocrine Glands) :
✧পিটুইটারী (Anterior & posterior pituitary gland),
✧হাইপুথেলামাস (hypothalamus),
✧পিনিয়াল (pineal gland)
✧থাইরয়েড (thyroid),
✧এড্রেনাল (adrenal glands)
এগুলো শরীরের growth & development (বৃদ্ধি ও বিকাশ), metabolism (পরিপাকক্রিয়া), mood (মানসিক অবস্থা), reproduction (বংশবৃদ্ধি) এসব কাজে অংশগ্রহণ করে। এগুলোর প্রত্যেকটি single গ্ল্যান্ডের আলাদা আলাদা কাজ আছে, গুরুত্ব আছে, রোগ বালাই ও চিকিৎসা আছে। যেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে বড় একটা বই হয়ে যাবে। এই যুগে এসব যেকোন ডাক্তারই জানেন।
তকদীরের উপর বিশ্বাসঃ
এখন যদি কেউ প্রশ্ন করেনঃ
(প্রশ্ন ২) আমরা যখন জানিই যে, এটা ছোঁয়াছে এটা ধরলে আমি আক্রান্ত হব এখানে তকদীরের কি হল?
(জবাব ২) এটাই হল তকদীর যা আপনি করবেন কিংবা যা থেকে বিরত থাকবেন। এক কথায়, আপনার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, যাকিছু হবে কিংবা যাকিছুর পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে তাও আল্লাহ আপনার তকদীরে লিখে রেখেছেন। আমরা জানি যে, দোয়ার দ্বারা তকদীরের পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তন হবে কি হবে না, আদি থেকে অন্ত এসবও তকদীরে লিপিবদ্ধ আছে। যদি ভাবেন যে এটা কিভাবে সম্ভব? তবে জবাব হল সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দ্বারা সব সম্ভব। স্রষ্টার মহিমা বোঝার শক্তি সৃষ্টির দ্বারা কিভাবে সম্ভব? How can that imagine? স্রষ্টার নিদর্শন খুঁজতে সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা করুন।
মনে করুন আপনি একটা গন্তব্যে পৌঁছাবেন। তাতে পৌঁছানোর ১০টি রাস্তা আপনাকে দেখানো হয়েছে। এক এক রাস্তায় আবার অন্য রাস্তার সাথে সংযোগস্থল আছে। পথিমধ্যে সামনে একটি হিংস্র বাঘ (বিপদ) অপেক্ষা করছে। আপনে তার সাথে মোকাবেলা অথবা গন্তব্য পরিবর্তন (চেষ্টা) করবেন অথবা বাঘটি আপনাকে কিছুই করল বরং পিছনে ফিরে গেল কিংবা এমন কোন পথ আছে যা আপনে জানতেন না হঠাৎ করে তা আবিষ্কার করলেন (একে দোয়ার দ্বারা ভাগ্যের পরিবর্তনের উদাহরণ বলা যেতে পারে)। নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ, তিনি মহাজ্ঞানী।
তকদিরের প্রভাবঃ হাদিসে আছে (মূলভাব)
কোন মানুষ ইমান আনার পর আমল/ সৎকাজের দ্বারা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে তার এবং জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত দুরত্ব থাকে। অতঃপর তকদীর দ্বারা প্রভাবিত করে, সে পাপ কাজে লিপ্ত হয়। অতঃপর পাপ করতে করতে এমন স্তরে পৌঁছায় যে তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র এক হাত দুরত্ব থাকে। (বুখারী, মুসলিমের লম্বা হাদিস থেকে মূলভাব আনা হয়েছে)
Incubation Period :
অসুস্থ মহামারী যুক্ত এলাকা থেকে পালানোর নিষেধাজ্ঞার কারণ হল- কিছু রোগের জীবনু যখন শরীরে প্রবেশ করার পর একটা নির্দিষ্ট সময় সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যাকে Medical Science এর পরিভাষায় বলা হয় Incubation period…প্রায় প্রত্যেক রোগেরই কম-বেশ ভিন্ন ভিন্ন Incubation period থাকে।
