সুসময়ের অপেক্ষা করা ইবাদত
[১] হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
انْتِظَارُ الْفَرَجِ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ عِبَادَةٌ، وَمَنْ رَضِيَ بِالْقَلِيلِ مِنَ الرِّزْقِ رَضِيَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْهُ بِالْقَلِيلِ مِنَ الْعَمَلِ
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসময়ের অপেক্ষা করা ইবাদত। আর যে ব্যক্তি অল্প রিযিকে তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তাআলা তার অল্প আমলেই সন্তুষ্ট হয়ে যান।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১]
[২] যরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
سَلُوا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ فَضْلِهِ، فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُحِبُّ أَنْ يُسْأَلَ مِنْ فَضْلِهِ، وَأَفْضَلُ الْعِبَادَةِ انْتِظَارُ الْفَرَجِ
তোমরা আল্লাহর নিকট তার অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। কেননা তার নিকট প্রার্থনা করাকে তিনি পছন্দ করেন। আর সর্বোত্তম ইবাদত হলো স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতিক্ষা করা।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২]
সবর ও ধৈর্য উত্তম নিয়ামত
[৩] হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لَمْ تُعْطَوْا عَطَاءً خَيْرًا وَلَا أَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ
সবর বা ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত কোন নিয়ামত কাউকে কখনো দেয়া হয়নি।–
[রিওয়ায়ায়াতঃ৩]
সকল ধরণের সংকট থেকে মুক্তির উপায়
[৪] হযরত র’বী ইবনে খুসাইম (রহ) আল্লাহর বাণী-
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا
আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দিবেন।–সূরা তালাক:২
প্রসঙ্গে বলেন-
الْمَخْرَجُ مِنْ كُلِّ مَا ضَاقَ عَلَى النَّاسِ
অর্থাৎ মানুষের উপর আপতিত সকল ধরণের সংকট থেকে উত্তরণের পথ করে দেবন (তা যা-ই হোক না কেন)।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৪]
আল্লাহর শান
[৫] হযরত আবু দারদা (রা) কে নিম্নের আয়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলো-
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
তিনি (আল্লাহ) প্রতিদিন তার শান অনুযায়ী থাকেন।– সূরা আর রহমান:২৯
তিনি বলেন-
مِنْ شَأْنِهِ أَنْ يَغْفِرَ ذَنْبًا، وَيَكْشِفَ كَرْبًا، وَيَرْفَعَ قَوْمًا، وَيَضَعَ آخَرِينَ
তার শান হলো তিনি গুনাহ ক্ষমা করেন, মুসিবত দূর করেন, একদলকে মর্যাদা দান করেন, অপর দলকে অপদস্থ করেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৫]
ব্যাপক উপদেশ
[৬] হযরত ইবন আববাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী (সা) এর পিছনে আরোহী ছিলাম। তিনি বললেন-
احْفَظْ يَا غُلَامُ، احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظْهُ تَجِدْهُ تِجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَسَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، جَفَّتِ الْأَقْلَامُ، وَرُفِعَتِ الصُّحُفُ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ جَهِدَتِ الْأُمَّةُ لِتَنْفَعَكَ بِغَيْرِ مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكَ مَا اسْتَطَاعَتْ ذَلِكَ، وَلَوْ أَرَادَتْ أَنْ تَضُرَّكَ بِغَيْرِ مَا قَدَّرَ لَكَ مَا اسْتَطَاعُوا
বৎস! সংরক্ষণ কর (এই কথাগুলো- এর দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন)। আল্লাহর (বিধানসমূহের) হিফাযত করবে, তাহলে তিনি তোমার হিফাযত করবেন। আল্লাহর বিধান মেনে চলবে তাহলে তাকে তোমার সামনে সদয় পাবে। যখন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে।
কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ! জেনে রাখ, সমস্ত উম্মতও যদি তোমার উপকার করতে একত্রিত হয়ে যায় তবে আল্লাহ যা তোমার তাকদীরে লিখে রেখেছেন তা ছাড়া কোন উপকার তারা তোমার করতে পারবে না। অপরদিকে তারা যদি তোমার কোন ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়ে যায়, তবু তারা আল্লাহ তোমার তাকদীরে যা লিখে রেখছেন তার বাইরে কোন ক্ষতি করতে পারবে না।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৬]
[৭] হযরত সাহল ইবনে আস সায়িদী (রা) বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কে বলেন-
يَا غُلَامُ، أَلَا أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ تَنْتَفِعُ بِهِنَّ؟» قَالَ: بَلِيٍّ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ أَمَامَكَ، تَعَرَّفْ إِلَى اللَّهِ فِي الرَّخَاءِ يَعْرِفْكَ فِي الشِّدَّةِ، إِذَا سَأَلْتَ فَسَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا هُوَ كَائِنٌ، فَلَوْ جَهَدَ الْعِبَادُ أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ لَكَ لَمْ يَقْدِرُوا عَلَيْهِ، وَلَوْ جَهَدَ الْعِبَادُ عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ عَلَيْكَ لَمْ يَقْدِرُوا عَلَيْهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَعْمَلَ لِلَّهِ بِالصِّدْقِ فِي الْيَقِينِ فَافْعَلْ، وَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَإِنَّ فِي الصَّبْرِ عَلَى مَا تَكْرَهُ خَيْرًا كَثِيرًا، وَاعْلَمْ أَنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ، وَأَنَّ الْفَرَجَ مَعَ الْكَرْبِ، وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
হে বৎস! আমি কি তোমাকে কিছু কথা বলব না, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন- তুমি আল্লাহর বিধান মেনে চলবে, তাহলে তিনি তোমার হিফাযত করবেন। আল্লাহর বিধান মেনে চলবে তাহলে তাকে তোমার সামনে সদয় পাবে। সুখের সময় তুমি আল্লাহকে চিনবে, তাহলে কষ্টের সময় তিনি তোমাকে চিনবেন। যখন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জীবনে যা ঘটবে তা লিখা হয়ে গেছে।
জেনে রাখ! সমস্ত মানুষ যদি তোমার উপকার করতে একত্রিত হয়ে যায়, তবু আল্লাহ যা তোমার তাকদীরে লিখে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোন উপকার তারা তোমার করতে পারবে না। অপরদিকে তারা সকলে মিলে যদি তোমার কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা করে, তবু আল্লাহ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন তার বাইরে তারা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
অতএব ইখলাস ও একনিষ্ঠতা এবং ইয়াকীন ও দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে আমল করে যাও। জেনে রাখ! অপছন্দনীয় বিষয়ে ধৈর্যধারণ করার মাঝে অনেক কল্যাণ রয়েছে। ধৈর্যের সাথেই রয়েছে আল্লাহর সাহায্য। বিপদের পরেই রয়েছে মুক্তি। আর কষ্টের পরই সুখ।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৭]
ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার সুফল
[৮] হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَنْ أَكْثَرَ مِنَ الِاسْتِغْفَارِ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا، وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার করে (আল্লাহর কাছে মাফ চায়)। আল্লাহ তাকে প্রতিটি দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি দান করেন। প্রত্যেক জটিলতা ও সংকীর্ণতা থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেন। আর এমন স্থান হতে তাকে রিযিক দান করেন যার কল্পনাও সে করে না।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৮]
