মাসয়ালা (১) – আল্লাহ তাআলার নাম উচ্চারণ না করে কেবল কোনো দেবতার নাম অথবা কোন নবী ও অলীর নাম উচ্চারণ করে জবেহ করলে পশু হারাম হবে। (তাফসীরাতে আহমাদীয়া)
মাসয়ালা(২) – আল্লাহ তাআলার সাথে অন্যের নাম যুক্ত করে জবেহ করলে পশু হারাম হবে।
যথাঃ- – “বিসমিল্লাহি ওয়া মুহাম্মাদির রাসুলিল্লাহ” বলে জবেহ করলে পশু হারাম হবে। আর সংযুক্ত না করে “বিসমিল্লাহি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” বলে জবেহ করলে পশু হারাম হবেনা। কিন্ত এই প্রকার জবেহ করা মাকরূহ হবে। (বাহারে শয়ীয়াত ও তাফসীরাতে আহমাদীয়া)
মাসয়ালা(৩) - আল্লাহর নামের সাথে কোনো প্রকার যুক্ত না করে পশু শোয়ানোর পূর্বে অথবা জবেহ করার পর কারো নাম উচ্চারণ করায় কোনো দোষ নেই। যেমন কুরবানী ও আক্বীকার সময়ে দাতার নাম উচ্চারণ করা হয়ে থাকে (হিদায়া ও বাহারে শরীয়ত)।
বিশেষবিজ্ঞপ্তিঃ –
পশুরমালিক মুসলমান হোক বা মুশরিক। জবেহ কারী যদি মুসলমান হয় তাহলে পশু হালাল হবে এবং যদি জবেহ কারী মুশরিক হয় তাহলে পশু হারাম হবে। অনুরূপ পশু পীরের নামে রাখা হোক অথবা প্রতিমার নামে রাখা হোক যদি জবেহ করার সময় আল্লাহর নামে জবেহ করা হয় তাহলে হালাল হবে এবং যদি পীর অথবা প্রতিমার নামে জবেহ করা হয়, তাহলে হারাম হবে। যেসমস্ত পশু কোনো পীরের নামে ইসালে সওয়াব করার উদ্দেশ্য রাখা হয়, যদি জবেহ করার সময় আল্লাহরর নাম উচ্চারণ করে জবেহ না করে কোনো পীর অথবা কোনো প্রতিমার নাম উচ্চারণ করে জবেহ করা হয় তাহলে তা নিঃসন্দেহে হারাম হবে। অনুরূপ যেসমস্ত পশু কোনো পীরের ইসালে সওয়াব অথবা প্রতিমার ভোগ হিসেবে রাখা হয়ে থাকে যদি ঐ পশুগুলো জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে জবেহ করা হয় তাহলে তা নিঃসন্দেহ হালাল হবে। গাউছে পাক হজরত আব্দুল ক্বাদের জীলানী ও খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী আজমিরী রহমাতুল্লাহ আলাই রাহমার নামে অথবা অন্য কোনো অলীর নামে ইসালে সওয়াব করার উদ্দেশ্য যেসমস্ত পশু রাখা হয়ে থাকে এবং যথাসময়ে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে জবেহ করা হয়ে থাকে, ঐ গুলো নিঃন্দেহে হালাল (তাফসীরাতে – আহমাদিয়ে)।
ওহাবী-দেওবন্দীমৌলবিগণ আউলিয়া কিরামের নামে ইসালে সওয়াব ও এর উদ্দেশ্য পশু রাখা এবং তা যথা সময়ে আল্লাহ তাআলার নামে জবেহ করে ভক্ষণ করা হারাম বলে থাকেন। কয়েক বৎসর পূর্বে মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত ভান্ডারা নামক গ্রামে জালসায় উপস্থিত হয়ে ছিলাম। উক্ত জালসায় মাওলানা নূর আলম বর্ধমানী ছিলেন। নূর আলম সাহেব বক্তৃতায় বললেনঃ –