কোভিড 19 এর ক্ষেত্রে ১৪ দিন। তার মানে এই ভাইরাস দ্বারা কেউ আক্রান্ত হলে ১৪ দিনের পূর্বে তাকে সুস্থই মনে হবে। আরো কিছু রোগের Incubation period উল্লেখ করা হলঃ
✧Dengue (ডেঙ্গু) ৫-৮ দিন,
✧Poliomyelitis (পোলিওমিলাইটিস) ৫-২০ দিন,
✧Smallpox (গুটিবসন্ত) ১২-১৪ দিন,
✧Chickenpox (চিকেনপক্স) ১৩-১৭ দিন,
✧Mumps (ম্যাম্পস) ১৬-২০ দিন,
✧Rubella (রুবেলা) ১৭-২০ দিন,
✧Hepatitis A (হেপাটাইটিস এ) ১৫-৪০ দিন,
✧Hepatitis B & C (হেপাটাইটিস বি এবং সি) ৫০-১৫০ দিন,
✧Papilloma (পেপিলোমা -ওয়ার্টস) ৫০-১৫০ দিন,
✧AIDS (এইডস) ১-১০ বছর।
C) তারপর উক্ত হাদিসের আরেকটি অংশঃ
👉ইবনে জাররাহ (রা.) বলন, আল্লাহ পাক যে (মন্দ) তকদীর লিখে রেখেছেন তা থেকে পলায়ন করে (টিকা ৩)?
উমর (রা.) জবাব দিলেন,
আল্লাহ পাকের তকদীর হতে তারই প্রদত্ত তকদীরের দিকে পলায়ন করছি। কোন তৃণহীন ভূমি থেকে যদি তোমার উটকে তৃণভূমিতে চড়াও সেটাও আল্লাহর প্রদত্ত তকদীর অনুযায়ীই চড়াবে।
(টিকা ৩: কিভাবে পরিত্রান পাওয়া যাবে?)
কত সুন্দর ব্যাখ্যাঃ
(জবাব ১.২) বিপদগ্রস্থ এলাকা থেকে তুমি যদি ভাল কোন এলাকায় আশ্রয় নাও (অর্থাৎ নেয়ার সৌভাগ্য লাভ কর তবে সেটাও আল্লাহই তোমাকে তৌফিক দান করেছেন। তিনি তোমার তকদীরে সেই তৌফিক যদি না রাখত কার সাধ্য আছে তোমাকে বিপদ থেকে আশ্রয় দেয়ার? সুতরাং যাবতীয় করুণার আশ্রয়স্থল আল্লাহ সুবহানু তা’য়ালা।)
D) অতঃপর ছোঁয়াছে রোগ সম্পর্কে যে হাদিস গুলো আছে তার ব্যাখ্যা হাদিসের শরাহগ্রন্থের দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) এর “মা সাবাতা বিস সুন্নাহ” কিতাবেও কুলক্ষণ সম্পর্কিত অনেক হাদিস এসেছে। এর অনেক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তার মধ্যেঃ
i) তৎকালীন মানুষ ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কাফির, মুশরিক থাকাকালে তারা নানান অজ্ঞতার আঁধারে আচ্ছন্ন ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর তারা শরীয়তের জ্ঞান, সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে অনেক কিছুই জানতেন না। ধীরে ধীরে এসব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে শিক্ষা দেন। যারা তখন কুলক্ষণ, কুবিশ্বাস আর কুসংষ্কার দ্বারা আচ্ছন্ন হয়েছিল ইমান আনার পর তাদের অন্তরকে সুন্দর সুশিক্ষা দ্বারা প্রিয় নবী (ﷺ) আলোকিত করেছেন।
ii) তকদীর ও সঠিক আকিদার শিক্ষাঃ তকদীরের প্রতি কেমন আকিদা থাকতে হবে সে সম্পর্কে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণ তাদের কিতাবে অনেক কিছুই লিখে গেছেন। তেমনি তকদীর অমান্যকারী ভ্রান্ত ফির্কার খন্ডনও করে গেছেন। মু‘তাযিলাহ্ সম্প্রদায় বলতঃ সৎ ‘আমল জান্নাতকে ওয়াজিব হয়ে যায়। আর আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ইমামগণগণ বলে থাকেন, “কেউ কখনো তার ‘আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না স্বীয় রবের অনুগ্রহ দ্বারা মুক্তি লাভ করবে। (বুখারী ৬৪৬৩, মুসলিম ২৮১৬ এ বিষয়ে হাদিস আছে)
এবার দেখুন “ছোঁয়াছে বলে কিছু নেই” এসংক্রান্ত হাদিসের এক পর্যায়ে আছেঃ
👉”তাহলে প্রথম উটটিকে আক্রান্ত করল কে?”
