ইসলাম নতুন নয়; পুরাতন। ২০ রাকাআত “তারাবিহ” : আলবানীদের আলবানী (১৯১৪-১৯৯৯খ্রিস্টিয়)-র অদ্ভূত ফতোয়া।
▄▄▄▄▄▄▄▄▄
অবতরণিকা
বর্তমান ফেতনাবাজ নামধারী আহলে হাদীসদের শায়েখ, আলবানী সাহেব জীবনে ২০ রাকাত তারাবীহ মানতে পারলেন না। সোজা অস্বীকার করে বসলেন। বলে বসলেন, ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত সংক্রান্ত হাদীস এতই দুর্বল যে, এর উপর আমল জায়েয নেই। হারাম। উনি যা বলে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তা হলো, ১১ রাকাত ই পড়তে হবে। এসংখ্যাটি নির্দিষ্ট এবং সীমাবদ্ধ। এর থেকে বেশী তারাবীহ সালাত আদায় করা জায়েয নেই।
আলবানীর এমন ফতোয়ার নির্মম শিকার আজ আমাদের মুসলিম সমাজ।
আমরা তার বক্তব্যের জবাব ধারাবাহিক ভাবে উপস্থাপন করবো,
ইনশা আল্লাহ।
_____________________________________________
২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে সহীহ হাদীসঃ
হযরত ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (রাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেছেন হযরত সাইব বিন ইয়াযিদ (রা) থেকে, তিনি বলেন, উমার বিন খাত্তাব (রা) এর যামানায় তাঁরা (সাহাবাগণ সহ অন্যান্যগণ) রামাদান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন।
(হাদীসটি সংক্ষেপিত)
রেফারেন্সঃ
আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী-২/৪৯৬
হাদীসটির পর্যালোচনাঃ
১/ ইমাম নববী (রাহ) তাঁর “আল খুলাসাহ” এবং ‘আল মাজমু’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
আল মাজমু-৪/৩২
২/ ইমাম যায়লায়ী (রাহ) তাঁর ‘নাসবুর রায়াহ’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
নাসবুর রায়াহ-২/১৫৪
৩/ইমাম সুবকী (রাহ) তাঁর ‘শারহুল মিনহাজ’ নামক কিতাবে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
৪/ ইমাম ইবনুল ইরাকী (রাহ) তাঁর ‘তারহুত তাছরীব’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
তারহুত তাছরীব-৩/৭১৬
৫/ইমাম আইনী (রাহ) তাঁর ‘উমদাতুল কারী’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
উমদাতুল কারী-৭/১৭৮
৬/ইমাম সুয়ুতী (রাহ) তাঁর ‘আল মাসাবীহু ফী সালাতিত তারাওয়ীহ’ নামক কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
আল মাসাবীহু ফী সালাতিত তারাওয়ীহ-২৮
৭/ইমাম মুল্লা আলী কারী (রাহ) তাঁর ‘শারহুল মুয়াত্তা’ নামক কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
৮/ ইমাম নীমাওয়ী (রাহ) তাঁর ‘আসারুস সুনান’ নামক কিতাবে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
২০ রাকাতের পক্ষের হাদীসটি নিয়ে আলবানী সাহেবের অভিযোগঃ
________________________________________________
আলবানী বলেন,
হাদীসটির বর্ণনাকারী ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (রাহ)কে নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (র) বলেছেন, তিনি মুনকারুল হাদীস।
ইমাম যাহাবী বলেছেন, তার রেওয়ায়াতে ইদতেরাব রয়েছে। একবার তিনি বলেছেন, ২১ রাকাতের কথা, আবার অন্যস্থানে তিনি বলেছেন ২৩ রাকাতের কথা। তাই উনার কথা গ্রহনযোগ্য নয়।
আমাদের প্রথম জবাবঃ
___________________________________________
এ অভিযোগ মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়, তবুও তর্কের খাতিরে যদি মেনে ও নেই, তবে এক্ষেত্রে আমাদের জবাব হচ্ছে,
