
১।গাওসে পাক বলেনঃ
মুরিদি হিম ওয়াত্বীব ওয়াশ্তাহ্ ওয়া গান্নি
ওয়াফআল মাতাশায়ু ফাল্ ইসমু আলী। (কাশিদায়ে গাউসিয়া)
অর্থঃ হে আমার মুরিদ! আন্তরিক হিম্মত বাঁধ (বিশ্বাস কর), উল্লাসিত হও (খুশি মনে থাকো), নির্ভীকতা ও নির্ভরতা অবলম্বন কর এবং তোমার অন্তর যা চায় করো। কেননা আমার নাম যে অতি সুউচ্চ।
ব্যাখ্যা বা সবকঃ গাউসে পাকের কাসিদার ব্যাখ্যা কয়েক প্রকার হতে পারে।
প্রথমত: হায়মান, তীর, শাত্বহ ও গেনা, মরিফাতের জগতের কয়েকটি স্তর বা মাকাম। কোন মুরিদের যদি গাউসে পাকের ইশারায় এ মাকামগুলো অতিক্রম করতে পারে তাহলে মুরিদের অবস্থা এমন হবে যে তখন তার চওয়া ও পাওয়ার ইচ্ছা আল্লাহর চাওয়া ও ইচ্ছা হয়ে যাবে। তখন মুরীদ আল্লাহর নির্দেশে যা খুশি তাই করতে করতে পারবে। তাই গাউসে পাক মুরিদদের এ ব্যাপারে বিশ্বস্ত হতে নির্দেশ দিচ্ছেন।
দ্বিতীয়ত: আমি আব্দুল কাদের (আঃ) আল্লাহর প্রেমে এতই মশগুল যে আল্লাহর তায়ালা খুশি হয়ে আমাকে এত উচ্চ মাকাম দান করেছেন তাই হে মুরীদগণ! তোমরা নির্ভয়ে চলো! আমার কথামত চলো। তাহরে নাজাত পেয়ে যাবে।
তৃতীয়ত: আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খাস সন্তান। ইমাম হাসানের বংশধর। আমার হাতে যারা বাইয়াত (মুরীদ) হয়েছে এবং আমার পবিত্র বংশধর বা তরিকায় যারা বাইয়াত হয়েছে তারা মূলতঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতেই সাহাবীদের মতো বাইয়াত হয়েছে। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতে বাইয়াত হয়েছে তারা তো আল্লাহ তায়ালার কুদরতী হাতেই বাইয়াত হয়েছে। কেননা
আল্লাহ তায়ালা তার পবিত্র বাণীতে বলেন- সূরা ফাতহ, আয়াত নং ১০: অর্থঃ যারা আপনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করছে, তারা তো আল্লাহরই নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছে। তাদের হাতগুলোর উপর আল্লাহর হাত রয়েছে। সুতরাং যে কেউ অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, সে নিজেরই অনিষ্টার্থে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে আর যে পূরণ করেছে ঐ অঙ্গীকারকে যা সে আল্লাহর সাথে করেছিল, অতিসত্ত্বর আল্লাহ তাকে মহাপুরস্কার দেবেন।
২। হযরত সুলতান বাহু (রাঃ) বলেন- কোন তরিকত পন্থী যত রিয়াযত মুজাহিদা করুন না কেন, একজন সামান্য মযাদার অধিকারী কাদেরীয়া তরিকতপন্থীর মযাদায় পৌঁছাতে পারে না। কারণ কদেরীগণ স্বল্প সময়ে যে মাকাম বা স্তারে পৌঁছাতে পারে, অন্যারা ঐ স্তরে পৌছাতে অনেক সাধনার প্রয়োজন হয়। (তরিকেমাশায়েখকাদেরীয়া- ১ম খন্ড, দিল্লি, ভারত)
৩। ইরাকের শীষ মাশায়েখ শায়েখ আবুল ফাতাহ্ (রঃ) বণনা করেন- আমি হযরত শায়েক আলী বিন হায়তীকে বলতে শুনেছি কোন শায়েখের (পীরের) মুরীদ সৈয়্যেদেনা আব্দুল কাদের জিলানীর মুরিদগণের থেকে বেশি মর্যাদাবান ও সৌভাগ্যবান হতে পারে না। (বাহজাতুল আসরার, যুবদাতুল আসার, গাউসুল ওরা)