এর দ্বারাই বাকি গুলোর শিক্ষা পাওয়া যায়। এখানে সুস্পষ্ট হাদিসের শিক্ষা হলঃ
i) তকদীরের উপর বিশ্বাস রাখার শিক্ষা দেয়া। তকদীরের ভাল মন্দের উপর আল্লাহই একমাত্র ক্ষমতাবান। যেমনঃ তাবিজের ক্ষেত্রে এসেছে কিছু এরকম বর্ণনা থেকে শিক্ষা পাই যে, যদি কেউ এটা ভাবে যে তাবিজ নিজের ক্ষমতায় তাকে সুস্থ করে দিবে তবে সেটা তার জন্য হারাম ও শিরক হবে।তদ্রুপ ওষুধের সেবনের ক্ষেত্রেও একি হুকুম। তাবিজ, ঝাড়ফুঁক, ওষুধ, ডাক্তার এসব সুস্থতার জন্য কেবল উসীলা মাত্র। সুস্থতা দান করার মালিক তো আল্লাহ।
ii) আল্লাহই সমস্ত রোগদাতা ও আরোগ্যদাতা। তাই যার অন্তরে ইয়াক্বীনের সর্বোচ্চ স্তরের বিশ্বাস রয়েছে সে এটাই মেনে নিবে যে, কোন রোগের ক্ষমতা নেই নিজ থেকে যাকে তাকে পেয়ে বসবে। আল্লাহ পাকের ইচ্ছাতেই সব সংঘটিত হয়। তিনি যাকে ইচ্ছা রোগ বালাই দিয়ে পরীক্ষা করবেন কিংবা আযাব দিবেন।
iii) যদি কেউ বলে মুসলমান কেন মহামারী রোগাক্রান্ত, ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে? যদি ইসলাম সত্য ধর্ম হয় তবে আল্লাহ কেন মুসলমানদেরকে রোগ-বালাই/ দুঃখ-কষ্ট দিচ্ছেন?
এর ব্যাখ্যা হল- আল্লাহ পাক এর বিনিময়ে এক শ্রেণীকে কিয়ামতের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি দান করবেন। যেমনঃ কিছু হাদিস থেকে এই শিক্ষা পাই যে-
● যদি কেউ জানত রোগ, দুঃষ্ট-কষ্টের দরুণ সে কত বড় আজাব থেকে মুক্তি পাচ্ছে সে প্রার্থনা করত লোহার কাঁচি দ্বারা তার বুক চিরে ফেলা হোক।
● জ্বরকে গালি দিও না। এর দ্বারা পাপ সমুহ শীতকালের গাছের পাতার মত ঝরে পড়ে।
● জ্বর আসে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ থেকে, তাই একে প্রশমিত কর পানি দ্বারা। (এখানেও চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ইসলাম একে অপরকে সাপোর্ট দিচ্ছে)
iv) যখন কোন জালেম সম্প্রদায়ের উপর আজাব/মহামারী আসবে তার দ্বারা তাদের মৃত্যু হলে তারা জাহান্নামেই যাবে কারণ তাদের ইমান নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ এসেছে।
যার ইমান আছে-
a. যদি খাঁটি মুমিন হয়, কিছু রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে শহীদী মর্যাদা লাভ করবে।
b. পাপী ইমানদারের ক্ষেত্রে আজাব লাঘব হবে।