তাকফির বনাম ইমাম আ’লা হযরত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ইমাম আ’লা হযরত। বারেলি শহরে থাকতেন। তাঁর অতিথি আসত। প্রায়ই আসত। দূর-দূরান্ত হতে। এমনি একজন এলেন। মুম্বাই থেকে। আজকের অতিথি যেনতেন কেউ না। অতি-সম্মানিত।

স্বয়ং আ’লা হযরত পানি আনলেন। অতিথিকে দিলেন। অতিথি অযু করবেন। কাপড় গুটালেন। তখনি দেখা গেল অতিথির হাতে আংটি। সোনার আংটি। গলায় সোনার চেইন। আ’লা হযরত চেয়ে দেখছেন। বলে উঠলনে “হুজুর, আপনার আংটি ও চেইন কি উপহার পেতে পারি”। অতিথি দেরী করলেন না। তখনি খুলে দিলেন।

কি ভাবছেন? চেইন-আংটির কথা? কেন নিলেন? কেউ অলংকার চেয়ে নেয়। আজব তো! এখানেই মজা। চলুন বাকি ঘটনা জানি।

ক’দিন বাদের কথা। অতিথি বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর কন্যা দৌড়ে এলো। বুকে ঝাঁপালো।

– আব্বাজান! আব্বাজান! দেখুন উপহার পেয়েছি। ডাকযোগে এসেছে। সাথে একটা চিঠিও। জীবনের প্রথম চিঠি।

– কি বলো মা? তোমাকে কে চিঠি দিবে! আনো তো দেখি।

মেয়ে ছুটে গেল। আনলো চিঠি। সাথে উপহার। একটি আংটি। একটি চেইন। দুটাই সোনার। জ্বী, ঠিক ধরেছেন। অতিথির অলংকার এসব। আ’লা হযরত নিয়েছিলেন। অতিথি অবাক। চিঠি খুলেন। চিঠি প্রেরক লিখেছেন :

“শ্রদ্ধেয়া শাহজাদী, সালাম জানবেন। আপনার জন্য সামান্য উপহার। গ্রহণ করুন। এ উপহার আমাকে এক সম্মানিত মানুষ দিয়েছিলেন। আমি আপনাকে দিলাম”।

প্রেরক হচ্ছেন আ’লা হযরত। অবাক হলেন? আমিও হয়েছিলাম। আ’লা হযরত এমন করলেন কেন? তবে শুনুন। পুরুষের জন্য সোনা হারাম। মানুষ মাত্রই দূর্বল। ভুল হয়। মনে রাখবেন, ভুল আর পাপের পার্থক্য বহু।

যা-হোক, ‘অতিথি’ সোনা কেন পরতেন জানা নেই। ইমাম আ’লা হযরত তাঁকে কিছু বলতে পারছিলেন না। কারণ তাঁর শ্রদ্ধাবোধ। হ্যাঁ শ্রদ্ধাবোধ। তাই সরাসরি বললেন না। কিন্তু একটি চমৎকার সমাধান করলেন। {হেকমতে আ’লা হযরত পে লাখোঁ সালাম}

এখন আমাদের কথা ভাবুন। কেউ ভুল করলে কি করি। চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করি। আর ভাষা! আয় খোদা! দেখলে চোখ ফিরাই। কান ঘুরাই। পড়াও যায় না। শোনাও যায় না।

সে ব্যক্তি সম্মানিত ছিলেন। আ’লা হযরত তাই এমন করেছেন? বাকিদের বেলায় ভিন্ন হত? এমনটা ভাবতে পারেন। কিন্তু জানেন কি? আ’লা হযরত শিশু বাচ্চাকেও আপনি ডাকতেন। বাচ্চাদের আমরা প্রায়ই ফুটফরমায়েশ খাটাই। এটাসেটা করতে বলি। অথচ আ’লা হযরত সরাসরি নিষেধ করছেন। এতে ব্যক্তিত্ব গঠনে প্রভাব পরে।

কোনো সুন্নি দাঁড়িয়ে পানি খাচ্ছে। আপনি দেখলেন। সুন্নাতের খেলাপ করছে। এমন ভাববেন না। ভাবুন, জমজমের পানি পান করছে।

ভালো-খারাপ মাপবেন। একশটা কারণ বের করুন। নিরানব্বই কারণে কেউ খারাপ। একটিতে ভালো। তবে একটির জন্যই তাঁকে ভালো ভাববেন। এটাই আ’লা হযরত এঁর শিক্ষা। আহলে সুন্নাতের শিক্ষা।