৪। হযরত শায়েখ আলী বিন হায়তী (রঃ) বণনা করেন- শায়েখ বকা বিন বতু (রঃ) বলেছেন- আমি গাউসে পাকের গোলামদেরকে (মুরীদদের) উচ্চ মযাদার দেখেছি। (বাহজাতুল আসরার, যুবদাতুল আসার, গাউসুল ওয়া, গাউসুল আযম)
৫। পারস্যের বিখ্যাত কবি, দাশনিক, অলি হযরত শেখ সাদী (রঃ) এর ওস্তাদ মুহাদ্দিসগণের মাথার তাজ হযরত মুহাদ্দিস ইবনুল জুযি কুদ্দিসা সিররুহুল আজিজ বলেন- হুজুর গাউসে আযমের মুরীদের চেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান অন্য কারো মুরীদ নেই। (বাহজাতুল আসরার, কালায়েদুল জাওয়াহের)
৬। গাউসে পাক দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় ইরাকের শীষ মাশায়েখ হযরত শায়েখ আদি বিন মুসাফির প্রায় সময় বলতেন- গাউসে পাকের বতমান কেউ আমার খেরকায়ে খেলাফত কামনা আমি ওকে বলতাম, মহা সমুদ্র ছেড়ে নিছক নগন্য খাল থেকে পানি নেওয়ার চেষ্টা করছো।(বাযজাতুল আসরার, যুবদাতুল আসার, গাউসুল ওরা, গাউসুল আযম)
৭। গাউসেপাক বলেন- মুরদি লা-তাখাফ আল্লাহুরাব্ব,
আতানী রিফ আতান নিল্তুল মাআলী। (কাসিদায়ে গাউসিয়া)
অর্থঃ হে আমার মুরীদ! তোমাদের কোন ভয় নেই। আল্লাহ মালিক (রব) আমার। তিনি আমাকে উচ্চ মযাদা দিয়েছেন (উন্নত করিয়াছেন) আমি উচ্চ স্তর (মাকাম) পাইয়াছি।
ব্যাখ্যা বা সবকঃ এ কাসিদা পংক্তিতে গাউসুল আযম বলতে চাচ্ছেন আল্লাহ তায়ালার মারিফাতে যত জালালিয়াত, কামালিয়াত, সুউচ্চ মাকাম, মঞ্জিল রয়েছে সবই আমি অতিক্রম করেছি এবং আল্লাহ তায়ালা আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং মওলা আলীর মাধ্যমে বেলায়েতের সম্রাট বানিয়ে দিয়েছেন। তাই হে আমার মুরীদ! আমার বেলায়েতী কুদরতী শক্তি দ্বারা আমি তোমাদের সকল অভাব পূরণ করিতে পারিব। তোমরা মৃত্যুকালে, কবরে, মিযানে, হিসাবের ময়দানে (হাশরে), পুলসিরাতে ভয় করিও না এবং দুনিয়াতে সাংসারিক কোন বিষয়েও ভয় করিও না। তোমাদের দুঃসময়ে অবশ্যই আমি বন্ধু হিসাবে সাহায্য করবো।
৮। হুজুর গাউসে সাকলায়েন, রওশন জমির বলেন- যদি আমার কোন মুরীদ পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থান করে এবং তার সতর খুলে যায় আর এ অবস্থায় আমি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে অবস্থান করি, তাহলে আমি সেখান থেকেই তার সতর ঢেকে দিই।
কিছু মাশায়েখ কেরাম বর্ণনা করেন, গাইসে পাক বলেছেন – যদি আমার নাম স্মরণকারী কারো দোষ-ক্রটি বা গুনাহ্ পশ্চিম প্রান্তে প্রকাশ পায় তখন আমি পূর্বপ্রান্তে থাকি, তবুও আমি ওর হেফাজতের জিম্মাদার হবো এবং দোষ-ক্রটি গোপন করবো। (বাহজাতুল আসরার ৯৯ পৃষ্ঠা, তাকরিহুর খাতিয়া ৫৩ পৃষ্ঠা, আখবারুল আখইয়ার ২৫ পৃষ্ঠা, সফিনাতুল আউলিয়া ৬৯ পৃষ্ঠা, তোহফায়ে কাদেরীয়া ৩৮ পৃষ্ঠা)।
