প্রশ্নঃ আমাদের দেশে মৃত্যুর তৃতীয় দিনের সময় কুলখানী ও ৪০ দিনের সময় চেহ্লাম পালন করা হয়। এর কোন প্রমান আছে কি-না? কুলখানী অর্থ কী এবং চেহ্লাম অর্থ কী? এসব অনুষ্ঠানে কি কি করতে হয়?
জওয়াবঃ কুলখানী ও চেহ্লাম অর্থঃ যথাক্রমে তৃতীয় দিন এবং ৪০ দিনে মরহুম/মরহুমার রূহের মাগফিরাতের জন্য ফাতেহাখানী, যিয়ারত, মিলাদ পাঠ ও ফকির মিছকিনকে খাদ্য বিতরণ করে তার সওয়াব মৃতব্যক্তির রূহে পৌঁছিয়ে দেওয়া। এখানে মূল বিষয় হলো ইছালে ছাওয়াব- যা মুর্দারের উপকারে আসে। এর বিস্তারিত বিবরণ ইছালে ছাওয়াব, উরছ, ফাতেহাখানী অধ্যায়ে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। দিন ও তারিখ নির্ধারণ করা হয় বিভিন্ন সুবিধার কথা চিন্তা করে। এটাকে বিদ্আত বা দোষণীয় বলা যাবেনা। এমনিভাবে- দিন তারিখ নির্ধারণ করা হয় ওয়াজ মাহফিলের জন্য, উরুছের জন্য এবং বিবাহের জন্য। এগুলো মুবাহ্ বা জায়েয।
তিনদিন বা ৪০ দিন নির্ধারণ করার মধ্যে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ধারাবাহিকভাবে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলঃ
(১) মৃতের ঘরে তিনদিন পর্যন্ত খাদ্য প্রেরণ-
عن عبد اللّٰہ بن جعفر قال لما جاء نعی جعفر قال النبی ﷺ اصنعوا لالی فعفر طعاما فقد اتاھم میشغلھم رواہ الترمذی وابوداود وابن ماجۃ
অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জা’ফর ইবনে আবি তালিব (রাঃ) বর্ণনা করেন- যখন অষ্টম হিজরীতে আমার পিতা হযরত জা’ফর তাইয়ার (রাঃ) -এর শাহাদাত সংবাদ মদীনায় পৌঁছলো- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম ও আমাদের আত্মীয়দেরকে বল্লেন- “তোমরা জা’ফরের পরিবারবর্গের জন্য খাদ্য তৈরী করে প্রেরণ করো। কেননা, তাঁদের ঘরে এমন মুসিবত এসেছে- যা তাঁদেরকে বিষন্ন করে রেখেছে”। (তিরমিযি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
ব্যাখ্যা : আল্লামা তীবী (রহঃ) বলেন- “আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিদের জন্য মোস্তাহাব ও মানবিক কাজ হলো- মৃতের ঘরে রান্নাকরা খাদ্য প্রেরণ করা। কেননা, পরিবার পরিজন ঐ সময় শোকে থাকেন। তাই তারা রান্নাবান্না করার সময় পান না। সেজন্য অন্ততঃ একদিনের খাদ্যদ্রব্য প্রেরণ করা উত্তম। কোন কোন মোহাদ্দেস বলেছেন- যেহেতু শোক পালনের সীমা হলো তিনদিন, তাই তিনদিন পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ করাই উত্তম। (মিশকাত হাশিয়া ৫- অত্র হাদীস দ্রষ্টব্য)। তাই তিনদিন শোক পালন শেষ করে কুলখানীর ব্যবস্থা করে মুর্দারের জন্য ফাতিহা ও চার ক্বুল পাঠ করা হয়।
(২) হযরত আমির হাম্যা (রাঃ) -এর কুলখানী, সপ্তম দিবসের ফাতেহা ও চল্লিশা বা চেহ্লাম পালিতঃ