কোন একটি হাদীসের অর্থ যখন সকলের নিকট গ্রহণীয় হয়ে যায়, তখন সে হাদিসের সনদের বিশুদ্ধতার প্রয়োজন হয় না। যেমনভাবে ইয়াযিদ বিন খুসাইফা (রাহ) এর হাদীস। এ হাদীসের অর্থ এতই গ্রহণযোগ্য যে এর সনদের অনুসরণের প্রয়োজন হয় না।
কয়েকটি দালিলিক উদাহরণ দিচ্ছিঃ
ইমাম খাতীব বাগদাদী “কাযা” সংক্রান্ত মুয়ায (রা) এর হাদীস সম্পর্কে বলেন,
‘আহলে ইলম এ হাদিসের অর্থ কবুল করেছেন এবং এর দ্বারা দলীল প্রদান করেছেন’। যদিও এর সনদ বিশুদ্ধ নয়।
রেফারেন্সঃ
১/আল ফাকীহু ওয়াল মুতাফাক্কিহু
২/আত তালখীসুল হাবীর- ৪/৮৩
৩/আল মুগনী-৯/৫৩
ইমাম সুয়ূতী বলেন, কোন হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ না হলে যদি মানুষ এর অর্থকে কবুল দ্বারা তালাক্কী করে, তবে সে হাদীসকে সহীহ বলে হুকুম দেয়া হয়।
রেফারেন্সঃ
তাদরীবুর রাওয়ী ফী শারহি তাকরীবিন নাওয়ায়ী- ৬০
ইমাম ইবনু আব্দিল বার ‘আল ইসতিযকার’ নামক কিতাবে বলেন, ইমাম বুখারী (রাহ) ‘বাহর’ এর হাদিসকে (সমুদ্রের পানি পবিত্র) সহীহ বলেছেন, অথচ হাদীস বিশারদগণ এর সনদকে বিশুদ্ধ বলেন নি।
রেফারেন্সঃ
আল ইসতিযকার
ইমাম ইবনু আব্দিল বার।
৫/১৫৭
ঠিক একই ভাবে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দীনার হচ্ছে ২৪ কীরাত- এ হাদীসটির অর্থের উপর সকলের ইজমা হওয়ার কারনে এর সনদের পর্যালোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। এটা গ্রহনযোগ্য।
রেফারেন্সঃ
আত তামহীদ
হাফিয ইবনু আব্দিল বার।
এ নিয়ে অনেক অনেক রেফারেন্স দেয়া যাবে।
** তেমনি ২০ রাকাতের আলোচ্য হাদীসটি ‘মুতালাক্কা বিল কাবুল’ হয়েছে। সকলের নিকট এটার আম গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।
ইমাম ইবনু আব্দিল বার (রাহ) বলেন, ২০ রাকাতের বিষয়টি সহীহ তথা বিশুদ্ধ। যা উবাই বিন কা’ব থেকে বর্ণিত হয়েছে। এ নিয়ে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কোন প্রকারের এখতেলাফ ছিলনা।
***ইমাম তিরমিযি (রাহ) বলেন, হযরত উমার এবং আলী (রা) এবং অন্যান্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত ২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের উপর অধিকাংশ উলামায়ে কেরামগণ একমত হয়েছেন।
এমন কথাই বলেছেন
ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রাহ)
ইমাম ইবনুল মুবারাক (রাহ)
ইমাম শাফেয়ী (রাহ), তিনি বলেন, এভাবেই আমি মাক্কা মুকাররামাতে লোকজনকে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত পড়তে দেখেছি।
রেফারেন্সঃ
জামিউত তিরমিযি।
১/শারহুস সুন্নাহ-৪/১২৩
২/আল মাজমু-৪/৩১
৩/মুখতাসারু কিয়ামিল লাইলি ওয়া কিয়ামি রামাদান- ৯৫
৪/ফাতহুল বারী- ৪/২৫৩
***ইমাম ইবনু রাশীদ বলেন,
ইমাম মালিকের দুটি কাওলের একটি, ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ী, আহমাদ, এবং আবু দাঊদ (রাহ) সবাই বিতির ব্যতীত ২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে রায় প্রদান করেছেন।
রেফারেন্সঃ
বিদায়াতুল মুজতাহিদ ।
***ইমাম ইবনু আব্দিল বার (রাহ) বলেন, এটা হচ্ছে জমহুর (অধিকাংশ) উলামাদের মত। এবং আমাদের নিকট ও এটাই চুড়ান্ত রায়।
***হাফিয ইবনু ইরাকী (রাহ) ও একই কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন,
২০ রাকাতের এ মতটি ই গ্রহন করেছেন ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, আহমাদ এবং জমহুর উলামায়ে কেরাম।