৯। উপমহাদেশের বিখ্যাত হাদিসবেত্তা শায়খুল মুহাদ্দেসিন ইমামুল মুহাক্কেকিন হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রাঃ) বর্ণনা করেন – ইরাকের বিখ্যাত ওলি শায়েখ হযরত আবুল কাসেম ওমর বায্যার বলেছেন- সেয়্যেদেনা গাউসুল আযম দস্তগীরকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল – যদি কোন ব্যক্তি আপনাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে, কিন্তু আপনার মুরীদ হবার সৌভাগ্য হয়নি বা আপনার থেকে খেলাফতের খেরকা (জামা) পায়নি, সেকি আপনার সহানুভূতি লাভকারী লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবে? তিনি বলেন – যে ব্যক্তি কেবল নামের সাথে সম্পর্ক রাখবে বা অন্তরে আমার প্রতি ভাল ধারণা পোষন করবে, আল্লাহ তায়ালা ওর তওবা কবুল করবেন যদিও তার এই পদ্ধতি বিশুদ্ধ নয়। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তায়ালা আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমার বন্ধু-বান্ধব, ভক্ত, আমার নাম জপকারী ও আমার প্রতি ভাল ধারণা পোষনকারীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আখবারুল আখেইয়ার (ফার্সি) পৃষ্ঠা-২৫, কালায়েদুল মাওয়াহিব, পৃষ্ঠা-১৫, বাহজাতুল আসরার, পৃষ্ঠা-১০১, তোহফায়ে কাদেরীয়া, পৃষ্ঠা-৩৮)
১০। হযরত শায়েখ আবু সউদ আবদুল্লাহ্, শায়েখ মুহাম্মদ আল-আউয়ালি, হযরত শায়েখ আবুল কাসেম ওমর বায্যার প্রমুখ জগৎ বিখ্যাত মাশাযেখগণ বলেছেন – শায়েখ মুহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী কিয়ামত পযন্ত আগত তার সকল মুরীদের এ কথার জামিনদার যে, তাঁর মুরিদদের কেউ তওবা ছাড়া মৃত্যুরণ করবেন না। (বাহজাতুল আসরার, পৃষ্ঠা-৯৯, কালায়েদুল জওয়াহের, পৃষ্ঠা-১৬, আখবারুল আখইয়ার, পৃষ্ঠা-৬৫)
অপর আরেক বর্ণনায় এসেছে- সরকারে বাগদাদ হুজুর গাউসে পাকের অনুসারী ও মুরীদগণের জন্য বিশেষ সুখবর হল যে, সরকারে গাউসে পাক, পীরানে পীর, দস্তগীর, ক্বিনদিরে নূরানী, শাহবাজে লামাকানী বলেছেন- আমার মুরীদগণ যতিই গুণাহগার হোক না কেন, তার তওবা না করা পযন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। (আখবারুর আখইয়ার, পৃষ্ঠা-১৯)
১১। আউলিয়াদের শিরোমনি মাহবুবে সোবহানী, গাউসুল ওরা বলেছেন- আমাকে চোখের পরখ এক দীর্ঘ আমলনামা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে আমার মুরীদগণের নাম লিখা আছে এবং কিয়ামত পযন্ত আগমনকারী ভক্তদের নাম উল্লেখিত আছে। আমাকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে ওসব লোকদেরকে আমার খাতিরে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। আমি মালেককে (দোযখের দারোগা) জিজ্ঞেস করেছি, তোমার কাছে আমার বন্ধু-বান্ধবদের কেউ আছে কি? সে বলল না। (গাওসুল ওরা, গাউসুল আযম)
