জান্নাতের সুসংবাদ কি কেবল দশজন সাহাবীই লাভ করেছেন?
কারো কারো ধারণা- সকল সাহাবীর মধ্য হতে কেবল দশজন সাহাবী জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করেছেন; যাদেরকে আশারায়ে মুবাশশারা বলা হয়। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়। তাঁরা ছাড়াও আরো অনেক সাহাবী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানে জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করেছেন।
একথা তো প্রায় সবারই জানা যে, নবীজীর নাতী হাসান-হুসাইন রা. জান্নাতের যুবকদের সরদার হবেন এবং তাঁদের মা নবীকন্যা ফাতেমা রা. জান্নাতের নারীদের সরদার হবেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন, আজ রাতে একজন ফেরেশতা অবতরণ করেছে, যে আর কখনো আসে নাই।… সে আমাকে সুসংবাদ শুনিয়েছে-
…فَاطِمَة سَيِّدَةُ نِسَاءِ أَهْلِ الجَنّةِ، وَأَنّ الحَسَنَ وَالحُسَيْنَ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الجَنّةِ.
ফাতেমা হবে, জান্নাতী নারীদের সরদার আর হাসান-হুসাইন হবে, জান্নাতের যুবকদের সরদার। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৭৮১
আরেক হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, একদিন জিবরীল আ. নবীজীর কাছে আসলেন এবং বললেন-
يَا رَسُولَ اللهِ! هَذِهِ خَدِيجَةُ قَدْ أَتَتْ، مَعَهَا إِنَاءٌ فِيهِ إِدَامٌ، أَوْ طَعَامٌ أَوْ شَرَابٌ، فَإِذَا هِيَ أَتَتْكَ فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلاَمَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّي، وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِي الجَنّةِ مِنْ قَصَبٍ، لاَ صَخَبَ فِيهِ، وَلاَ نَصَبَ.
আল্লাহ্র রাসূল! ওই যে খাদিজা একটি পাত্রে তরকারি অথবা খাবার বা পানি নিয়ে আপনার কাছে আসছে। যখন সে আপনার কাছে আসবে আপনি তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতে একটি মুক্তা-প্রাসাদের সুসংবাদ দেবেন; যেখানে না আছে কোনো শোরগোল, না আছে কষ্ট-ক্লান্তি। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৮২০
বদর যুদ্ধের শহীদ হারেছা ইবনে সুরাকা রা.-এর ব্যাপারে তো নবীজী জান্নাতুল ফিরদাউসের সুসংবাদ দিয়েছেন। বদর যুদ্ধে যখন তিনি শহীদ হলেন তখন তাঁর মা নবীজীর কাছে এসে ছেলে সম্পর্কে জানতে চাইলেন- সে কি জান্নাতে যাবে!… একপর্যায়ে নবীজী তাঁকে বললেন-
وَإِنّهُ فِي جَنّةِ الفِرْدَوْسِ.
আরে সে তো জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করেছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৯৮২
বেলাল রা.-এর ঘটনাও তো অনেকের জানা, যেখানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল রা.-কে বলেছেন-
فَإِنِّي سَمِعْتُ اللّيْلَةَ خَشْفَ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيّ فِي الْجَنّةِ.
আজ রাতে আমি জান্নাতে তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৫৮
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ইহুদী পণ্ডিত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর একবার নবীজী তাঁর ব্যাপারে বলেছেন-
إِنّهُ فِي الْجَنّةِ.
নিশ্চয় সে জান্নাতে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৮৩
কারো কারো অনুসন্ধানমতে এরকম সহীহ হাদীসেই ২৮ জন সাহাবীর কথা পাওয়া যায়, যাদের ব্যাপারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
এছাড়াও আরো ২০ জন সাহাবীর নাম পাওয়া যায়; কিন্তু সেগুলোর সূত্র নির্ভরযোগ্য নয়। (দ্র. মান বুশশিরা বিল জান্নাহ মিন গাইরিল আশারাহ, পৃ. ১০৫)
শেষ কথা হল, আশারায়ে মুবাশশারা নামে যে দশজন সাহাবী প্রসিদ্ধ, কেবল তাদেরকেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন- বিষয়টি এমন নয়; বরং এ দশজন সাহাবীকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মজলিশে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং তাঁরা প্রথম সারির সাহাবী, ফলে তাঁদের বিষয়টি খুব বেশি প্রসিদ্ধ হয়েছে; আর এখান থেকেই কিছু মানুষের মাঝে এই ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল এ দশজন সাহাবীকেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।