কুরবানির হুকুম ও কুরবানির নেসাব।

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হানাফী মাযহাবের মত অনুযায়ী মুকীম, বালেগ, সুস্থ মস্তিস্কের মুসলমানের জন্যে যদি তার কাছে কুরবানির দিন সমূহে নেসাব পরিমান সম্পত্তি  থাকে তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
[সূরা কাওছার আয়াত ২, ইবনে মাযাঃ ২/১০৪৪ মাজমাউল আনহুরঃ ৪/১৬৭]।

কুরবানির নেসাব
____________
শুধু স্বর্ণ হলে সাড়ে সাত ভরি আর শুধু রুপা হলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি অথবা তার সমপরিমান হাজতে আসলিয়া তথা প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ থাকা।
[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ৫/৩৯৩ বাদায়েউস সানায়েঃ ৬/২৭০ শামীঃ ৬/৩১২]।

হাজতে আছলিয়া বলতে বুঝায়, মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান পেশায় ব্যবহারিত সম্পদ, দ্বীনি শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিতাবসমূহ এবং যে সকল বস্তু মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে প্রয়োজন হয়। আর যে সকল জিনিস মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে প্রয়োজন হয় না তা হাজতে আছলিয়ার অন্তর্ভ্ক্তু নয়। যেমন, টিভি, রেডিও, প্রয়োজোন অতিরিক্ত একাধিক মোবাইল, তিন সেটের অতিরিক্ত কাপড় (ফাতওয়ায়ে শামী), প্রয়োজন অতিরিক্ত ঘর বা প্লট, বড় বড় ডেগ যা সব সময় কোন প্রয়োজনে আসে না এবং ঘরের ঐ সমস্ত জিনিস যা ঘরের সুন্দর্যের জন্য রাখা হয়েছে। ইত্যাদি, ইত্যাদি।
[সূত্রঃ আল মাওসূয়াতুল ফেকহিয়্যাহঃ ৬/৩৫ কাওয়াইদুল ফিকহিয়্যাঃ ২৫৭ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩১২ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ৫/৩২৬]।

কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।
[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২]।

নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে।
[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬]।

নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।
[সূত্রঃ রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫]।

মুসাফেরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
[সূত্রঃ হেদায়াঃ ৪/৪৪৩; মাবসূতে সারাখসীঃ ৮/১২]।

কোরবানীর সময় তিন দিন : ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ্ব। এটি সহীহ ‘মারফূ হুকমী’ হাদীসে স্পষ্টভাবে আছে, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকার। তদ্রূপ সাধারণ মারফূ হাদীস দ্বারাও তা প্রমাণিত।
সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ হাদীসের প্রসিদ্ধ কিতাবসমূহে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐ বিখ্যাত হাদীস বিভিন্ন সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যাতে তিন রাতের পর ঘরে কোরবানীর গোশত রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মানুষের সহায়তা। কারণ ঐ বছর ঈদুল আযহার সময় আশপাশ থেকে অনেক দরিদ্র মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।
সহীহ বুখারীতে ঐ হাদীসের পাঠ এই-

من ضحى منكم فلا يصبحن بعد ثالثة وبقي في بيته منه شيء.

[সূত্রঃ সহীহ বুখারী, কিতাবুল আযাহী, বাব : ১৬, হাদীস : ৫৫৬৯]।

সহীহ মুসলিমে হযরত জাবির রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের পাঠ এই-

كنا لا نأكل من لحوم بدننا فوق ثلاث مني، فارخص لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : كلوا وتزودوا …

[সূত্রঃ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল আযাহী, হাদীস ৫০৬৭]।

এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, শরীয়তের দৃষ্টিতে কুরবানীর সময় তিন দিন। তবে এই সময়ের পরও কোরবানীর গোশত সংরক্ষণের যে সাধারণ বৈধতা ছিল একটি বিশেষ সামাজিক প্রয়োজনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা রহিত করে দিয়েছিলেন পরে আবার তার অবকাশ প্রদান করেন। ঐ অবকাশের। হাদীসগুলোতে কোথাও একথা নেই যে, তিনি কোরবানীর গোশত সংরক্ষণের অবকাশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চতুর্থ দিনও কোরবানী করার অনুমতি দিয়েছেন।