যা মানুষের জন্য যথেষ্ট
[৯] হযরত আবু যর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- একবার রাসূলুল্লাহ (সা) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন-
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সব সংকট থেকে নিষ্কৃতির) পথ করে দেবেন এবং তার ধারণাতীত স্থান থেকে তাকে রিযিক দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।– সূরা তালাক:২-৩
তারপর বলেন-
يَا أَبَا ذَرٍّ، لَوْ أَنَّ النَّاسَ كُلَّهُمْ أَخَذُوا بِهَا لَكَفَتْهُمْ
হে আবু যর! সকল মানুষ যদি এই আয়াতের উপর আমল করত, তবে সবার জন্য তা যথেষ্ট হত।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৯]
সব সমস্যা ও সংকট আল্লাহর নিকট পেশ করা
[১০] হযরত আবু উবাইদাহ (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট এসে বলল, অমুক গোত্র হানা দিয়ে আমার উট ও সন্তান নিয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এই মুহুর্তে মুহাম্মদের পরিবারে এক মুদ খাবার বা এক সা খাবারও নেই। তুমি আল্লাহর কাছে প্রয়োজন পেশ কর।
সাহাবী ফিরে আসলে তার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তোমাকে কি বললেন? সে সব খুলে বলল। তার স্ত্রী বলল, হয়তো এটাই তোমর জন্য উত্তম। (তারা নবী (সা) এর কথামত কাজ করলেন।) অতঃপর শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা হামলাকারীদের থেকে তাদের উট ও সন্তান ফিরিয়ে দিলেন। এরপর তিনি নবী (সা) এর নিকট গেলেন ঘটনা জানাতে। অতঃপর নবী (সা) মিম্বরে উঠে আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করে বলেন-
وَأَمَرَ النَّاسَ بِمَسْأَلَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالرَّغْبَةِ إِلَيْهِ
মানুষের কর্তব্য হলো সব প্রয়োজন আল্লাহর নিকট পেশ করা এবং তার অভিমুখী হওয়া।
অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন-
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সংকট থেকে নিষ্কৃতির) পথ করে দেবেন এবং তার ধারণাতীত স্থান থেকে তাকে রিযিক দান করবেন।– সূরা তালাক:২-৩– [রিওয়ায়ায়াতঃ১০]
সকল রোগ ব্যাধি ও চিন্তার নিশ্চিত ওষুধ
[১১] হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ دَوَاءٌ مِنْ تِسْعَةٍ وَتِسْعِينَ دَاءً، أَيْسَرُهَا الْهَمُّ
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ৯৯ টি রোগের ওষুধ। যার মধ্যে সবচাইতে সহজটি হলো চিন্তা।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১১]
কষ্ট ও মুসিবত গুনাহর কাফফারা
[১২] হযরত হাসান থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
سَاعَاتُ الْأَذَى يُذْهِبْنَ سَاعَاتِ الْخَطَايَا
কষ্টের সময়গুওলা গুনাহর সময়ের কাফফারা স্বরুপ।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১২]
অপছন্দনীয় বিষয়েও কল্যাণ থাকে
[১৩] হযরত আবী মাজলায (রহ) থেকে বর্ণিত। হযরত উমর (রা) বলেছেন-
مَا أُبَالِي عَلَى أَيِّ حَالٍ أَصْبَحْتُ، عَلَى مَا أُحِبُّ أَوْ عَلَى مَا أَكْرَهُ، وَذَلِكَ لِأَنِّي لَا أَدْرِي الْخَيْرَ فِيمَا أُحِبُّ أَوْ فِيمَا أَكْرَهُ
আমার সকাল ভাল হলো, না মন্দ হলো তা আমি জানি না। কারণ আমি জানি না, যা আমার পছন্দ তা আমার জন্য কল্যাণকর, না যা আমার অপছন্দ তা আমার জন্য কল্যাণকর।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৩]
[১৪] হযরত ইবরাহিম তাইমী (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
إِنْ لَمْ يَكُنْ لَنَا خَيْرٌ فِيمَا نَكْرَهُ، لَمْ يَكُنْ لَنَا خَيْرٌ فِيمَا نُحِبُّ
আমাদের অপছন্দনীয় বিষয়গুলোতে যদি আমাদের জন্য কল্যাণ না থাকে, তবে আমাদের পছন্দনীয় বিষয়গুলোতেও কল্যাণ থাকতে পারে না।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৪]
বিপদ মুসিবত জীবনের নিয়তি
[১৫] হযরত মানসূর বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- একবার আমরা হযরত হাসান এর মজলিসে বসা ছিলাম। এক ব্যক্তি আমাকে বলল- তাকে আল্লাহর নিম্নের বাণীর তাফসীর জিজ্ঞাসা করুন-
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا
পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের যে বিপদ আসে, আমি তা সংঘটিত করার পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ থাকে।– সূরা হাদীদ:২২
আমি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! এতেও কি কারো সন্দেহ আছে যে, আসমান যমীনে মানুষের উপর যেসব মুসিবত আসে তা তার সৃষ্টির পূর্বেই লিখা রয়েছে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৫]
সবর ও ধৈর্যের মাধ্যমে মুক্তির পথ তালাশ কর
[১৬] হযরত হাসান থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
أَدْخِلْ نَفْسَكَ فِي هُمُومِ الدُّنْيَا، وَاخْرُجْ مِنْهَا بِالصَّبِرِ، وَلْيَرُدَّكَ عَنِ النَّاسِ مَا تَعْلَمُ مِنْ نَفْسِكَ
তুমি নিজেকে দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনায় জড়িত কর। আর সবরের মাধ্যমে তা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে যাও। আর তুমি নিজের ব্যাপারে যা জান, তা যেন তোমাকে অন্যদের (দোষ বের করা বা অনিষ্ট করা) থেকে বিরত রাখে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৬]
বিজয় ও শত্রুর প্রতিরোধের জন্য লা হাউলা…
[১৭] আবি খায়র ইসহাক আল আযাউয়ী বর্ণনা করেন। কারখ শহরের নিকট (পারস্যের সেনাবাহিনীর প্রধাণ) আযদমহর ও তার চল্লিশটি হাতিসহ আমাদের মুকাবিলা হয়। যুদ্ধে আমাদের পদাতিক ও অশ্ববাহিনী বিপরীত অবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়ল। মুসলিম সেনাপ্রধান মুহাম্ম বিন কাসিম চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি ভিন্নভাবে কিছু করার চেষ্টা করেন, কিন্ত ব্যর্থ হলেন। পরিশেষে তিনি পড়লেন-
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ
লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
তিনি কয়েকবার এটি উচ্চস্বরে পাঠ করলেন। আল্লাহ তাআলা এটিকে মুসলমানদের জন্য দূর্গস্বরুপ করে দিলেন। যে হাতিগুলো মুসলিমদের দিকে আক্রমণের জন্য সামনে অগ্রসর হচ্ছিল, হঠাৎ সেগুলোর বহর থেমে গেল। আল্লাহ তাআলা হাতিদের মধ্যে গরম ও প্রচন্ড পিপাসা সৃষ্টি করে দিলেন ফলে তারা অস্থির হয়ে পানির দিকে ধাবিত হলো। হাতির মাহুতরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেও হাতিদেরকে ফিরাতে ব্যর্থ হলো। এর মধ্যে মুসলিম সেনাদল সামনে অগ্রসর হয়ে গেল এবং আল্লাহর হুকুমে বিজয়ের পথ খুলে গেল। – [রিওয়ায়ায়াতঃ১৭]
[১৮] হযরত সাফওয়ান ইবনে আমর থেকে বর্ণিত। হযরত হাবিব বিন মাসলামাহ (রা) যখন যুদ্ধে শত্রুর মুখোমুখি হতেন অথবা কোন দূর্গ অবরোধ করতেন তখন লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পাঠ করতে পছন্দ করতেন। একবার এক দূর্গ অবরোধকালে তিনি এবং মুসলমানরা এই কালিমা পাঠ করেন, ফলে রোমানরা দূর্গ ছেড়ে পলায়ন করে এবং দূর্গের দেয়াল ভেঙ্গে যায়।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৮]
ঋণ পরিশোধ এবং সবকিছুর জন্য দুআ করা
