(১) হযরত আবু ছায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- রাসুলকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ হাদীসের এক অংশে এরশাদ করেছেনঃ
فاذا دفن العبد المومن قال لہ القبر مرحبا واھلا اما ان کنت لاحب من یمشی علی ظھری ای فااذا ولیتک الیوم وصرت الی فستری صنیعی بک ۔ فیتسع لہ مد بصرہ یفتح لہ باب الی الجنۃ ۔ واذا دفن العبد الفاجر وا الکافر قال لہ القبر لامرحبا ولا واھلا۔ اما ان کنت لا بغض من یمشی علی ظھری الی ۔ فاذا ولیتک الیوم وصرت الی فستری صنیعی بک ۔ قال فیلتئم علیہ حتی یلتقی تختلف اخلاعہ قال : قال رسول اللّٰہ ﷺ باصابعہ فادخل بعضھا فی جوف بعض ۔ قال ویقیض اللّٰہ لہ تسعۃ وتسعین تنینا۔ لوان واحدا نفخ فی الارض ماانبتت شیئا ما بقیت الدنیا ۔ فتنھشہ حتی یفضی بہ الی الحساب ۔ قال قال رسو ل اللّٰہ ﷺ انما القبر روضۃ من ریاض الجنۃ او حفرۃ من حفر النار ۔ وقال ابو عیسی ھذا حدیث غریب ۔
অর্থঃ রাসুল মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম এরশাদ করেছেন- “যখন মৃত মোমেন বান্দাকে দাফন করা হয়, তখন কবর তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলে “মারহাবান আহ্লান”। আরো বলে- জেনে রেখো- তুমি আমার উপরিভাগে বিচরণকারীদের মধ্যে ছিলে সর্বাধিক প্রিয়। আজ যখন আমি তোমার উপর কর্তৃত্ব পেয়েছি এবং তুমিও আমার কাছে এসে গেছো- তখন অচিরেই আমার সুব্যবহার দেখতে পাবে। অত:পর তাঁর কবর তাঁর দৃষ্টিসীমা পর্য্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যাবে এবং তাঁর জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজাও খুলে দেয়া হবে”।
“আর যখন কাফির ও প্রকাশ্য গুনাহ্গার বান্দাকে দাফন করা হয়- কবর তাঁকে বলে- তোমার জন্য “মারহাবান আহ্লান” সূচক অভ্যর্থনা নেই। জেনে রেখো, তুমি আমার উপরিভাগে বিচরনকারীদের মধ্যে ছিলে আমার সর্বাধিক অপ্রিয়। আজ যখন আমি তোমার উপর কর্তৃত্ব পেয়েছি এবং তুমি আমার কাছে এসে গেছো- এখন অচিরেই তোমার সাথে আমার আচরণ প্রত্যক্ষ করবে”। রাবী বলেন- রাসুলকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একহাতের অঙ্গুলি অন্য হাতের অঙ্গুলীর ফাঁকে ঢুকিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন- কিভাবে একদিকের হাড্ডি অন্য দিকে চলে যাবে এবং পরস্পর লেগে যাবে”।
অত:পর রাসুল (ﷺ) এরশাদ করলেন- “আল্লাহ্ তায়ালা কাফির ও ফাজির ব্যক্তির কবরে নিরানব্বইটি বিষাক্ত সাপ লেলিয়ে দিবেন। তাঁর একটি সাপ যদি একবার যমিনে নিশ্বাস ছাড়তো- তাহলে কিয়ামত পর্য্যন্ত যমীনে কোন শস্য ফলতোনা। ঐ সাপগুলো তাঁকে কিয়ামত পর্য্যন্ত খাব্লিয়ে খাব্লিয়ে খেতে থাকবে এবং হিসাব নিকাশে তাঁকে পৌঁছিয়ে দিবে”। রাবী বর্ণনা করেন- অত:পর রাসুলকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন- ”কবর হচ্ছে মোমেনদের জন্য বেহেস্তের বাগানের একটি বাগান (রওযা) এবং কাফির ও ফাজিরের জন্য দোযখের গর্তসমূহের একটি গর্ত”।
আবু ইছা তিরমিযি বলেন- এই হাদিসখানা গরীব- অর্থ্যাৎ- অল্প সংখ্যক রাবী কর্তৃক বর্ণিত।
উল্লেখ্য- মোমিন বান্দার সাথে যদি যমিন এরূপ সুন্দর আচরন করে-তাহলে হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর সাথে কি খারাপ আচরন করতে পারে? বুঝা গেল- আবু যর গিফারী (রাঃ)-এর নামে কথিত হাদীসখানা সঠিক নয়- (জলিল)।
(২) আবদুল্লাহ্ ইবনে ওবায়েদ মরফু’ হাদীসে বলেন-
وخرج ھناد بن السری قال حدثنا حسن الجعفی عن مالک بن مغول عن عبد اللّٰہ بن عبید بن عمیر قال : یجعل اللّٰہ للقبر لسانا ینطق بہ ۔ فیقول ابن آدم کیف نسیتنی اما عملت انی بیت الدود : وبیت الوحدہ وبیت الوحشۃ
অর্থঃ হান্নাদ ইবনে ছিররি হাদিস সংগ্রহ করেছেন হাছান জু’ফী থেকে শুনে: তিনি শুনেছেন মালেক ইবনে মুগাওয়াল থেকে। তিনি শুনেছেন আবদুল্লাহ্ ইবনে ওবায়েদ ইবনে ওমায়ের থেকে। ইবনে ওবায়েদ মারফু হাদীস রেওয়ায়াত করেন- “আল্লাহ্পাক কবরকে কথা বলার শক্তি (জিহ্বা) দিবেন। কবর এ জিহ্বা দ্বারা কথা বলবে। কবর বলবে- হে বনী আদম! কিভাবে তুমি এতদিন আমার কথা ভুলে গিয়েছিলে? তুমি কি জাননা- আমি অসংখ্য কিড়া মাকড়ের বাসস্থান, একাকী থাকার ঘর এবং ভয়ভীতির ঘর”? (আত্-তাযকিরাহ্ পৃ: ১০৫)।
(৩) আবদুল্লাহ্ ইবনে ওবায়েদ আরও বলেন-
وقال ھناد بن السوی حدثنا وکیع عن مالک بن مغول عن عبد اللّٰہ بن عبید بن عمیر قال ان القبر لیبلی ویقول فی بکاۂ انا بیت الوحشۃ ان ابیت الوحدۃ ان ابیت الدود۔
অর্থঃ হান্নাদ ইবনে ছিররি ওয়াকি’ সালেক ইবনে মুগাওয়াল, আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওবায়েদ ইবনে ওমায়ের সুত্রে উক্ত রেওয়ায়াতকে এভাবে উল্লেখ করেছেন- “কবর কান্নাকাটি করবে এবং কান্নার মধ্যেই বলবে- আমি ভয়ভীতির ঘর, আমি একাকী থাকার ঘর এবং কিড়াপোকায় পরিপূর্ণ ঘর ”। (ঐ)
(৪) আবু ওমর (রহঃ) বলেছেন-
وذکر ابو عمر بن عبد البر، روی عن یحیی بن جابر الطائی عن ابن عائذ الازدی عن غضیف بن الحارث قال : اتیت بیت المقدس ان اوعبد اللّٰہ بن عبید بن عمیر قال : فجلسنا الی عبد اللّٰہ بن عمرو بن العاص رضی اللّٰہ عنہ فسمعتہ یقول : ان القبر یکلم العبد اذا وضع فیہ فیقول : یا ابن آدم ما غرک بی الم تعلم انی بیت الوحدۃ الم تعلم انی بیت الظلمۃ الم تعلم انی بیت الحق ۔ یا ابن آدم ما غرک بی ؟ لقد کنت تمشی حولی فد ادا ۔ قال ابن عائذ قلت لغضیف ما الفداد یا ابا اسماعیل ؟ قال کبعض مشیتک یا ابن اخی قال غضیف فقال صاحبی وکان اکبر منی ۔ لعبد اللّٰہ بن عمرو رضی اللّٰہ عنہ ۔ فان کان مومنا فماذا لہ؟ قال یوسع لہ فی قبرہ ویجعل منزلہ اخضر ویعرج بروحہ الی السماء ۔ ذکرہ فی کتاب التمھید ۔
অর্থঃ আবু ওমর ইবনে আবদুল বার বর্ণনা করেছেন ইয়াহ্ইয়া ইবনে জাবের ত্বায়ী থেকে, তিনি ইবনে আয়েয ইজ্দী থেকে শুনেছেন, তিনি গাদীফ ইবনে হারেছ থেকে শুনেছেন। গাদীফ বলেন- আমি এবং আমার সাথী বন্ধু আবদুল্লাহ্ ইবনে ওবায়েদ ইবনে ওমায়ের- আমরা দু’জনে মিলে সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বাইতুল মোকাদ্দাস সফর করি। আমরা দুজন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাঃ) -এর পার্শ্বে গিয়ে বসলাম। আমরা শুনতে পেলাম- তিনি নবীজির একটি হাদীস বলছেন- “কবর মৃতব্যক্তির সাথে কথা বলবে- যখন তাঁকে কবরে রাখা হবে- কবর মৃতব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলবে- “হে আদম সন্তান! আমার সম্পর্কে তোমাকে কে ধোকায় ফেলে রেখেছিল? তুমি কি জাননা- আমি একাকীত্বের ঘর! তুমি কি জননা- আমি অন্ধকারের ঘর! তুমি কি জাননা- আমি অনিবার্য ঘর? (সুতরাং আমার কাছে আসতেই হবে)। “হে আদম সন্তান! তোমাকে আমার সম্পর্কে কে ধোকায় ফেলে রেখেছিল? তুমিতো আমার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতে অহংকার করে”।
দুই বন্ধুর মুখে হযরত আবদুল্লাহ্র (রাঃ) উক্তি শুনে বর্ণনাকারী প্রথম বন্ধু গাদীফ ইবনে হারেছকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে ঈসমাঈলের পিতা গাদীফ! হযরত আবদুল্লাহ্ (রাঃ) যে “ফাদ্দাদ” শব্দটি বলেছেন- তার অর্থ কী? গাদীফ বললেন- “ভাতিজা “ফাদ্দাদ অর্থ- আগে পিছনে লয়-লস্কর নিয়ে অহঙ্কার করে চলাফেরা করা”।
সাহাবীর দর্শনার্থী দুই বন্ধুর প্রথম জন গাদীফ বলেন- আমার বয়োজেষ্ঠ বন্ধু আবদুল্লাহ্ ইবনে ওবায়েদ ইবনে ওমায়ের সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন- “আচ্ছা, কবর তো ধমকের সূরে কথা বলবে। যদি মৃতব্যক্তি মোমেন হয়- তাহলে তাঁর ব্যাপারে কি হবে? হযরত আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন- “তাঁর জন্য কবরে জায়গা প্রশস্ত করে দেয়া হবে, আর তাঁর বাসস্থানকে করে দেয়া হবে সবুজ এবং তাঁর রূহ্কে আকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে” (ইল্লিয়্যীনে তাঁর নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য”)। (আত্-তাম্হীদ বরাতে- তাযকিরাহ্ পৃ: ১০৬)।
ব্যাখ্যাঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বাইতুল মোকাদ্দাসে বাস করতেন। তিনি ছিলেন হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) -এর সেনাপতি। তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে হাদীস সংগ্রহ করার জন্য গাদীফ ও আবদুল্লাহ্ নামে দুই বন্ধু বাইতুল মোকাদ্দাস সফর করেন। প্রসঙ্গক্রমে সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) কবরের হাদীস বর্ণনা করে দুই বন্ধুকে শুনান। এই ঘটনা দুই বন্ধুর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন ইবনে আয়েয। তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন- ইয়াহ্ইয়া এবং তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন আবু ওমর। (এটা হাদীস শাস্ত্রের আছমাউল রিজাল বা রাবীদের জীবন বৃত্তান্ত বিষয়ক শাস্ত্র)।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাঃ) যদিও রাসুলেপাকের নাম উল্লেখ করেন নি- কিন্তু সংগ্রহকারী দুই বন্ধু ঠিকই বুঝেছেন যে, নিশ্চয়ই ইহা রাসুলে পাকেরই হাদীস। কেননা, কবরের ঘটনা রাসুল ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারেনা। ইহা ইল্মে গায়েবের বিষয়। তাঁই এই ধরণের হাদীসকে অর্থগত দিক দিয়ে মারফু’ বলা হয়। সাহাবীর নিজস্ব ভাষ্য হলে তাঁকে “মাউকুফ হাদীস” বলা হয়- কিন্তু অর্থগত দিক দিয়ে ইহা মারফুর অন্তর্ভূক্ত।
