ডিজিটাল অ্যাংজাইটি

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আপনারও কি এমন হয়? ডিজিটাল অ্যাংজাইটি:
আমাদের প্রায় সবাইকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে, মুক্তির উপায় কী?
—–
গোলাম দস্তগীর লিসানি

ডাঙায় যদি শামুক দেখে থাকেন, এই লেখাটা আপনাকে অনেক সহায়তা করবে।

আমাদের প্রায় সবার কমবেশি এই সমস্যাগুলো হচ্ছে:
* রাতে ঘুম না হওয়া বা না ঘুমানো বা কম ঘুমানো
* কোন কাজে স্থির মনোযোগ দিতে না পারা
* মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
* আচরণ কঠোর হয়ে যাওয়া
* সব সময় একটা শংকা/ হাইপে থাকা
* ঘনিষ্টজনদের আন্তরিক সময় দিতে না পারা
* খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ছোট ছোট কাজ ভুলে যাওয়া
* স্বাভাবিক পারিবারিক খাবারের প্রতি অরুচি

অ্যাত্তো কিছু আপনার সাথে কেন  মিলে গেল বলেন তো?
কারণ, আপনার হাতে যেটা আছে, আমার হাতেও সেটা আছে। স্মার্টফোন, কম্পিউটার। হ্যা, স্রেফ ফোনটা করছে এত্তকিছু। কেউ বলবে না। কারণ সবার স্বার্থ আছে। ফেসবুকের স্বার্থ আছে, গুগলের স্বার্থ আছে। আমরা তাদের প্রোডাক্ট।

এককথায় বলি? ভারচুয়াল লাইফ আমাদের সব সময় চরম হাইপে রাখে। এই হাইপ আমাদের এ অবস্থা করছে। অস্বাভাবিক মানুষে পরিণত করছে।

হাইপ থেকে নির্ঘুমতা
—–
এ হাইপ আমাদের রাতে ঘুমাতে দেয় না। প্রথম কথা প্রথমে, ঘুমের সময় হল রাতে। কিন্তু তখন আমরা একটু হালকা হই। আর হালকা হলেই একটু স্ক্রল করতে ইচ্ছা করে। আর নোটিফিকেশন, আর সবকিছু। শেষে ফজরের আযান শুনে পূতপবিত্র হয়ে ঘুমাতে যাওয়া। যারা চাকুরিতে আছেন, ফজর পর্যন্ত টেঁকেন না অবশ্য, কিন্তু রাতের ঘুমটা ঠিকই গাপ হয়। দুটা তিনটা বেজে যায়।

কেন ঘুমের সময় রাতে?
তার আগে বলেন তো, ডাঙায় শামুক দেখেছেন? জোয়ারের সময় শামুকের দেহটা খোলস থেকে বেরিয়ে আসে। যদিও পানি নেই, তবু আসে। কেন? কারণ ওর জিনে ওটা লেখা আছে। ও যেখানেই থাক, জোয়ারের সময় হলেই দেহ বের করে দিবে। কারণ জোয়ারের সময় পানির টানে যেন ভেসে না যায়। যদি পানি থেকে উঠেও আসে, তবু যতদিন বেঁচে থাকবে, এটাই করবে। যদি ছোট্ট বোতলে ভরে রাখেন, ওই সময়ে এটাই করবে।
কারণ আমরা জিনের ফসল। আর জিন লক্ষ কোটি রজনীর ঘুমের সিগন্যাল নিয়ে চলে। শত শত প্রজন্মের সিগন্যাল। এড়াতে হলে জিন চেঞ্জ করতে হবে।

আমার এক ডাক্তার আঙ্কল আছেন। অত্যন্ত সিনিয়র ডাক্তার। তিঁনি রাত সাড়ে আটটায় ঘুমাতে যান, অবসর নেয়ার পর। আগে ঘুমাতে যেতেন রাত দশটায়। কারণ আছে কিছু। কারণটা আমি ধীরে পেয়েছি পড়ালেখা করতে গিয়ে।
রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যেই দেহের ভিতরে অসংখ্য উলটপালট হয় আমাদের। অসংখ্য সিগন্যাল যাতায়াত করে। কীসের সিগন্যাল? ঘুমের। হরমোনের ব্যালান্সের এদিক সেদিক হয়, ঘুমের উপযুক্ত নিউরোট্রান্সমিটার সিক্রেশন হয়। পেশীগুলো আধা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। অপরদিকে প্রতিটা কোষকে রিজুভিনেট করার জন্য প্রয়োজনীয় মেরামতের ইলেক্ট্রো-কেমিক্যাল প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।

আমরা সময় মত না ঘুমালে এগুলোর অনেকটাই বর্জ্য পদার্থে পরিণত হয়। তাদের অনেকেই পরিণত হয় জমাট বিষে। পেশীকে পুনর্গঠন করতে পারে না, মস্তিষ্ককে পুনর্গঠন করতে পারে না, স্মৃতিকে শাফল করতে পারে না। ফলে? নার্ভ শান্ত হয় না।

নির্ঘুমতা থেকে মনোযোগ রাখতে না পারা
—–
মনোযোগ রাখতে না পারার মানে হল, মস্তিষ্কের সিন্যাপ্সে কিছু ঘাঁটতি আছে, অথবা নিউরাল কানেক্টিভিটিতে কোন ঘাপলা আছে অথবা ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল নিউরোট্রান্সমিটারে কোন গন্ডগোল বা কমবেশি আছে।

