১৫০ বছর আগে। বিমান ছিলনা। না ছিল মোবাইল, টিভি। ইন্টারনেট কল্পনাতেও আসে নি। তখন তথ্য দ্রুত ছড়াতো না। বছরের পর বছর যেত। শতাব্দির পর শতাব্দী। ধীরে ধীরে প্রচার পেত।
কিন্তু ইমাম আ’লা হযরত তো ভিন্ন। তাঁর কর্মজীবন ৫৮ বছর। এ সময়েই তিনি বিশ্বে ছড়িয়েছেন। এ মাথা থেকে ও মাথা। শুধু পাক-ভারতে নয়। শতাব্দী থেকে শতাব্দী লাগে নি। আসুন দেখি কিভাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা। মহাসাগর পেরিয়ে ওপাড়ে। ভারতের বিপরীতে প্রায়। দূরত্ব, ৮,৮৭৩ কি.মি.। ৫,৩১৩ মাইল। ৪,৭৯১ ন্যাটিক্যাল মাইল। বর্তমানে বিমানে ৯ ঘন্টা ৫১ মিনিট লাগে। যদি বিমান ৯০০ কি.মি. প্রতি ঘন্টা উড়ে। তাও বিরতিহীন ভাবে। ১০০ কি.মি. গতিতে গাড়ি চালান। ৩ দিন ১৭ ঘন্টা লাগবে। একজন প্রশিক্ষিত, সুস্থ্য মানুষ দিনে ৩০ কি.মি. হাঁটতে পারে। সে গণিতে ২৯৬ দিনের হাঁটা পথ। ৯ মাস ২০ দিন প্রায়। এ সময়ে পুরো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।
যা-হোক, দক্ষিন আফ্রিকা থেকে ১১১ টি প্রশ্ন এসেছিল বারেলি শহরে। ভারতের উত্তর প্রদেশে। চিঠিতে ভরে। যা ‘ফতোয়ায়ে আফ্রিকা’ নামে পরিচিত। সেখানের মানুষ ইমাম আ’লা হযরতের কাছে সমাধান নিতেন। ফতোয়া নিতেন। ভাবা যায়!
পর্তুগাল চিনেন? আপনার আশপাশে না। ভূগোলের অন্যপ্রান্তে। বারেলি থেকে ৭,৮৭৮ কি.মি. প্রায়। বিমানে সোয়া আট ঘন্টা। রাস্তাপথে ৩ দিন ২০ ঘন্টা। হাঁটলে আট মাসের বেশি। ২৬২ দিন। তিনটি চিঠি এসেছিল। এবার ভাবুন, আ’লা হযরত এঁর পরিচিত কোথায় পৌঁছেছিল!
বার্মা বা মিয়াননার। ১,৮১১ কি.মি.। রাস্তাপথে ১০০ কি.মি. গতিতে ১৮ ঘন্টার বেশি। দু’মাসের বেশি হাঁটাপথে।
পাকিস্থান। ১,০০৩ কি.মি.। গাড়িতে ১০ ঘন্টার বেশি। লম্বা জার্নি করলে বুঝবেন। দশ ঘন্টা মানে কি। হাঁটলে ৩৪ দিন।
আফগানিস্তান। ১,২৭৬ কি.মি.। গাড়িতে ১৩ ঘন্টা। ৪২ দিন হাঁটলে।
বাগদাদ শরীদ, ইরাক। ৩,৩৮০ কি.মি. বিমানে সোয়া তিন ঘন্টা। রাস্তায় ৩৪ ঘন্টা। হাঁটাপথে ১১২ দিন। তিন মাস ২২ দিন।
মজার তথ্য কি জানেন? আমাদের বাংলাদেশ থেকেও চিঠি গিয়েছে। সমাধান চাওয়া হয়েছে। গুনেগুনে ৭৩ টি প্রশ্ন গিয়েছিল। বাংলা থেকে বারেলি কম দূরত্ব না। সরল রেখায় ১,২১০ কি.মি. ঘুরায় প্যাচায় না। টানা চিল্লা লাগবে হেঁটে পৌঁছালে। মানে চল্লিশ দিন।
একটা মানচিত্র আঁকুন। বারেলি শহর কে চিহ্নিত করুন। এরপর বাকি দেশগুলোতেও চিহ্ন দিন। কি দেখবেন জানেন? দেখবেন বারেলি মাঝখানে। চারদিক থেকে চিঠি আসছে। চিঠির সাথে আশা, প্রত্যাশা, স্বপ্ন। নিজের অজানাকে জানার তৃষ্ণা। একজন মানুষের কাছে পুরোবিশ্বের মানুষের জিজ্ঞাসা।
ঠিক যেমন মৌচাক। রাণী মৌমাছি মাঝে থাকে। তার চারদিকে গড়ে ওঠে সম্রাজ্য। ইমাম আ’লা হযরত এঁরও সম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল, উঠেছে। জ্ঞানের সম্রাজ্য। প্রজ্ঞার সম্রাজ্য। মদিনাপ্রেমের সম্রাজ্য।
আপনাকে স্বাগতম সে সম্রাজ্যে। প্রেমরাজ্যে।