হাজী ইমদাদুল্লাহ্র খলিফা এবং ‘আন্ওয়ারে ছাতেয়া” নামক সর্বজনপ্রিয় কিতাবের লেখক আল্লামা আবদুস ছামী’ রামপুরী (রহঃ) উক্ত প্রন্থের ১৪৫ পৃষ্ঠায় হযরত আমির হামযা (রাঃ) -এর শাহাদাতের তৃতীয় দিবসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক দানখয়রাত করা, সপ্তম দিবসে দানখয়রাত করা, চল্লিশতম দিবসে দানখয়রাত করা, ষান্মাসিক ও বার্ষিক দানখয়রাত করার রেওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন। (দেখুন- আন্ওয়ারে ছাতেয়া পৃষ্ঠা ১৪৫)। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা।
বুঝা গেল- প্রচলিত কুলখানী ও চল্লিশা বা চেহ্লাম প্রথা সুন্নাত এবং পুরাতন রীতি। যারা এটাকে নুতন রীতি বলে- তারা ভ্রান্ত। যেমন, ইসলাহে রুছুম -লেখক থানবী। হুযুরের সদ্কা খয়রাতের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা ছিল না সত্য- কিন্ত অনুষ্ঠান করার অন্য প্রমাণ তো আছে। যেমন-
(৩) শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্র কুলখানী অনুষ্ঠানঃ
======
শাহ্ আব্দুল আযীয (রহঃ) ইবনে শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ আপন মালফুযাত ৮০ পৃষ্ঠায় তাঁর পিতা শাহ ওয়ালিউল্লাহর কুলখানীর অনুষ্ঠানের বর্ণনা এভাবে লিখেছেন-
روز سوم کثرت ہجوم مردم آ قدر بود کہ بیرون از حساب است ۔ ھشتاد ویک کلام اللّٰہ بہ شمار آمدہ وزیادہ ھم شدۃ باشد۔ وکلمہ را حصر نیست ۔
অর্থ : “শাহ্ আবদুল আযীয দেহ্লভী (রহঃ) বলেন- “আমার পিতার মৃত্যুর তৃতীয় দিবসে মানুষের এমন ভীড় হলো যে- তা হিসাবের বাইরে। অনুষ্ঠানে কোরআন শরীফ একাশি খতম পর্যন্ত গণনা করা হয়েছে। এর অতিরিক্ত খতমও হয়েছিল। কলেমা তাইয়্যেবা বা খতমে তাহ্লীল পড়া হয়েছিল- বেশুমার”। (মলফুযাতে আযিযী)
বুঝা গেল- তৃতীয়দিনের কুলখানির অনুষ্ঠান পূর্ব হতে প্রচলিত ছিল এবং তা শাহ্ ওয়ালিউল্লাহর খান্দানের গৃহীত রেওয়াজ। দেহবন্দীরা তো কথায় কথায় শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্র দোহাই দেয়। এবার বলুন- কুলখানী জায়েয- না- নাযায়েয?
(৪) শেখ আবদুল হক দেহলভী (রহঃ) -যিনি ফার্সীতে মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা লিখে নাম রেখেছেন “আশ-আতুল লুমুআত”। উক্ত গ্রন্থে মিশকাত শরীফের “যিয়ারাতুল কুবুর” অধ্যায়ের একটি হাদীসের ব্যাখ্যায় কুলখানী ও সাতদিন পর্য্যন্ত দানখয়রাত করা সম্পর্কে লিখেছেন-
’’تصدیق کردہ شود از میت بعد رفتن او از عالم تا ھفت روز ‘‘
অর্থঃ “মৃত্যুর পর সাতদিন পর্য্যন্ত মৃতব্যক্তির জন্য দানখয়রাত করবে”।
(৫) উক্ত কিতাবের উক্ত অধ্যায়েই উল্লেখ আছে- রূহ্ আপন গৃহে আগমন করেঃ
’’وبعض روایات آمدہ است کہ روح میت می آید خانۂ خود را شب جمعۃ ۔ پس نظر می کند کہ تصدق کنند از وے یانہ ‘‘
অর্থঃ “কোন কোন রেওয়ায়াতে এসেছে যে, জুমার রাত্রে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রে) মৃত ব্যক্তির রূহ্ তার ঘরের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে এবং তার জন্য কেউ দান খয়রাত করছে কিনা- তা দেখে”।
বুঝা গেল- মৃতব্যক্তিরা জীবিত স্বজনদের দানখয়রাতের প্রত্যাশী হয়ে নিজ গৃহে আগমন করে। যদি কেউ দান করে, তাহলে খুশী হয়ে দোয়া করে প্রত্যাবর্তন করে। নতুবা বিমুখ হয়ে ফিরে যায়।
