তিপ্পান্নতম অধ্যায়ঃ খেলাফতের ইঙ্গিতঃ
প্রসঙ্গঃ হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) মোট ১৯ ওয়াক্ত নামাযের ঈমামতী করেন
===========
৮ই রবিউল আউয়াল বৃহস্পতিবার যোহরের নামাযান্তে নবী করিম [ﷺ] হুযরা মোবারকে চলে আসেন। ঐদিন আসরের নামায থেকে ১২ তারিখ সোমবার ফজরের নামায পর্যন্ত মোট ১৯ ওয়াক্ত নামাযে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) ঈমামতী করেন।
একদিন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) এর বিলম্ব হলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জামায়া (رضي الله عنه), হযরত ওমর (رضي الله عنه)-কে ইমামতী করতে বললেন। যখন ওমর (رضي الله عنه) উচ্চস্বরে তাকবীর দিয়ে নামায আরম্ভ করেন তখন নবী করিম [ﷺ] জিজ্ঞাসা করলেন, আবু বকর কোথায়? আল্লাহ এবং মুসলমানগণ আবু বকর ছাড়া অন্য কাউকে গ্রহণ করবে না। এভাবে দুবার বললেন। অতঃপর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর কাছে লোক পাঠিয়ে তাঁকে আনা হলো এবং পূনরায় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-কে দিয়ে নবী করিম [ﷺ] দ্বিতীয়বার নামায আদায় করান। এ ব্যাপারে হযরত ওমর (رضي الله عنه) আবদুল্লাহ ইবনে জামায়া (رضي الله عنه)-কে খুব শাঁসালেন এবং বললেন – আমি মনে করেছি, তুমি নবী করিম [ﷺ]-এঁর নির্দেশেই আমাকে নামায পড়ানোর জন্য বলেছিলে। আবদুল্লাহ ইবনে জামায়া (رضي الله عنه) বলেন – না, নবী করিম [ﷺ] নির্দেশ করেন নাই বরং আবু বকর (رضي الله عنه)-কে অনুপস্থিত দেখে উপস্থিত মুসুল্লিগণের মধ্যে আপনাকেই সর্বাধিক উপযুক্ত মনে করে আমি নিজেই আপনাকে নামায পড়ানোর অনুরোধ করেছিলাম (ইমাম আহমদ ও আবু দাউদ)। নবীজীর বর্তমানে অন্য কেউ হুকুম দিতে পারেনা।
হযরত আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنها) বলেন, এশার নামাযের সময় হলে হযরত বিলাল (رضي الله عنه) আযান দিলেন। নবী করিম [ﷺ] এরশাদ করলেন আবু বকরকে নামায পড়াতে বলো। হযরত আয়শা (رضي الله عنه) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ [ﷺ]! আবু বকর (رضي الله عنه) খুবই শোকে কাতর। আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে তিনি ইমামতী করা সহ্য করতে পারবেন না। বরং অন্য কাউকে দিয়ে নামায পড়ান। নবী করিম [ﷺ] পূনরায় বললেন, আবু বকরকে বলো- ইমামতী করার জন্য। এভাবে তিনবারের সময় বললেন- তোমরা হযরত ইউসুফ (عليه السلام)-এঁর সাথে মিশরীয় মহিলাদের ন্যায় আমার সাথে আচরণ করছো। যাও আবু বকরকে বলো, নামায পড়াতে। অতঃপর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) নামায পড়াতে দাঁড়ালেন। নবী করিম [ﷺ] শরীর কিছুটা হালকা অনুভব করলেন। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) ও হযরত আলী (رضي الله عنه)- এর কাঁধে ভর দিয়ে তিনি হুযরা মোবারক থেকে বের হলেন কিন্তু তাঁর পাঁ মোবারক মাটিতে হোঁচট খাচ্ছিল। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) টের পেয়ে পিছিয়ে আসতে চাইলে ইশারায় ডান পার্শ্বে দাঁড় করিয়ে নিজে অবশিষ্ট নামায বসে বসে আদায় করলেন। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) মোকাব্বির হয়ে নামায আদায় করলেন।
[এটি কোন নামায ছিলো ? হযরত আয়শা (رضي الله عنه) এর বর্ণনা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, এটি ছিল এশার নামায কিন্তু অন্য একটি বর্ণনা মতে, এটি ছিল যোহরের নামায। ইবনে কাছির বলেন – এটি শেষ বৃহস্পতিবার যোহর নামাযের ঘটনা। কেননা, এরপর নবী করিম [ﷺ] আর মসজিদে যেতে পারেননি। অধ্যায়ের শুরুতে এটির বিবরণ দেয়া হয়েছে।
১২ই রবিউল আউয়াল ফজরের শেষ নামায
সোমবার ফজরের নামাযের সময় নবী করিম [ﷺ] জানালার পর্দা সরিয়ে সর্বশেষ জামাতের দৃশ্য দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। সাহাবায়ে কেরাম টের পেয়ে নামায ছেড়ে দেয়ার মত অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) পিছনে সরে আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এমন সময় নবী করিম [ﷺ] হাতে ইশারা দিয়ে তাঁকে বারণ করে জানালার পর্দা ফেলে দেন। ঐ নামাযের মধ্যে সাহাবীগণ নবীজীর সম্মানকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। এখন আমি গোলাবীদের জিজ্ঞেস করি – “আপনাদের কিতাব সিরাতে মুস্তাকিম মতে তো নামাযে নবীজীর খেয়াল করা জিনাতুল্য গুনাহ।” এখন বলুন, হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও সাহাবীগণ নামাযে কার খেয়াল করেছিলেন ! নবীজীর গুরুত্ব কত বেশী এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায়।
নামায জামাতে শেষ করে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বিবি আয়শার গৃহে প্রবেশ করেন এবং বলেন- মনে হয় নবী করিম [ﷺ] আজ অনেক সুস্থ, অসুখ অনেক কমে গেছে। আমাদের দিকে চেয়ে তিনি হেসেছেন। মুসুল্লীগণ সহ আমরা সকলেই হুযুরের হাসি দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছি। এমনকি আমাদের নামায ছেড়ে দেওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। এ কথা বলে তিনি মদিনার অদূরে নিজ স্ত্রী’র গৃহের দিকে রওনা হন। মদিনা শরীফের পূর্ব প্রান্তে তার এক বিবি বিন্তে খারেজা (رضي الله عنه) বাস করতেন। মহল্লাটির নাম ছিল সানাহ্। তিনি ঘোড়ায় চড়ে সেদিকে রওনা দিলেন।