নিম্নে বর্ণিত হাদীসখানায় রাসুলেপাকের ভাষার দ্বারাই পরিষ্কারভাবে বুঝা যাবে যে, আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাঃ) -এর ভাষ্য মূলতঃ রাসুলেরই ভাষ্য। যেমন,
(৫) আবুল হাজ্জাজ ছুমালী (রাঃ) বলেন-
وذکر ابو محمد عبد الحق فی کتاب ( العاقبۃ ) لہ عن ابی الحجاج الثمالی قال قال رسول اللّٰہ ﷺ یقول القبر للمیت اذا وضع فیہ ویحک یا ابن آدم ما غرک بی ؟ الم تعلم انی بیت الفتنۃ وبیت الظلمۃ وبیت الدود؟ ما غرک اذکنت تمربی فدادا ؟ قال فان کان صالحا اجاب عنہ مجیب القبر ۔ فیقول ارأیت ان کان ممن یامر بالمعروف ینھی عن المنکر ؟ قال فیقول القبر : فانی اعود علیہ خضرا ۔ ویعود جسدہ نورا ۔ وتصعد روحہ الی رب العالمین۔ ذکر ھذا الحدیث ابو احمد الحاکم فی کتاب (الکنی) وذکرہ ایضا قاسم بن اصبغ قال ۔ قال: قیل لابی الحجاج مالفداد ؟ قال : الذی یمشی رجلا ویوخر اخری یعنی الذی یمشی مشیۃ المتبختر
অর্থঃ আবু মোহাম্মদ আবদুল হক তার “আক্বিবাত” নামক গ্রন্থে আবুল হাজজাজ ছুমালী থেকে বর্ণনা করেছেন। আবুল হাজজাজ বলেছেন- রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “যখন মুর্দাকে কবরে রাখা হবে, তখন কবর তাঁকে লক্ষ্য করে বলবে- “হে আদম সন্তান, তোমার সর্বনাশ হোক, কে তোমাকে আমার ব্যাপারে ধোকায় ফেলে রেখেছিল? তুমি কি জানতে না- আমি হলাম পরীক্ষা গৃহ, অন্ধকার স্থান এবং কিড়ামাকড়ের বাসস্থান? কে তোমাকে ধোকায় রেখেছিল- যখন তুমি আমার পাশ দিয়ে গমন করতে- তখন তুমি আগে পিছে লোক-লস্কর রেখে গর্ব করে চলতে”?
রাসুলপাক (ﷺ) এরশাদ করেন- “যদি বান্দা নেককার হয়- তাহলে তাঁর পক্ষ হয়ে একজন জবাব দানকারী কবরকে বলবে- হে কবর! তুমি ঐব্যক্তি সম্বন্ধে কি মনে কর- যে দুনিয়াতে ভাল কাজের আদেশ দিত এবং মন্দ কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখতো? রাসুলেপাক (ﷺ) বলেন “তখন কবর বলবে- আমি তাঁর প্রতি সবুজ ঘর হবো (খুশী হবো) এবং তাঁর শরীর হবে নূরের। আর তাঁর রূহ্ উপরের দিকে আল্লাহ্রাব্বুল আলামীনের দীদারের জন্য আরোহন করতে থাকবে”।
এই বর্ণনাটি লিপিবদ্ধ করেছেন হাকীম আবু আহমদ তাঁর “কুনা” নামক গ্রন্থে এবং আরো লিপিবদ্ধ করেছেন কাছেম ইবনে আসবাগ। প্রথম বর্ণনাকারী আবু মোহাম্মদ আবদুল হক বলেন- “কেউ আবুল হাজজাজ ছুমালীকে প্রশ্ন করলো- ফাদ্দাদ অর্থ কী? তিনি বললেন- ফাদ্দাদ অর্থ- আগে পিছে লয়লস্কর নিয়ে অহংকারী লোকের ন্যায় চলাফেরা করা”। (তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা ১০৬)।
বুঝা গেল- পূর্ববর্তী ৪নং হাদীসে রাসুলেপাকের উদ্ধৃতি না থাকলেও অত্র ৫নং হাদীসের ভাষ্য আর পূর্ব হাদীসের ভাষ্য এক ও অভিন্ন। সুতরাং, পূর্ব হাদীসখানাও অর্থগত দিক থেকে মারফু’ পর্য্যায়ভুক্ত। অনেক বাতিলপন্থী আলেম ইলমে হাদীস ভালভাবে না বুঝার কারণে মারফু’ হাদীসকে মাওকুফ হাদীস বা সাহাবীর নিজস্ব কথা বলে উড়িয়ে দিতে চায়। (নাউযুবিল্লাহ!)