(৬) ইতিপূর্বে রূহের অবস্থান অধ্যায়ে কয়েকটি মন্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে। ইমাম মালেক (রাঃ) ৫ নম্বরে বলেন-
ان الروح مرسلۃ تذھب حیث تشاء
অর্থাৎ “রূহ্ মুক্ত অবস্থায় থাকে- যেখানে ইচ্ছা যাতায়াত করতে পারে”। (কিতাবুর রূহ্ পৃষ্ঠা ১৫৪)। সুতরাং শেখ আবদুল হক দেহলভী (রহঃ) -এর “আশ্আতুল লুমুআত” গ্রন্থের মন্তব্য ইমাম মালেকের রেওয়াতের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। অতএব, জুমুয়ার রাত্রে রূহের আপন গৃহে আগমন এবং আপনজনদের দান-খয়রাতের প্রত্যাশা করা সম্পূর্ণ সঠিক। সুতরাং প্রতি সপ্তাহে মুর্দারের জন্য দান খয়রাত করা, মিলাদ পড়া সাওয়াবের অনুষ্ঠান করা মোস্তাহাব। রাসুলকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক প্রতি সপ্তাহে হযরত আমির হামযা (রাঃ) -এর জন্য দানখয়রাত করার পিছনে রূহের আগমনের বিষয়টিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
(৭) ফাতেহাখানীর নিয়মঃ
======
হাদীস শরীফে ফাতেহাখানী, কুলখানী ও ইছালে সাওয়াবের পদ্ধতি-
قال رسول اللّٰہ ﷺ من قرا الاخلاص احد عشر مرۃَ ثم وھب اجرھا للاموات اعطی من الاٰخر بعدد الاوات۔
অর্থঃ রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন”- যেব্যক্তি এগারবার ছুরা ইখলাছ পাঠ করে মৃতব্যক্তির নামে ছাওয়াব দান করে দেয়- তার আমল নামায়ও সকল মুর্দেগানের সমান সাওয়াব লিখা হয়”। (দুররে মুখতার -“বাবুদ দাফন ওয়াল কিরাআত লিল মাইয়েত” অধ্যায়)।
(৮) ফতোয়া শামীতে উক্ত অধ্যায়ে র্দোরে মুখতারের এবারতের ব্যাখ্যায় সাওয়াব রেছানীর পূর্ণ পদ্ধতি ও দোয়া মুনাজাত সম্পর্কে উল্লেখ আছে-
ویقرأ من القراٰن ما تیسر لہ من الفاتحۃ واول البقرۃ وآیۃ الکرسی ، وآمن الرسول الی آخر السورۃ، وسورۃ یٰس، وتبارک الذی الی آخر السورۃ، وسورۃ التکاثر والاخلاص اثنی عشر مرۃ او احدی عشر مرۃ او سبعا او ثلاثا ثم یقول اللھم اوصل ثواب ما قرا ناہ الی فلان او الیھم ۔
অর্থাৎ : “মুর্দারের জন্য কোরআন থেকে যা কিছু সম্ভব তিলওয়াত করবে। যেমন- ছুরা ফাতেহা, ছুরা বাক্বারার প্রথম পাঁচ আয়াত, শেষ তিন আয়াত, আয়াতুল কুরছি, ছুরা ইয়াছিন, ছুরা মুলক, ছুরা তাকাছুর, ছুরা ইখ্লাছ ১২ বার অথবা ১১ বার অথবা ৭ বার অথবা ৩ বার তিলাওয়াত করবে এবং এভাবে মুনাজাত করবে- “হে আল্লাহ্! আমরা যা কিছু তিলাওয়াত করেছি- তুমি তার সাওয়াব অমুককে অথবা অমুক অমুককে পৌঁছিয়ে দাও”। (শামী)
মন্তব্য : ফতোয়ায়ে শামীর ইবারতে বুঝা যায়- শুধু তিলাওয়াত করে মনে মনে সাওয়াব পৌঁছানোই যথেষ্ঠ নয়- বরং সম্মিলিতভাবে দোয়া মুনাজাত করার উপরও তাতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে- ما قراناہ বহুবচনে উল্লেখ করে। অতএব, লোক সমাগম ও অনুষ্ঠান পালনেরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে উক্ত ফতোয়ায়। এতে সম্মিলিত অনুষ্ঠানের দলীল পাওয়া গেল।
(৯) তাবাররুক বা খাদ্য সামগ্রী সামনে রেখে ফাতেহা পাঠ করা
