আমাদের থুথু থেকে রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। যেমন: হাটবাজার, গাড়ীর স্টেশন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে লেখা থাকে “থুথু ফেলবেন না”। কোথাও কোথাও লেখা থাকে “থুথুর সাথে রোগ ছড়িয়ে পড়ে।” ইংরেজিতেও এটা লেখা থাকে: “Don’t Spit Here” “এখানে থুথু ফেলবেন না।”
কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)’র থুথু মুবারক দ্বারা রোগ নিরাময় হয়, আরোগ্য লাভ হয়, যেমন: উল্লেখযোগ্য কিতাবে আছে।
সায়্যিদুনা হযরত আলী (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত সাহাল বিন সাদ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলে পাক (ﷺ) খায়বারের দিন ইরশাদ করেন,
لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يَفْتَحُ اللهُ عَلَى يَدَيْهِ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ
-“আগামী কাল আমি ওই ব্যক্তির হাতে পতাকা দেবো, যার হাতে আল্লাহ তা‘য়ালা খায়বার বিজয় করবেন এবং তাঁর উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট।”
সকাল হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক সাহাবা হুযুরা শরীফে আসলেন। আর প্রত্যেকেরই আশা ছিল যে পতাকা হয়তো আমার হাতেই দেয়া হবে। কিন্তু রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَيْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ؟
-“আমার আলী কোথায়?” সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন,
يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ
-“তাঁর চোখে ব্যাথা পেয়েছেন।” রাসূল (ﷺ) তখন ইরশাদ করেন,
فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ . فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ فَبَرَأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ
-“তোমরা কেউ গিয়ে তাকে নিয়ে আস; তিনি আসার পর রাসূল (ﷺ) তাঁর চোখে থুথু মুবারক দিলেন, তখন তাঁর চোখ এভাবে ভাল হল যে, যেন কোন দিন রোগই হয়নি।’’ ➥61
- ৬১.
ক. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, (৫৬৩ পৃষ্ঠা ভারতীয়), ৩/১৭১৯ পৃ. হা/৬০৮৯,
খ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী, আশয়াতুল লুম‘আত, (ফার্সী চতুর্থ খণ্ড ৬৬৪ পৃষ্ঠা)
গ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৭/৪৭৭ পৃ. হা/২২৮২১,
ঘ. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে ল্লাদুনিয়্যাহ, ২/২৯৯ পৃষ্ঠা
ঙ. ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/৩১১ পৃ. হা/৮০৯৩
চ. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ১/৬২ পৃ.
ছ. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৪/৬০ পৃ. হা/৩০০৯
জ. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৮৭২ পৃ. হা/২৪০৬
হযরত আক্বীলী বিন হাবীব (رضي الله عنه) আকিদা:
রাসূলে করিম (ﷺ)’র সাহাবা হযরত আকীলী বিন হাবিব (رضي الله عنه) বলেন যে, তাঁর পিতার দু’চোখ সাদা হয়ে যাওয়ার ফলে তিনি কিছুই দেখতে পেতেন না।
فَنَفَثَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ فِي عَيْنَيْهِ فَأَبْصَرَ.. فَرَأَيْتُهُ يُدْخِلُ الْخَيْطَ فِي الْإِبْرَةِ وَهُوَ ابْنُ ثَمَانِينَ
-‘তখন রাসূলে কারিম (ﷺ) তার দুচোখে থুথু মুবারক দিলেন, ফলে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসল যে, আমি দেখলাম যে তিনি আশি বছর বয়সেও সুঁইয়ের মধ্যে সুতা গাঁথতেন।’’ ➥62
- ৬২.
ক. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, প্রথম খণ্ড, ৬২০ পৃষ্ঠা
খ. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে ল্লাদুনিয়া, ২/৩০০ পৃষ্ঠা
গ. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৪/২৫ পৃ. হা/৩৫৪৬
ঘ. ইমাম ইবনে আবি আসেম, আহাদ ওয়াল মাসানী, ৫/৯১ পৃ. হা/২৬৩৪,
ঙ. ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসাান্নাফ, ৫/৪৫ পৃ. হা/২৩৫৬৩
চ. আল্লামা নাবাহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ২৯৭ পৃ.
ছ. ইমাম ফুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৭/৭৩ পৃ.
জ. ইমাম হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ৩/৩৩৬ পৃ.
ঝ. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৬/১৭৩ পৃ.
কূপের মধ্যে থুথু মুবারক দেয়ার ফলে মিশক আম্বরের ন্যায় সুগন্ধি বের হওয়া:
শায়খুল মুহাদ্দেসীন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দীস দেহলভী (رحمة الله) আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) মাওয়াহেবে ল্লাদুনিয়ার মধ্যে এবং আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) আনওয়ারে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে বর্ণনা করেন:
مج فِي الْبِئْر ففاح مِنْهَا مثل رَائِحَة الْمسك
-‘‘রাসূলে কারিম (ﷺ) এক কূপে থুথু ফেলেন, ফলে তা হতে মিশকে আম্বরীর সুগন্ধি বের হয়।’’ ➥63
- ৬৩.