قال الإمام أبو بكر الرازي الجصاص : فدلت هذه الأخبار على أن جواز الأضحية مقصور على هذه الأيام، لأنه إذا كان منهيا عن تبقية اللحم أكثر من ثلاث والذبح لا محالة قبل ذلك علمنا أن الذبح مقصور على ثلاث.
وقد روي في بعض ألفاظ حديث علي رضي ا لله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى أن يبقى عندكم من نسككم شيء بعد الثلاث، فهو على الحي والمذبوح جميعا، لأن اللفظ يتناولهما. انتهى
وقال الإمام ابن قدامة الحنبلي في المغني : ولنا أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن ادخار لحوم الأضاحي فوق ثلاث، ولا يجوز الذبح في وقت لا يجوز ادخارالأضحية إليه. انتهى
[সূত্রঃ শরহু মুখতাসারিত তহাবী, জাসসাস ৭/৩৩২-৩৩৩; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৮৭]।

সাহাবায়ে কেরামও সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, কোরবানীর সময় তিন দিন বলাবাহুল্য, এটা তাঁরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ থেকেই গ্রহণ করেছেন। কারণ ইবাদতের সময়সীমা তো নিছক যুক্তি-বুদ্ধির দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না। তাই এ ধরনের বর্ণনাকে পরিভাষায় ‘মারফূ হুকমী’ বলে, যা মারফূ হাদীসেরই একটি প্রকার।

সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য-
১. হযরত আনাস রা. বলেন, ‘যবেহ (কোরবানী) করা যায় ঈদের (দিনের) পর আর দুই দিন।’
الذبح بعد العيد يومان
এই বর্ণনার সনদ সহীহ।
দেখুন : আহকামুল কুরআন, তহাবী, ২/২০৬; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৯/২৯৭; আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম ৭/৪৯৯।

২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, ‘ঈদুল আযহার (দিনের) পর আযহা (কুরবানী) দুই দিন।’
الأضحى يومان بعد يوم الأضحى.
এই বর্ণনার সনদ সহীহ, বরং আসাহহুল আসানীদ (শ্রেষ্ঠ সনদ)-এর অন্যতম।
দেখুন : আল মুয়াত্তা, ইমাম মালিক باب الضحية عما في بطن المرأة، وذكر أيام الأضحى হাদীস : ২০৩৮।

৩. আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘আযহা (কোরবানী) তিন দিন।’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘কোরবানী করা যায় ইয়াওমুন নহর (কোরবানীর দিন)-এর পর আরও দুই দিন।’
الأضحى ثلاثة أيام، وفي لفظ : النحر يومان بعد يوم النحر، وأفضلها يوم النحر.
এ বর্ণনা বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইবনুত তুরকুমানী রাহ. তহাবীর সনদকে ‘জাইয়েদ’ বলেছেন।
দেখুন : আহকামুল কুরআন তহাবী আল জাওহারুন নাকী, (সুনানে কুবরা বাইহাকীর সাথে মুদ্রিত) ৯/২৯৬।

৪. আবু হুরায়রা রা. বলেন, ‘আযহা (কোরবানী) হচ্ছে তিন দিন।’
الأضحى ثلاثة أيام
[সূত্রঃ আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম-ইলাউস সুনান ১২/২৩২-১৩৩]।

৫. আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে বর্ণিত, ‘কোরবানী তিন দিন।’

النحر ثلاثة أيام، وفي لفظ النحر ثلاثة أيام أفضلها أولها.
[সূত্রঃ আলমুয়াত্তা, ইমাম মালিক, প্রাগুক্ত ; আহকামুল কুরআন, তহাবী ২/২০৫; ই’লাউস সুনান ১২/২৩২]।

৬. ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, ‘কোরবানী শুধু এই তিন দিনই করা যায়।’

إنما النحر في هذه الثلاثة الأيام
[সূত্রঃ আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম-ইলাউস সুনান ১২/২৩২]।

