মহান আল্লাহ পাক তিনি এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। শুধু রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সংখ্যাই হচ্ছে তিনশত তেরজন। অপর বর্ণনায় রয়েছে তিনশত পনের জন।
উনারা সবাই জিন-ইনসানকে আল্লাহ পাক উনার দিকে আহ্বান করেছেন, মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিলের শিক্ষা দিয়েছেন। তাদেরকে করেছেন ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ। উনাদের এই কাজে খিদমতের জন্য আল্লাহ পাক কতিপয় ব্যক্তিত্বকে মনোনিত করেছেন, যাদেরকে আমরা আওলিয়ায়ে কিরাম হিসেবে জেনে থাকি। মূলত: এই এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত অসংখ্য-অগণিত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা প্রত্যেকেই জিন-ইনসানের প্রতি আল্লাহ পাক উনার বিশেষ এক নিয়ামত, দয়া, দান, ইহসানেরই বহিঃপ্রকাশ। কালাম পাক-এর এই আয়াত শরীফখানা সেক্ষেত্রে সেদিকে দালালত করেছে-
لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم اياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة وان كانوا من قبل لفى ضلل مبين.
অর্থ: আল্লাহ পাক মু’মিনগণের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তাদের মাঝে একজন রসূল পাঠিয়েছেন। যিনি তাদেরকে উনার আয়াত শরীফসমূহ তিলাওয়াত করে শুনান। তাদেরকে ইছলাহ (পরিশুদ্ধ) করেন, কিতাব শিক্ষা দেন, হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা পূর্বে সুষ্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা আলে ইমরান-১৬৪)
উল্লেখ্য যে, হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা হচ্ছেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নায়িব বা প্রতিনিধি, স্থলাভিষিক্ত। আর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী ও রসূল। উনার পরে আর কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম আসবেন না। নুবুওওয়াত ও রিসালতের ধারা বন্ধ হয়েছে।
তবে যাঁরা উনার প্রতিনিধিত্ব করবেন, নায়িব হবেন উনাদের আগমনের ধারা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ইমাম, মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, ফক্বীহ, ছূফী, গওছ, কুতুব, ওলী, আবদাল, নাকিব, নুযাবা ইত্যাদি সবাই হচ্ছেন আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নায়িব বা প্রতিনিধি, স্থলাভিষিক্ত।
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, মুজাদ্দিদে যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, গওছুল আ’যম, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর আবদুল কাদির জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাআলা তিনি হচ্ছেন উনাদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন, মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন সেই যামানার মুজাদ্দিদ, ইমাম, গওছ, দ্বীন জিন্দাকারী, উম্মাহ’র জন্য রহমত স্বরূপ। পূর্ববর্তী অনেক আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণই উনার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। উনার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবার আলোচনা করেছেন।
পূর্ববর্তী আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ভবিষ্যদ্বাণী
আল্লাহ পাক উনার এমন অনেক ওলী রয়েছেন যাঁদের মর্যাদা-মর্তবার বিষয়টি সম্পর্কে আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা পূর্বেই অবহিত হয়েছেন। প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। সেই সমস্ত মহান ব্যক্তিত্বের অন্যতমত হচ্ছেন সাইয়্যিদুল আওলিয়া মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, আওলাদে রসূল, শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি।
উনি দুনিয়াতে তাশরীফ আনার অনেক পূর্ব থেকে ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সবাই নিজ নিজ যুগে ও নিজ মুরীদ, মু’তাকিদ মুহিব্বীন, আশিকীনদের মাঝে উনার শান-মান-মর্যাদা মর্তবার আলোচনা করেছেন। উনার পরিচয় বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এই সুসংবাদ কখনো স্বপ্নে, কাশফে, মোরাকাবায় বিভিন্নভাবে অবগত হতেন এবং প্রচার প্রসার করতে আদিষ্ট হয়েছেন।
পূর্ববর্তী আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সুসংবাদ
