
পবিত্র কোরআনের ক্রমিক অনুযায়ী ৬৭ নম্বর সুরা হলো সুরা মুলক। এই সুরা অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। প্রথম আয়াত থেকেই ইসলামের মৌলিক শিক্ষাকে সংক্ষেপে হৃদয়গ্রাহী করে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহর রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও মহত্ত্বের পরিচয় দেওয়া হয়েছে।সৃষ্টি নৈপুণ্যের বয়ানে অসীম কুদরতের আলোচনা করা হয়েছে। জন্ম-মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের জীবনের লক্ষ্য, সিরাতুল মুস্তাকিমের ওপর চলার পুরস্কার এবং আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার ভয়াবহ পরিণতি প্রকাশ করা হয়েছে। শোকর আদায় করা ও আখিরাতের প্রস্তুতির তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে সুরা মুলক মুমিনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পাথেয়।এই সুরার প্রথমাংশের ‘মুলক’ শব্দ থেকে সুরাটির নামকরণ করা হয়েছে। এই সুরা পাঠকারী অশেষ কল্যাণ ও বরকত লাভ করে বিধায় ‘তাবারকা’ নামও দেওয়া হয়। (তাফসিরে জালালাইন, আরবি-বাংলা : ৭/১০)
নবীর যুগে সুরা মুলকের গুরুত্ব
সুরা মুলকের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষ্পাপ চরিত্রের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও দৈনিক রাতে এটি পাঠ করেছেন।
সবাইকে মুখস্থ করতে উৎসাহিত করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার মন চায় যে প্রত্যেক উম্মতের অন্তরে সুরা মুলক থাকুক।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ২১১৬)
একবার এক সাহাবি একটি কবরের ওপর তাঁর তাঁবু স্থাপন করেন। তিনি ধারণা করতে পারেননি যে এটি একটি কবর। হঠাৎ তিনি অনুভব করেন, কবরে একজন লোক সুরা মুলক তিলাওয়াত করছেন।
অবশেষে তিনি তা পাঠ শেষ করেন। তিনি পরে নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এক স্থানে আমার তাঁবু ফেলি। আমার ধারণা ছিল না যে এটি একটি কবর। হঠাৎ অনুভব করি এক ব্যক্তি সুরা মুলক তিলাওয়াত করে খতম করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটি হলো প্রতিরোধক। এটি হলো মুক্তিদায়ক। এটি কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেয়। এটি কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেয়। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯০)
সুরা মুলক পাঠের ফজিলত
কোরআন তিলাওয়াত করা সর্বোত্তম ইবাদত। নিয়মিত কোরআন পাঠকারীর জন্য সুসংবাদ আছে। আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। নিশ্চয়ই তা কিয়ামত দিবসে তার সাথিদের জন্য সুপারিশ করতে উপস্থিত হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮২৪)
প্রতিদিন সুরা মুলক পাঠ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোরআনে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যা এক ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের সুপারিশ করেছে। ফলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তা হলো সুরা তাবারকাল্লাজি অর্থাৎ সুরা মুলক।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪০০, তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১)
সুরা মুলক কখন পড়তে হয়
সুরা মুলক রাতের বেলা পাঠ করা উত্তম। সাধারণত আলেমরা ইশার নামাজের পর সুরা মুলক পাঠ করার কথা বলেন। বিলম্বে কিংবা বিছানায় শুয়ে পাঠ করাও জায়েজ আছে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ততক্ষণ পর্যন্ত ঘুমাতেন না, যতক্ষণ না সুরা আলিফ লাম মিম তানজিল এবং সুরা মুলক পড়ে নিতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯২)
লেখক : আলেম ও কবি





Users Today : 233
Users Yesterday : 767
This Month : 14655
This Year : 186526
Total Users : 302389
Views Today : 11904
Total views : 3588648