রাজধানী রিয়াদের এক কলেজ ছাত্রী অসুস্থ্য হলে তাকে হসপিটালে নেয়া হয়, পরীক্ষা নীরিক্ষা শেষে জানা যায় তার ক্যান্সার হয়েছে, চিকিৎসকরা দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যাওয়ার পরামর্শ দেন, কিন্তু মেয়েটির পরিবার তার চিকিৎসার খরচ বহনে সক্ষম ছিল না, অথবা মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত সুস্থ হয় না, তাই তারা অযথা অর্থ অপচয়ে আগ্রহী ছিল না, কিন্তু অত্যান্ত মেধাবী মেয়েটি শেষ চেষ্টা চালাতে তার একমাত্র সহোদর কে অনুরোধ করে, কারণ তার বাবা মা দুজনেই অনেক আগেই মৃত্যু বরণ করেন।আর রেখে যান তিন স্ত্রীর পক্ষের ১৮ জন সন্তান সন্ততি।
ভাই তার একমাত্র বোনটির অনুরোধ রক্ষা করার জন্য আগ্রহী হল, কিন্তু চাকরির বেতন ছাড়া আর কোন অবলম্বন খুঁজে পেল না, তবে তার একটি ছোট্ট বাড়ি ছিল , কিন্তু তার স্ত্রী এ বাড়ি বিক্রি করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
অবশেষে সাত পাঁচ ভেবে লোকটি বাড়িটি বন্ধক রেখে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করল, ইতোমধ্যে স্ত্রী রাগ ক্ষোভ ও অভিমানে বাপের বাড়িতে গিয়ে উঠলো।
লোকটি প্রায় ই ছয়মাস ধরে চিকিৎসা চালিয়ে অবশেষে বোনটি মারা যায়, এদিকে চাকরিটা ও চলে গেছে।
দূতাবাসের সহায়তা ই লোকটি বোনের লাশ নিয়ে রিয়াদ ফিরল এবং আয়ের কোন উৎস না পেয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে জীবন যাত্রা শুরু করল, এদিকে বাড়ি বন্ধক রাখার কারণে স্ত্রী আর ফিরে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
ড্রাইভারের জীবন বড় ই কষ্টের।এক রাতে লোকটি শুয়ে শুয়ে বোনের স্মৃতিচারণ করছিল,সে (বোন)মৃত্যুর আগে দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে মুনাজাতে বলেছিলঃ
হে আল্লাহ! আমার জন্য আমার ভাই চাকরি হারিয়েছেন স্ত্রী হারিয়েছেন বাড়িটি বন্ধক রেখেছেন সুতরাং তুমি তাকে বৃষ্টির পানির মতো অঢেল সম্পদ ও সম্মান দিও।
লোকটি বলছিল হ্যায় আফসোস,আমি কি বোকামিটা করলাম! এসব ভাবতে ভাবতে রাত শেষ হয়ে যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হচ্ছে কারণ রাতে ঘুম হয়নি ,সকাল এগারটার দিকে এক দুর সম্পর্কের আত্মীয় এসে একটি সুসংবাদ দিলেন যে তোমার অমুক আত্মীয়ের কোন সন্তান সন্ততি না থাকায় ‘কালালা’ নীতিমালার আলোকে তুমি কিছু সম্পদ পাবে, লোকটি তথায় গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানল, সত্য সত্যই একটি এয়ারপোর্ট এলাকার সংলগ্ন বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছে সে।
প্রাপ্ত সম্পত্তির সামান্য অংশ বিক্রি করে প্রথমে সে স্বহস্তে তৈরি বন্ধক রাখা বাড়িটি বন্ধক মুক্ত করে এবং স্ত্রীর নামে রেজিষ্ট্রেশন করে এর কাগজ পত্র ও তালাক নামা স্ত্রীর নামে পাঠিয়ে দেয়, যদিও স্ত্রী বেচারী নিজের ভুল বুঝতে পেরে রুজূ করার (ফেরত নেয়ার) অনুরোধ জানায় এবং এ বিষয়ে ইনসিসট করে, কিন্তু লোকটি কিছুতেই সেই প্রানহীন পাত্রটি আর ফেরত নিতে রাজি হয়নি।
সত্য সত্যই লোকটির জীবনের শেষদিন গুলো বড় ই সুখের ছিল, ভাল স্ত্রী,বাড়ি,গাড়ি ব্যবসা বানিজ্য সুসন্তান কোন কিছুর অভাব ছিল না।
‘সাকরাতুল মাউতে’র সময় বোনের অন্তর থেকে উৎসারিত দুআ একজন নিষ্ঠাবান ভাইয়ের কপাল খুলে দিয়েছে।
আমরা নিকট আত্মীয়ের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে পারলে কোন না কোন ভাবে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হব না ইনশাআল্লাহ ।
এ গল্প আরবিতে লেখা, লেখিকা সেই লোকটির বড় মেয়ে রিমা (ছদ্মনাম)





Users Today : 352
Users Yesterday : 767
This Month : 14774
This Year : 186645
Total Users : 302508
Views Today : 38115
Total views : 3614858