[১৯] হযরত সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ (রহ) বলেন- একবার মুহাম্মদ বিন আলী (রহ) এর সাথে মুহাম্মদ বিন মুনকাদির (রহ) এর সাক্ষাত হলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে? আবু হাযেম (তার উপনাম) বললেন, ঋণের চাপের জন্য উদ্বিগ্ন। মুহাম্মদ বিন আলী (রহ) বললেন, এর জন্য দুআ করেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মদ বিন আলী (রহ) বললেন- বান্দার সেসব প্রয়োজনে বরকত হয় যার জন্য সে আল্লাহর নিকট দুআ করে থাকে, তা যে প্রয়োজনই হোক না কেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৯]
বেশী চিন্তা-ভাবনা না করা
[২০] হযরত খালেদ বিন রাফে (রহ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত ইবনে মাসউদ (রা) কে বলেন-
لَا تُكْثِرْ هَمَّكَ، مَا يُقَدَّرْ يَكُنْ، وَمَا تُرْزَقْ يَأْتِكَ
তুমি বেশি চিন্তা-ভাবনা করো না। তোমার তাকদীরে যা আছে তা-ই হবে। আর তোমার রিযিক তোমার কাছে পৌছবেই।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২০]
বিপদ ও সংকট মানুষকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে
[২১] ইবনে উয়াইনাহ (রহ) বলেন-
مَا يَكْرَهُ الْعَبْدُ خَيْرٌ لَهُ مِمَّا يُحِبُّ؛ لِأَنَّ مَا يَكْرَهُهُ يَهِيجُهُ عَلَى الدُّعَاءِ، وَمَا يُحِبُّ يُلْهِيهِ عَنْهُ
বান্দার জন্য তার পছন্দনীয় বিষয়ের চাইতে তার অপছন্দনীয় বিষয় তার জন্য উত্তম। কেননা অপছন্দনীয় বিষয় তাকে দুআর প্রতি ধাবিত করে। আর পছন্দনীয় বিষয় লাভ হলে হলে সে গাফিল ও উদাসীন হয়ে পড়ে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২১]
[২২] হযরত সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীয (রহ) বলেন, হযরত দাউদ (আ) বলতেন-
سُبْحَانَ مُسْتَخْرِجِ الدُّعَاءِ بِالْبَلَاءِ، سُبْحَانَ مُسْتَخْرِجِ الشُّكْرِ بِالرَّخَاءِ
আল্লাহ তাআলা অতি পবিত্র, যিনি বিপদ দ্বারা বান্দা থেকে দুআ বের করেন। আল্লাহ তাআলা অতি পবিত্র, আর যিনি শান্তি ও সুখ দ্বারা বান্দা থেকে শোকর বের করেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২২]
[২৩] হযরত কুরদুস ইবনে আমর (রহ) যিনি পূর্ববতী অনেক কিতাব পাঠ করেছেন। তিনি বলেন- আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী অনেক কিতাবে নাযিল করেছেন যে-
فِيمَا أَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنَ الْكُتُبِ أَنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْتَلِي الْعَبْدَ وَهُوَ يُحِبُّهُ؛ لَيَسْمَعَ تَضَرُّعَهُ
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কষ্ট ও বিপদে পতিত করেন, আর (তা এ কারণে যে,) তিনি তাকে মহব্বত করেন যাতে আল্লাহ তার আহাজারী শুনতে পান।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২৩]
তাকদীরের ফয়সালার উপর তুষ্ট থাকা
[২৪] হযরত বিশর ইবনে বাশশার আল মুজাশিয়ী যিনি আবিদদের একজন ছিলেন। তিনি বলেন- আমি একজন আবিদকে বললাম, আমাকে কিছু উপদেশ প্রদান করুন। তিনি বললেন-
أَلْقِ نَفْسَكَ مَعَ الْقَدَرِ حَيْثُ أَلْقَاكَ، فَهُوَ أَحْرَى أَنْ يَفْرُغَ قَلْبُكَ، وَأَنْ يَقِلَّ هَمُّكَ، وَإِيَّاكَ أَنْ يُسْخِطَكَ ذَلِكَ فَيَحِلَّ بِكَ السَّخَطُ وَأَنْتَ عَنْهُ فِي غَفْلَةٍ لَا تَشْعُرُ بِهِ
তুমি নিজেকে তাকদীর বা আল্লাহর নির্ধারিত বিষয়ের উপর সোপর্দ কর, সে তোমাকে যেখানেই নিয়ে যায় না কেন। এতে তোমার মন ব্যস্ততামুক্ত থাকবে এবং তোমার দুশ্চিন্তা ও পেরশানী কম হবে। আর তুমি নিজেকে আল্লাহর অসন্তোষ থেকে বাঁচাও। তা না হলে তার অসন্তোষ তোমার উপর এমনভাবে আপতিত হবে যে, তুমি তা থেকে গাফিল থাকবে আর তুমি তা বুঝতেও পারবে না।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২৪]
আল্লাহর নিকট প্রয়োজন পেশ করা
[২৫] হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَنْ نَزَلَتْ بِهِ حَاجَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ، فَإِنْ أَنْزَلَهَا بِاللَّهِ أَوْشَكَ اللَّهُ لَهُ بِأَجَلٍ حَاضِرٍ أَوْ رِزْقٍ عَاجِلٍ
যে ব্যক্তির কোন সংকট ও প্রয়োজন দেখা দেয়, আর সে তা মানুষের নিকট পেশ করে, তবে তার এ সংকট ও প্রয়োজন আর শেষ হবে না। আর যে তা আল্লাহর নিকট পেশ করে, আল্লাহ তাকে নগদ রিযিক অথবা অনাগত রিযিক দান করবেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২৫]
[২৬] হযরত ইমরান ইবনে হুসায়ন (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَنِ انْقَطَعَ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ كَفَاهُ اللَّهُ كُلَّ مُؤُونَةٍ، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ، وَمَنِ انْقَطَعَ إِلَى الدُّنْيَا وَكَّلَهُ اللَّهُ إِلَيْهَا
যে ব্যক্তি সবার থেকে মুখ ফিরিয়ে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়, আল্লাহ তার প্রত্যেক প্রয়োজনের জন্য নিজেই যথেষ্ট হন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করেন যা তার কল্পনায়ও নেই। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর থেকে মুখ ফিরিয়ে দুনিয়ার মুখাপেক্ষী হয়, আল্লাহ তাকে তাদের হাতেই সোপর্দ করেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২৬]
আল্লাহর রহমতের সুবাস
[২৭] হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
اطْلُبُوا الْخَيْرَ دَهْرَكُمْ كُلَّهُ، وَتَعَرَّضُوا لِنَفَحَاتِ رَحْمَةِ اللَّهِ، فَإِنَّ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ نَفَحَاتٍ مِنْ رَحْمَتِهِ يُصِيبُ بِهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ، وَسَلُوا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَسْتُرَ عَوْرَاتِكُمْ وَيُؤَمِّنَ رَوْعَاتِكُمْ
তোমরা আল্লাহর নিকট সারা জীবনব্যাপী কল্যাণ প্রার্থনা করতে থাক এবং আল্লাহর রহমতের সুবাস দ্বারা উপকৃত হতে চেষ্টা কের। কেননা আল্লাহর রহমতের অনেক সুবাস রয়েছে, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে তা দান করেন। আর তোমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর যে, তিনি যেন তোমাদের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখেন এবং তোমাদেরকে সকল ভয়-ভীতি থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা দান করেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২৭]
বান্দার নির্ধারিত রিযিক পৌছবেই
[২৮] হযরত মালিক ইবনে আব্দুল্লাহ মুয়াফিরী থেকে বর্ণিত। একবার রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত ইবনে মাসউদ (রা) কে বলেন-
لَا تُكْثِرْ هَمَّكَ، مَا يُقَدَّرْ يَكُنْ، وَمَا تُرْزَقْ يَأْتِكَ
তুমি বেশি চিন্তা-ভাবনা করো না। যা কিছু তাকদীরে আছে তা হবেই। আর তোমার রিযিক তোমার কাছে আসবেই।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২৮]
প্রত্যেক কষ্টের পর সুখ আছে
[২৯] হযরত আবু আব্দুস সামাদ আল আ’ম্মী বলেন- আমি শুনেছি মালেক ইবনে দীনার (রহ) থেকে। তার অসুস্থতার সময় তার শেষ কথা ছিল, তিনি বলছিলেন-
مَا أَقْرَبَ النَّعِيمَ مِنَ الْبُؤْسِ يُعْقِبَانِ وَيُوشِكَانِ زَوَالًا
দারিদ্রতা ও কষ্টের পরেই রয়েছে নিআমত ও স্বাচ্ছন্দ্য। আর সুখ ও দুঃখ সব অন্তর্হিত হয়।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২৯]
[৩০] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন-
لَوْ أَنَّ الْعُسْرَ دَخَلَ فِي جُحْرٍ لَجَاءَ الْيُسْرُ حَتَّى يَدْخُلَ مَعَهُ
যদি কষ্ট-ক্লেশ পাথরের ভিতরে প্রবেশ করে তবে সহজতা ও স্বাচ্ছন্দ্যও তার সাথে থাকবে, এমনকি সহজতা ও স্বাছন্দ্যও তার সাথে ঢুকে যাবে।
কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে রয়েছে সহজতা ও স্বাচ্ছন্দ্য। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে সহজদা ও স্বাচ্ছন্দ্য।-সূরা ইনশিরাহ– [রিওয়ায়ায়াতঃ৩০]
বিপদাপদে দৃঢ়তা
[৩১] হযরত যায়দ ইবনে আসলাম বর্ণনা করেন। হযরত আবু উবায়দা (রা) শামে শত্রু বেষ্টিত হয়ে তাদের পক্ষ থেকে ক্ষতির আশঙ্কা করেন। অতঃপর তিনি হযরত উমর (রা) এর নিকট পত্র লিখেন। হযরত উমর (রা) উত্তরে লিখেন-
مَهْمَا يَنْزِلْ بِأَمْرِكَ شِدَّةٌ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ بَعْدَهَا فَرَجًا، وَإِنَّهُ لَنْ يَغْلِبَ عُسْرٌ يُسْرَيْنِ، وَإِنَّهُ يَقُولُ: {اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [آل عمران: 200]
জেনে রাখুন! মুমিনের উপর যখনই কোন বিপদ আসুক না কেন আল্লাহ তাআলা তা দূরিভূত করে দেন। মনে রাখবেন, একবারের কষ্ট কখনো দুইবারের সুখ ও আরামের উপর প্রাধান্য লাভ করতে পারে না। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
يّا أّيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اِصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاِتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং প্রতিরক্ষায় দৃঢ় হয়ে থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।– সূরা আল ইমরান:২০০– [রিওয়ায়ায়াতঃ৩১]
দুআ ইউনূস
[৩২] হযরত ইয়াযিদ রাক্কাশী (রহ) বলেন- আমি হযরত আনাস (রা) কে বলতে শুনেছি- যখন হযরত ইউনূস (আ) মাছের পেটে ছিলেন তখন তিনি নিম্নের কালিমা দ্বারা আরযী পেশ করেছিলেন-
اللَّهُمَّ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
আল্লাহুম্মা লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাযযালিমীন।
হে আল্লাহ! আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, আপনি পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি নিজের প্রতি যুলুম করেছি।
এই দুআ খুব দ্রুত আল্লাহর আরশে পৌছে যায়। ফেরশেতারা বলল, হে রব! এটি কোন পরিচিত অথচ দুর্বল শব্দ মনে হচ্ছে আর তা কোন অপরিচিত স্থান থেকে ভেসে আসছে। আল্লাহ তাআলা বললেন, তোমরা কি তা চিনতে পারছ না? ফেরেশতারা বলল, ইয়া রব! কে সে? আল্লাহ তাআলা বললেন, সে আমার বান্দা ইউনূস। ফেরেশতারা বলল, আপনার সেই বান্দা ইউনূস, যার মকবুল আমল এবং গ্রহণীয় দুআ আপনার নিকট সব সময় পৌছে থাকে? ফেরেশতারা বলল, হে রব! আপনি কি তার প্রতি রহম করবেন না, আর তাকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দেবেন না- অথচ সে আপনাকে সুখের সময় স্মরণ করত। আল্লাহ তাআলা বললেন অবশ্যই। অতঃপর তিনি মৎস্যকে আদেশ করলেন, আর মৎস্য তাকে তীরে নিক্ষেপ করল।
ইয়াকতিনাহ
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন- যখন মৎস্য হযরত ইউনূস (আ) কে তীরে নিক্ষেপ করেন। তখন আল্লাহ তাআলা তার (ছায়ার) জন্য ‘ইয়াকতীনাহ’ উৎপন্ন করেন। ইবনে কুসায়ত বলেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা (রা) জিজ্ঞাসা করলাম- ‘ইয়াকতীনাহ’ কি? তিনি বললেন, কদুগাছ।
হযরত আবু হরায়রা (রা) আরো বলেন- আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি জংলী বকরী সৃষ্টি করে দেন এবং তার অন্তরঙ্গ করে দেন। বকরীটি যমীনে চরে ঘাস-পাতা খেয়ে ফেলত যাতে ঘাস-পাতার জন্য তার কষ্ট না হয়। আর সকাল সন্ধ্যা তাকে দুধ পান করাতো। এমনকি সে পরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৩২]
উমাইয়া ইবনুস সালত এর কবিতা
[৩৩] ইসলাম পূর্ব যুগে উমাইয়া ইবনুস সালত এই মর্মে কবিতা বলেছেন-
فَأَنْبَتَ يَقْطِينًا عَلَيْهِ بِرَحْمَةٍ … مِنَ اللَّهِ لَوْلَا اللَّهُ أُلْفِيَ ضَاحِيَا
আল্লাহ তাআলা তার দয়ায় তার জন্য কদুর চারা উদগীরণ করেছেন। যদি আল্লাহ তাআলা এমন না করতেন তবে সে কমেজার ও দুর্বলই থাকতেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৩৩][26]
ইসেম আযম
[৩৪] হযরত মুহাম্মদ ইবনে সাদ তার পিতা থেকে আর তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে বসা ছিলাম। তিনি আমাদেরক বললেন- আমি কি তোমাদরকে সংবাদ দিব না অথবা বলে দিব না এমন দুআর বিষয়ে- যখন তোমাদের কারো উপর দুনিয়ার কোন কষ্ট অথবা মুসিবত আসে তখন তা পাঠ করলে তা থেকে নিষ্কৃতী লাভ হয়? সাহাবীরা বললেন, অবশ্যই বলে দিন। তিনি বললেন, তা হলো যুননুন অর্থাৎ হযরত ইউনূস (আ) এর দুআ-
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যালিমীন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৩৪]
যে কাজে বিপদের প্রথম অবস্থায় আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়
[৩৫] হযরত ইউনূস ইবনে মাইসারাহ বিন হালবাস (রহ) বলেন- সাগরের গহীনে হযরত ইউনূস (আ) এর সাথে কারূনের সাক্ষাত হয়। তখন কারূন হযরত ইউনূস (আ) কে আহ্বান করে বলেন- হে ইউনূস! আপনি আল্লাহর নিকট তওবা করুন, তাহলে প্রথম কদমেই আপনি আল্লাহকে সাথে পাবেন। তখন ইউনূস (আ) তাকে বললেন- তবে তোমাকে তওবা করতে বারণ করল কিসে? কারূন বলল, আমার তওবার বিষয়টি আমার চাচাত ভাই [মূসা (আ)] এর দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আর তিনি আমার তওবা মেনে নেন না।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৩৫]
সুখে দুখে আল্লাহকে স্মরণ করা
[৩৬] হযরত সাইদ ইবনে হাসান বলেন- যখন হযরত ইউনূস (আ) মাছের পেটে চলে গেলেন, তখন তিনি মনে করলেন যে, তিনি মারা গেছেন। তখন তিনি তার পা দুটি নাড়া দিলেন, আর বুঝলেন যে তিনি এখনও বেঁচে আছেন। তখন তিনি দ্রুত উঠে নামাযে দাড়িয়ে গেলেন। আর তার দুআয় বললেন- হে আল্লাহ! আমি আপনার ইবাদতের জন্য এমন স্থানকে মসজিদ বানিয়েছি, যেখানে পূর্বে কেউ বানায়নি।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৩৬]
[৩৭] হযরত সাঈদ ইবনে যুবায়র (রহ) আল্লাহর বাণী-
فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ
তিনি যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করতেন (তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত তাকে থাকতে হত মাছের পেটে)।- সূরা সাফফাত:১৪৩
প্রসঙ্গে বলেন-
مِنَ الْمُصَلِّينَ
যদি তিনি সালাত আদায়কারী না হতেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৩৭
যে কোন কঠিন অস্থা থেকে মুক্তির জন্য দুআ ইউনূস
[৩৮] হযরত আমর ইবনে মায়মুন বলেন, আমি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) কে বায়তুল মালে বলতে শুনেছি- যখন মৎস্য হযরত ইউনূস (আ) কে গিলে ফেললেন এবং তাকে সমুদ্রের গভীরে নিয়ে মাটির কাছে নিয়ে গেলেন। তখন তিনি সমুদ্রের গভীরে পাথরকণার তাসবীহ শুনতে পেলেন। তখন তিনি সেই অন্ধকার থেকে আল্লাহকে ডাকেন- যেখানে তার উপর তিনটি অন্ধকার বিরাজমান ছিল। মাছের পেটের অন্ধকার। রাতের অন্ধকার এবং সাগরের গভীর অন্ধকার-
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যালিমীন।
(এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন)
فَنَبَذْنَاهُ بِالْعَرَاءِ وَهُوَ سَقِيمٌ
অতঃপর আমি তাকে নিক্ষেপ করলাম এক তৃণহীন প্রান্তরে এবং সে ছিল রুগ্ন।– সূরা আম্বিয়া:৮৭
যখন তাকে মাছের পেট থেকে বের করা হয় তখন তিনি পাখির ছানার মত দুর্বল ছিলেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৩৮]
হযরত ইউসুফ (আ) কে শিখানো কালিমা
[৩৯] মুহাম্মদ ইবনে উমর কুফার অধিবাসী এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন। জিবরাইল (আ) হযরত ইউসুফ (আ) এর সাথে কারাগারে সাক্ষাত করেন। ইউসুফ (আ) বললেন, হে পবিত্র আত্মা! কি কারণে এখানে এসেছেন? জিবরাইল (আ) বললেন, আপনার জন্য। আপনি পাঠ করুন-
اللَّهُمَّ يَا شَاهِدًا غَيْرَ غَائِبٍ، وَيَا قَرِيبًا غَيْرَ بَعِيدٍ، وَيَا غَالِبًا غَيْرَ مَغْلُوبٍ، اجْعَلْ لِي مِنْ أَمْرِي فَرَجًا وَمَخْرَجًا، وَارْزُقْنِي مِنْ حَيْثُ لَا أَحْتَسِبُ
হে উপস্থিত সত্তা! যিনি কখনও অনুপস্থিত নন। হে নিকটবর্তী সত্তা! যিনি কখনও দূরবর্তী নন। হে বিজয়ী সত্তা! যিনি কখনও পরাজিত নন। আমাকে আমার এই বিষয়ে মুক্তি ও নির্গমনের পথ প্রদর্শন করুন এবং আমাকে পর্যাপ্ত রিযিক দান করুন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৪০]
হযরত ইয়াকুব (আ) কে শিখানো কালিমা
[৪০] হযরত মু’তামার বিন সুলায়মান (রহ) বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইয়াকুব (আ) এর সাথে সাক্ষাত করে বললেন, হে ইয়াকুব! কি ব্যাপার যে, আপনাকে আগের মত হাসি-খুশি দেখতে পাই না? তিনি বললেন, অতি বার্ধক্য এবং অধিক দুঃখ-বেদনার জন্য। তখন সাক্ষাতকারী বলল, আপনি পাঠ করুন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْ لِي مِنْ كُلِّ مَا أَهَمَّنِي وَكَرَبَنِي مِنْ أَمْرِ دُنْيَايَ وَآخِرَتِي فَرَجًا وَمَخْرَجًا، وَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي، وَثَبِّتْ رَجَاءَكَ فِي قَلْبِي، وَاقْطَعْهُ مِمَّنْ سِوَاكَ، حَتَّى لَا يَكُونَ لِي رَجَاءٌ إِلَّا إِيَّاكَ
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল দুশ্চিন্তা ও কষ্ট হতে অব্যহতি দান করুন এবং আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। আমার অন্তরে আপনার আশাকে দৃঢ় করে দিন আর আপনি ব্যতীত আর সবার আশাকে ছিন্ন করে দিন। এমনকি আপনি ব্যতীত আর কারো প্রতি আমার যেন কোন আশা না থাকে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৪২]
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিপদ মুসিবত
[৪১] হযরত হাসান (রহ) বলেন-
لَوْ عُزِّيَ مِنَ الْبَلَاءِ أَحَدٌ لَعُزِّيَ مِنْهُ آلُ يَعْقُوبَ، جَاسَهُمُ الْبَلَاءُ ثَمَانِينَ سَنَةً
যদি কেউ বিপদাপদ থেকে মুক্ত হত তবে তা হত শুধু হযরত ইয়াকুব (আ) ও তার পরিবারবর্গের জন্য। অথচ তাদের উপর ৮০ বৎসর পর্যন্ত বিপদ মুসিবত লেগে ছিল।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৪৩]
হযরত ইউসুফ (আ) এর বন্দিত্বের কষ্ট
[৪২] হযরত গালিব ইবনে কাত্তান (রহ) বলেন- কারাগারে যখন হযরত ইউসুফ (আ) এর কষ্ট বৃদ্ধি পেতে লাগল, বন্দিত্ব দীর্ঘ হয়ে গলে, বস্ত্রাদি মলিন হয়ে গেল, (কারাগারের) লোকজন রূঢ় ব্যবহার করতে লাগল- তখন তিনি আল্লাহর নিকট ঐ কষ্ট থেকে মু্ক্তির দুআ করলেন-
اللَّهُمَّ أَشْكُو إِلَيْكَ مَا لَقِيتُ مِنْ وُدِّي وَعَدُوِّي، أَمَّا وُدِّي فَبَاعُونِي وَأَخَذُوا ثَمَنِي، وَأَمَّا عَدُوِّي فَسَجَنَنِي، اللَّهُمَّ اجْعَلْ لِي فَرَجًا وَمَخْرَجًا
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অভিযোগ করছি শত্রু-মিত্র উভয়ের ব্যাপারে যা আমি তাদের থেকে পেয়েছি। আমার মিত্ররা আমাকে বিক্রি করে তার মূল্য গ্রহণ করেছে। আর আমার শত্রুরা আমাকে বন্দী করেছে। হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য মুক্তি ও নির্গমনের পথ করে দিন।
এই দুআর পর আল্লাহ তাআলা দ্রুতই তার মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন। – [রিওয়ায়ায়াতঃ৪৪]
বন্দিত্বের অসহনীয় কষ্ট থেকে মুক্তি
[৪৩] হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। জিবরাইল (আ) হযরত ইউসুফ (আ) এর নিকট এসে বললেন- বন্দিত্ব কি আপনার অসহনীয় হয়ে উঠেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জিবরাইল (আ) বললেন, আপনি পাঠ করুন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْ لِي مِنْ كُلِّ مَا أَهَمَّنِي وَكَرَبَنِي مِنْ أَمْرِ دُنْيَايَ وَآخِرَتِي فَرَجًا وَمَخْرَجًا، وَارْزُقْنِي مِنْ حَيْثُ لَا أَحْتَسِبُ، وَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي، وَثَبِّتْ رَجَاءَكَ فِي قَلْبِي، وَاقْطَعْهُ مِمَّنْ سِوَاكَ حَتَّى لَا أَرْجُوَ أَحَدًا غَيْرَكَ
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল দুশ্চিন্তা ও কষ্ট থেকে নাজাত ও মুক্তি দান করুন। আমাকে পর্যাপ্ত রিযিক দান করুন। আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। আর আমার অন্তরে আপনার আশা দৃঢ় করে দিন। আপনি ব্যতীত সকলের আশাকে ছিন্ন করে দিন। এমনকি আপনি ব্যতীত আর কারো প্রতি আমার কোন আশা যেন না থাকে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৪৫]
হযরত ইযাকুব (আ) এর অনুনয় বিনয়
[৪৪] হযরত মুদলিজ বিন আব্দুল আযীয কুরায়শের একজন শায়খ থেকে বর্ণনা করেন। জিবরাইল (আ) হযরত ইয়াকুব (আ) এর নিকট অবতরণ করে বললেন- হে ইয়াকুব! আপনি আল্লাহর নিকট অনুনয় বিনয় করুন। বললেন, হে জিবরাইল! কিভাবে অনুনয় বিনয় করব? জিবরাইল (আ) বললেন, আপনি পাঠ করুন-
يَا كَثِيرَ الْخَيْرِ، يَا دَائِمَ الْمَعْرُوفِ
হে কল্যাণের খাযানাহ, হে সদ্ব্যবহারের পাহাড়।
তখন আল্লাহ তাআলা ওহী নাযিল করলেন যে, আপনি এমন বাক্যের মাধ্যমে দুআ করেছেন যে, যদি আপনার ছেলে দুটিরও মৃত্যু হয়ে যেত তবে আমি তাদেরকে জীবিত করে দিতাম।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৪৬]
অভিযোগ আর্জি শুধু আল্লাহর নিকট পেশ করা
[৪৫] হযরত আনাস (রা) নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত ইয়াকুব (আ) এর একজন পরিচিত ভাই ছিলেন। তিনি একদিন তাকে বললেন, কি কারণে আপনার চোখ নষ্ট হয়ে গেল এবং আপনার কোমর বাঁকা হয়ে গেল? তিনি উত্তর দিলেন, ইউসুফের জন্য কেঁদে কেঁদে আমার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে আর বিন ইয়ামিনের দুঃখ আমার কোমর বাঁকা করে দিয়েছে। তখন আল্লাহ তাআলা ওহী পাঠালেন যে, হে ইয়াকুব! অপরের কাছে আমার অভিযোগ করতে তুমি লজ্জা কর না? তৎক্ষণাৎ ইয়াকুব (আ) বললেন-
[يوسف: 86] إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ
আমি আমার অসহনীয় দুঃখ বেদনা আল্লাহর সমীপে পেশ করছি।– সূরা ইউসুফ:৮৬ [রিওয়ায়ায়াতঃ৪৭]
সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দুআ
[৪৬] হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- বিপদমুক্তি, প্রশস্ততা ও আনন্দ উদ্দীপনার দুআ হলো-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল কারীম। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আলিয়্যুল আযীম। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুসসামাওয়াতিস সাব’য়ি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারীম।
আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, তিনি সহনশীল ও দাতা। আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, তিনি সমুচ্চ ও সম্মানিত। আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, তিনি সপ্ত আকাশের রব এবং সম্মানিত আরশের রব। – [রিওয়ায়ায়াতঃ৪৮]
বিপদগ্রস্তের দুআ
[৪৭] হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবী বাকরাহ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- বিপদগ্রস্তের দুআ হলো-
اللَّهُمَّ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، رَحْمَتَكَ أَرْجُو فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ، شَأْنَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، فِي عَفْو مِنْكَ وَعَافِيَةٍ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
হে আল্লাহ! আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। আমি আপনার রহমতের আশা রাখি। আপনি আমাকে এক মুহুর্তের জন্যও আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিবেন না। আর আপনি আমার দুনিয়া ও আখিরাতের সবকিছু আপনার ক্ষমা ও নিরাপত্তার সাথে ঠিক করে দিন। আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৪৯]
[৪৮] হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বিপদ-মুসিবতের সময় নিম্নের কালিমা পাঠ করতে শিক্ষা দিয়েছেন-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ، سُبْحَانَ اللَّهِ، وَتَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল কারীম। সুবহানাল্লাহি ওয়াতাবারাকাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আযীম। আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।
আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, তিনি সহনশীল ও দাতা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র ও বরকতময়, মহান আরশের রব। আর সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৫০]
চিন্তা ও পেরেশানীর দুআ
[৪৯] হযরত আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুলল্লাহ (সা) যখন কোন চিন্তা ও দুঃখের সম্মুখীন হতেন তখন পাঠ করতেন-
يَا حَيُّ، يَا قَيُّومُ، بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ
ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়ুম, বিরহমাতিকা আস্তাগীছ।
হে চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের দ্বারে ফরিয়াদ করছি।–[রিওয়ায়ায়াতঃ৫১]
শোক-দুঃখের দুআ
[৫০] হযরত আসমা বিনতে উমাইস (রা) থেকে বর্ণিত। আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি-
مَنْ أَصَابَهُ غَمٌّ، أَوْ هَمٌّ، أَوْ سَقَمٌ، أَوْ شِدَّةٌ، أَوْ ذُلٌّ، أَوْ لَأْوَاءُ، فَقَالَ: اللَّهُ رَبِّي لَا شَرِيكَ لَهُ، كُشِفَ ذَلِكَ عَنْهُ “
তোমাদের কেউ যখন কোন দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা-ভাবনা, রোগ-শোক, কষ্ট-ক্লেশ, হীনতা ও দুর্বলতা, দুর্দশা ও ভোগান্তিতে পড়ে যায়, তবে সে যেন নিম্নের কালিমা পাঠ করে, তাহলে সে তার থেকে উত্তীর্ণ হতে পারবে-
اللَّهُ اللَّهُ رَبِّي لَا شَرِيكَ لَهُ
আল্লাহু আল্লাহু রাব্বী, লা শারিকা লাহু।
আল্লাহ আল্লাহই আমার প্রতিপালক, আমি তার সাথে কোন কিছু শরীক করি না।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৫২]
দুশ্চিন্তা ও কষ্ট আনন্দে রুপান্তরিত হওয়ার দুআ
[৫১] হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে কোন মসুলমান কোন দুশ্চিন্তা ও কষ্টে পতিত হয়ে নিম্নের দুআ করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার দুঃখ-দুশ্চিন্তাকে আনন্দ ও খুশি দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ، ابْنُ عَبْدِكَ، ابْنُ أُمَّتِكَ، نَاصِيَتِي فِي يَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ بَصَرِي، وَجِلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي
হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা, তোমারই এক বান্দার পুত্র এবং তোমার এক বাঁদীর পুত্র। আমার কপাল (নিয়ন্ত্রণ) তোমারই হাতে। আমার উপর তোমার নির্দেশ কার্যকর। আমার ব্যাপারে তোমার ফয়সালা ন্যায়পূর্ণ। আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি তোমার প্রতিটি নামের উসীলায়- যে নাম তুমি নিজের জন্য নিজে রেখেছ, অথবা তোমার কোন কিতাবে নাযিল করেছ, অথবা তোমার সৃষ্টজীবের কাউকে শিখিয়েছ, অথবা তোমার গায়েবী জ্ঞানে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছ— তুমি কুরআনকে আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার চোখের জ্যোতি, আমার দুঃখের অপসারণকারী এবং দুশ্চিন্তা দূরকারী বানিয়ে দাও।
সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি এই দুআটি শিখে নিব না? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, যে ব্যক্তিই এই দুআটি শুনবে সেই তা শিখে নেবে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৫৩]
আল্লাহই সবকিছুর জন্য যথেষ্ট
[৫২] হযরত খলিল বিন মুররাহ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন কোন চিন্তা-পেরেশানী অথবা দুঃখ-কষ্ট অথবা কোন বিপদ-মুসিবতের সম্মুখীন হতেন তখন এই দুআ পাঠ করতেন-
حَسْبِي الرَّبُّ مِنَ الْعِبَادِ، حَسْبِي الْخَالِقُ مِنَ الْمَخْلُوقِينَ، حَسْبِي الرَّزَّاقُ مِنَ الْمَرْزُوقِينَ، حَسْبِيَ الَّذِي هُوَ حَسْبِي، حَسْبِي اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ، حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
সকল বান্দাদের থেকে আমার জন্য আমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। সকল মাখলুক থেকে আমার জন্য আমার খালেকই (সবার স্রষ্টা আল্লাহ) যথেষ্ট। সকল রিযিক প্রাপ্তদের থেকে আমার জন্য রাযযাকই (সবার রিযিকদাতা আল্লাহ) যথেষ্ট। আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট তিনিই আমার প্রয়োজন পূর্ণ করেন। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট আর তিনি উত্তম অভিবাবক। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট আর তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। আমি তারই উপর নির্ভর করি। আর তিনি মহান আরশের রব।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৫৪]
বিপদ ও সংকটে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করা
[৫৩] হযরত হাকাম ইবনে হিশাম আস সাকাফী (রহ) বলেন- আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে- এক ব্যক্তিকে একটি গর্ত খনন করে তার মধ্যে বন্দী করে তার উপর একটি পাথর চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। তখন তিন পাঠ করেন-
سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ، سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ
সুবহানাল্লাহিল মালিকিল কুদ্দুস। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী।
এটা পাঠ করতেই তিনি কারো সহায়তা ছাড়াই তার মধ্য থেকে বেরিয়ে আসেন। – [রিওয়ায়ায়াতঃ৬২]
প্রতাপশালীর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দুআ
[৫৪] হযরত আবা বালয আল ফাযারী বর্ণনা করেন। হাজ্জাজ এক ব্যক্তিকে ধরে আনার জন্য তার কয়েকজন সৈন্যকে পাঠালেন। আর তিনি শপথ করলেন, তাকে ধরতে পারলে তাকে শেষ করে দিবেন। যখন লোকটিকে ধরে সামনে আনা হলো, তখন সে কিছু পাঠ করল। আর তাকে ছেড়ে দেয়া হলো। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কি পড়েছিলে? সে বলল-
يَا عَزِيزُ، يَا حَمِيدُ، يَا ذَا الْعَرْشِ الْمَجِيدِ، اصْرِفْ عَنِّي شَرَّ كُلِّ جُبَارٍ عَنِيدٍ
হে পরাক্রমশালী! হে প্রশংসিত! হে সম্মানিত আরশের মালিক! আমার থেকে প্রত্যেক উদ্ধত হঠকারী যালিমকে হঠিয়ে দিন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৬৪]
বিপদে জিবরাইল (আ) এর শিখানো কালিমা
[৫৫] হযরত ইসমাইল বিন আবু ফুদায়েক বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যখনই আমার উপর কোন কষ্ট ও পেরেশানী এসেছে, তখনই জিবরাইল (আ) এসে বলেছেন- হে মুহাম্মদ! পাঠ করুন-