সাহাবায়ে কেরামের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ইমাম তহাবী রাহ. ঐ মূলনীতি উল্লেখ করেছেন, যার ভিত্তিতে পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে, বিষয়টি তাঁরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই গ্রহণ করেছেন এবং যে কারণে এই বর্ণনাগুলো ‘মারফু হুকমী’র পর্যায়ভুক্ত হয়।
দ্র. আহকামুল কুরআন, তহাবী ২/২০৮।
একই কথা অতি সহজ ও সংক্ষেপে বলেছেন ইমাম আবু বকর রাযী আলজাসসাস রাহ.। তাঁর আলোচনায় মূল পাঠ উদ্ধৃত করা হল।

فإن مقادير الأوقات التي تتعلق بها صحة الفروض لا تعلم من طريق المقاييس، وإنما طريقها التوقيف أو الاتفاق. وقد حصل الاتفاق والسنة في الثلاث. فأثبتناها ولم نثبت ما فوقها، لعدم الدلالة عليه. انتهى
[সূত্রঃ শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৭/৩৩৩
আরো দেখুন : আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/২৩৪ সূরা হজ্বের আলোচনায়]।

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘আযহা (কোরবানী) তিন দিন। ইওয়ামুন নাহর ও তার পর দুই দিন।’ অন্য বর্ণনায়, ‘আযহা (কোরবানী) তিন দিন : ইয়াওমুন নাহ্র ও তার পর দুই দিন। আর আইয়ামুত তাশরীক হচ্ছে ইয়াওমুন নাহর-এর পর তিন দিন।’

الأضحى ثلاثة أيام : يوم النحر ويومان بعده. رواه الإمام أبو حنيفة في كتاب الآثار رقم ٧٨٦ وقال محمد : وبه نأخذ، وهو قول أبي حنيفة. وفي رواية أبي يوسف عنه زيادة …وأيام التشريق ثلاثة أيام بعد يوم النحر.
[সূত্রঃ কিতাবুল আছার, ইমাম আবু হানীফা, (ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-এর বর্ণনা) হাদীস : ৭৮৬; (ইমাম আবু ইউসুফ রাহ.-এর বর্ণনা) হাদীস : ৩০৬]।

ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, ইমাম যফর ইবনুল হুযাইল, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহিমুাহুল্লাহ) প্রমুখ বিখ্যাত মুজতাহিদ ইমামগণের সিদ্ধান্তও তাও। সুতরাং একে ‘ভিত্তিহীন’ বলা চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কোনো কোনো আহলে ইলম কুরবানীর সময় চার দিন হওয়ার কথাও বলেছেন। আতা ইবনে আবী রাবাহ, হাসান বসরী, ওমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহিমাহুমুল্লাহ) থেকে তা বর্ণিত হয়েছে। সেটিও একটি ইজতিহাদী মত। ইমাম শাফেয়ী রাহ. এই মত গ্রহণ করেছেন।
তবে এই দুই মতের কেউই অপর মতকে ভিত্তিহীন বলেননি। শরীয়তের যে বিষয়গুলোতে উভয় দিকে দলীল থাকার কারণে আহলে ইলমের মাঝে ইজতিহাদগত মতভেদ হয়েছে সেসব বিষয়ে একটি মত গ্রহণ করে অন্য মতকে ভিত্তিহীন বলা অপরিপক্কতার পরিচয় বহন করে। এটা সাম্প্রতিক সময়ের শুযুয ও বিচ্ছিন্নতা, যা সালাফের যুগে ছিল না। এ উপসর্গের বিষয়ে সতর্কতা কাম্য।
আর কোরবানীর সময় চার দিন হওয়ার বিষয়ে জুবাইর ইবনে মুতইম রা.-এর সূত্রে বর্ণনাকৃত যে রেওয়ায়েতের কথা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে তার সনদ ‘মুনকাতি’ ও বিচ্ছিন্ন। তাছাড়া ঐ বর্ণনার আলোচিত অংশটি অনেক ইমামের মতে ‘মা’লূল’ অর্থাৎ তা এ হাদীসের শক্তিশালী বর্ণনাগুলোতে পাওয়া যায় না।
[বিস্তারিত : আহকামুল কুরআন তহাবী ২/২০৬; আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/২৩৪-২৩৫;আলইসতিযকার ১৫/২০৩-২০৪; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৮৭; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৮/৩৬১; আলজাওরুন নাকী (সুনানে কুবরার সাথে) ৯/২৯৬; নাসবুর রায়াহ ৪/২১২-২১৩; ইলাউস সুনান ১২/২৩১]।