হযরত ইমাম আবুল হাসান শাত্বনুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব æবাহজাতুল আসরার”-এর ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, হযরত শায়েখ আবু বকর ইবনে হাওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজের মুরীদ, মু’তাকিদীন, মুহিব্বীনগণের মাঝে হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক আলোচনা করতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ইরাকে একজন আজমী (অনারবী) ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটবে। তিনি সমস্ত লোকের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন হবেন। উনার মুবারক নাম হবে হযরত আব্দুল কাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনি বাগদাদ শরীফ-এ অবস্থান করবেন। তিনি বলবেন, æআমার এই ক্বদম মুবারক ওলীআল্লাহগণ উনাদের গর্দানের উপর। উনার যামানার সকল ওলীআল্লাহগণই উনার সেই কথা মুবারক মেনে নিবেন। তিনি হবেন একক মর্যাদা-মর্তবা সম্পন্ন মহান ব্যক্তিত্ব।
হযরত শায়েখ আবু আহমদ আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে মুসা রহমতুল্লাহি আলাইহি র্যাদ পাহাড়ে নির্জনতা অবলম্বন করা কালীন সময়ে একদিন হঠাৎ বলে উঠলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আজমী ভূমিতে (ইরান) একজন সন্তান তাশরীফ আনবেন, উনার অসংখ্য-অগণিত কারামত প্রকাশিত হবে। আর সমস্ত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের উপর উনার শ্রেষ্ঠত্ব হবে।
তিনি বলবেন, আমার এই ক্বদম মুবারক সমস্ত আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের গর্দানের উপর। একথা শুনে সেই সময় আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের নিজ নিজ গর্দান মুবারক ঝুঁকিয়ে দিবেন। উনার কারণে সে যামানার সমস্ত লোকই সম্মানিত ও মর্যাদাবান হবেন। যে ব্যক্তি উনাকে দেখবে, ছোহবত লাভ করবে সে অফুরন্ত ফায়দা হাছিল করবে। সুবহানাল্লাহ! (বাহজাতুল আসরার-৭)
গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মুজাদ্দিদে যামান, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যুবক বয়সে তাজুল আরিফীন হযরত আবুল ওয়ালিফা কাকীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জিয়ারতের (সাক্ষাৎ) জন্য বাগদাদ শরীফ-এ আসা-যাওয়া করতেন। যখনই হযরত আবুল ওয়ালিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে দেখতেন তখনই উনার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যেতেন। আর উপস্থিত মুরীদ-মু’তাকিদগণকে বলতেন যে, তোমরা ওলীআল্লাহ উনার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাও। অধিকাংশ সময়ই তিনি একথা বলতেন, এই যুবক তথা গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানার্থে যদি কেউ না দাঁড়ায় তাহলে সে কার সম্মানার্থে দাঁড়াবে? অর্থাৎ তিনি সম্মান-ইজ্জত পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার।
লোকেরা অসংখ্যবার উনার থেকে এরূপ কথা শুনতে পেয়েছেন। যার কারণে মুরীদ-মু’তাকিদগণ একদিন এর হিকমত বা রহস্য জানতে চাইলেন যে, কে এই যুবক, যাঁর সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে আপনি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন, তাগিদ দিয়ে থাকেন? তখন তিনি বললেন, ওই যুবকের উপর এমন একটি সময় আসবে, যখন আম (সাধারণ) খাছ (বিশিষ্ট) সবাই উনার ছোহবতের মোহতাজ (মুখাপেক্ষী) থাকবে। তিনি যা বলবেন, তা সত্যে পরিণত হবে। তিনি বলবেন, ওলীআল্লাহগণ উনাদের গর্দানের উপর আমার ক্বদম মুবারক। একথা শুনে সমস্ত ওলীআল্লাহ উনারা নিজেদের গর্দান উনার সম্মানার্থে ঝুঁকিয়ে দিবেন। কারণ, তিনিই হবেন সেই যুগের কুতুব। কাজেই, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ সেই সময় পায় তাহলে তার আবশ্যক হবে উনার খিদমত করা। (বাহজাতুল আসরার-৮)
আল্লামা হযরত শায়েখ আক্বীল মুনজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে আরয করা হলো যে, এখন কুতুবুল আলম কে? তিনি জাওয়াবে বললেন, বর্তমান যামানার যিনি কুতুব, তিনি এখন মক্কা শরীফ-এ অবস্থান করছেন। তিনি এখনো প্রকাশিত হননি। ওলীআল্লাহগণ উনারা ব্যতীত অন্য কেউ বিষয়টি জানে না। জেনে রেখো, অতিশীঘ্রই একজন যুবকের প্রকাশ ঘটবে। একথা বলে তিনি ইরানের দিকে ইশারা করলেন। সেই যুবক হবেন আজমী বা অনারবী। তিনি বাগদাদ শরীফ-এ লোকদেরকে ওয়াজ-নছীহত করবেন। উনার কারামত আম-খাছ সবার কাছেই পৌঁছবে। সবাই উনার কারামতের স্বীকৃতি দিবেন। তিনি হবেন উনার যামানার কুতুব। তিনি বলবেন, আমার ক্বদম মুবারক সমস্ত ওলীআল্লাহ উনাদের স্কন্ধের উপর। আর আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আপন আপন কাঁধ মুবারক উনার খিদমতে ঝুঁকিয়ে দিবেন। সবাই উনার আনুগত্য হবেন। আমি যদি সে যামানা পেতাম আমিও উনার খিদমতের জন্য আমার গর্দান বাড়িয়ে দিতাম। যে ব্যক্তি উনার কারামত, বুযুর্গীকে সত্য বলে মেনে নিবে সে অশেষ কল্যাণের অধিকারী হবে। (বাহজাতুল আসরার-৯)