تَوَكَّلْتُ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ، وَ { الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ وَلِيٌّ مِنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا} [الإسراء: 111]
আমি সেই আল্লাহর উপর ভরসা করছি যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তার রাজত্বে কোন অংশীদার নেই এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তার অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে। অতএব সসম্ভ্রমে তার মাহাত্ম বর্ণনা করুন। – [রিওয়ায়ায়াতঃ৬৬]
হযরত আলী (রা) কে শিখানো কালিমা
[৫৬] হযরত মুহাম্মদ ইবেন আলী বর্ণনা করেন। নবী (সা) হযরত আলী (রা) কে একটি দুআ শিক্ষা দিয়েছিলেন, যা তিনি দুশ্চিন্তার সময় পাঠ করতেন। পরে তিনি তার সন্তানদেরকেও শিক্ষা দেন-
يَا كَائِنًا قَبْلَ كُلِّ شَيْءٍ، وَيَا مُكَوِّنَ كُلِّ شَيْءٍ، وَيَا كَائِنًا بَعْدَ كُلِّ شَيْءٍ، افْعَلْ بِي كَذَا وَكَذَا
হে ঐ সত্তা! যিনি বিদ্যমান ছিলেন সবকিছুর পূর্বে এবং সবকিছুর স্রষ্টা! হে ঐ সত্তা যিনি বিদ্যমান থাকবেন সবকিছুর পরও। আমার এই এই প্রয়োজন পূর্ণ করুন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৬৭]
মুক্তির কালিমা
[৫৭] হযরত আব্দুল মালিক বিন উমায়র থেকে বর্ণিত। ওলিদ ইবনে আব্দুল মালিক উসমান ইবনে হাইয়ান আল মুযানীকে পত্র মারফত বললেন- হাসান ইবনে হাসানকে অনুসন্ধান করে তাকে একশত বেত্রাঘাত কর। আর একদিন লোকদের সামনে দাড় করিয়ে রাখ। আমি দেখছি যে, সে হয়তো নিহত হবে।
উসমান ইবনে হাইয়ান তাকে ডেকে পাঠালেন। যখন সে হাযির হলো তখন দেখলেন অনেক সংখ্যক শত্রু বিদ্যমান। তখন আলী ইবনে হুসাইন তাকে বললেন- হে ভাই! তুমি মুক্তির কালিমা পাঠ কর, আল্লাহ তোমাকে মুক্তি দিবেন-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ، سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, তিনি সহনশীল ও দাতা। আল্লাহ পবিত্র। তিনি সপ্ত আকাশ এবং মহান আরশের প্রতিপালক। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য।
হাসান এই কালিমাগুলো পাঠ করলেন। যখন উসমান তার দিকে নযর দিলেন, সে বলল, এই চেহারাতো সুবোধ বালকের মত। কোন ব্যক্তি হয়তো তার ব্যাপারে অপবাদ দিয়েছে। তাকে ছেড়ে দাও। আমি তার ব্যাপারে খলিফাকে লিখে পাঠাব যে, সে নিরপরাধ। কেননা উপস্থিত ব্যক্তি যা দেখে, অনুপস্থিত ব্যক্তি তা দেখতে পায় না।-[রিওয়ায়ায়াতঃ৬৯]
আরেকটি দুআ
[৫৮] ইমাম শাবী (রহ) বলেন, আমি একদিন যিয়াদের পাশে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তিকে ধরে আনা হলো। মনে হচ্ছিল তাকে হত্যা করা হবে। কিন্তু সে চুপিসারে কিছু পাঠ করল। (আর তাকে ছেড়ে দেয়া হলো)। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি পড়েছিলে? সে বলল-
اللَّهُمَّ رَبَّ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ، وَرَبَّ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ، وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالزَّبُورِ وَالْفُرْقَانِ الْعَظِيمِ، ادْرَأْ عَنِّي شَرَّ زِيَادٍ
হে আল্লাহ! ইবরাহিম, ইসমাইল, ইসহাক ও ইয়াকুবের প্রতিপালক। জিবরাইল, মিকাইল ও ইসরাফিলের প্রতিপালক। তাওরাত ইনজীল যাবূর এবং মহান কুরআন নাযিলকারী। আপনি আমাকে যিয়াদের অনিষ্ট হতে রক্ষা করুন। [রিওয়ায়ায়াতঃ৭৩]
আবু দারদা (রা) এর নসীহত
[৫৯] এক ব্যক্তি হযরত আবু দারদা (রা) কে বললেন- আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন-
اذْكُرِ اللَّهَ فِي السَّرَّاءِ يَذْكُرْكَ فِي الضَّرَّاءِ، وَإِذَا ذَكَرْتَ الْمَوْتَى فَاجْعَلْ نَفْسَكَ كَأَحَدِهِمْ، وَإِذَا أَشْرَفَتْ نَفْسُكَ عَلَى شَيْءٍ مِنَ الدُّنْيَا فَانْظُرْ إِلَى مَا يَصِيرُ
সুখের সময় তুমি আল্লাহকে স্মরণ করবে, তাহলে দুঃখর সময় তিনি তোমাকে মনে রাখবেন। যখন তুমি মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে, তখন তুমি নিজেকে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত মনে করবে। যখন তোমার মন দুনিয়ার কোন কিছু আকাঙ্ক্ষা করবে, তখন তার পরিণতীর কথা চিন্তা করবে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৭৮]
কঠিন বিপদ-মুসিবতও সহজ হয়ে যায়
[৬০] আবু আমর ইবনুল আলা বর্ণনা করেন। আমি হাজ্জাজের ভয়ে পালিয়ে গেলাম। একদিন ইয়ামানের এক ঘরের ছাদে ছিলাম। তখন শুনতে পেলাম এক ব্যক্তি কবিতা পড়ছে-
رُبَّمَا تَكْرَهُ النُّفُوسُ مِنَ الْأَمْــرِ… لَهُ فَرْجَةٌ كَحَلِّ الْعِقَالِ
অনেক সময় মানুষ কোন বিষয়কে সমস্যা মনে করে, অথচ তা থেকে রশি খুলে দেয়ার মত সহজে বেরিয়ে আসা যায়।
তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম তো এক ব্যক্তি বলল, হাজ্জাজের মৃত্যু হয়েছে। আমি নিশ্চিত নই যে, বন্দিত্ব থেকে মুক্তির জন্য অধিক আনন্দিত হয়েছিলাম, না কি হাজ্জাজের মৃত্যুর জন্য।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৮৩]
আল্লাহ তার বান্দার সহায়- দানিয়াল (আ) এর ঘটনা
[৬১] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুযায়ল (রা) বর্ণনা করেন। বুখত নসর দুটি সিংহ এনে কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করে এবং দানিয়াল (আ) কে এনে ঐ দুটি সিংহের মধ্যে ছেড়ে দেয়। কিন্তু সিংহ দুটি তার উপর কোন আক্রমণ করেন নি। তিনি দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করার পর স্বাভাবিকভাবে জৈবিক চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য ও পানিয়ের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে নবী আরমিয়া (আ) কে দানিয়াল (আ) এর জন্য খাদ্য পানীয় প্রস্তুত করতে বলেন। তিনি বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি থাকি বায়তুল মুকাদ্দাসে আর দানিয়াল (আ) আছেন সুদুর ইরাকের বাবিল শহরে। সেখানে আমি কিভাবে খাদ্য পানীয় পৌছাব?
আল্লাহ বললেন, হে আরমিয়া! আমি তোমাকে যা আদেশ করছি তা-ই কর। প্রস্তুতকৃত খাদ্যসহ তোমাকে সেখানে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা শীঘ্রই আমি করছি। আরমিয়া (আ) খাদ্য তৈরি করলেন। তারপর এমন একজনকে প্রেরণ করা হলো, যিনি খাদ্য পানীয়সহ আরমিয়া (আ) কে উক্ত কূপের পাড়ে পৌছে দিলেন। দানিয়াল (আ) ভিতর থেকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে কে? আরমিয়া (আ) নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমি আরমিয়া। দানিয়াল (আ) বললেন, আপনি কেন এখানে এসেছে? আরমিয়া (আ) জানালেন, অপনার প্রভু আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। দানিয়াল (আ) বললেন, তিনি আমাকে স্মরণ করেছেন? আরমিয়া (আ) বললেন- হ্যাঁ। তখন দানিয়াল (আ) বললেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَا يَنْسَى مَنْ ذَكَرَهُ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَا يَخِيبُ مَنْ دَعَاهُ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي مَنْ وَثِقَ بِهِ لَمْ يَكِلْهُ إِلَى غَيْرِهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي يَجْزِي بِالْإِحْسَانِ إِحْسَانًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي يَجْزِي بِالصَّبِرِ نَجَاةً، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هُوَ يَكْشِفُ ضُرَّنَا بَعْدَ كَرْبِنَا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هُوَ ثِقَتُنَا حِينَ يَسُوءُ ظَنُّنَّا بِأَعْمَالِنَا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هُوَ رَجَاؤُنَا حِينَ تَنْقَطِعُ الْحِيَلُ عَنَّا
সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যাকে স্মরণ করলে তিনি তাকে ভুলেন না। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যাকে কেউ আহ্বান করলে তিনি সে আহ্বানে সাড়া দেন। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যার প্রতি নির্ভরশীল হলে-ভরসা করলে তিনি তাকে অন্যের দিকে ঠেলে দেন না। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি উত্তম কাজের উত্তম বিনিময় দান করেন। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি ধৈর্যের বিনিময়ে মুক্তি দান করেন। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের বিশ্বাস ও কর্মোদ্যম শিথিল হয়ে গেলে দৃঢ়তা দান করেন। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের সকল উপায়-উপকরণ শেষ হওয়ার পর একমাত্র আশার স্থল।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৮৪]
বিপদ সহজ হওয়ার উপায়
[৬২] হযরত আব্দুল আযীয ইবনে উমর ইবন আব্দুল আযীয বলেন, আমার পিতা বলেছেন-
إِذَا كُنْتَ مِنَ الدُّنْيَا فِيمَا يَسُوؤُكَ فَاذْكُرِ الْمَوْتَ، فَإِنَّهُ يُسَهِّلُ عَلَيْكَ
যখন তুমি দুনিয়ার সমস্যা সংকটের মুখোমুখি হবে তখন মৃত্যুকে স্মরণ করবে। তাহলে তা তোমার নিকট হালকা ও সহজ মনে হবে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৮৬]
[৬৩] মাসলামা বিন আব্দুল মালিক বলেন-
إِنَّ أَقَلَّ النَّاسِ هَمًّا فِي الْآخِرَةِ أَقَلُّهُمْ فِي الدُّنْيَا
যার দুনিয়ার চিন্তা-ফিকির কম হবে, আখিরাতেও তার চিন্তা কম হবে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৮৭]
[৬৪] আযেম বিন ফযল (রহ) বলেন- আমি যুহায়র আল বাবীকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কি অবস্থা? তিনি বললেন, তোমার প্রত্যাবর্তনের পর থেকে দুনিয়ার কষ্ট ও পেরেশানী থেকে মুখ ঘুরিয়ে আখিরাতের দিকে রওয়ানা হচ্ছি।
হাসান বলেন, তিনি একশিরা, শ্বাসকষ্ট এবং দৃষ্টিশক্তীহীনতা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আর তিনি বলতেন- এগুলো এই দুনিয়ার কষ্ট মাত্র। (আল্লাহর) যা ইচ্ছা হয় করবেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৮৮]
এক পাগলের ঘটনা
[৬৫] মুহাম্মদ ইবনে হুসায়ন বলেন- আমি একজন পাগলকে দেখলাম, যে বাচ্চা ছেলেদের জালাতনে অস্থির হয়ে একটি মসজিদে ঢুকে গেল। সেখানে প্রবেশ করে তিনি এক কোণে বসে পড়লেন। যখন ছেলেরা চলে গেল, তখন সে উঠে দাড়াল এবং বলল-
إِذَا تَضَايَقَ أَمْرٌ فَانْتَظِرْ فَرَجًا … فَأَصْعَبُ الْأَمْرِ أَدْنَاهُ مِنَ الْفَرَجِ
যখন তোমার কোন বিষয় সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, তখন তুমি প্রশস্ততার অপেক্ষা কর। কেননা বিষয় যত কঠিন হয়, তার সমাধান ততই নিকটবর্তী হয়।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৯২]
আল্লাহই তার বান্দাকে প্রতিপালন করেন এবং করবেন
[৬৬] হুসাইন ইবনে আব্দুর রহমান বলেন- একবার রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী তার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে দেশ থেকে বহিস্কার করেন। এতে তিনি বেশ চিন্তিত হন। এ সময়েই এক রাতে তার একজন সঙ্গী তাকে এই কবিতা শোনান-
أَحْسِنِ الظَّنَّ بِرَبٍّ عَوَّدَكْ … حَسَنًا أَمْسِ وَسَوَّى أَوَدَكْ
إِنَّ رَبًّا كَانَ يَكْفِيكَ الَّذِي … كَانَ بِالْأَمْسِ سَيَكْفِيكَ غَدَكْ
তোমার প্রতিপালকের প্রতি সুধারণা রাখ, যিনি তোমাকে (তার অনুগ্রহের মধ্যে) অভ্যস্থ রেখেছেন এবং গতকাল পর্যন্ত তোমার বক্রতাকে সোজা করেছেন। যে সত্তা গতকাল পর্যন্ত তোমার সব প্রয়োজন পূর্ণ করেছেন, আগামীকালও তিনি তা করবেন।
এটা শোনামাত্র তার সব পেরেশানী দূর হয়ে গেল এবং তিনি তাকে দশ হাজার দিরহাম দান করলেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৯৩]
আশান্বিত থাকা
[৬৭] মুহাম্মদ ইবনে আবি রাজা বলেন- একবার আমি কঠিন সংকট ও দুশ্চিন্তায় পতিত হলাম। হঠাৎ একদিন আমার ছেলের বিছানার নিচে এই লেখাটি পেলাম-
يَا صَاحِبَ الْهَمِّ إِنَّ الْهَمَّ مُنْقَطِعُ … لَا تَيْأَسَنَّ كَأَنْ قَدْ فَرَّجَ اللَّهُ
হে বিষণ্ন ও চিন্তিত! নিশ্চয়ই এই দুশ্চিন্তা থাকবে না। নিরাশ হয়ো না, মনে কর আল্লাহ বিপদ দূর করে দিয়েছেন।
এটা পড়তেই আমার চিন্তা দূর হয়ে গেল এবং কয়েকদিনের মধ্যে সমস্যাও দূরিভূত হলো।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৯৪]
[৬৮] এক ব্যক্তি বর্ণনা করেন। একবার আমি কঠিন চিন্তায় চিন্তিত হয়ে পড়লাম। একরাতে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখলাম এক ব্যক্তি বলছে-
كُنْ لِلْمَكَارِهِ بِالْعَزَاءِ مُقَطِّعًا … فَلَعَلَّ يَوْمًا لَا تَرَى مَا تَكْرَهُ
وَلَرُبَّمَا ابْتَسَمَ الْوَقُورُ مِنَ الْأَذَى … وَضَمِيرُهُ مِنْ حَرِّهِ يَتَأَوَّهُ
বিপদকে ধৈর্যের মাধ্যমে প্রতিরোধ কর। কেননা এমন কোন দিন নেই, যেদিন অপছন্দনীয় কিছু দেখবে না। কখনো কষ্টে নিপতিত ব্যক্তি মুচকী হাসতে থাকে, অথচ বিপদের দাহে তার অন্তরে দহন চলতে থাকে।
আমি স্বপ্নেই এটা শিখে নিলাম এবং ঘুম থেকে উঠে কয়েবার আবৃত্তি করলাম। এরপর বেশিদিন অতিবাহিত হয়নি আল্লাহ সংকট দূর করে দিলেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৯৫]
বন্দিত্ব থেকে মুক্তির দুআ
[৬৯] তূবাহ আম্বরী বলেন- ইউসুফ ইবনে উমর আমাকে কোন কাজে বাধ্য করলেন। তারপর ফিরে আসলে তিনি আমাকে বন্দি করে ফেললেন। একটি কক্ষে দীর্ঘদিন আমাকে আবদ্ধ করে রাখা হলো এমনকি বার্ধক্যের কারণে চুল সাদা গয়ে গেল। একদিন স্বপ্নে দেখলাম, এক সাদা কাপড় পরিহিত ব্যক্তি বলছেন- হে তুবাহ! দীর্ঘদিন যাবত তুমি বন্দী! আমি বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, তুমি এই দুআ পড়তে থাক-
أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ وَالْمُعَافَاةَ الدَّائِمَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
আমি আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতে তার ক্ষমা, আফিয়াত ও সুস্থতা এবং যাবতীয় ভয় ও সংকট হতে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
আমি স্বপ্নে দুআটি তিনবার পাঠ করলাম। জেগে উঠে কারারক্ষীকে দিয়ে দোয়াত, কলম এবং বাতি আনিয়ে দুআটি লিখে নিলাম। কিছু নামায পড়ে ফজর পর্যন্ত দুআটি পড়তে থাকলাম। ফজরর নামাযের পর একজন প্রহরী দরজা ধাক্কা দিল। দরজা খোলা হলে সে বলল, তুবাহ আম্বরী কোথায়? লোকেরা এদিকে দেখিয়ে দিল। তারপর আমাকে বাঁধা অবস্থায়ই ইউসুফের সামনে নিয়ে গেল। ইউসুফ বলল, হে তুবাহ! দীর্ঘদিন হলো তোমাকে বন্দী করে রেখেছি। আমি বললাম, হ্যাঁ। তারপর ইউসুফ তাকে মুক্ত করে দিতে বললেন।
তারপর এই দুআ আমি অন্য এক বন্দিকেও শিখিয়ে দিলাম আর সেও অল্প দিনের মধ্যে মুক্তি পেয়ে গেল।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১১১]
সুখ দুঃখ স্থায়ী নয়
[৭০] অব্দুল্লাহ ইবন হিশাম আয যিমারী (রহ) বলেন- একবার কিছু লোক একটি কবর খনন করে একটি পাথর পেল। আর তাতে নিম্নের কথাগুলো লিখা ছিল-
اصْبِرْ لِدَهْرٍ نَالَ مِنْـ ـكَ… فَهَكَذَا مَضَتِ الدُّهُورُ
فَرَحٌ وَحُزْنٌ مَرَّةً … لَا الْحُزْنُ دَامَ وَلَا السُّرُورُ
যুগের বিপদে ধৈর্যধারণ কর। কেননা যুগ এভাবেই কেটে যায়।
একবার সুখ আর একবার দুঃখ। দুঃখ আর সুখ কোনটাই স্থায়ী নয়।
– [রিওয়ায়ায়াতঃ১১৩]