”যারাশিব ডাঙ্গার মসজিদে প্রদান করা খাসি ও মোরগের মাংস দিয়ে ভাত খায় তারা কুকুরের পায়খানা দিয়ে ভাত খায়।”
জালসায়পর আমি তাকে প্রশ্ন করলাম যদি কোনো পশু আল্লাহর জন্য রাখা হয় ও জবেহ করার সময় দূর্গা বলে জবেহ করা হয়, তাহলে ভক্ষণ করা হালাল হবে কি? তিনি শয়ন অবস্থায় সহজে উত্তর দিলেন - হারাম হবে। আমি পুনরায় প্রশ্ন করলাম যদি কোনো পশু দুর্গার নামে রাখা হয় এবং জবেহ করার সময়ে আল্লাহর নাম নিয়ে জবেহ করা হয় তাহলে তা হালাল হবে কি? বেচারা বসে নিজেকে খানিকটা সামলিয়ে খুব আস্তে উত্তর দিলেন – হালাল হবে।
এবারআমি বললাম শিবডাঙ্গায় যে সমস্ত খাসী ও মোরগ জবেহ করা হয় সেগুলো কোনো পীর সাহেবের নাম উচ্চারণ করে জবেহ করা হয়, নাকি আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে জবেহ করা হয়? নিশ্চয় কোনো পীরের নাম উচ্চারণ করে জবেহ করা হয়না। আপনি বলুন, ঐ হালাল মাংসকে কুকুরের পায়খানা বললেন কেনো? আপনার সাথে আমার “বিলকান্দী” নামক স্থানে অমুক দিনে জালসা রয়েছে। যদি বলেন সেখানে কিতাব দেখিয়ে দিবো। আপনার মাসয়ালাটি বলা অত্যন্ত ভূল হয়েছে। তখন তিনি বললেন আপনি যা বলছেন তাই ঠিক। কারণ আপনারা সবসময় কিতাব পড়াচ্ছেন।
অল্পকিছু দিন হতে নূর আলম সাহেব পীর সেজে মুরীদ করতে আরম্ভ করেছেন। ইনি ফুরফুরার বড় হুজুর আব্দুল হাই সিদ্দীকী সাহেবের মুরীদ। সম্ভবত তিনি আব্দুল হাই সিদ্দিকী সাহেবের নিকট হতে কামালিয়াত হাসেল করতে পারেন নি। তাই তিনি প্রকাশ্য ওহাবী দেওবন্দী জমিয়াতে উলামায়ে হিন্দের সর্ব ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা, মাওলানা আসাদ মাদানীর নিকট মুরীদ হয়েছেন। নকলী মাদানী সাহাবের নিকট হতে নূর আলম সাহেব নাকি আজগুবি ভাবে খিলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন। ঘোড়া ও গাধার মিলনে যে বাচ্চাটি জন্ম নেয় তা কে খচ্চর বলা হয়। ফুরফুরা পন্থীগণ চোখে কোণা দিয়েও দেওবন্দীদের দেখতে পারেন না। অনুরূপ অবস্থা দেওবন্দীদেরও। এরা ফুরফুরা পন্থীদের আদৌ সমর্থন করেননা। সমালোচনা ও পর্যালোচনা দ্বারা বোঝা যায় যে ফুরফুরা পন্থী প্রকৃত পক্ষে দেওবন্দী ওহাবী। ওহাবী দেওবন্দীদের সাথে এদের মৌলিক মসালাতে মূলতঃ মতভেদ নেই। কিন্ত এরা প্রত্যেকেই কিছু মাসয়ালাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে একে অপরকে কাফের মোশরেক প্রমাণ করেছেন। নূর আলম সাহেব দুই পন্থির পরম নেতা দ্বয়ের নিকট হতে দীক্ষা গ্রহণ করে বর্তমান পীর সেজে মুরীদ আরম্ভ করেছেন। এখন বিবেচনার বিষয় যে নূরআলম সাহেব দেওবন্দী পির না ফুরফুরা পন্থী পীর?
