বিছাল শরীফ
وصال (বিছাল) অর্থ মিলিত হওয়া, সাক্ষাত করা। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা মারা যাননা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
اناولياءاللهلايموتونبلينتقلونمندارالفناءالىدارالبقاء
অর্থ: নিশ্চয়ই আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা মৃত্যুবরণ করেননা। বরং উনারা অস্থায়ী আবাস থেকে স্থায়ী আবাসের দিকে ফিরে যান। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ উনাদের সাথে দায়িমী ও হাক্বীক্বী সাক্ষাত মুবারকে মিলিত হন। এজন্য উনাদের ইন্তিকালকে বিছাল শরীফ বা মুবারক বলা হয়। আর হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের তা’যীম বা সম্মানার্থে শরীফ কিংবা মুবারক শব্দটি সংযুক্ত করা হয়। যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন ইরশাদ মুবারক করেন, মুসলমানরা যতক্ষণ পর্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি বা বিষয়ের যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা বিজয় বেশে কামিয়াবী লাভ করবে। আর যখন সম্মান ইজ্জত প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকবে তখন হালাক বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كلنفسذائقةالـموت. ثماليناترجعون
অর্থ : “প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর আমার কাছে ফিরে আসবে। (পবিত্র সূরা আনকাবুত: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)
আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, এই প্রত্যাবর্তন সকলের জন্য সমান নয়। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু। উনাদের বিদায় বা বিছাল শরীফ বিশ্ববাসীর জন্য ইবরত-নছীহতপূর্ণ। যা বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়েতের কারণ। গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র জীবনী মুবারকে তার যথার্থ প্রতিফলন ঘটেছে। উনার বিলাদত শরীফের দিনটি যেমন বিশ্ববাসীর হিদায়েত তথা সঠিক পথের দিক নির্দেশক ছিল। তেমনি বিছাল শরীফ উনার দিনটিও ছিল বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়েতের কারণ।
যখন হযরত গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ উনার সময় নিকটবর্তী হয়ে গেল তখন উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক উনার রাস্তা দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। শুধু তাই নয়, ইস্তিঞ্জা থেকে আতর গোলাপের ঘ্রাণ বের হচ্ছিল এবং তার মধ্য থেকে যিকিরও হচ্ছিল (সুবহানাল্লাহ)। ওনার মুরীদ মুতাক্বিদ যাঁরা ছিলেন উনারা বললেন, হুযূর! আপনার শরীর অসুস্থ আপনাকে চিকিৎসা করানো দরকার। হযরত গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথমে বললেন, দেখ চিকিৎসা করে কি হবে, যিনি সমস্ত চিকিৎসকের চিকিৎসক, সমস্ত হাকীমগণের হাকীম সেই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাকে অসুখ দিয়েছেন। কাজেই আমার এই অসুখ সারা দুরূহ ব্যাপার। আমার হায়াত মুবারক শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি থাকতে পারব না এখানে। তথাপিও মুরীদদের আশা উনারা বললেন, হুযূর! আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা চিকিৎসা করি। তিনি চিন্তা করলেন সত্যিই চিকিৎসা করাতো সুন্নত, অসুবিধা নেই ঠিক আছে নিয়ে যাও আমার প্রস্রাব। নিয়ে যাওয়া হলো গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রস্রাব মুবারক একটি পাত্র করে এক বিধর্মী ডাক্তারের কাছে। ইসলাম সম্বন্ধে সেই ডাক্তারের তেমন জানাশোনা নেই, হয়তো সামান্য কিছু জানে। যখন গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রস্রাব মুবারক সেই বিধর্মী ডাক্তারের কাছে পেশ করা হলো, ডাক্তার আশ্চার্য হয়ে মনে মনে চিন্তা করতে লাগল। সে প্রথমে বুঝতেই পারল না এটা প্রস্রাব। ডাক্তার জিজ্ঞেস করল। আপনারা এটা কি নিয়ে এসেছেন, এত আতর গোলাপের ঘ্রাণ বের হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে তার থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির হচ্ছে। তখন গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ মু’তাক্বিদগণ বললেন, ডাক্তার সাহেব মূলতঃ এটা হযরত গাউসুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রস্রাব মুবারক। শুনে ডাক্তার সাহেব আশ্চর্য হয়ে বলল, চিকিৎসা পরে হবে। তার আগে আমাদেরকে তওবা করান। প্রথমে মুসলমান করান। সেই মহল্লায় ছিল চারশত বিধর্মী লোক। তারা তওবা করে মুসলমান হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!




Users Today : 234
Users Yesterday : 767
This Month : 14656
This Year : 186527
Total Users : 302390
Views Today : 14401
Total views : 3591144