শাহ্ আবদুল আযীয মোহাদ্দেস দেহলভী (রহ:) তাঁর ফতোয়া আযীযীর ৪১ পৃষ্ঠায় তাবাররুক বণ্টনের কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন –
اگر ما لیدہ وشیر برائے فاتحہ بزرگے بقصد ایصال ایصال ثواب بروپختہ بجوراند جائز است ۔ مضائقہ نیست
অর্থঃ “যদি দুধ বা মালিদা রান্না করে কোন বুযর্গ ব্যক্তির রূহে ইছালে ছাওয়াবের নিয়তে মানুষকে খাওয়ায়- তাহাও জায়েয এবং এতে বিন্দুমাত্রও দোষ নেই”।
(১০) ফতোয়ায়ে আযীযী ৭৫ পৃষ্ঠায় ইমাম হাসান হোসাইনের নামে নেয়াযের নিয়ম-
طعامیکہ ثواب آں نیاز حضرت اماتین براں قل وفاتحۃ ودرود خواندن متبرک می شوود وخوردن بسیار خواب است۔
অর্থ : “যেসমস্ত খাদ্য হযরত ইমাম হাসান-হোসাইন (রা:) -এর নামে নেয়ায দেয়া হয়- তাতে ছুরা ফাতিহা, ছুরা ইখলাছ ও ﷺ শরীফ পাঠ করা হলে অত্যন্ত বরকত হয় এবং উহা খাওয়াও উত্তম”।
ব্যাখ্যা : বুঝা গেল- বিভিন্ন বুযর্গদের নামে এভাবে নেয়ায দেয়া উত্তম, যেমন গাউছেপাক ও খাজা গরীব নওয়াযের ফাতেহা এবং নেয়ায। সুন্নী মুসলমানগণ ফতোয়া এবং বুযর্গদের আমল অনুসরণ করে থাকে। ওহাবীরা হলো কপাল পোড়া- তাদের ভাগ্যে না আছে নেয়ায- না আছে র্শিনী।
(১১) হযরত জোনায়েদ বাগদাদী (রহ:)-এর গোপন দান খয়রাতের একটি ঘটনা
হযরত জোনায়েদ বাগদাদী (রহ:) -এর জনৈক কাশ্ফধারী মুরিদ একদিন দেখলেন- তার মা দোযখের আযাবে আছ্নে। তাই সে কান্না করছিল। হযরত জোনায়েদ বাগদাদী (রহ:) তাঁর গোপন পঠিত একলক্ষ পাঁচহাজার বার খতমে তাহলীল বা কলেমার খতম মনে মনে মুরিদের মায়ের মাগফিরাতের জন্য দান করে দিলেন। (যয়ীফ হাদীসে এরূপ বর্ণিত আছে)। হযরত জোনায়েদ (রহ:) দেখতে পেলেন- তাঁর মুরিদের চেহারা খুশীতে উজ্জল হয়ে উঠেছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন- তার মা এখন জান্নাতের সুখভোগ করছে। হযরত জোনায়েদ (রহ:) মুরিদের কাশ্ফের মাধ্যমে বুঝতে পারলেন- হাদীসখানা মূলতঃ সহীহ। কিন্তু রাবী বা বর্ণনাকারীর দূর্বলতার কারণে যয়ীফ হাদীস বলে গণ্য হয়েছে। উক্ত হাদীস দ্বারাও তিনি বুঝতে পারলেন, মুরিদের কাশ্ফ সঠিক। কুলখানী বা ফতেহাখনীতে চনাবুট নিয়ে একলক্ষ পাঁচহাজার বার খতমে তাহলীলও পাঠ করা হয়। সুতরাং কুলখানীকে বিদ্আত বলে তা বন্ধ করে দেয়ার মধ্যে রয়েছে মুর্দাকে বঞ্চিত করা। এটা ঠিক নয়।
(১২) খাদ্য সামনে রেখে কিছু পড়ে হাত তুলে দোয়া করা সুন্নত
কেউ কেউ ধোকায় ফেলার উদ্দ্যেশ্যে বলে থাকে- খাদ্য সামনে রেখে দোয়া করা ঠিক নয়। তাদের এই ধারণা ভুল। খাওয়ার পূর্বে বা পরে উক্ত খাদ্যের সাওয়াব মুর্দাকে পৌঁছানো জায়েয। খানা খাওয়ার পর দোয়া করার বহু হাদীস আছে। যেমন- হুযুর (রা.) এরশাদ করেন- “কেউ তোমাকে মেহমানদারি করলে খাওয়ার পর ঘরের মালিকের জন্য দোয়া কর”।
খানা সামনে রেখেও দোয়া করার বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন-
(১২-ক) মিশকাত বাবুল মো’জিযাত দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত আছে- হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) সামান্য (২১টি) খুরমা হুযুর (ﷺ)-এর খেদমতে পেশ করে তাতে বরকতের জন্য দোয়া চাইলেন। তিনি বলেন-