মনোযোগের অভাব থেকে গরম মেজাজ
—–
যখন প্রশান্তভাবে মস্তিষ্ক কোন সিগন্যাল গ্রহণ করতে পারে না এবং প্রসেস করতে পারে না, তখনি তা মেজাজের উপর প্রভাব ফেলে। আমরা তখনি ক্ষিপ্ত হই বা অস্থির হই, যখন কিছু হজম করতে পারি না। হজমটা আসলে করে কে বলেন তো? মস্তিষ্ক। ও কেন করতে পারে না? প্রসেস করতে না পারার কারণ তার ব্যালান্সে এদিক সেদিক হচ্ছে। তার মানেই খিটখিটে ব্যবহার, কঠোর আচরণ।

গরম মেজাজ থেকে দীর্ঘস্থায়ী হাইপ
—–
যখন মস্তিষ্ক উত্তপ্ত থাকে এবং তা শীতল হওয়ার সুযোগ পায় না, তখন হাইপ বা অতি উত্তপ্ত অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। দিনে ঘুমালে রাতের ঘুমের মত কখনোই হবে না। রাতের ঘুমের জন্য আপনার জেনেটিক কোডিং সব প্রস্তুত করে, দিনের ঘুমের জন্য করে না। অতি দূরের শব্দ অ্যাবজর্ভ করে আমাদের চামড়া ও কান। সেটাকে প্রসেস করতে থাকে মস্তিষ্ক। এখন সে ঘুমের সময়ও ব্যস্ত থাকছে। চোখে আলো পড়া মানে হাজার প্রজন্মের জেনেটিক কোডিং অনুসারে, ঘুমের শেষ, তাই দিনের আলো চোখে পড়ছে মানেই মন নিজে জেগে উঠতে চাইছে, দেহ জেগে থাকার সিগন্যাল দিচ্ছে, কিন্তু মড়ার মত আমি ঘুমাচ্ছি। ঘুমাচ্ছি, উপকার পাচ্ছি না, কারণ ঘুমে দেহ সিগন্যাল দিচ্ছে জাগরণের। রাতে না ঘুমানোর কারণে নার্ভ শান্ত হচ্ছে না, অশান্ত নার্ভ মানেই দীর্ঘস্থায়ী হাইপ।

বাকীটা আর বলার কী থাকে! প্রশান্ত মস্তিষ্ক খাবারের স্বাদ পায় বেশি, রাতের ঘুম না হওয়ায় মস্তিষ্কের স্মৃতি অংশগুলো বেশ এলোমেলো থাকে, নতুন সংক্ষিপ্ত সময়ের স্মৃতিগুলো তাই প্রসেস করতে কম পারে, তাই আমরা চাবি লাগিয়ে খুলতে ভুলে যাই, ঘর থেকে বেরুনোর সময় ফ্যান বন্ধ করতে ভুলে যাই অথবা সময়মত অষুধটা খেতে ভুলে যাই, এমনকি বসকে কল করতেও, বা বাচ্চার ন্যাপি চেঞ্জ করতে।

এখন, কী করা যায়?
—–
রাতে ঘুমাতে গিয়ে ফোন দূরে রাখুন।
বিছানায় ফোন নিয়ে ঢুকবেনই না। কিছুতেই না। ঘুমের আগে অবসর আছে? একটু দেখুন, ঘাঁটুন। দূরে রেখে ঘুমান। দেশ রসাতলে গেলেও আপনার ঘুম নষ্ট করার মানে হয় না। দেশ আগে থেকেই রসাতলে যেয়ে আছে। আপনার ঘুম শুধু নষ্ট করতে পারবে প্রথম আলোর গরুরী খবর। ফেসবুকের ভয়ানক সংবাদ।
আলো নিভিয়ে দিন। আজ আসবে না? কাল ঘুম ঠিকই আসবে। নাহয় পরশু। নাহয় তরশু। না এসে যাবে কৈ! রাতে দেহ দেয় ঘুমের সিগন্যাল, ফোন দূরে থাকলে সব ঠিক। আসবেই।

দিনের বেলায় পাইকারি হারে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারকে নক করতে দিয়েন না। সব নোটিফিকেশন অফ করে রাখুন।

নিজেকে বোঝান, আমি তিন বেলা খাবার পর ১০ মিনিট করে সবগুলো অ্যাপ নিজে চেক করব। আমাকে অ্যাপ চালাবে না, আমি অ্যাপকে চালাবো। বিকালে বা সন্ধ্যায় অবসরে নাহয় ঘন্টাখানেক চালালাম।

জরুরী কিছু থাকলে ফোনতো খোলাই আছে। অ্যাপে কেউ কল করলে আমিতো টেরই পাবো, যখন খুলব নিজে থেকে। কিন্তু অ্যাপ আমাকে চালাবে না, বদলে দিবে না, ধ্বংস করবে না, আমি তাকে চালাবো, চাইলে বদলে দিবো, চাইলে ধ্বংস করবো। আমি অ্যাপদাস নই, অ্যাপ আমার দাস।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment