ক্বিয়াম বিরোধীদের উপস্থাপিত দলীল ও তার খণ্ডনঃ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

একথা আজ মধ্যাহ্ন সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট যে, ওহাবী সম্প্রদায় ক্বিয়াম বিরোধী। তারা ক্বিয়ামকে হারাম ও বিদ‘আত বলে। তারা তাদের দাবীর পক্ষে কিছু হাদীসও পেশ করে; কিন্তু এখন একথাও স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা ওই হাদীসগুলোর অপব্যাখ্যাই করে থাকে। যেমন, ওহাবীরা পেশ করে-

◇ হাদীস নং-১

عَنْ اَنَسٍ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ لَمْ یَکُنْ شَخْصًا اَحَبَّ اِلَیْہِمْ مِّنْ رَّسُوْلِ اللّٰہِ ﷺ وَکَانُوْا اِذَا رَأَوْہُ لَمْ یَقُوْمُوْا لِمَا یَعْلَمُوْنَ مِنْ کَرَاہِیَّتِہٖ لِذٰلِکَ – رَوَاہُ التِّرْمِذِیُّ وَقَالَ ہٰذَا حَدِیْثٌ حَسَنٌ صَحِیْحٌ

অর্থাৎ হযরত আনাস [رضي الله عنه] হতে বর্ণিত, “তিনি বলেন, সাহাবা-ই কেরামের নিকট নবী করীম [ﷺ] অপেক্ষা অধিক প্রিয় আর কেউ ছিলো না। যখন তাঁরা নবী করীম [ﷺ]’কে আসতে দেখতেন, তখন তাঁরা দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা অবগত ছিলেন যে, তিনি এরূপ করা অপছন্দ করতেন।”

[তিরমিযী শরীফ]

◇ হাদীস নং-২

ওহাবীরা আরো উপস্থাপন করে থাকে-

وَعَنْ مُعَاوِیَۃَ بْنِ اَبِیْ سُفْیَانَ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ ﷺ مَنْ سَرَّہٗ اَنْ یَّتَمَثَّلَ لَہُ الرِّجَالُ قِیَامًا فَلْیَتَبَوَّأْ مَقْعَدَہٗ مِنَ النَّارِ رَوَاہُ التِّرْمِذِیُّ وَاَبُوْدَاوٗدَ

অর্থাৎ হযরত মু‘আভিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, লোকেরা তাঁর সামনে পুতুলের মত দাঁড়িয়ে থাকুক, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরী করে নেয়।”

[তিরমিযী, আবূ দাঊদ]

◇ হাদীস শরীফ-৩

ওহাবীরা দলীল হিসেবে আরো উপস্থাপন করে-

وَعَنْ اَبِیْ اُمَامَۃَ قَالَ خَرَجَ رَسُوْلَ اللّٰہِ ﷺ مُتَّکِءًا عَصًا فَقُمْنَا لَہٗ فَقَالَ لاَ تَقُوْمُوْا کَمَا تَقُوْمُ الْاَعَاجِمُ یُعَظِّمُ بَعْضُہَا بَعْضًا رَوَاہُ اَبُوْدَاوٗدَ

অর্থাৎ হযরত আবূ উমামা বাহেলী [رضي الله عنه] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম [ﷺ] লাঠিতে ভর করে হুজরা শরীফ থেকে বের হলেন। আমরা তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে গেলাম। হুযূর করীম [ﷺ] এরশাদ করলেন, ‘‘তোমরা পারস্য দেশীয় লোকদের মতো ক্বিয়াম করো না, যেভাবে তারা একজন অপরজনকে তা’যীম করে।’’

[আবূ দাঊদ]

✍🏻 খণ্ডন.

উপরোক্ত তিন(০৩)টি হাদীস মেশকাত শরীফেও আছে। ইমাম তিরমিযী ও ইমাম আবূ দাঊদ উক্ত হাদীসগুলো নিজ নিজ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। বস্তুতঃ এগুলোতে বিশেষ ধরনের ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়েছে। মূল ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি। মূল ক্বিয়াম যে সুন্নাত, তার প্রমাণ বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে। মিশকাত শরীফে ক্বিয়ামের পক্ষে হযরত আবূ হোরায়রা ও হযরত সা’দ [رضى الله عنهما]’র হাদীস এবং হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী’র হাদীসও বর্ণিত হয়েছে, যা ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন, যা একটু আগে উদ্ধৃত হয়েছে। সুতরাং ক্বিয়ামের পক্ষে ও বিপক্ষে বর্ণিত হাদীস শরীফ গুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান না করে নির্বিচারে ‘ক্বিয়ামকে নিষিদ্ধ’ বলা নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতার প্রমাণ বৈ-কিছু হবে না।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ক্বিয়ামের বৈধতা ও উৎকৃষ্টতা সম্বলিত হাদীসগুলো প্রাধান্যের দাবীদার। আর বিপক্ষে বর্ণিত হাদীসগুলো ব্যাখ্যার অবকাশ ও দাবী রাখে। যেমন, হাদীস শরীফে নবী করীম [ﷺ] সর্দারের সম্মানে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং অন্য হাদীসে হুযূর করীম [ﷺ]-এর সম্মানে সাহাবীগণের দীর্ঘ ক্বিয়ামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে হুযূরের পক্ষ থেকে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা ছিল না। সুতরাং ওহাবীদের পেশকৃত তিন(০৩)টি হাদীসে তিনি কি কারণে ক্বিয়াম নিষেধ করলেন, কোন্ পরিবেশে তিনি সাহাবীদের দাঁড়ানো অপছন্দ করেছেন এবং কোন্ ধরনের ক্বিয়ামকে তিনি নিষিদ্ধ করেছেন তা খতিয়ে দেখলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।