নিশ্চয় দেওবন্দীগণ তাকে ফুরফুরা পন্থী পীর বলে গ্রহণ করবেন না। অনুরূপ ফুরফুরা পন্থীগণও তাকে দেওবন্দী পীর বলে গ্রহণ করবেন না। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, উভয় পন্থীর মানুষ কম বেশি তার হাতে মুরিদ হচ্ছেন। তাহলে কি নূরআলম সাহেব খচ্চর পীর হয়েছেন? যার কারণে উভয় পন্থীর কোনো প্রকার আপত্তি নেই। নূরআলম সাহেব খচ্চর পীর সেজে ফুরফুরা পন্থীদেরকে গোমরাহ করুন অথবা জাহান্নামে নিয়ে যান তা দেখার প্রয়োজন আমার ছিলোনা। কিন্ত যেহেতু আমি একজন ফুরফুরা পন্থী ছিলাম, সেহেতু তাদের গোমরাহি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবগত করে দেয়া আমার ইসলামী দায়িত্ব বলে মনে করছি। কারণ ফুরফুরা পন্থী হাজার হাজার সাধারণ মানুষ প্রকৃত পক্ষে সুন্নী মুসলমান, এরা ওহাবী দেওবন্দী তাবলীগি ও জামায়েতে ইসলামী আদৌ সমর্থন করেননা। কিন্ত একদল দালাল এদের ঈমানকে সুকৌশলে সর্বনাশ করে ওহাবী দেওবন্দী তাবলীগী বানাচ্ছে। সাধারণ মানুষ গভীর চিন্তা করার অবসর না পাওয়ায় এবং দালালদের ধোঁকায় পড়ে ওহাবী দেওবন্দীদের শিকার হচ্ছেন।
১৫। দালালদের ছদ্মবেশি চরিত্র নিম্নরূপ
এই দালালদের মধ্যে কেহ বড় হুজুরের খলিফা, কেহ মেজ হুজুরের খলিফা, অনুরূপ কেহ নশান হুজুরের খলিফা, কেহ ছোটো হুজুরের খলিফা। এবার এদের মধ্যে কেহ তাবলীগ জামাতের মারকাজ খুলে দিয়েছেন, কেহ দেওবন্দী মাদ্রাসায় নিজের সন্তানদের পড়াচ্ছেন। কেহ দেওবন্দীদের সাথে মিলে মিশে একই জালসাতে নসীয়ত করছেন এবং তাদের মাদ্রাসার উন্নতি কল্পে বাৎসরিক জালসায় উপস্থিত হয়ে চাঁদা আদায় করছেন। কেহ পীর সেজে মুরীদ করছেন। সাধারণ মানুষ তাদের দেখে সহজে উপলব্ধি করছেন যে ওহাবী দেওবন্দী তাবলীগদের সাথে মৌলিক বিষয়ে মূলত কোনো মতভেদ নেই।
এইপ্রকারে তারা দ্বীন-ইসলাম হতে সরে বাতিল ফিরকার শিকার হয়ে যাচ্ছেন। তবে আল্লাহ তায়ালা যাদের বাঁচাচ্ছেন তারা ভন্ডদের সাথে সর্বপ্রকার সম্পর্ক ত্যাগ করে উলামায়ে আহলে সুন্নাতের সাথে সম্পর্ক কায়েম করছেন। ওহাবী দেওবন্দী তাবলীগিদের হাতে মুরীদ হওয়া হারাম। আসাদ মাদানীর নিকট সরাসরি মুরীদ হওয়া অথবা তার খলীফার নিকট মুরীদ হারাম। যদি কেহ ভুল করে মুরীদ হয়ে থাকে তাহলে তাদের সাথে সর্বপ্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করে তওবা করা ওয়াজিব।