রাতে কুরবানী করা-
১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো।
[সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩]।

কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে-
কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।
[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১]।

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে-
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।
[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫]।

গরু ও ছাগল খাসী করার শারঈ বিধি-নিষেধ-
খাসী করা জায়েয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাসী করা ছাগল কুরবানী করেছেন।
[সূত্রঃ ছহীহ্ ইবনু মাজাহ্ হা/৩১২২; মিশকাত হা/১৪৬১, বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১১৩৮]।
যে হাদীছে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে [সূত্রঃ বায়হাক্বী, ছহীহুল জামে‘ হা/৬৯৬০] সে সম্পর্কে ইমাম নববী রহঃ বলেন, সেগুলি হারাম পশুর বেলায় প্রযোজ্য।
দ্র: মাছাবীহুত তানভীর ‘আলা ছহীহিল জামে‘ ২/১৫ পৃ:।

নর ও মাদা পশুর কুরবানী-
যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়।
[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫]।

কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।
[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩]।

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা-
উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না।
[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬]।

ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির যদি তার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশী হয় বা সমান হয়, অথবা ঋণ আদায় করার পর তার কাছে নেসাব পরিমান সম্পদ বাকি না থাকে তাহলে এমন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ৫/৩৯২]।

যদি কোন মহিলার কাছে কিছু স্বর্ণ এবং অল্প কিছু টাকা থাকে আর উভয়টা মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমান টাকা হয় তাহলে সে মহিলার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। তার স্বামীর কুরবানী দ্বারা তার পক্ষ থেকে ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে না।
[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ২/২৯৮]।

স্বামী আর স্ত্রীর কাছে যদি আলাদা আলাদাভাবে নেসাব পরিমান সম্পদ থাকে তাহলে তাদের উভয় জনকে স্বতন্ত্র কুরবানী করতে হবে।
[সূত্রঃ বুখারীঃ ৭/৯৯ তাতারখানিয়াঃ ১৭/৪০৫; মুলতাকাতুল আবহুরঃ ৪/১৬৬]।

একটি প্রশ্ন ও জবাব – আমি আমার, আমার স্ত্রী, সন্তান, মা এবং মৃত বাবার নামে কোরবানী দেয়ার উদ্দেশ্যে যদি কোন পশু ক্রয় করি এবং সেটি কোরবানী করলে আমার স্ত্রী উপর যে কোরবানী ওয়াজিব হয়েছে সেটা কি আদায় হবে?

উত্তর- কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশুটিতে স্বামী তার স্ত্রীর পক্ষে যে কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে তা আদায়ের জন্যে কুরবানির গরু ইত্যাদি পশুতে অংশ রাখলে স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য সন্তান মা বা বাবার পক্ষ থেকে কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশুতে অনুরুপ অংশ রাখলে সন্তানের দ্বারা মায়ের বা বাবার পক্ষ থেকে উক্ত ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
অনুরুপে ভাই ভাইয়ের পক্ষ থেকে কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশুতে অংশ রেখে ওয়াজিব আদায়ের ভূমিকা রাখতে পারেন।

এমন ব্যক্তি যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে যদি কুরবানির দিনগুলোতে কুরবানির নিয়তে কোন পশু ক্রয় করে তাহলে তার উপর সেটি কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ৫/৩৯১ বাদায়েউস সানায়েঃ ৬/২৬৪]।