গালাগালি বন্ধ করুন। ভদ্রতা রাখুন। না পারলে চুপ থাকুন। আ’লা হযরত কি গালি দিত? আপনার কারণে তাঁকে খারাপ ভাবা হচ্ছে। এঁর জবাব কে দিবে! কি দিবে! উপস্থাপন করতে শিখুন। নাহলে বন্ধ রাখুন।

এখন প্রশ্ন তাকফিরের। তাকফির হচ্ছে কুফরি সাব্যস্ত করা। প্রমাণ করা। কুফরি মানে অস্বীকার। ইসলামের মৌলিক বিষয় না মানাই কুফর। যেমন ‘আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন’। ‘নবী মাসুম নয়, পাপ করতে পারে’। এগুলা কুফর। কেউ এসব মানে। জেনে-বুঝে-সজ্ঞানে মানে। তাকে সাবধান করা হল। বুঝানো হল। তবুও মানল না। তওবা করল না। তবে তার কুফর প্রমাণিত হবে। সে কাফির। {আলোচনাটা দীর্ঘ, আরেকদিন বলব}

আ’লা হযরত তাকফির করেছেন। বাধ্য হয়েছেন। সখে করেন নি। অসভ্য-অমানুষেরা মদিনা-মুনিব (দ) কে গালি দিচ্ছিল। ইবলিসের থেকে কম জ্ঞান বলেছিল। রাসুলের স্মরণ আর গরু-গাধার স্মরণ এক। আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারে। আল্লাহকে গালি দিচ্ছিল। গালাগালি তাদের আদর্শ।

গালাগালি বন্ধের জন্যই তাকফির। আ’লা হযরত গালাগালি থামিয়েছেন। বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছেন। চিঠির পরে চিঠি দিয়েছেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তারা মানে নি।

আ’লা হযরত এঁর তাই উপায় ছিল না। পবিত্র মক্কা-মদিনায় অভিযোগ করেছেন। আজকের আরব, সে যুগের আরব এক না। আজ বৌদি প্রেতাত্মার আগ্রাসন। তখন ছিল স্নিগ্ধ উসমানীয় (Ottoman) নিয়ন্ত্রণ।

প্রায় পঞ্চাশ জন ‘আল্লামা’ অসভ্যদের কাফের ঘোষণা করেছিলেন। প্রত্যেকেই যুগশ্রেষ্ঠ এবং মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক ছিলেন। আ’লা হযরত তাদেরটাই প্রচার করেছেন মাত্র। কুফর কে কুফর বলেছেন। ‘কুফরি ফতোয়া’ দিয়েছেন। উপায় ছিল না। আর পশুকে পশু বললে গালি হয় না। পশুকে নিশ্চই ফেরশতা ডাকবেন না।

যা-হোক, এই যে তাকফির। এটা বিশাল বিষয়। আপনার আমার বাইরে। কথায় কথায় তাকফির বন্ধ করুন। গালাগালি থামান। আ’লা হযরত গালাগালি থামানোর জন্য তাকফির করেছেন। আমাদের গালাগালির লাইসেন্স দেন নি। আর আমরা সেই গালাগালি-ই করছি। অদ্ভুদ! {সেলুকাস, ভারত বড়ই বিচিত্র!}

প্রতিরোধ কি বন্ধ করবেন? না, কখনো না। বাতিলের বিরোধীতা চলবেই। শুনুন প্লিজ। কাউকে নির্মূল করতে চান। তবে তার জিকির (স্মরণ) বন্ধ করুন। নাম নেয়াই বন্ধ করুন। কৌশলী হন। কাটছাঁট থামান। গোপনে বীজ বুনুন। প্রেমের বীজ। ইমাম আ’লা হযরত এঁর মত। তিনি ছিলেন প্রেমিক-চাষী। প্রেমিকের জন্ম দিয়েছেন। তাঁর চাষের কারণেই আপনি-আমি ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ’ উচ্চারণ করি।

মনে রাখবেন, আপনার আদর্শ বারেলি। মদিনা অস্তিত্ব। বারেলি হিমালয় থেকে উঁচু। মদিনা উঁচু আরশ থেকেও। আপনি সেই বারেলি হয়ে মদিনা’র মুসাফির। আপনার সাথে গালাগালি যায় না। মানায় না।

আজকের সমাজে জমেছে মেঘ। অশিক্ষার মেঘ। চোখে মেঘ। হৃদয়ে মেঘ। ‘বারেলি আদর্শ’ মেঘ সরায়। মদিনা দেখায়। আপনার কাজ মেঘ সরানো। মেঘের কারণে যারা দেখতে পায় না, তাদের গালি দেয়া না।

আপনি মেঘ সরান। তারা দেখবে। একবার দেখলে নত হবেই। কারণ, মদিনার সৌন্দর্যকে এড়ানোর শক্তি কারো নেই। কারো নেই।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment