কুরআন কারীম থেকে দলিল
তাক্বলীদ নব আবিষ্কৃত কোন বিষয় নয় বরং পবিত্র কুরআন কারীমে এ সম্পর্কিত মৌলিক দিক নির্দেশনা রয়েছে ।
* ১ নং দলিলঃ
আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যে যারা ‘উলুল আমর’ তাঁদের । — সূরা নিসা ৫৯
উলুল আমর বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে- এ সম্পর্কে কারো কারো মত হলো- উলুল আমর মুসলমান ফকীহ্গন। আবার কেউ কেউ বলেছেন- উলুল আমর বলতে ফকীহগনগণকে বুঝানো হয়েছে । (ইবনে জারির তাবারী, তাফসীরু জামিউল বায়ান, খ ৫, পৃঃ ৮৮)
হযরত ইমাম রাজী (রঃ) এই দ্বিতীয় মতটিকে দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা প্রাধান্য দিয়েছেন । তারপর তিনি লিখেছেন- এই আয়াতে ‘উলুল আমর’ বলতে উলামায়ে কেরামকে বুঝানো হয়েছে, এটাই সঠিক মত । (ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ ফখরুদ্দিন রাযী, মাফাতিহুল গাইব, খ ৩, পৃঃ ৩৩৪)
* ২ নং দলিলঃ
কুরআন করীমের অপর আয়াতে রয়েছে- আর যখন তাঁদের (সাধারণ লোকদের) কাছে শাস্তি অথচ শঙ্কার কোন সংবাদ আসে, তখন তা প্রচার করে বেড়ায় । অথচ তারা যদি বিষয়টি রাসূলের কিংবা ‘উলিল আমরের’ সমীপে পেশ করতো, তাহলে ইস্তিম্বাত ও উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারীগণ তা (সমাধান) উত্তমরূপে জানতে পারতো — সূরা নিসা – ৫৯
* ৩ নং দলিলঃ
অপর আয়াতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন- দ্বীনী ইলম হাসিল করার জন্য তাঁদের প্রতিটি দল থেকে কেন একটি দল বেরিয়ে পড়ে না- ফিরে আসার পর যাতে স্বীয় সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে এবং তাঁর যাতে (আল্লাহ্ তায়ালার নাফরমানী থেকে) বাঁচাতে পারে। — সূরা তাওবা- ১২৩
* ৪ নং দলিল
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন- যদি তোমরা না জানো, তবে যারা জানে তাঁদের জিজ্ঞেস করো ।— সূরা নাহল ৪৩
* ৫ নং দলিল
অপর আয়াতে এসেছে- স্মরণ করো, যেদিন আমি প্রত্যেক মানুষকে তাঁদের ইমামসহ ডাকব । — সূরা ঈশরা ৭১
* ৬ নং দলিল
অন্য আয়াতে এসেছে- আর অনুসরণ কর তার পথ, যা আমার অভিমুখী হয় । — সূরা লুকমানঃ ১৫
* ৭ নং দলিল
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে – এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ্ হিদায়াত করেছেন । অতএব তাঁদের হিদায়াত তুমি অনুসরণ কর ।— সূরা আন’আম ৯০
* ৮ নং দলিল
আল্লাহ্ তা’আলা আরও এরশাদ করেন – আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন । — সূরা ফুরকান ৭৪
• হাদিস শরীফ থেকে দলিল
পবিত্র কুরআন কারীমের মত বিপুল সংখ্যক হাদিসে নববী দ্বারা তাক্বলীদ প্রমাণিত। নিম্নে কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ন হাদিস তুলে ধরা হলঃ
* ১ নং দলিল
মহানবী (সঃ) এরশাদ ফরমায়েছেন – অতঃপর তোমাদের উপর আবশ্যক আমার সুন্নাত এবং সঠিক হিদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাদের সুন্নাত অনুসরণ কর এবং তাঁদের সুন্নাত আঁকড়ে ধর।
— সুনানু ইবনি মাজাহ, ইমাম ইবনু মাজাহ্, (দারু ইহ্ইয়ায়িল কুতুবিল আরাবিয়াহ্), খ ১, পৃঃ ১৫, হাদিস নং ৪২; সুনানু আবি দাউদ,ইমাম আবুদ দাউদ, (আল মাক্তাবাতুল আসরিয়াহ্, বৈরুত), খ ৪, পৃঃ ২০১, হাদিস নং ৪৬০৮; সুনানু তিরমিযি, ইমাম তিরমিযি, (দারুল গারবিল ইসলামি, বৈরুত, ১৯৯৮ খৃঃ), খ ৪, পৃঃ ৩৪১, হাদিস নং ২৬৭৬
* ২ নং দলিল
মিশকাত শরীফে বর্নিত হয়েছে – আমার সাহাবিগণ আকাশের তারকাতুল্য। অতএব, তাঁদের যে কোন একজনকে অনুসরণ করলে অবশ্যই হেদায়াত পাবে। — মিশকাতুল মাসাবিহ্, পৃঃ ১৬৯৬, হাদিস নং ৬০১৮
৩ নং দলিল
মহানবী (সঃ) আরও বলেন – আমার যেকোন সাহাবী যেকোন স্থানে ইন্তেকাল করুক না কেন, সে কিয়ামতের দিনতাঁর অনুসারীদের জন্য ইমাম হয়ে উঠে আল্লাহ্র দরবারে হাজির হবে।
— সুনানু তিরমিযি, ইমাম তিরমিযি, প্রাগুক্ত, খ ৬, পৃঃ ১৮০, হাদিস নং ৩৮৬৫; মিশকাতুল মাসাবিহ্, প্রাগুক্ত, খ ৩, পৃঃ ১৬৯৬, হাদিস নং ৬০১৬
* ৪ নং দলিল
তিনি আরও এরশাদ করেছেন- অতঃপর তোমরা মুসলামান্দের বৃহৎ দলকে অনুসরণ কর। কেননা যারা বৃহৎ দল হতে বের হবে তারা দোযখে পতিত হবে।
— আল মুসতাদরাকু লিল হাকিম, প্রথম প্রকাশ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ্, বৈরুত, ১৪১১ হিঃ) খ ১, পৃঃ ১৯৯, হাদিস নং ৩৯১; সুনানু ইবনি মাজাহ্, ইমাম ইবনু মাজাহ্, প্রাগুক্ত, খ ২, পৃঃ ১৩০৩, হাদিস নং ৩৯৫০
* ৫ নং দলিল
তিনি আরও বলেন – তুমি অবশ্যই মুসলমানদের জামায়াত ও তাঁদের ইমামের অনুসরণ করবে।
— সহিহ বুখারী, খ ৪, পৃঃ ১৯৯, হাদিস নং ৩৬০৬; সহিহ মুসলিম, সহিহ বুখারী, খ ৩, পৃঃ ১৪৭৫, হাদিস নং ১৮৪৭
* ৬ নং দলিল
সুনানু তিরমিযিতে রয়েছে – হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা নবী (সঃ) এর নিকট বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, আমি জানি না আর কতদিন তোমাদের মাঝে থাকব সুতরাং আমার পর তোমরা দুই ব্যক্তির অনুসরণ করবে। আর তিনি আবূ বকর ও উমর (রাঃ) এর দিকে ইশারা করলেন।
— সুনানু তিরমিযি, ইমাম তিরমিযি, প্রাগুক্ত, খ ৬, পৃঃ ৫০, হাদিস নং ৩৬৬২; মুসনাদু আহমাদ, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, প্রথম প্রকাশ (মুয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ১৪২১ হিঃ), খ ৩৮, পৃঃ ২৮০, হাদিস নং ২৩২৪৫
* ৭ নং দলিল
সুনানু আবী দাঊদে রয়েছে- হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেন – যে ব্যক্তি অজ্ঞতা স্বত্বেও ফতোয়া দিবে তাঁর পাপ সেই বহন করবে।
— আবূ দাউদ, আস সুনান
* ৮ নং দলিল
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এর সূত্রে বর্নিত আছে, রাসূল (সঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্র পাক বান্দার (অন্তর) থেকে ইলম হস্তগত করার মাধ্যমে ইলমের বিলুপ্ত ঘটাবেন না। বরং আলিম সমাজকে তুলে নেয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নিবেন। অবশেষে যখন আর কোন আলিম অবশিষ্ট থাকবেনা, মানুষ তখন মুর্খদেরকে নেতা নির্বাচন করবে আর তখন তাঁদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে। তারাও অজ্ঞতা থেকেই ফতোয়া দিয়ে বসবে। ফলে নেতারাও পথহারা হবে অন্যদেরকেও পথহারা করবে। — বুখারী আস সহিহ, হাদিস নং ১০০
এই হাদিসে অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে যে, ফতোয়া দান করা এটা আলিমগণের কাজ। যার সারমর্ম এটাই যে, জনসাধারণ তাঁদের কাছে বিভিন্ন দ্বীনি মাসায়েল জিজ্ঞাসা করবে। তারাও তাঁর সমাধান দিবেন, মানুষ সে অনুযায়ী আমল করবে। আর এটাই হলো তাক্বলীদ।