ক. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ১/২৫৮ পৃ.
খ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত, ফার্সী, প্রথম খণ্ড, ১১ পৃষ্ঠা
গ. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া ২০০ পৃষ্ঠা,
ঘ. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুনিয়া, ২/২০ পৃ.
ঙ. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১০৫ পৃ.
চ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩১/১৩৪ পৃ. হা/১৮৮৩৮
ছ. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২২/৫১ পৃ. হা/১১৯
হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র প্রিয় সাহাবা হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র বাড়ির কূপটির পানি তিতা ছিল।
وَبَزَقَ فِي بِئْرٍ كَانَتْ فِي دَارِ أَنَسٍ فَلَمْ يَكُنْ بِالْمَدِينَةِ أَعْذَبُ مِنْهَا
-‘‘রাসূলে কারিম (ﷺ)’র এই কূপের মধ্যে থুথু মুবারক দেয়ার পর কূপের পানি এতই মিষ্টি হল যে, মদিনা শরীফে এরূপ আর কোন কূপের পানিই মিষ্টি ছিল না।’’ ➥64
- ৬৪.
ক. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১/৬৩৯ পৃ.
খ. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ২০০ পৃষ্ঠা
গ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৩১ পৃ.
ঘ. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ২/২০ পৃ.
ঙ. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১০৫ পৃ.
চ. মোল্লা আলী ক্বারী, জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/৩৮ পৃ.
ছ. ইবনে হাজার মক্কী, আশরাফুল ওসায়েল, ১/৬৬ পৃ.
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) কে গারে ছুরে সাপে দংশন করে।
فَتَفِلَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ على محل اللدغة فَذَهَبَ مَا يَجِدُهُ
-‘‘রাসূল (ﷺ) ক্ষতস্থানে থুথু মুবারক মালিশ করেদেন। সাথে সাথেই তা আরোগ্য লাভ করে।’’ ➥65
- ৬৫.
ক. ইমাম ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৩/৪৩৩ পৃ.
খ. সফিকুর রহমান মোবারকপুরী, আররাহিকুল মাখতুম, ১৪৯ পৃষ্ঠা
গ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৬/২৯ পৃ.
ঘ. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/১৭৪ পৃ.
ঙ. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ৩/৩৯৬ পৃ.
চ. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ২/৪৮ পৃ.
ছ. ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭০০ পৃ. হা/৬০৩৪
জ. ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৮/৬০৫ পৃ. হা/৬৪২৬
ঝ. ইমাম মুহিবুদ্দীন তবারী, রিয়াদুন-নাদ্বরা ফি মানাকিবে আশারা, ১/১০৪ পৃ.
হযরত বিশর বিন আকরাবাহ (رضي الله عنه)’র আকিদা:
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র থুথু মুবারকের বরকতে তোতলামী দূর হয়ে যায়। স্বয়ং সাহাবী বর্ণনা করেন, আমার প্রিয় পিতা উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন তখন আমি রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দরবারে গিয়ে কাঁদতে লাগলাম। রাসূলে কারিম (ﷺ)’র আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেন, কাঁদছো কেন, তোমার কী এটা পছন্দ নয় যে, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) তোমার মাতা আর আমি তোমার পিতা। অত:পর রাসূলে কারিম (ﷺ)’র তার হাত মুবারক আমরা মাথার উপর ভুলাতে লাগলেন। তাঁর হাত মুবারক আমার চুলের যেখানেই লেগে ছিল তা কালো হয়ে যায় বাকী গুলো সাদা থাকে।
وَكَانَت فِي لساني عقدَة فتفل فِيهَا فانحلت
-‘‘আর আমার তোতলানো ছিল, রাসূল (ﷺ) আমার মুখে থুথু দিলে আমার তোতলামী চলে যায়।’’ ➥66
- ৬৬.
ক. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, দ্বিতীয় খণ্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা
খ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১০/১৯ পৃ.
আ‘লা হযরত আজিমুল রবকত ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দেদে দ্বীনও মিল্লাত মাওলানা শাহ আহমদ রেযা খাঁন ফাযেলে বেরলভী (رحمة الله) কতইনা সুন্দর বলেছেন:
رافع نافع دافع شافع
كيا كيا رحمة لاتے يہ ہيں
‘‘উন্নত-হিতকর, বিতাড়ক-অনুরোধবর
কীরূপ আশিষ ত্রানে, বড়ই দয়াধর।’’