১২। আল্লাহর কসম, আমার হাত আমার মুরীদগণের উপর ঐ রকম প্রসারিত যে ভাবে জমির উপর আসমানের ছাড়া। আল্লাহর জালালিয়াত ও ইজ্জতের কসম, আমি ততক্ষণ জান্নাতে পদার্পন করবো না, যতক্ষণ আমি আমার সমন্ত মুরীদগণকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে না পারবো। (বাহজাতুল আসরার, যুবদাতুল আসার)
১৩। কুতুবুল আরশে ওয়াল কুরসি ওয়াল লওহে ওয়াল কলম কুতুবুস সামাওয়াতে ওয়াল আরদ্ গাউসুল আযম বলেন- হে মানবগণ আমি আমার জাদ্দে আমজাদ্ রাসূলে পাক (সাঃ)-এর প্রেমে এতই মশগুল যে শুনিলে তোমরা নির্বাক নিস্পন্দ হয়ে যাবে। সরওয়ারে কায়েনাত (সাঃ) এর পবিত্র দেহ মোবারকের নিঃসৃত ঘাম হতে যেমন সদ্যজাত প্রষ্ফুটিত গোলাপ, মেশকের স্বর্গীয় মনোহর সুগন্ধি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তো তদ্রুপ আমার শরীর মোবারক হতে নিঃসৃত ঘামের সৌরভের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। সেরূপ তার মল-মূত্র ত্যাগের কোন চিহ্ন মৃত্তিকায় পরিলক্ষিত হইত না, আমারও সেই প্রকার মল-মূত্র ত্যাগের চিহ্ন ভূমির মধ্যে থাকে না। তাঁর পবিত্র শরীরে মশা-মাছি ও অন্যান্য কীট-পতঙ্গ বসিত না, তদ্রুপ আমার অঙ্গেও কোন প্রাণী বসতে পারে না। তার পূণ্যমাখা সুধাময় স্বর্গীয় চেহারা মোবারক যে দেখেছে তাঁর ক্রমনিম্নশীল সাত পুরুষ জান্নাতে প্রবেশ করিবে, আমার চেহারা গুণ ও তৎসদৃ। তাঁর পৃষ্ঠদেশে মহিমারূপ হস্ত চিত্রিত উজ্জ্বল মোহরে নবুয়ত ছিল, সেই রূপ আমার স্কন্দদেশে অক্ষয় চিত্রিত তাঁর পদধূলি সম্মিলিত “মোহরে কদম” উজ্জ্বল উদ্ভাসিত রহিয়াছে। (মেদিনীপুর দরগাহ)
১৪। হযরত শাহ্ আবুল মা’আলী কাদেরী (রঃ) তার তোহফায়ে কাদেরিয়া গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, শায়েখ আবুল মুসলী (রাঃ) তাঁর চাচা হযরত সাদি ইবনে মুসফির (রঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, কোন তরিকার মুরিদগণ আমার কাছে তরিকতের দীক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা পোশন করলে আমি তাকে আমার তরিকার দাখিল করে নিই। কিন্তু শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানীর কাদেরীয়া তরিকার মুরীগণকে এ সুযোগ দিই না। কারণ তার এক অনন্ত কুল-কিনারা বিহীন রহমতের সমুদ্রের মাঝে ডুবে আছে। তাদের অন্য কোন তরিকার প্রয়োজন পড়ে না। তারা অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করবেই বা কেন? কেউ কি সমূদ্র ত্যাগ করে পুকুরের নিকট আসে? যে জান্নাতুল আদনে অবস্থান করে সে জান্নাতের বাগন দিয়ে কি করবে? (তাযকিয়ায়ে মাশায়েখে কাদেরীয়া, ইউপি ভারত)




Users Today : 996
Users Yesterday : 1502
This Month : 10248
This Year : 149725
Total Users : 265588
Views Today : 4218
Total views : 3216331