(৬) সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন-
وقال سفیان الثوریؓ من اکثر من ذکر القبر وجدہ روضۃ من ریاض الجنۃ ۔ ومن غفل عن ذکرہ ۔ وجدہ حفرۃ من صفرالنار۔
অর্থঃ হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন- “যেব্যক্তি বেশী করে কবরের কথা স্মরণ করবে, সে কবরকে পাবে বেহেস্তের বাগান সমূহের একটি বাগান হিসাবে। আর যেব্যক্তি কবরের কথা ভুলে যাবে, সে কবরকে পাবে জাহান্নামের গর্ত সমূহের একটি গর্ত হিসাবে”। (তাযকিরাহ্ পৃ: ১০৬)।
(৭) হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহে থেকে বর্ণিত আছে-
انہ قال کنت خلف جنازۃ فاتبعتھا حتی وصلوا بھا الی حفرتھا فنادت امراۃ فقالت : یا اھل القبور ۔ لو عرفتم من نقل الیکم لاعزز تموہ ؟ قال الحسن : فسمعت صوتا من الحفرۃ وھو یقول ؛ قد واللّٰہ نقل الینا باوزار کالجبال وقد اذن لی ان آکلہ حتی یعود رمیما ۔ قال فاضطربت الجنازۃ فوق النعش ۔ وخر الحسن مغشیا علیہ ۔
অর্থঃ হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহ্ হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন- আমি কোন এক জানাযার পিছন পিছন তাকে অনুসরণ করছিলাম। লাশ বহন কারীরা যখন তাঁর লাশ নিয়ে তাঁর কবরে পৌঁছলো- তখন একজন মহিলা কবর বাসীদের উদ্দেশ্যে ডাক দিয়ে বললো- হে কবরবাসীরা! তোমরা যদি তাঁকে চিনতে পারো- যাকে তোমাদের কাছে স্থানান্তরিত হলো, তাহলে কি তাঁর সম্মান করবে? হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেন- আমি গর্ত (কবর) হতে একটি আওয়াজ শুনলাম- সে বল্ছে, আল্লাহর কসম! সে আমাদের কাছে পর্বত পরিমাণ গুনাহের বোঝা নিয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে। আল্লাহ্ আমাকে অনুমতি দিয়েছেন- যেন তাঁকে খেয়ে মাটি করে ফেলি। ঘটনার বর্ণনাকারী বলেন- এ আওয়াজ শুনামাত্র লাশের খাট থরথর করে কেঁপে উঠলো এবং হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন”। (তাযকিরাহ্ পৃঃ ১০৭)
নোটঃ (হযরত হাসান বসরী (রহঃ) ছিলেন তাবেয়ী। তিনির আম্মা ছিলেন উ¤মূল মোমিনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) -এর সেবিকা বা খাদেমা। কথিত আছে- হযরত হাসান বসরী (রহঃ) শিশুকালে উ¤মূল মোমিনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) -এর দুধ চুষে ছিলেন। তাঁই সরাসরি আহ্লে বাইতের ফয়েয ও বরকত তাঁর মধ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে। তিনি কোরআন, হাদীস ও তাসাউফ চর্চায় শীর্ষস্থানীয় ছিলেন। তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজ্হাহুর মুরীদ ছিলেন। এরপর তাঁর ফযিলত বর্ণনা করার আর কোন প্রয়োজন নেই। তিনি সব তরিকার গোড়ার দিকের বুযুর্গ। সুতরাং তাঁর বাণী ও মতামত অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাবেয়ীনদের মধ্যে তিনজন ছিলেন বিখ্যাত। যথা হযরত ওয়ায়েছ করনী, হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়েব এবং হযরত হাসান বসরী রাহিমাহুমূল্লাহ্। হযরত হাসান বসরীর মহিলা মুরীদ ছিলেন হযরত রাবেয়া বসরী (রহঃ) -যার আধ্যাত্মিক সাধনা ছিল কল্পকাহিনীর মত আশ্চর্য।