যৌথ পরিবারের সবাই যদি আলাদা আলাদা ভাবে নিসাব পরিমান সম্পত্তির মালিক হয় তাহলে সকলের পক্ষ থেকে একটা কুরবানী করলে কিংবা এই বছর এক জনের নামে আরেক বছর আরেক জনের নামে আরেক বছর আরেক জনের নামে কুরবানী করলে কুরবানী আদায় হবে না। বরং সবাইকে স্বতন্ত্র কুরবানী করতে হবে।
[সূত্রঃ আদ দুররুল মুখতার মায়া শামীঃ ২/২৩১ মাজমাউল আনহুরঃ ৪/১৬৬]।

জিবিকা নির্বাহের জন্য যতটুকু ফসলের জমির প্রয়োজন শুধুমাত্র ততটুকু জমি ও তার ফসল হাজতে আছলিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এর অতিরিক্ত জমি ও তার ফসলের মূল্য হিসাব করে নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩১২]।

যদি কোন ব্যক্তির কাছে প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি থাকে, কিন্তু তার কাছে কুরবানী করার মত নগদ টাকা না থাকে তাহলে তার উপর ঋণ করে হলেও কুরবানী করা ওয়াজিব।
[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩১২]।

একটি পরিবারের একজনের কোরবানি সবার জন্যে যথেষ্ট কিনা।
____________
এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন কোরবানী করলে সবার পক্ষ থেকে কিছুতেই কুরবানী আদায় হবে না। এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন রোযা রাখলে যেমন সবার পক্ষ থেকে আদায় হবে না।

এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন হজ্ব করলে সবার পক্ষ থেকেও হজ্ব আদায় হবে না।

অনুরুপে এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন সদকায়ে ফিতির আদায় করলে সবার সদকায়ে ফিতির আদায় হয়ে যাবে না।

একজন নামায পড়লে সবার নামায পড়া হয়ে যাবে না।

ঠিক তেমনি একজন কুরবানী করলে সবার আদায় কখনই হবে না।

নামায, রোযা, হজ্বের মত কুরবানীও একটি ইবাদত। যা প্রতিটি ব্যক্তির উপর আলাদাভাবে আবশ্যক হয়। একজন আদায় করলে আরেকজনের আদায় হবে কিভাবে? এটিতো একটি অযৌক্তিক ও হাস্যকর কথা।

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-

أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ [٥٣:٣٨]

কিতাবে এই আছে যে,কোন ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে বহন করবে না। [সূরা নাজম-৩৮}

কিছু হাদীসের মাধ্যমে যে বুঝা যায় যে, সাহাবাগণ প্রথম যুগে পুরো পরিবারের মাঝে একনজই কুরবানী করতেন, এসব হাদীসের মানে হল, আমরাও বলি পরিবারের মাঝে যার উপর কুরবানী আবশ্যক সে কুরবানী করবে। যদি দুইজনের উপর আবশ্যক থাকে তাহলে দুইজন করবে। আর যদি একজনের উপর আবশ্যক থাকে, তাহলে একজন করবে।

তো ইসলামের শুরু যুগে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে দারিদ্রতা ছিল। এতটা স্বচ্ছলতা ছিল না। আর পরিবারের মাঝে উপার্জনকারী যেহেতু একজনই হতো, তাই স্বাভাবিকভাবে ঘরের কর্তার উপরই কুরবানী আবশ্যক হতো, আর তিনি কুরবানী করতেন। আর এর গোস্ত পুরো পরিবারই খেতো। এ হল পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে সাহাবীদের কুরবানী করার মানে।

এর মানে এটা কখনোই ছিল না যে, পরিবারের সবার উপর কুরবানী আবশ্যক। কিন্তু তারা কেউ কুরবানী করতো না, শুধু একজনই করতেন। সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে এমনটি কিছুতেই ভাবা যায় না।

তাছাড়া কেউ কেউ এ দলীল পেশ করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এক বকরী পুরো উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন। তাই এক কুরবানী পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে হয়ে যাবে।