□ হযরত আনাস [رضي الله عنه]’র বর্ণিত হাদীস প্রসঙ্গঃ

__________________________________________

ক্বিয়াম বিরোধীদের পেশকৃত এ প্রথম হাদীসে বুঝা যায় যে, সাহাবীগণ হুযূরের আগমনে ক্বিয়াম করতেন না। কেননা তিনি ‘এরূপ ক্বিয়াম’ করা পছন্দ করতেন না। ‘এরূপ ক্বিয়াম’-এর ধরন সম্বন্ধে মোল্লা আলী ক্বারী [رحمه الله عليه] মিরক্বাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-

قَوْلُہٗ لِذٰلِکَ اَیْ لِقِیَامِہِمْ تَوَاضُعًا لِّرَبِّہٖ مُخَالِفَۃً لِّعَادَۃِ الْمُتَکَبِّرِیْنَ

অর্থাৎ নবী করীম [ﷺ] সাহাবীগণের এ ধরনের ক্বিয়ামকেই অপছন্দ করতেন- মহান রব আল্লাহর জন্য বিনয় প্রকাশার্থে এবং অহংকারী ব্যক্তিদের প্রথা বা অভ্যাসের বিরোধিতার নিমিত্তে। [মিরক্বাত]

অন্য একটি জবাব হলো- হাদীসখানা সাহাবীর ব্যক্তিগত অভিমত। এটা হুযূর করীম [ﷺ]-এর ভাষ্য নয়। হুযূর করীম [ﷺ]-এর অনুমোদিত ক্বিয়াম হলো, যা হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী [رضي الله عنه] ও হযরত আবূ হোরায়রা [رضي الله عنه] বর্ণনা করেছেন। তৃতীয় জবাব হলো- এ অপছন্দ ছিল বিনয়মূলক; নিষেধ মূলক নয়।

মোল্লা আলী ক্বারীর ব্যাখ্যা দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হয় যে, নবী করীম [ﷺ] মূল ক্বিয়ামকে অপছন্দ করতেন না; বরং বিনয়বশতঃ দরবারের নিয়মে কৃত অথবা অহংকারীদের ক্বিয়ামকেই তিনি অপছন্দ করতেন। আর সাহাবীগণ ওই ধরনের ক্বিয়াম থেকে বিরত থাকতেন। হযরত আনাসের বর্ণনার উদ্দেশ্যও তাই। হযরত আবূ হুরায়রা [رضي الله عنه]’র সাথে তিনিও মসজিদে হুযূরের সম্মানে ক্বিয়াম করতেন। সুতরাং হুযূর করীম [ﷺ] অহঙ্কারমূলক ক্বিয়ামকেই অপছন্দ করতেন। তা’যীমী ও বিনয়মূলক ক্বিয়াম সাহাবীগণের আমল ছিলো। এটিই সঠিক ব্যাখ্যা।

□ হযরত মু‘আভিয়া [رضي الله عنه]’র হাদীস প্রসঙ্গঃ

_______________________________________

ক্বিয়াম বিরোধীদের পেশকৃত দ্বিতীয় হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, কারো সম্মানে মূর্তিবৎ দাঁড়িয়ে থাকাকেই হুযূর করীম [ﷺ] নিষিদ্ধ করেছেন, মূল ক্বিয়ামকে নয়। এ হাদীস শরীফে মূর্তিবৎ ক্বিয়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মূল ক্বিয়ামকে নয়।

□ হযরত আবূ ঊমামা [رضي الله عنه]’র হাদীস প্রসঙ্গঃ

_________________________________________

ক্বিয়াম বিরোধীদের পেশকৃত তৃতীয় হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে- পারস্যবাসীদের ন্যায় নতজানু হয়ে রাজার সামনে মূর্তিবৎ দাঁড়িয়ে থাকার মত ক্বিয়াম অবশ্যই নিষিদ্ধ। নবী করীম [ﷺ] তাদের অনুরূপ মূর্তিবৎ নতজানু ক্বিয়ামকেই নিষিদ্ধ করেছেন, মূল ক্বিয়ামকে নিষিদ্ধ করেননি। তিনি একথা বলেননি, ‘তোমরা ক্বিয়াম করোনা’ বরং বলেছেন, ‘পারস্যবাসী অগ্নি-পূজারীদের ন্যায় ক্বিয়াম করো না।’ যেমন কেউ বললো, ‘গরুর মত পানি পান করো না’। এর অর্থ হলো, ‘পানি পান করো, তবে গরুর মতো না’।

অনুরূপ, হাদীসের অর্থ হবে ‘ক্বিয়াম করো, তবে পারস্যবাসী অগ্নি উপাসকদের মত নতজানু হয়ে না।’ ক্বিয়াম বিরোধীরা হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা দেয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তারা হাদীসকে ঢাল স্বরূপ ব্যবহার করে মাত্র। যদি তারা সত্য গ্রহণ করতো এবং সঠিক জিনিষ মেনে নিতো, তাহলে হযরত সা’দ ও হযরত আবূ হুরায়রা’র হাদীস দু’টিও বর্ণনা করতো; কিন্তু তারা তা করে না। এ দু’টিকে গোপন করে অন্য তিনটি হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রচার করে। এটা আমানতদারী নয় বরং রসূলে পাকের হাদীস গোপন করার মতো জঘন্য অপরাধ। এ হাদীসে সাহাবীগণের ক্বিয়ামের ধরন দেখেই ওই ধরনের ক্বিয়াম না করার পরামর্শ দিয়েছেন; কিন্তু ওহাবীরা বলেছে- তিনি নাকি সব ধরনের ক্বিয়ামকেই নিষেধ করেছেন। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a reply

  • Default Comments (0)
  • Facebook Comments