فضمھن ثم دعالی فیھن بالتبرکۃ
অর্থাৎ- “হুযুর (ﷺ) উক্ত ২১টি খুরমা একত্রিত করে বরকতের জন্য দোয়া করলেন” (মিশকাত)।
(১২-খ) মিশ্কাত বাবুল মু’জিযাত প্রথম অনুচ্ছেদে তাবুক যুদ্ধে অল্প খেজুরে (২১টি) হুযুর (ﷺ) হাত রেখে বরকতের জন্য দোয়া করলেন। ত্রিশ হাজার সৈন্য উক্ত খুরমা খাওয়ার পরেও দেখা গেলো-ঐ ২১টি খুরমা-ই থলের মধ্যে রয়ে গেছে। হুযুর (ﷺ) ২১টি খুরমা হযরত আবু হোরায়রাকে দান করে বললেন- এর থেকে তোমরা নিজেরা খাবে, বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়াবে এবং ফকির মিছকিনকে দান করবে”। এভাবে ঐ খুরমা দিয়ে হযরত আবু হোরায়রা (রা:) ৩৫ হিজরী পর্যন্ত ২৬ বৎসর যাবত জীবন যাপন করেছেন। তিনি বলেন- আনুমানিক ৬০ ওয়াছাক বা পনেরশত মন খুরমা আমরা খেয়েছি। হযরত ওসমান (রা:)-এর শাহাদাতের দিন ঐ থলেটি লুট হয়ে যায়। ” (যিক্রে জামীল)।
(১২-গ) “হযরত জয়নব বিন্তে জাহাশ (রা.) -এর সাথে হুযুরের বিবাহের দিন হযরত জাবেরের স্ত্রী উম্মে ছোলায়ম (রা:) ওলিমার জন্য সামান্য খাদ্য তৈরি করলেন। কিন্ত লোক উপস্থিত হলো বেশি। হুযুর (ﷺ) ঐ খাদ্য (হারিছার) উপর হাত মোবারক রেখে কিছু দোয়া করলেন। এতে সকলে খেয়ে আরো কিছু খাদ্য বেঁচে যায়”। (মিশ্কাত)
(১২-ঘ) হযরত জাবের (রা.) খন্দকের যুদ্ধের সময় একটি ছোট বক্রী যবেহ্ করেন এবং এক ছা’ বা চার সের পরিমাণ আটা তৈরি করে হুযুর (ﷺ) কে খানার দাওয়াত করলেন। হুযুর (ﷺ) প্রায় পনেরশত সাহাবী নিয়ে উপস্থিত হলেন। ডেক্সির গোস্তে এবং আটার মধ্যে সামান্য থুথু মোবারক ফেলে দোয়া করলেন এবং খাদ্য বণ্টন করতে শুরু করলেন। পনেরশত লোক তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার পরও ঐ পরিমান গোস্ত এবং ঐ পরিমান আটা রয়ে গেল। পরে তিনি বক্রীর হাঁড়গুলো একত্রিত করে দোয়া পড়ে ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে বকরী জীবিত হয়ে কানঝাড়া দিয়ে উঠলো।
হযরত জাবেবের দুইছেলে বকরী যবেহের নমুনা দেখাতে গিয়ে ছোটজন যবেহ্ হয়ে গেল। বড়জন ঘরের ছাদ থেকে মায়ের ভয়ে লাফ দিয়ে নীচে পড়ে মৃত্যুবরণ করলো। হুযুর (ﷺ) খানা খাওয়ার সময় কাপড়ে ঢাকা যবেহ্কৃত দুই ভাইকে ডাক দেয়ার সাথে সাথেই তারা আবার জীবিত হয়ে গেলেন। (মজমূউল ফতোয়া ও ড. শহীদুল্লাহর ইসলাম প্রসঙ্গ)।
মন্তব্য : উক্ত ঘটনা প্রমাণ করে যে, খানা খাওয়ার পূর্বে খাদ্য সামনে রেখে প্রথমে দোয়া করা ও পরে খাদ্য গ্রহণ করা উত্তম।
(১২-ঙ) যারা বলে-খাদ্য সামনে রেখে দোয়া পড়া নাজায়েয- তারাও কিন্ত খাদ্য সামনে রেখে প্রথমে “বিসমিল্লাহিল্লাযী লা ইয়াদুররু মা’আ ইছমিহি সাইউন” বলে দোয়া পড়েন। পরে খানা শুরু করেন। খাওয়ার পূর্বে দোয়া করা বা দোয়া পড়া নাজায়েয হলে তারা কেন তা করছেন? দোয়া পড়া জায়েয হলে হাত তোলা নাজায়েয হবে কেন? এটা তাদের গোঁড়ামী বৈ আর কিছুই নয়। তাদের দেওবন্দের মুরুব্বী থানবী সাহেব হলেন এই কু-পরামর্শের হোতা।