রেফারেন্সঃ
১/তারহুত তাছরীব
২/আল মাজমু-৪/৩১
৩/শারহু মুনতাহাল ইরাদাত-১/২৩১
***ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও একই কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন,
এটা সহীহ সুত্রে প্রমাণিত যে রামাদান মাসে হযরত উবাই বিন কা’ব (রা) মানুষদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন, এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন।এবং অনেক উলামায়ে কেরাম এটাকে সুন্নাহ বলে ফতোয়া দিয়েছেন, যেহেতু উবাই বিন কা’ব (রা) মুহাজির এবং আনসার সাহাবীদেরকে নিয়ে এরকম ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করেছেন। তখন কেউ এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেন নি।
রেফারেন্সঃ
মাজমু উ ফাতাওয়া-৩২/১১৩
***ওয়াহাবি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ বিন আব্দিল ওয়াহহাব নজদীর ও একই কথাঃ
“উমার (রা) এর যামানায় উবাই বিন কা’ব (রা) এর ইমামতিতে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করা হত”।
রেফারেন্সঃ
১/মাজমু উল ফাতাওয়া আল নাজদিয়্যাহ
২/মুখতাসারুল ইনসাফ ওয়াশ শারহিল কাবীর- ১/১৫৭
***হাম্বালী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম ইবনু কুদামা (রাহ) বলেন, ২০ তারাবীহ সালাতের উপর প্রায় ইজমা হয়ে গেছে।
রেফারেন্সঃ
আল মুগনী-২/১৬৭
➖➖➖➖
আলবানীর অভিযোগঃ রাবী দুর্বল
________________________
তো পর্ব ১ এ উল্লেখিত ২০ রাকাতের পক্ষের একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছিল। হাদীসটিকে ইমামগণ সহীহ বলেছেন, কিন্তু আলবানী সাহেব তা মানতে পারেননি। কেন? তিনি বলেছেন, হাদিসের একজন বর্ণনাকারী ইয়াযিদ বিন খুসাইফা হচ্ছেন একজন সমালোচিত রাওয়ী। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহ) তাঁকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। সুতরাং এ বর্ণনাকারীর দুর্বলতার কারণে হাদিসটি গ্রহনযোগ্য নয়।
আমাদের দ্বিতীয় জবাবঃ
__________________
জি, ইমাম আবু দাউদ (রাহ) থেকে একটি বর্ণনা রয়েছে যে, ইমাম আহমাদ (রাহ) তাঁকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। কিন্তু ইমাম যাহাবী (রাহ) বলেছেন, আসরাম (রাহ) এর বর্ণনা থেকে ইমাম আহমাদ (রাহ) তাঁকে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও যেসকল ইমামগন তাঁকে সিকাহ বলেছেন, তাদের কথা উল্লেখ করছি-
১/ ইমাম আবু হাতিম (রাহ) তাঁকে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
২/ ইমাম ইবনু হিব্বান (রাহ) নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের নিয়ে লেখা কিতাব ‘কিতাবুস সিকাত’ এ তাঁর নাম উল্লেখ করেছেন।
৩/ ইবনু মায়ীন (রাহ) বলেছেন, তিনি সিকাহ। তাঁর কথা নির্দ্বিধায় দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
৪/ ইমাম নাসাঈ (রাহ) তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
৫/ ইমাম যাহাবী (রাহ) ‘আল কাশিফ’ নামক কিতাবে তাঁর নিজের মন্তব্য প্রকাশ করেছেন, বলেছেন, তিনি সিকাহ।