একথাটিও ঠিক নয়। কারণ এক হল দায়িত্ব হিসেবে কুরবানী করা। আরেক হল সওয়াব পৌছানো। আবশ্যক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কুরবানী একজন ব্যক্তির জন্য একটিই হবে। বাকি একজন কুরবানী করে কোটি মানুষের জন্য ঈসালে সওয়াব করতে পারবে। এতে কোন সমস্যা নেই। যেমন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম নিজের কুরবানী করার পর সেটির ঈসালে সওয়াব সমস্ত উম্মতের জন্য করেছেন। এর দ্বারা পুরো পরিবারের ওয়াজিব কুরবানী একজন আদায় করলেই হয়ে যাবার কোন প্রমাণ হয় না।
[সূত্রঃ তুহফাতুল আলমায়ী-৪/৪৩৭-৪৩৮]।

এমন ব্যক্তি যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার শশুর বাড়ি থেকে কিংবা অন্য কোন জায়গা থেকে কোন পশু হাদিয়া আসে তাহলে সে যদি অন্য পশু ক্রয় না করে সে পশু দ্বারা কুরবানী করে তাহলে তার ওয়াজিব কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। কেননা, তাকে হাদীয়া দেয়ার মাধ্যমে সে পশুটার মালিক হয়ে যায় বিধা সে যে কোন কাজে সেটা ব্যবহার করতে পারবে।
[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়েঃ ৫/৭৭]।

যদি কোন ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব কুরবানী করে আর এতে করে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য শুধুমাত্র সাওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করে তাহলে তা জায়েয হবে। তার কুরবানী আদায় হবে। আর যদি সে ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে না করে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নফল কুরবানী করে তাহলে তার ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে না।
[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩৫]।

যদি কোন ব্যক্তির সকল টাকা হারাম পন্থায় উপার্জিত হয় এবং তার আর কোন হালাল উপার্জন না থাকে তাহলে এমন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব না। তার সাথে কেউ যদি কুরবানীতে শরীক হয় তাহলে শরীকদারের কুরবানীও আদায় হবে না।
[সূত্রঃ বজলুল মজহুদঃ ১/৩৮]।

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে-
যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে।
[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯]।

কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার
স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে।
[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১]।

কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।
[সূত্রঃ তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২]।

কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম।
[সূত্রঃ সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭]।

কুরবানির পশু ক্রয় করার পর যদি তা হারিয়ে যায় কিংবা চুরি হয়ে যায় তাহলে ক্রেতা যদি এমন ব্যক্তি হয় যার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিলো তাহলে তাকে আরেকটা পশু ক্রয় করে কুরবানী করতে হবে। আর যদি ক্রেতা এমন ব্যক্তি যার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিলো না তাহলে তার জন্য আরেকটা ক্রয় করে কুরবানী করা জরুরী নয়।
[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়েঃ ৫/৬৬]।

কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।
[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩]।

যদি কোন ধনী ব্যক্তি মান্নত করে, আমার যদি অমুক কাজটা হয় তাহলে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে একটা পশু কুরবানী দেবো। তাহলে তার উপর দুইটা কুরবানী ওয়াজিব হবে। একটা মান্নত কারণে আরেকটা ধনী হওয়ার কারণে।
[সূত্রঃ আদ দুররুল মুখতার মায়া শামীঃ ৬/৩৩২ কেফায়াতুল মুফতীঃ ৮/১৯৭]।

যদি কোন ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তার হুকুম হলো, যদি মৃত ব্যক্তি ওসীয়ত করে যায় এবং তার রেখে যাওয়া সম্পদের একতৃতীয়াংশ থেকে তা আদায় করা সম্ভব হয় তাহলে মৃতের পক্ষ থেকে ওয়ারিসদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। তখন সমস্ত গোশ্ত সদকা করে দিতে হবে। আর যদি ওসীয়ত না করে যায় অথবা করেছে কিন্তু তার রেখে যাওয়া সম্পদের একতৃতীয়াংশ থেকে কুরবানী করা সম্ভব না। তাহলে এমতাবস্থায় মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। তখন সে কুরবানির গোশ্তগুলো অন্য কুরবানির মত ধনী গরীব এবং কুরবানী দাতা সহ সবাই খেতে পারবে।
[সূত্রঃ খানিয়া মায়া হিন্দিয়াঃ ৩/৩৫২ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩৩৫]।