৬/ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রাহ) তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
৭/ ইমাম ইবনু শাহিন (রাহ) তাঁকে কখনো বলেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য। আবার কখনো বলেছেন, আমি তাঁকে ভাল ছাড়া অন্য কিছু জানিনা।
বিস্তারিত জানতে রেফারেন্সগুলো দেখুন-
১/ তারীখু আসমা ইস সিফাত-২৫৬-২৫৮
২/ মীযানুল ই’তিদাল-৪/৪৩০
৩/ তাকরীবুত তাহযীব- ২/৩৬৪-৩৬৭
আর ইমাম আহমাদের একটি মন্তব্য যে, ইয়াযিদ বিন খুসাইফা (রাহ) মুনকারুল হাদীস যা আলবানী সাহেব উল্লেখ করে এবং কারণ দেখিয়ে ঐ হাদিসটিকে বাতিল বলে ঘোষনা দিলেন, তাঁর জবাব আমরা ইবনু হাজার আসকালানী (রাহ) এর একটি কাওল দিয়ে প্রদান করবো।
ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রাহ) এ বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেন, মূলতঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহ) ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (রাহ) এর ব্যাপারে ‘মুনকারুল হাদীস’ এজন্যই বলেছেন, কারণ ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (রাহ) ছিলেন হাদীসের ব্যাপারে তাঁর সমকালীনদের চেয়ে ব্যতিক্রম। আর এ অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম আহমাদ (রাহ) তাঁকে মুনকারুল হাদীস হিসেবে মন্তব্য করেছেন। এখানে তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তাঁর কোন সমালোচনা করেননি।
রেফারেন্সঃ
১/ হাদয়্যুস সারী -৪৩৭-৪৫৩
২/ আর রাফউ ওয়াত তাকমীল-১৪৫
৩/ লিসানুল মুহাদ্দিসীন-৫/১৯৪
আলবানীর অভিযোগঃ হাদীসে ইদতেরাব বিদ্যমান
____________________________________
আলবানী সাহেব ২০ রাকাত তারাবীহ সংক্রান্ত হাদীসকে দুর্বল প্রমাণ করতে গিয়ে বলেছেন, ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ তো একেক সময় একেক কথা বলেছেন, কখনো বলেছেন, তারাবীহ সালাতের রাকাত ২১, আবার কখনো বলেছেন-২৩। সুতরাং তাঁর এমন অবস্থার কারণে তাঁর বর্ণনার হাদীস গ্রহনযোগ্য নয়। বরং ১১ রাকাত তারাবীহ সালাতের হাদীসটিই সহীহ।
(আলবানী সাহেব কিন্তু চেস্টার ত্রুটি করেন নাই। এক চরম চীজ কিন্তু!)
আমাদের জবাবঃ
____________
এক্ষেত্রে আমরা হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রাহ) এর কথা দিয়ে জবাব দিতে পারি, আর তা হচ্ছে, ২১ আর ২৩- এ সংখ্যার পার্থক্য মূলতঃ তারাবীহ সালাতের সংখ্যার ব্যাপারে নয়, বরং এটা হচ্ছে বিতির সংক্রান্ত। অর্থাৎ তিনি তাঁরা কখনো বিতির পড়েছেন ১ রাকাত, আবার কখনো তিন রাকাত। আর এ কারনেই ২১ এবং ২৩ রাকাতের কথা ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (রাহ) উল্লেখ করেছেন।
রেফারেন্সঃ
ফাতহুল বারী-৪/২৫৩
আর এমন ইদতিরাব কোন হাদীসকে দুর্বল বানাতে পারেনা।
রেফারেন্সঃ
তাদরীবুর রাবী-১/২৬৫
তাছাড়া এটাকে যদি বড় ইস্যু ধরা হয়, তাহলে আলবানী সাহেব নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা খাবেন। এটা অবশ্য একটা মজার কথা।
কীভাবে?
আলবানী সাহেব ১১ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে যে হাদীসের প্রশংসা করতে করতে পেরেশান, সে হাদীসের বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ (রাহ) ও কিন্তু একই কাজ করেছেন! এক রেওয়ায়াতে তিনি বলেছেন ১১ রাকাত, আবার অন্য রেওয়ায়াতে বলেছেন, ১৩ রাকাত!!
বিস্তারিত দেখুন-
মুসান্নাফু আব্দির রাযযাক-৪/২৬০
এর মানে আলবানী সাহেব এ পয়েন্টে বেশী বাড়াবাড়ি করলে নিজের শক্তিশালী দলীল নিজের ফতোয়াতেই দুর্বল হয়ে যাবে।
তো, আলবানী সাহেব ২০ রাকাতের সহীহ হাদিসটিকে দুর্বল বানাতে যে দুটি তলাবিহীন অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁর জবাব দেয়া হলো। এবং এ জবাবের মাধ্যমে হাদিসটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আর কোন সন্দেহ থাকলোনা।
আর এ সহীহভাবে প্রমাণিত হাদীস দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয়ে গেল, সাহাবায়ে কেরাম তারাবীহ সালাত ২০ রাকাত আদায় করতেন।
কোন সন্দেহ নেই। ইনশা আল্লাহ।
সাহাবায়ে কেরামের আমল নিয়ে আরেকটি কথা বলে শেষ করছি-
ইমাম আতা বিন রাবাহ (রাহ) বলেন- আমি সাহাবায়ে কেরামকে রামাদান মাসে ২০ রাকাত তারাবী সালাত এবং তিন রাকাত বিতির আদায় করতে পেয়েছি।
রেফারেন্সঃ
১/মুখতাসারু কিয়ামিল লাইলি ওয়া কিয়ামি রামাদান- ৯৫
২/ ফাতহুল বারী-৪/২৫৩
ইমাম আতা (রাহ) হচ্ছেন একজন প্রসিদ্ধ তাবেয়ী। তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ ফকীহ এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।
রেফারেন্সঃ
তাকরীবুত তাহযীব-২/২২
➖➖➖➖➖
মিস্টার আলবানী সাহেবের গুরুতর অভিযোগঃ
______________________
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১১ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করেছেন। এটাই সীমাবদ্ধ। এ সংখ্যাই নির্দিষ্ট। তাই এর থেকে বেশী তারাবীহ সালাত আদায় করা হারাম।
রেফারেন্সঃ
সালাতুত তারাবীহঃ পেইজ নাম্বার-২৫
আমাদের জবাবঃ
____________
মিস্টার আলবানীর এ কথাটিই প্রমাণ করছে, তিনি একজন জাহিল ছিলেন। হাদীসের পর্যাপ্ত জ্ঞান তার ছিলনা। অথবা উনি মানসিক অসুস্থ। কোন সুস্থ মাথার আলেম এমন কথা বলতে পারেনা, অসম্ভব।
আমার এ কথার সত্যতা নিম্নপ্রদত্ত দলীলসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।
১/ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ১১ রাকাত সালাত আদায় করার আগে অন্যান্য নফল সালাত আদায় করতেন।
দলীল উপস্থাপনা –
***হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এশার সালাত আদায় করে আমার ঘরে প্রবেশ করতেন এবং চার রাকাত অথবা ছয় রাকাত সালাত আদায় করতেন।
রেফারেন্সঃ
আবু দাউদ-১৩০৩
***হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে যখন নফল সালাত আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তিনি দু রাকাত হালকা সালাত (খাফীফাহ) আদায় করতেন।
রেফারেন্সঃ
সহীহ মুসলিম/৭৬৫-৭৬৭
***হযরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠে সে যেন দু রাকাত হালকা সালাত (নফল) আদায় করে নেয়।
রেফারেন্সঃ
সহীহ মুসলিম/৭৬৮
মনে রাখতে হবে, এ সালাত সমূহ ঐ ১১ রাকাত থেকে বেশী।
রেফারেন্সঃ
সালাতুত তারাওয়ীহি আকছারা মিন আলফি আম/২০
যাদুল মা’আদ-১/৩২৫-৩২৭
***হযরত আবু সালামাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রা)কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জবাব দিলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৩ রাকাত সালাত আদায় করতেন।
রেফারেন্সঃ
সহীহ মুসলিম/৭৩৮-১২২০
তাহলে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়ে গেল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সালাতের নির্ধারিত সংখ্যা নেই। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংখ্যায় তিনি সালাত আদায় করেছেন।
ইবনু তাইমিয়ার ফতোয়ায় ধরাশায়ী মিস্টার আলবানীঃ
_________________________
ইবনু তাইমিয়াহ (আলবানীদের প্রধান সম্মানিত শায়েখ) বলেছেন,
রামাদান মাসে তারাবীহ সালাত আদায়ের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সংখ্যা নির্ধারণ করেন নি। বরং তিনি রামাদান এবং অন্যান্য মাসে ১৩ রাকাতের বেশী সালাত আদায় করতেন না। কিন্তু রাকাতগুলো দীর্ঘ হয়ে যেত। অতঃপর যখন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত উবাই বিন কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইমামতিতে সবাইকে একত্রিত করলেন, তখন থেকে তিনি তাদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন। এবং তিনি রাকাত অনুসারে কিরাত সংক্ষিপ্ত করতেন। কেননা এটা মুক্তাদীদের জন্য অধিকতর হালকা হতো।
অতঃপর সালফে সালিহীনের অনেকে চল্লিশ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন। অনেকে ৩৬ রাকাত আদায় করতেন এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন। এটা মূলতঃ মুসল্লীদের অবস্থার ভিন্নতায় উত্তমতা লাভ করে। যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১১ রাকাত আদায় করেছেন, এটা উত্তম। আবার কেউ যদি এটা বহন করতে না পারে এবং ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করে, তবে তাদের জন্য এটাই উত্তম। আর মূলত ২০ রাকাতের আমলটাই অধিকাংশ মুসলমানগণ করেছেন।
***এরপর ইবনু তাইমিয়্যাহ যে কথাটি বলেছেন, সেটাই আলবানী সাহেবের উপর সটাং করে পড়েছে, আর সেটা হচ্ছে-
আর যে ব্যক্তি ধারণা করলো যে, তারাবীহ সালাতের নির্ধারিত সংখ্যা রয়েছে, এ সংখ্যা থেকে বাড়ানো বা কমানো যাবেনা, সে ব্যক্তি ভুল করলো।
রেফারেন্সঃ
মাজমু উ ফাতাওয়া-২/৪০১
কিন্তু ব্যাপার হলো, মিস্টার আলবানী তো ধারণা করেন নি, বরং শক্তভাবে ফতোওয়া দিয়ে বই লিখেছেন “সালাতুত তারাবীহ”। সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় শক্তভাবে ফতোয়া দিয়েছেন, ১১ রাকাতই নির্ধারিত। এর থেকে বেশী তারাবীহ সালাত আদায় করা হারাম।
তাহলে ইবনু তাইমিয়্যাহ এর ফতোয়ায় আলবানী শুধু ভুলই করেন নি, বরং আরো মারাত্মক কাজ করেছেন।
এ তো বললাম তাদের নিজেদের ফতোয়ায় তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি। যা তা অবস্থা!
১১ রাকাতের হাদীস নিয়ে কিছু কথাঃ
_________________________
হাদীসঃ
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত,তিনি আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন ,রামাদান মাসে রাসুল (সাঃ) এর নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, রাসুল (সাঃ) রমজানে ও অন্যান্য মাসে বিতির সহ এগার রাকআতের বেশী পড়তেন না।
-সহীহ আল বুখারী।
পর্যালোচনা-
মূলতঃ এগারো রাকাতের সালাত তারাবীহ সালাত ছিলনা। এটা ছিল তাহাজ্জুদের সালাত। কারন-
১/ ইমাম বুখারী হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের সালাতের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
কিতাবুত তাহাজ্জুদ
বাবু কিয়ামিন নাবিয়্যি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বিল লাইলি ফী রামাদানা ওয়া গাইরিহী।
২/ইমাম মুসলিম সালাতুল লাইল (তাহাজ্জুদ) এর অধ্যায়ে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
অধ্যায়ের নামঃ বাবু সালাতিল লাইল
৩/ ইমাম তিরমিযি জামিউত তিরমিযিতে ও একইভাবে উল্লেখ করেছেন।
অধ্যায়ের নামঃবাবু মা জাআ ফী ওয়াসফি সালাতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
৪/ইমাম আবু দাঊদ সুনানু আবী দাউদে হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
অধ্যায়ের নামঃ আবওয়াবু কিয়ামিল লাইল।
৫/ইমাম নাসাঈ সুনানু নাসাঈতে হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
দেখুন, কিতাবু কিয়ামিল লাইলি ওয়া তাতাওউইন নাহার।
লক্ষ্যণীয়,
সকল ইমামগন যেখানে হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন সেখানে হাদীসটি দ্বারা কোন প্রকারের সালাত উদ্দেশ্য, তা বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখছেনা।
হাদীসটির ব্যাখ্যায় জামিউ তিরমিযির ব্যাখ্যা গ্রন্থে এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
এখানে প্রশ্নকর্তা সাহাবী হযরত আয়েশা (রা)কে রামাদান মাসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সালাত কেমন ছিল-এ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। মুলত প্রশ্নকর্তা সাহাবী রামাদান মাস ছাড়া অন্যান্য মাসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাহাজ্জুদের সালাতের বিষয়টি জানতেন। তবে তিনি ধারণা করেছিলেন, রামাদান মাসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়ত আরো বেশী রাকাত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন, তাই এটা জানার জন্য তিনি প্রশ্নের মধ্যে রামাদান মাসের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন।
রেফারেন্সঃ
আল কাউকাবুদ দুররিয়্যু আলা জামি’ইত তিরমিযি
খন্ড-১, পেইজ নাম্বার-৩৮৭।




Users Today : 73
Users Yesterday : 357
This Month : 73
This Year : 171944
Total Users : 287807
Views Today : 7905
Total views : 3415469