যাদের একলা কুরবানী দেওয়ার ক্ষমতা নাই কিন্তু ইচ্ছা আছে তাদের প্রতি পরামর্শ-

কুরবানী করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যারা সামর্থ না থাকায় কুরবানী করতে পারেন না তাদের কুরবানী করার উপায়ঃ
যে সকল লোক এককভাবে কুরবানী দিতে অক্ষম বা যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় অথচ তারা কিছু লোক মিলে পশু কিনে যবেহ করে গোশত বণ্টন করে অথবা হাটবাজার থেকে গোশত কিনে খেয়ে থাকে। এ সকল লোকেরা যদি ইচ্ছে করে তবে তারাও কুরবানীর ফযীলত ও ছওয়াব লাভ করতে পারে। এ সকল ব্যক্তিদের করণীয় হচ্ছেঃ-
তারা হাটবাজার থেকে গোশত না কিনে বরং কিছু লোক মিলে কুরবানীর পশু কিনে এক বা একাধিক নামে কুরবানী করতে পারে।

যেহেতু কুরবানীর পশু উট, গরু ও মহিষে ৭ নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসীতে ১ নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।

তাই যদি ৪০ জন ব্যক্তি মিলে ১টি উট, গরু বা মহিষ কিনে ৭ নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে।

তদ্রুপ ১টি খাসী তিনজনে মিলে খরীদ করে, যদি ১ নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।

তবে স্মরণীয় যে, যারা শরীক হয়ে এ ধরণের কুরবানী দিবে তারা প্রত্যেকে চাইবে যে, নিজেদের নামে কুরবানী দিয়ে কুরবানীর ফযীলত হাছিল করতে। আর উট, গরু ও মহিষে সাত নামের বেশি এবং দুম্বা, ছাগল ও ভেড়াতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে।

এছাড়াও যদি কারো পক্ষ থেকে দেয়া হয়, অন্য কেউ প্রকাশ্যে আপত্তি না করলেও অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতিত।

সেজন্য নাম দেয়ার ক্ষেত্রে উত্তম তরীক্বা ও আদব হচ্ছে, যদি কুরবানীর পশু এক নামে কুরবানী করা হয়, তাহলে মহান আল্লাহ পাক এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে কুরবানী করে সকল শরীক সমানভাবে গোশত বণ্টন করে নিবে। এতে যেমন তাদের কুরবানী নিশ্চিতরূপে মহান আল্লাহ পাক এর দরবার শরীফ-এ কবুল ও মঞ্জুর হবে, সাথে সাথে তাদের জন্য ফযীলত, বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাযাত সর্বপোরি মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাছ সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করার উসীলাও হবে।

যে সকল প্রাণীতে সাত নামে কুরবানী দেয়ার বিধান রয়েছে, তাতে প্রথমতঃ এক নাম মহান আল্লাহ পাক এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে এবং বাকী ছয় নাম পর্যায়ক্রমে

– হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালামদের পক্ষ থেকে,
– হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম তাঁদের পক্ষ থেকে।
– হযরত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামদের পক্ষ থেকে।
এছাড়াও
– হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।
– হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।
– হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম।
– হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম।
– হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। ও
– হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম।
তাঁদের পক্ষ থেকে ইচ্ছে মুতাবিক কুরবানী দিতে পারে।

তাহলে এতে কোন ফিৎনা পয়দা হবেনা, সাথে সাথে কুরবানীর দিন মহান আল্লাহ পাক এর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে- কুরবানী করা, তাও আদায় হলো। আর কুরবানীর বরকতময় গোশতও লাভ হলো। সাথে সাথে গুণাহর কাজ থেকেও বেঁচে গেলো। সুবহানাল্লাহ!

একইভাবে যে সকল প্রাণীতে ১ জনের নাম দেয়া যায়, সেক্ষেত্রেও উপরোক্ত নিয়মে তাঁদের যে কোনজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করে শরীকদাতারা সমভাবে গোশত বন্টন করে দিতে পারেন।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে কুরবানীর দিন তাঁর প্রিয় আমল কুরবানী করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment